ভূমিকম্প!! এখনও সাবধান হওয়ার সময় আছে।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:০৯:৪১ দুপুর

গতকাল বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টার দিকে এক প্রচণ্ড ৭.৫ ম্যাগনিচুড মাত্রার ভুমিকম্পে ধ্বংস হয়েছে ভারত,পাকিস্তান ও আফগানিস্তান এর বিশাল এলাকা। নিহত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৪০০ এর বেশি। আরো বাড়তে পারে এই সংখ্যা। ভুমিকম্পের মুল ধাক্কাটা গেছে আফগানিস্থান এর উপর। যেখানে প্রশাসনিক অব্যবস্থা আর যোগাযোগ এর অপ্রতলুতায় এখনও প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানে নিহত প্রায় তিনশ। ভারতেও ৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তান এর করাচি এবং ভারতের দিল্লিতেও উচ্চ মাত্রায় এই ভুমিকম্প অনুভুত হয়েছে। তবে স্থায়িত্ব বেশি সময় ছিলনা। না হলে অনেক বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। চিনা তিব্বত, সিংকিয়াং প্রদেশ, মধ্যএশিয়ার অনেক জায়গাতেও এই ভুমিকম্প অনুভব করা গেছে।

এই ভুমিকম্পের কেন্দ্র স্থল ছিল উত্তর আফগানিস্থান এর জুর্ম এ। উৎপত্তি মাটির প্রায় ২০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে। এই কারনে বিশাল এলাকা জুড়ে অনুভুত হলেও ক্ষয়ক্ষতি তুলনামুলক কম হয়েছে। গত মে মাসে নেপালে যে ভয়ংকর ভুমিকম্প হয়েছিল তার উৎপত্তি ছিল মাটির মাত্র ৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে। বেশ ভিতরে মুল কম্পন টি ঘটায় এইবার এই ভুমিকম্পের একটি বড় শক্তিই মাটির অভ্যন্তরে ক্ষয় হয়ে গেছে। যার কারনে নেপালের মত শক্তিশালি আফটার শক ও হয়নি।

এই ভুমিকম্পের কারন হিসেবে ধরা হচ্ছে পৃথিবির অভ্যন্তরিন টেকটনিক প্লেটগুলির চলাচল কে। ভারতিয় উপমহাদেশ একসময় এশিয়ার মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এক কোটি থেকে দশলক্ষ বছর আগে এই ভুখন্ড উত্তরে সরতে সরতে বর্তমান হিমালয় পর্বতমালার যায়গায় মিলিত হয় এশিয়ার মূল ভূখন্ডের সাথে। এই সংঘর্ষের ফলে হিমালয় ও হিন্দুকুশ পর্বতমালার সৃষ্টি যা এশিয়ার বাকি অংশের সাথে ভারতিয় উপমহাদেশ কে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ভুতাত্বিকভাবে ভারতিয় উপমহাদেশ ইন্ডিয়ান টেকটনিক প্লেট এর উপর অবস্থিত। এই প্লেট টি ইউরেসিয়ান টেকটনিক প্লেট এর সাথে একই হিমালয় পর্বতমালার নিচে মিলিত হয়েছে। এই প্লেটগুলি সবসময় সচল। এই সচলতার কারনে এগুলি প্রায়শঃই অন্য প্লেট এর সাথে মিলিত ও বিচ্ছিন্ন হয়। এর ফলে প্রচন্ড শক্তির সৃষ্টি হয় যা ভুমিকম্প ও কখনও কখনও আগ্নেয়গিরির আকারে বের হয়ে পরে।

গতকাল এর ভূমিকম্প ও এ্মনি একটি ঘটনার ফলে সৃষ্ট। ইন্ডিয়ান প্লেটটি হিন্দুকুশ পর্বতমালার নিচে ইউরেশিয়ান প্লেট এর সাথে মিলিত হলে যে শক্তির উদ্ভব হয় সেটাই ভুমিকম্প আকারে ছড়িয়ে পরে। গত কয়েক বছর ধরেই এই অঞ্চলে ভুমিকম্প বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারন হিসেবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কেও মনে করা হচ্ছে। ভূ-পৃষ্ট ও ভূ-অভ্যন্তরের তাপমাত্রার পার্থক্য সৃষ্টি হওয়ায় ভূ-অভ্যন্তরের স্থিতিশিলতা নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে গাছপালা ও পাহাড়-পর্বত কেটে ফেলার কারনে সৃস্টি হচ্ছে ভূস্তর এর ক্ষয়। একের পর এক এই ভূমিকম্পগুলি আমাদের কে সংকেত দিচ্ছে আরো ভয়ংকর বিপদ এর।

আল্লাহতায়লা পবিত্র কুরআন এর উল্লেখ করেছেন যে পাহাড়-পর্বতগুলি স্থাপন করা হয়েছে ভূমির জন্য খুঁটি হিসেবে। গাছ কেটে ফেলা সহ বিভিন্ন কারনে এই ই পর্বতগুলি ক্ষয়ে যাচ্ছে। আর এর ফলেই সৃষ্টি হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর। আমাদের বাংলাদেশ ও এই অবস্থার বাইরে নয়। পাহাড় কর্তন এবং উন্নয়ন এর নামে বন-জঙ্গল ধ্বংস করে আমরা ইতঃমধ্যেই পরিবেশ এর ভয়ংকর বিপর্যয় ঘটিয়ে ফেলেছি। সেই বিপর্যয় গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর সাথে মিলিত হয়ে সৃষ্টি করছে আরো বড় বিপর্যয় এর। এখনও সময় আছে সাবধান হওয়ার। হিমালয় বা হিন্দুকুশ পর্বতমালার চুত্যি গুলিতে এখনও আরো বড় ভূমিকম্প হওয়ার মত শক্তি জমা আছে বলেই বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের রক্ষা করুন।



ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও বিস্তার (দৈনিক আনন্দবাজার থেকে)



টেকটনিক প্লেটগুলির অবস্থান। (বিবিসি)

বিষয়: বিবিধ

১৯৯৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347380
২৭ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৩২
আহমদ মুসা লিখেছেন : সচেতন হওয়া জরুরী। ইদানিং শুনা যাচ্ছে কৃত্রিম কৌশল প্রয়োগ করে মানুষও নাকি ভূমিকম্প সৃষ্টি করছে নিজের শত্রুদেশকে গায়েল করার জন্য। আল্লাহই ভাল জানেন এর পেছনের শক্তিশালী অনুঘঠক কে!!
২৭ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:০৯
288447
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই সচেতনতাই তো আমাদের একেবারে নাই। সবাই ভাবে যে আমরা আমেরিকা চলে যাব!! কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে তাদের ও ছাড়বে না সেটা বুঝতে চায়না। কৃত্রিম ভূমিকম্প ঘটান যায় তবে এত উচ্চ মাত্রায় নয়।
347384
২৭ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৪৪
নাবিক লিখেছেন : এই মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকায় হইলে খবর আছে।
২৭ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:১১
288448
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সেটার সম্ভাবনা ও আছে! এখুনি সচেতনত হওয়া প্রয়োজন।
347420
২৭ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:১৪
হতভাগা লিখেছেন : ভুমিকম্প দেখি শুধু উপমহাদেশের আশে পাশেই হয় । আমেরিকা , ইউরোপ , অস্ট্রেলিয়া কিংবা আফ্রিকাতে হবার ঘটনা শোনা যায় না তেমন একটা ।
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৬
288453
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভুমিকম্প সবখানেই হয়। এই বছর এখনও সবচেয়ে উচ্চমাত্রার ভুমিকম্প হয়েছে চিলিতে। তবে ক্ষয়ক্ষতি কম। ভুমিকম্প শুধু মাত্রার উপর নয় বরং স্থায়িত্ব সহ আরো কয়েকটি বিষয়ের উপর ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করে।
২৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:০২
288591
হতভাগা লিখেছেন : CTBT তে সাগরের তলদেশের মাটির নিচে পারমানবিক বোমা পরীক্ষার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই । আর আমেরিকা CTBT তে সই করে নি ।

সব কিছু সহজভাবে চিন্তা করলেClown ধাঁধায় পড়ে যেতে হবে ।
347441
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০১
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ।

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে আল্লাহ সবাইকে হিফজত করুণ। আমীন।

সচেতনতা ও তথ্যমূলক পোস্টের জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর।
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:২১
288494
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অয়ালাইকুমআসসালাম।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। আমিন।
347475
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৫৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আল্লাহ রক্ষা করুক
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:১৩
288500
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File