জান্নাতের প্রতিযোগিতায়!!!
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৮ মে, ২০১৬, ১০:২৪:২৬ রাত
বিজয়ি হওয়ার ইচ্ছা মানুষের ফিতরাত বা স্বাভাবিক মনোবৃত্তি। মানুষ অন্য মানুষ থেকে নিজেকে সফল দেখতে চায়। প্রতিযোগিতা মানুষের স্বভাব। ইসলাম ও ভাল কাজে প্রতিযোগিতা করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয় তখন যখন এই বিজয়ি হওয়ার ইচ্ছা মানুষের মানবিক গুনাবলিকে ছাড়িয়ে যায়। যে সব বিষয়ে প্রতিযোগিতার কোন কথাই নাই সেখানে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে এবং বিজয়ি হওয়ার জন্য মানুষ চেষ্টা করে। যেমন কিনাকাটায় জিতা বিষয়টি। কেউ যখন বাজার থেকে কোন পন্য বা সেবা ক্রয় করে তখন সে তার প্রয়োজন বলেই তা ক্রয় করে। এখানে বিক্রেতার সাথে তার প্রতিযোগিতার কোন কারন নাই। কিন্তু এই বিষয়টিকে আমরা এখন প্রতিযোগিতা বানিয়ে ফেলেছি। ক্রেতা চান বিক্রেতা থেকে যথা সম্ভব কম মুল্য দিয়ে পন্য বা সেবা নিতে সেটা যতই অন্যায্য হোক না কেন। একই রকম ভাবে অনেক বিক্রেতাও পন্য বা সেবা কে যত বেশি লাভে সম্ভব বিক্রয় করা টাকেই মনে করেন ব্যবসা। অথচ এটা এমন হওয়ার কথা নয়। পন্য বা সেবা ক্রেতার প্রয়োজন বলেই সে নেয় আর বিক্রেতার এই পন্য বা সেবা তার জিবিকার জন্য প্রয়োজন। উভয়ে যদি ন্যায্য মুল্যের বিষয়ে আগ্রহি থাকে তবে এই নিয়ে তাদের মধ্যে কোন মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি ব্যবসা কেন্দ্র হয়ে দাড়িয়েছে সকল ধরনের ঝগড়া এবং সংঘর্ষের কেন্দ্র। ব্যবসায় বিজয়ি হওয়ার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই ই মিথ্যা বলতে বিন্দু মাত্র সংকোচ বোধ করে না।
একই সমস্যা দেখা যায় আত্মিয়তার সম্পর্কেও। অনেক সময় দেখা যায় কারো বিয়ে নিয়ে উভয় পরিবারের সামাজিক মর্যাদা কত বাড়ল বা কমলো এই নিয়ে বিশেষ গবেষনায় লিপ্ত হন কেউ কেউ। মেয়েকে কোন ঘরে বিয়ে দিলে জিত হবে বা কোন ঘরের বৌ আনতে পারলে জিত হবে এই নিয়ে অনেক পিতা-মাতা অনেক সময় ব্যায় করেন। অথচ এই বিষয়টিতে জয়-পরাজয় এর কোন কথা থাকার কথা নয়। অথচ আমরা এটাকেও এখন প্রতিযোগিতা বানিয়ে ফেলেছি। আর বিয়ের খরচ নিয়ে অপচয় তো আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে নোংরা প্রতিযোগিতায় পরিনিত হয়েছে। বিয়ের পর বৌ বা স্বামি মা-বাবার সন্মান করল না শশুড়-শাশুড়ির এটাকেও হারজিত এর বিষয় বানিয়ে ফেলেন অনেকে। বেয়াইদের উপর টেক্কা দিতে গিয়ে সন্তান এর জিবন ধ্বংস করে দিয়েছেন এমন ঘটনার উদাহরন ও আছে।
আরেক প্রতিযোগিতার অসুস্থ ক্ষেত্র হয়ে দাড়িয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্র। যেখানে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়ার চাইতে পরিক্ষার প্লেস বা গ্রেড নিয়েই এখন অনেকে জিবন ধ্বংস করছেন। অনেক মা-বাবা সন্তান কি শিখল তার থেকে বেশি গুরুত্ব দেন সন্তান এর রেজাল্ট কি হলো সেটাকে। কারন তারা সন্তান এর জিবন কে বানিয়ে ফেলেছেন নিজেদের সামাজিক ষ্ট্যাটাস এর কারন। কিছুই না শিখে নকল করে ভালো রেজাল্ট করাকে তারা সমর্থন করছেন। কারন তাদের প্রয়োজন সামাজিক ষ্ট্যাটাস এর প্রতিযোগিতায় বিজয়ি হওয়া। এর পিছনে উৎসাহ দিচ্ছে মিডিয়া। অতি মেধাবিদের বিশেষন এর ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে যোগ্য খেলোয়াড় বা শিল্পি। শুধু জিপিএ-৫ এর বদলে ৪.৫ পাওয়াতে পিতা-মাতার অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে কতো প্রতিভা। ট্যালেন্ট হান্ট এর নামে মিডিয়া গুলির নানা প্রতিযোগিতাও সৃষ্টি করছে প্রতিভার পরিবর্তে কিছু ম্যানুফ্যাকচারড গুডস! রবিন্দ্র, নজরুল বা আব্বাস উদ্দিন কোন প্রতিযোগিতায় বিজয়ি হননি। কিন্ত তাদের প্রতিভার বিকাশ হয়েছে। আর এখন ট্যালেন্ট সার্চ এর নামে বিশাল ব্যবসার সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতার।
কিন্তু একটা বিষয়েই শুধু এখন কেউ প্রতিযোগিতা করেনা। সেটা হলো ভাল মানুষ হওয়ার চেষ্টা। আর জান্নাত এর অন্বেষন এর বিষয়ে। কারন এই বিষয়ে মনোযোগ দিলে তো আর সামাজিক ষ্ট্যাটাস বাড়েনা!!!
বিষয়: বিবিধ
১৩০৫ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে আপনার কথাও যুক্তিযুক্ত।
সুন্দর লিখার জন্য অনেক ধন্যবাদ
অধিকাংশ মানুষের মন এবং মগজে এখন একটাই চিন্তা অর্থ, সম্পদ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি আর সামাজিক মর্যাদা। আখিরাত নয়।
মহান রব আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। সুন্দর লিখাটির জন্য।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্দর বিষয় তুলে ধরেছেন। লিখাটি স্টিকি হওয়া প্রয়োজন। অনেক অনেক ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ খাইর
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
হ্যাঁ, তবে ভাল মানুষ হওয়ার চেষ্টা আর জান্নাত অন্বেষণের প্রতিযোগীতায়ও কিছু লোক আছেন, যদিও তাঁরা সংখ্যায় খুব অল্প। ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে তাঁরা নির্ভয়ে প্রশ্ন করেন, "ফাঁসি কখন?"
মন্তব্য করতে লগইন করুন