হাসপাতাল অভিজ্ঞতা এবং ডাক্তার এর ফি
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:৪১:২০ রাত
মাস তিনেক ধরে নানাবিধ জটিল রোগে একের পর এক ডাক্তার এর কাছে যাচ্ছি। ১০ টাকার টিকেট কেটে ডাক্তার থেকে ১০০০ টাকা ফি এর ডাক্তার পর্যন্ত। আমার অনেক নিকট আত্মিয় এই পেশায় থাকায় আগে থেকেই ডাক্তার দের বিভিন্ন বিষয়ে সুবিধা পেয়ে আসছি। কিন্তু এবার এর মত তিক্ত অভিজ্ঞতা আর হয়নি।
কোন বিখ্যাত ডাক্তার কে দেখলাম তিনি চেম্বার এ বসার টাইম দেন ৬টা। সকল রোগি যত নাম্বারই সিরিয়াল হোক তাদের কে তার এটেন্ডডেন্ট সময় দেন ৬ টায়। ডাক্তার সাহেব কখনও কখনও আসেন ৮ টায়। কিন্তু সব রোগিকে সিরিয়াল ধরে বসে থাকতে হবে। বসার ব্যবস্থাও খুব কম। দাড়িয়ে থাকতে হয় লাইন ধরে। এভাবে বোধহয় তিনি রোগির রোগ বাড়াতে চান। কারন রোগ যত জটিল তার ইনকাম ও ততবেশি।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হলে প্রথমে মেডিকেল কলেজ এর কথাই মাথায় আসল। কিন্তু খবর নিয়ে জানলাম বিশেষ ইমার্জেন্সি না হলে এখন সিট পাওয়া যাবেনা। জনৈক কর্মকর্তা কিছু অর্থ এর বিনিময়ে ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতালে তিনদিনে ৩৭০০০ টাকা বিল দিতে হলো।
বাংলাদেশে অন্য যে কোন পেশা থেকে ডাক্তারি পেশায় নৈতিকতা অনেক কমে গেছে। আমার আপন ফুফা এবং এক মামা কে দেখেছি। তারা তাদের সময় চট্টগ্রামের সেরা ডাক্তার বলে বিবেচিত ছিলেন। সময় এর হিসেবে্ ফুফা ১৫০ টাকা ভিজিট নিতেন যখন বেশির ভাগ অধ্যাপক ই ৬০-৮০ টাকা ভিজিট নিতেন। কিন্তু তার চেম্বার ছিল পুরা একটা ফ্ল্যাট জুড়ে। নারি-পুরুষ এর জন্য ভিন্ন ওয়েটিং রুম। কখনই ৪-৫ জন এর বেশি মানুষ থাকতনা। যদিও তখন টেলিফোনে সিরিয়াল নেওয়ার রেওয়াজ বিশেষ ছিলনা। মানুষরা সকালে বা বিকালে এসে নিয়ে যেতেন। কিন্ত সবাইকে মোটামুটি সম্ভাব্য সময় বলে দেওয়া হতো। ৩০ মিনিট এর বেশি কাউকে অপেক্ষা করার ঘটনা বিশেষ দেখিনি। এর উপর দেখেছি সপ্তাহে দুই দিন তিনি সম্পুর্ন বিনামুল্যে দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করতেন।
ছোট থাকতে অনেক এলএমএফ ডাক্তার কে দেখেছি দক্ষতার সঙ্গে চিকিৎসা করতে। তারা যেটাতে পারতেন না অধ্যাপকদের রেফার করতেন। কিন্তু এখন সবাই বিশেষজ্ঞের কাছে যায়। অন্যদিকে সল্প সংখ্যক বিশেষজ্ঞ এই সুযোগে নিজেদের টাকা বানানর মেশিনে পরিনিত করেছেন। চট্টগ্রামে বছর কয়েক আগে এক ডাক্তার দম্পতির সন্তান দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসে। অন্য চিকিৎসক যখন রোগ সম্পর্কে মা-বাবা কে জিজ্ঞেস করেন তখন দেখা যায় তারা কিছুই জানেন না। অর্থ উপার্জনে তারা এতই ব্যাস্ত ছিলেন যে নিজের সন্তান এর সাস্থ্য সম্পর্কেও খোঁজ রাখেননি। যে ডাক্তার রা নিজেদের এই ধরনের অর্থ উপার্জন থেকে সরিয়ে রাখতে চান তারা আবার সামাজিক ভাবে অনেক সময়ই অপমান এর শিকার হন। অন্যদিকে সিনিয়র অধ্যাপক দের মধ্যে এই প্রবনতা ও দেখা যায় যে এরা তাদের ছাত্রদের উচ্চতর ডিগ্রি পাস করাতে চান না। এরা সম্ভবত এই মানসিক রোগে ভুগেন যে ছাত্র যদি পাস করে স্পেশালিষ্ট হয়ে যায় তবে তো তার রোগি কমে যাবে!
পৃথিবিতে অন্য যে কোন পেশার তুলনায় চিকিৎসা কে মানুষ সবসময় সন্মান দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন কিছু চিকিৎসক এর আচরন এর জন্য একে ডাকাতির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। অনেক চিকিৎসক কে দেখি এই দাবি করতে যে তারা বিদেশে থাকলে অনেক বেশি টাকা আয় করতেন। কিন্তু তারা কি বিদেশে জিবন যাত্রার ব্যায় বিষয়ে ভেবে দেখেন!!!
বিষয়: বিবিধ
২০৭০ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যা-ই হোক, সবাই আসলে ডাক্তার নামক ডাকাতদের হতে একপ্রকার জিম্মি, ভুক্তভোগী। অনেক ডাক্তার আছেন যারা সিরিয়াল দেন একদম সকালে। ঐ সময় যোগাযোগ না করলে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। আর কত যে হয়রানি! কম্পাউডাররা কম না ক্ষেত্র বিশেষে ডাক্তারদের চেয়েও দাপট বেশি। হাতে টাকা গুঁজে দিলে সিরিয়াল আগে পাওয়া যায়। ধন্যবাদ।
এখন নৈতিকতা বিষয়টা ডাক্তাররা একবারে ছুড়ে ফেলেছেন।
বর্তমানে ডাক্তারখানা মানে কসাইখানা, যেমন টাকা জবাই করে, তেমনি রোগীও জবাই করে, ভূল চিকিৎসা তো আছেই।
আর বিদেশের কথা বলছেন? এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের বিদেশে নার্স হিসেবেও নিবে না। বিদেশের নার্স ও রিসিপ্শনিষ্টরাও এদের থেকে অনেক নৈতিকতা সম্পন্ন।
ধন্যবাদ
ডাক্তারী পেশাটা এখন ব্যবসা হয়েছে ।
আল্লাহ আপনাকে পূর্ণ সুস্থ্যতা দান করুন ও নেক হায়াত বাড়িয়ে দিন । আমীন ।
পেশা ব্যবসা হলে ক্ষতি নাই। যদি নৈতিকতা থাকে।
ভাইজান, আপনার এখন কি অবস্থা?
আর ডাক্তারের কথা আর কি বলব? আমার বাবাকে গত ৫ বছর আগে এক ডাক্তার বলে ছিল, আপনার ভিতরে নাড়িভুঁড়ি সব পচে গেছে। এই কথা শুনে বাবা খানাদানা ছেড়ে যায়যায় অবস্থা। আমি দেশে ছিলাম, নিয়ে গেলাম ঢাকা। একদি এই বিষয় লিখব ইনশা আল্লাহ্
মোটামুটি ভাল আছি। তবে এই রোগ দির্ঘমেয়াদি।
নাড়িভুড়ি পঁচে গেছে!! এটা কিরকম রোগ!!
আপনার বর্তমান কি অবস্থা?
তবে মানুষ যেটা খুবই অপছন্দ করে যে সেখানে আপনাকে এমনভাবে ট্রিট করবে যে তারা আপনাকে পরোক্ষভাবেই বেসরকারী ক্লিনিকে ভর্তি হবার জন্য বলছে ।
বেসরকারী হাসপাতালে পোজ পাজ ভাল তবে ট্রিটমেন্ট কোনভাবেই সরকারী হাসপাতালের চেয়ে এগিয়ে না । কারণ সব ডাক্তারদের বেস তো ওখানেই ।
চেম্বারে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ভিজিট ১০০০ টাকা এর নিচে নয় । এত টাকা ভিজিট নিলেও তারা এমনভাবে রোগী দেখে যে ৫ টাকা ভিজিট দিয়ে রোগী তাকে দেখাতে এসেছে । খুব তাড়াহুড়ো করে এরা রোগী দেখে । আমার খুব কাছের একজনকে রাত ১০ টার পর আসতে বলেছিল সিরিয়াল অনুযায়ী , তবে ১২ টার আগে দেখানো যাবে কি না সন্দেহ ।
কোন কোন ডাক্তারকে দেখানোর জন্য ২ মাস আগে সিরিয়াল দিয়ে রাখে । আমার খুব অবাক লাগে এসব ক্রেজি মানুষদের। রোগ কি এই ২ মাস একই জায়গায় স্থির থাকবে ?
আর ডাক্তারদের কাছে গেলে প্রয়োজনীয় টেস্টের সাথে T3 , T4 , TSH ও Lipid profile দিবেই যদিও কোন প্রয়োজন নাও থাকে । কারণ এসব বেসঢ দামী টেস্ট । টেস্টের ৪০-৫০% ডাক্তারদের কাছে যায় ডায়গনোস্টিক সেন্টার থেকে ।
আমার কাছে টাকা দিয়ে যখন আমি চিকিৎসা করছি সেটাকে আমি সেবা বলি না । টাকা দিয়ে আমি পোশাক কিনছি সেটাকে কি বলবো বিক্রেতা আমাকে সেবা দিয়েছে ? বা মুদির দোকান থেকে চাল ডাল কিনলে কি বলবো মুদির দোকানদার আমাকে সেবা দিয়েছে ? এগুলো সেবা নয় - এটা হচ্ছে ব্যবসা । ডাক্তার / হাসপাতাল থেকে আমি সেবা কিনেছি যেমনটা আন্যান্য দোকান থেকে আমি করে থাকি ।
সেবা হচ্ছে কাউকে এমনভাবে সাহায্য (সলিড)করা যেটার জন্য কোন মূল্য নেওয়া হয় না বা নামমাত্রমূল্য নেওয়া হয় । সত্যি বলতে সেটা বাংলাদেশে এখনও পাওয়া যায় সরকারী হাসপাতালগুলোতে । যে ডাক্তার ল্যাব এইডে গল ব্লাডার ফেলে ২৫-৩০০০০ টাকায় সরকারী হাসপাতালে সেটা সেই ডাক্তারই আবার ফ্রিতে করে (শুধু ঔষধের দাম দিতে হয় যা ২-৩ হাজারেরও বেশী হয় না , ইন্টার্ন ডাক্তাররা গরীব রুগীর জন্য সেটা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর M.R. দের থেকে অনেক সময় ফ্রিতে নিয়ে দেয়)- সেবা এরকম কাজকেই বলে।
তারপরও আপনার সুস্থতার জন্য অনেক ভালো লাগছে। এখন কেমন আছেন?
আমাদের মধ্যে নৈতিকতা আর মানবতার এমনই অবনতি হয়েছে।
ডাক্তার সেতো মানুষ নয়।
কসাই জবাই করে.....
গানটি মনে হচ্ছিল একটু একটু, অনেক দিন আগের শুনা একটি গান। বরতমানে
ডাক্তার এবং হসপিটালের আচরন খুব বেদনা বিদুর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন