মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী এবং তার জাতিয়তাবাদ।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪৮:০৬ রাত
উপমহাদেশের উলামায়ে কেরামদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালি এবং জ্ঞানের দিক দিয়ে উচ্চ স্থানে অবস্থান কারি আলিম ছিলেন মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী। তিনি ছিলেন শায়খুল হাদিস। দেওবন্দ এর প্রান প্রতিষ্ঠাতা শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান এর যোগ্য উত্তরাধিকারি হিসেবে তিনি দেওবন্দ এর মুহতামিম হিসেবে আজিবন দায়িত্ব পালন করেন। জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও তার অনেক অবদান আছে এবং বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনে তার অবদান অপরিসীম। এই উপমহাদেশের কয়েক লক্ষ উলামার সরাসরি কিংবা আত্মিক উস্তাদ তিনি।
শায়খুল হিন্দ মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীর জন্ম ১৮৭৯ সালে উত্তর প্রদেশের উন্নাও তে। তার পিতা সাইয়েদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন একজন শিক্ষক। তারা ছিলেন ফয়জাবাদ এর অধিবাসি এবং সাইয়েদ বংশিয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব এর ব্যার্থতার পর মুসলিম সমাজ যখন দ্বিন ও দুনিয়া উভয় দিকেই সমস্যাগ্রস্ত সেই সময় তার জন্ম। ১৮৯২ সালে মাত্র তের বছর বয়সে তিনি তৎকালিন মুসলিম সমাজের ভারতে অবস্থিত একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ এ যোগ দেন। দেওবন্দ এর প্রধান শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান এর প্রিয় শিষ্য হন তিনি। এছাড়া মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির কাছেও শিক্ষা লাভ করেন এবং চিশতিয়া তরিকায় সবক নেন ও খলিফা হন। দির্ঘ আঠার বছর দেওবন্দ এ শিক্ষা গ্রহন এর পর ১৯১০ সালে পরিবারের সাথে মদিনায় চলে যান। কিছুদিন পর ফিরে এসে দেওবন্দ এ শিক্ষকতায় যোগ দেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান বৃটিশ দের এই দেশ হতে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে ”রেশমি রুমাল” ছদ্মনামে একটি গুপ্ত আন্দোলন এর প্রতিষ্ঠা করেন। এই আন্দোলন এর সাথে ঘনিষ্ট ভাবে জড়িয়ে পড়েন মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী। কিন্তু কিছু বিশ্বাসঘাতক এর জন্য এই আন্দোলন প্রকাশিত হয়ে পরে। ১৯১৬ সালে মাওলানা মাহমুদুল হাসান এই আন্দোলনে তুর্কি খিলাফত এর সহায়তা গ্রহন এর উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরীতে যান। কিন্তু হিজাজের তৎকালিন শাসক বৃটিশদের সহযোগি শরিফ হুসাইন তাকে গ্রেফতার করে বৃটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তর করেন। বৃটিশ সরকার তাকে ভুমধ্য সাগরের মাল্টা দ্বিপে নির্বাসন দিলে উস্তাদ এর খেদমত করার জন্য সেচ্ছায় মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী তার সঙ্গি হন।
এই নির্বাসিত জিবনে একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল। প্রথমবার রমজান মাসের শুরুতে শায়খুল হিন্দ দুঃখ করে বলেন যে তিনি কিংবা মাওলানা মাদানী কেউই হাফিজে কুরআন নন তাই জিবনে প্রথমবার রমজান মাসে তারাবীতে কুরআন শোনা থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন। শিক্ষক এর এই আক্ষেপ দেখে মাওলানা মাদানী দুঃখ পান এবং তিনি তখনই কুরআন শরিফ হিফজ করতে শুরু করেন। প্রতিদিন একপাড়া হিফজ করে তিনি রাত্রে শুনাতেন তারাবীতে। এভাবে তিনি রমজান মাসের মধ্যেই পবিত্র কুরআন এর হাফেজ হয়ে যান। ১৯১৯ সালের শেষে তিনি নির্বাসন থেকে মুক্তি পান।
নির্বাসন থেকে ফিরে মাওলানা মাহমুদুল হাসান গোপন আন্দোলন এর পরিবর্তে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এর মাধ্যমে বৃটিশ বিরোধি সংগ্রাম শুরু করার উদ্দেশ্যে ”জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দ” গঠন করেন। মাওলানা মাদানী ও এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯২০ সালে মাওলানা মাহমুদুল হাসান ইন্তেকাল করলে মাওলানা মাদানী তার যোগ্য ছাত্র হিসেবে দারুল উলুম দেওবন্দ এর প্রধান এবং জমিয়তে উলামা ই-হিন্দ এর নেতা নির্বাচিত দেন। এই সময় ভারতবর্ষে নতুন এক সংগ্রাম এর অধ্যায় শুরু হয়। মহাত্মা গান্থি ভারতিয় জাতিয় কংগ্রেস এর প্রধান উপদেষ্টা হন এবং অসহযোগ আন্দোলন এর ডাক দেন। দেশের স্বাধিনতার জন্য একনিষ্ঠ সেবক মাওলানা মাদানী এই আন্দোলন কে সমর্থন করেন। একই সময় খিলাফত আন্দোলন এর জন্ম ও হয় এবং এর সাথেও মাওলানা মাদানী যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারনে ১৯২১ সালে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এই অবস্থায় জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দ এর নেতা হিসেবে তিনি রাজনিতিতে গুরুত্বপুর্ন ব্যাক্তি হয়ে পড়লেও দেওবন্দ এর প্রধান ও শায়খুল হাদিস হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করে যান।
রাজনৈতিক দর্শনে মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী ছিলেন একক ভারতের সমর্থক এবং কংগ্রেস এর সহযোগি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ভারতের সকল ধর্মিয় মানুষ একত্রিত হয়ে ভারতিয় জাতি গঠন করতে পারে এবং এতে মুসলিমদের অধিকার ও ধর্মিয় আচরনে কোন সমস্যা হবেনা। ১৯৩৭ সালে তিনি লাহোর জামে মসজিদ এ এই বিষয়ে একটি জ্ঞানগর্ভ ভাষন দেন। তৎকালিন কংগ্রেস কতৃক এই ভাষনটি পুস্তিকা আকারে ছাপিয়ে বিতরন করাও হয়। কিন্তু তখন উপমহাদেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও উলামায়ে কেরাম এর একটি বিরাট অংশই কংগ্রেস এর হিন্দু ব্রাম্মন্যবাদি নেতৃবৃন্দের মূল চরিত্র বুঝতে পেওে এই নিতির বিরোধি হয়ে উঠেন। দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল মাওলানা মাদানীর এই মতামত এর বিরুদ্ধে অসুস্থ অবস্থায় শয্যা থেকে রচনা করেন তার একটি কবিতা। কিন্তু এই প্রতিবাদ এর মুখেও মাওলানা মাদানী তার মতবাদ এ অটল থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত বিভক্ত হয় এবং মুসলিম প্রধান অঞ্চল নিয়ে সতন্ত্র মুসলিম আবাসভুমি পাকিস্তান তৈরি হয়। মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী অখন্ড ভারত এর সমর্থক হিসেবে আজিবন থেকে যান এবং ১৯৫৭ সালে ইন্তেকাল করেন।
হাদিসের উস্তাদ এবং উপমহাদেশের উলামায়ে কিরামদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারি হয়েও তিনি কেন অখন্ড ভারতে বিশ্বাস করতেন সেই প্রশ্নে জবাব দেওয়া অসম্ভব। তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তাকে সেই সিদ্ধান্তে উপনিত করেছিল। তিনি তার বিশ্বাস এর উপর অটল ছিলেন। এটা তার জন্য সন্মানের। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত কতটুক সঠিক ছিল সেই বিষয়ে আলোচনার অবকাশ অবশ্যই আছে। তিনি যখন অখন্ড ভারতের সমর্থন করেছিলেন তিনি এই বিশ্বাসেই করেছিলেন যে আধুনিক যুগে সকল বর্ণ,ধর্ম নির্বিশেষ ওয়াতন তথা দেশ এর উপর ভিত্তি করে জাতি গঠিত হয়। তার এই সরল বিশ্বাস ও ছিল যে বৃটিশ ভারতের শেষ দিকে যেমন মুসলিম জাতি বৃটিশদের অধিনে থেকেও নিজেদের তাহযিব-তমুদ্দুন রক্ষা করেছে সেভাবে অখন্ড ভারতেও মুসলিম জাতি সন্মান এর সাথে থাকবে। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা তিনি তাই করেছিলেন মনে হয়।
কিন্তু তিনি সম্ভবত এই কথাটি বুঝতে পারেননি যে আধুনিক গনতন্ত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিয়ম এর ফাঁকে অসম্ভব নয় যে ভারতিয় ব্রাম্মন্যবাদি নেতৃবৃন্দ মুসলিম জনতার অধিকার হরন করবে। তারা একক ভারতিয় জাতি বলতে বুঝে কেবল হিন্দু সংস্কৃতির অনুসারিদের। এই বিষয়টি কিন্তু তার সহপাঠি ও ছাত্র দের অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন। তার সহপাঠি মাওলানা আশরাফ আলী থানভি এবং মাওলানা সাব্বির আহমদ উসমানি ছিলেন অখন্ড ভারতিয় জাতিয়তাবাদ এর প্রবল বিরোধি এবং পাকিস্তান এর সক্রিয় সমর্থক। উস্তাদ এর প্রতি পূর্ন শ্রদ্ধা রেখেও তার ছাত্র মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরি ও ছিলেন পাকিস্তান এর সক্রিয় সমর্থক। মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী প্রতি বছর রমজান মাসে সিলেটে আসতেন বিভাগপূর্ব কালে। এই জন্য সেখানে তার সমর্থক বেশি ছিল। কিন্তু সিলেটে পাকিস্তান অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে গনভোটে পাকিস্তান এর পক্ষে প্রধান প্রচারনা কারিদের একজন ছিলেন মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরি। তার সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় ১৯৪৫ সালে মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানি আরো কয়েকজন উলামায়ে কেরাম কে সাথে নিয়ে জমিয়তে উলামা-ই-ইসলাম গঠন করেন। তার আরেক প্রিয় ছাত্র সাইয়েদ আবদুল আহাদ আল মাদানী ও দির্ঘদিন তার সমর্থক ছিলেন এবং ভারতেই থেকে যান । কিন্তু ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তার মত পরিবর্তিত হয় এবং তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং পরবর্তিতে চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ এর খতিব হিসেবে জিবন অতিবাহিত করেন। তিনি চট্টগ্রামে আসার পর একবার মন্তব্য করেছিলেন যে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ কংগ্রেস এর সভাপতি ও ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রি হয়েও শেষ জিবনে নিজের ভুল স্বিকার করেছিলেন এবং তিনিও তাই করছেন যে অখন্ড ভারতের চিন্তা তার ভুল ছিল।
মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী পাকিস্তান এর বিরোধি হলেও ছিলেন উপমহাদেশের মুসলিমদের কল্যানকামি। তার কাছে যেটা ভাল মনে হয়েছিল তিনি সেটাই করেছেন। হতে পারে তার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। এটা এখন অনেকটাই প্রমানিত বর্তমান ভারতের অবস্থা দেখে যে কেউ অনুমান করতে পারবেন। যদি তিনি আরো কিছুদিন বাঁচতেন হয়তো তার ছাত্র সাইয়েদ আবদুল আহাদ আল মাদানীর মত তার ভুল স্বিকার করতেন। কিন্তু তা হয়নি। এর জন্য তিনি দায়ি নন। কিন্তু এটা ভুল যে তার মতামত এর উপর ভিত্তি করে এখনও পাকিস্তান আন্দোলন কে ইসলাম বিরোধি ফতোওয়া দেওয়া। পাকিস্তান বা বাংলাদেশে কেন ইসলামি শাসন কায়েম হয়নি সেটা সম্পুর্ন ভিন্ন প্রসঙ্গ। আল্লাহতায়ালা এই মহান বুজুর্গ ও উস্তাদ এর উপর রহমত নাযিল করুন।
তথ্যসুত্র:-
* উপমহাদেশের ইংরেজ বিরোধি সংগ্রামের সূচনায় উলামায়ে কেরাম- আবদুল মান্নান তালিব।
* উপমহাদেশের আলেম সমাজের বিপ্লবি ঐতিহ্য-মাওলানা মুহাম্মদ মিয়া।
* মহাকবি ইকবাল- ডঃ আবু সাইদ নুরউদ্দিন।
* ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম- মাওলানা আবুল কালাম আযাদ।
* ফ্রিডম এট মিডনাইট- ল্যারি কলিন্স ও ডমিনিক লাপিয়ের।
* আমার জিবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনিতি- আবুল হাশিম।
* আমার কালের কথা-অধ্যাপক আবদুল গফুর।
* আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরি-নাসীম আরাফাত।
বিষয়: বিবিধ
৭৮৬১ বার পঠিত, ৫৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে রিদওয়ান কবির সবুজ ভাই আমার মন্তব্য রিমুভ করতে পারেন।
আপনাকে ধন্যবাদ। সুস্থ্য থাকুন ভাল থাকুন।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
রেশমী রুমাল আন্দোলন সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেক, বিস্তারিত জানা থাকলে কোন এক সময় পোষ্ট দেওয়ার অনুরোধ রইল।
এক সংগ্রামী মহাপুরুষের জিবন বৃত্তান্ত জানানোর জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর
ধন্যবাদ আপনাকেও।
তাই তার সিদ্ধান্ত কতটুকু ভুল ছিল, এই বিষয়টি বিবেচনা করলেই বুঝা যায়। শুকরিয়া।
আল্লাহই ভালো জানেন। অনেক শুকরিয়া সবুজ ভাই।
সুফি বলতে যদি এখানে প্রচলিত সুফিজম নামক ফেরক্বাকে বোঝানো হয় তাহলে আমার মতে বেইনসাফি হবে। কেননা, প্রাথমিক ভাবে সুফি বলতে ঐ সব বুর্যুগদের বোঝানো হতো, যারা মানুষকে ইলমে দ্বীনের পাশাপাশি নফসের সাথে জিহাদের কৌশলও শেখাতেন। তাঁদের অল্পতুষ্টি, সহজ সরল জীবন যাপন ও শরীআর জ্ঞান থেকে তাঁদের স্তর অনুমান করা যেতে পারে। মোটামুটি ৬০০হি. সাল পর্যন্ত এর মধ্যে ফেরক্বা প্রবেশ করতে পারেনি। পরবর্তীতে কিছু সুফি নামধারী অযোগ্য ব্যক্তিদের শরীআ বিরোধী কর্মকান্ডে সুফিগণ যদিও বিতর্কিত হন, কিন্তু প্রকৃতার্থে যারা সুফি তাদের প্রশংসা সবসময়ই হয়েছে। আধুনিক যুগে কবর পুজারি, মাজার পুজারি, ভন্ড পীরদের নিজেদের সুফি হিসেবে পরিচয় দান ও মেডিয়াভাল ইউরোপিয়ান স্কলারদের পার্শিয়াল রিসার্চও সুফিবাদকে বির্তকিত করে তোলার কারণ।
এবার একটু চিশতিয়া তরিক্বার উপর আলোকপাত করতে চাই। চিশতিয়া শব্দটি ফার্সি শব্দ থেকে আগত, আরবী প্রতিশব্দ, যা আফগানিস্থানের হেরাথ প্রদেশের অর্ন্তগত একটি শহর । এই শহরের একজন বিখ্যাত শাইখ হযরত মাওলানা আবু ইসহাক্ব ইবনে আবু আহমাদ আল শামী আল চিশতি (মৃত্যু ৩২৯হি। এই আলেম অত্র অঞ্চলে সর্বপ্রথম মানুষকে দ্বীনী ইলমের মুযাহাদার শিক্ষা দিতেন। উনি স্বীয় সময়ের অন্যতম যোগ্য মুহাদ্দিস, মুহাক্কিব ও মুফাস্সির ছিলেন। পরবর্তীতে খুব বেশি বিখ্যাত না হলেও একেবারে মাযহুলও নন। তাঁর সনদ দেখলেই এ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যেতে পারে-
আবু ইসহাক্ব আল শামী-> আল্লামা মামশাদ দিনওয়ারী-> আমিনুদ্দীন আবি হুবাইরা আল বসরী-> হুযাইফা আল মার'আশী-> শাইখ ইবরহীম বিন আদহাম-> শাইখ ফুযাইল ইবন আয়ায-> শাইখ আব্দুল ওয়াহিদ বিন যাইদ-> শাইখ খাজা হাসান বসরী-> হযরত আলী বিন আবি তালিব-> রাসুলুল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃ)
এই বুযুর্গের পরবর্তী ৬ষ্টতম পর্যায়ে রয়েছেন শাইখুল হিন্দ হযরত মুঈনুদ্দিন চিশতী সানজারী (রহ.)।
হ্যাঁ, পরবর্তীতে এই চিশতিয়া নাম ভাঙ্গিয়ে অনেকেই ব্যবসার দোকান খুলে বসেছে, সুফি নাম ধারণ করে সহজ সরল মুসলমানদের দ্বীন-দুনিয়া বরবাদ করছে, কিন্তু যারা প্রকৃত সুফি ছিলেন তাদের বিতর্কিত এবং তরীক্বতের প্রকৃত চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা আমার মতে সমীচিন নয়।
নাম হিসেবে অনেক পরিচিত 'হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ:' সম্পর্কে তথ্য সমৃদ্ধ উপস্হাপনা ভাল লাগল এবং উনার সম্পর্কে আরো জানতে উৎসাহিত করল!
আমার মরহুম নানাজান মাওলানা বুরহান উদ্দিন রহ: উনার থেকে খেলাফতপ্রাপ্ত ছিলেন!
কয়েকবার দাওয়াত করে নানাজান এনেছিলেন শুনেছি!
একটা মাদ্রাসা করেছেন উনার নামে!
আসআদ মাদানী রহ: এর থেকে খেলাফত নিয়েছেন আমার খালাতো ভাই মাওলানা আনওয়ার মাহমুদ!
এতদ সত্বেও কিছুই জানি না!
ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ উপলব্ধি জাগিয়ে দেয়ায়!!
মাদানী ও থানবী সিলসিলার দ্বন্ধ আমাকেও মরহুম মাদানী সম্পর্কে জানাতে অনুৎসাহিত করেছে!
হুসাইন আহমদ মাদানী রহ:-এর বংশধর(ছেলের ছেলে) দু'এক বছর অন্তর এখনও আসেন নানার প্রতিষ্ঠিত জামেয়া হুসাইনিয়া মাদ্রাসায়!
বড় ভাই শিবির পরে জামাত সংশ্লিষ্ট হওয়ায় এবং জামাত কে পছন্দ করায় মামাদের-খালাদের সাথে মিলে না আমাদের!
গোমরাহ মনে করে আমাদের কে তারা!
প্রচলিত ভন্ড পীরদের মত নয় কিন্তু এই বংশের পীরেরা!
আজ দিন বদলিয়েছে, মানুষ বুঝতে শিখেছে তাদের মুরুব্বীরা কোথায় ভুল করেছে। ভুল করার মাধ্যমে সমস্যা নাই, তবে ভুল স্বীকারের মাধ্যমে প্রভুত কল্যান আছে। আল্লামা হাফেজী হুজুর (রহ) পুরো জীবনভর রাজনীতির বিরোধীতা করেছেন, কিন্তু বিছানায় গিয়ে বুঝতে পারলেন তিনি ভুল করেছেন। তিনি সকল ছাত্রদেরকে ঢেকে বললেন: 'এতদিন যা বলেছিলাম সব ভুল, আজ থেকে তোমরা সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহন করো'। আজকের দিনে সক্রিয় ইসলামী দলগুলোর মাঝে জামায়াতে ইসলামী ব্যতিত বাকী সব দুলোগুলো হাফেজী হুজুরের ছাত্রদের কল্যানে হয়েছে। তাঁর একটি ভুল স্বীকার ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে, তিনিও সম্মানীত হয়েছেন আমরাও দৃষ্টান্ত নিতে শিখেছি।
জানিনা বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য ব্যাপক অদূরদর্শী মতবাদ তথা তাবলীগ জামায়াতের মুরুব্বীরা কখন বুঝবে যে, তাবলীগের মত সুফি মতবাদ কোনদিন প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্টা করতে পারেনা, যতক্ষন না সমাজ পরিবর্তন না হয়। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
এই তাকলিদ এর সমস্যাই আমাদের দেশে ইসলামি আন্দোলনগুলিকে আলাদা করে রেখেছে। মানুষ ভুল করতেই পারে। এই বিষয়টা কিছু অতি ভক্ত কোনভাবেই মানতে পারেনা। কওমি শিক্ষাধারাই এই মনোভাব প্রকট। অথচ দুইজন প্রধান আলেম। বায়তুল মুকাররম এর খতিব মাওলানা উবায়দুল হক এবং আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ এর সাইয়েদ আবদুল আহাদ মাদানী উভয়ই ছিলেন মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীর সরাসরি ছাত্র। তারা চিরকালই তাকে শ্রদ্ধা করেছেন। মাওলানা উবায়দুল হক শুনেছি তার নামে কুরবানি দিতেন। কিন্তু এরা কেউই তার রাজনৈতিক মত কে সঠিক বলেননি এবং তার অন্ধ অনুসরনেও লিপ্ত থাকেন নি।
যাই হোক উপমহাদেশের আজাদী আন্দোলন ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনি শিক্ষার অস্থিত্ব ঠিকিয়ে রেখে তা নবরূপে আলোকিত করার পেছনে হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানী (রাহ) সহ ওলামায়ে দেওবন্দের আলেম ওলামাদের ত্যাগ ও কুরবানী অশ্বীকার করার সুযোগ নেই। যারা এসব আলেমদের অবদানকে অশ্বীকার ও খাটো করে দেখার চেষ্টা করে তারা হয়তো জ্ঞানপাপী নতুবা ভিন্ন কোন মতলবে ধান্ধাবাজীতে নিয়োজিত। কিন্তু একটা কথা ভূলে গেলে চলবে না যে, এসব মহান সম্মানিত আলেম ওলামারা নবী রাসুল পর্যায়ের মান মর্যাাদার অধিকারী নয় এবং তা মনে করাটাও ঈমান আক্কিদার পক্ষে ক্ষতিকর। এরা ভূলের উর্ধ্বেও নয়। যেহেতু এরাও ইনসান তথা মানুষ, কাজেই তাদের চিন্তা-ফিকিরেও গলদ থাকতে পারে, বিশেষ করে ১৯০ বছরের ইংরেজদের উপনিবেসে গোলামীর পর্যায়ে নেমে যাওয়া উপমহাদেশের অধিকারহারা বঞ্চিত জনমানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় আক্কিদা বিশ্বাস হেফাজতের জন্য গৃহীত সিদ্ধান্তসমুহ একদম ভূলের উর্ধ্বে মনে করা সটিক বিবেচনা প্রসূত নয়। নবী রাসুলরা মাসুম, বে-গুনাহ। তাদের পরে আসে রাসুল (সা)'এর সাহাবারা। তাদেরকে ইসলামের পরিভাষায় মাসুম বলা হয় না, কিন্তু তাদেরকে পবিত্র কোরআনের আয়াতের আলোকে মাহফুজ হিসেবে গবেষকেরা মনে করেন। কিন্তু ক্বাউমী ধারার মাঠ পর্যায়ের বন্ধুরা তাদের আকাবেরদের ইজ্জত ও সম্মান করতে গিয়ে অনেক সময় নবী রাসুল ও সাহাবাদের ত্ববকাটাও বেমালুম ভূলে যান।
বক্ষমান আপনার এই আর্টিক্যালটিতে খুব নিরপেক্ষভাবেই মাওলানা মাদানী সম্পর্কে অনেক সত্য কথা তুলে ধরেছেন। তার রাজনৈতিক ফলসফা অবস্থান ও দুর্দশিতা উপমহাদেশের বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্টীর পক্ষে এসেছে দাবী করাটাও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে কিছুটা ভূল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান ইন্ডিয়াতে মুসলমানদের অবস্থা বিবেচনায় আনলে তা বুঝতে সহজ হবে। অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছে ছিল কিন্তু মন্তব্যের পরিসর বড় হয়ে যাচ্ছে বিধায় এখানেই শেষ করছি।
তাই তার সিদ্ধান্ত কতটুকু ভুল ছিল, এই বিষয়টি বিবেচনা করলেই বুঝা যায়। শুকরিয়া।
প্রাসংগিকভাবে একটু বলা যায়, আজকের ভারতের একজন মুসলীম নেতা আসাদউদ্দীন ওয়াইসি যাকে ঘিরে বর্তমান ভারতের মুসলমানরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, তাঁর মতে ভারতের সব সম্প্রদায় উন্নতি করলেও মুসলমানরা এগোতে পারেনি। ধন্যবাদ
মওদুদী ও দেওবন্দীদের মাঝে শুধু এই একটি বিষয় নয়, অন্য কোন মতানৈক্য ছিল। কারণ থানবী ও দেওবন্দী আলেম ছিলেন, কিন্তু এই বিষয়ে মওদুদী ও থানভী একই মতের ছিলেন।
"তাঁর মতে ভারতের সব সম্প্রদায় উন্নতি করলেও মুসলমানরা এগোতে পারেনি।"
ঠিকই বলেছেন, ভারত বিভক্ত হওয়ার কারণে বর্তমান ভারতের মুসলমানদের কোন উন্নতি হয়নি। কারণ তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। বার বার তারা সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হচ্ছে। ভারত বিভক্ত না হলে এগুলোর সম্ভাবনা ছিল না। কথাগুলো মাদানী সাহেব আগেই ভেবে ছিলেন বিধায় বিভক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ছিলেন।
তাই তার সিদ্ধান্ত কতটুকু ভুল ছিল, এই বিষয়টি বিবেচনা করলেই বুঝা যায়। শুকরিয়া।
অবিভক্ত ভারতের একটা কলংকিত ইতিহাসের ধারা হচ্ছে শত শত বছর ধরে হাজার হাজার বার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। হিন্দু-মুসলমান বিরোধ এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রধান উল্লেখযোগ্য বিষয়। আর এটাই ছিল ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির প্রধান কারণ। মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন এবং পরবর্তীতে উঁনার সুযোগ্য পুত্র মওলানা আসাদ মাদানী ঐ দল থেকে তিনবারের মত ভারতীয় পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন এবং কংগ্রেস তাকে একজন আদর্শ ধমনিরপেক্ষ নেতা হিসেবে বিবেচনা করতো। মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) এর পরিবার রাজনৈতিকভাবে খুবই প্রভাবশালী এবং কংগ্রেসের সহযোগিতায় দেওবন্দ মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। উঁনার আরেক পুত্র মওলানা আরশাদ মাদানীও কংগ্রেসের এমপি নমিনেশন প্রার্থীরহ। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের প্রধান বৈষম্যের শিকার মুসলমানরা। এখনো কোন কোনো বিদ্যালয়ের তাদের আলাদা ড্রেস পরিধান করতে হয়, চাকুরীর ইন্টারভিউতে মুসলীম প্রার্থী ার নাম দেখলে ইন্টারভিউ দেয়ার প্রয়োজন নেই বলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এখন বিদ্যালয়ে ইয়োগা চালু করা হচ্ছে এবং এর অংশ হিসাবে সূর্যকে প্রণাম করতে হবে সব বিদ্যার্থীকে।
ভারতের শিখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় সংখ্যালঘু হয়েও শিক্ষা-দীক্ষায়, চাকরী-বাকরীতে বেশ অগ্রসর। অথচ তারা সংখ্যায় মুসলমানের চাইতে অনেক অনেক কম। এখন কিভাবে বলবেন অবিভক্ত ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোন সম্ভাবনা ছিলনা কিংবা মুসলমানরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার কারণে উন্নতি করতে পারেনি!
অবিভক্ত ভারতের একটা কলংকিত ইতিহাসের ধারা হচ্ছে শত শত বছর ধরে হাজার হাজার বার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। হিন্দু-মুসলমান বিরোধ এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রধান উল্লেখযোগ্য বিষয়। আর এটাই ছিল ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির প্রধান কারণ। মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন এবং পরবর্তীতে উঁনার সুযোগ্য পুত্র মওলানা আসাদ মাদানী ঐ দল থেকে তিনবারের মত ভারতীয় পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন এবং কংগ্রেস তাকে একজন আদর্শ ধমনিরপেক্ষ নেতা হিসেবে বিবেচনা করতো। মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) এর পরিবার রাজনৈতিকভাবে খুবই প্রভাবশালী এবং কংগ্রেসের সহযোগিতায় দেওবন্দ মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। উঁনার আরেক পুত্র মওলানা আরশাদ মাদানীও কংগ্রেসের এমপি নমিনেশন প্রার্থীরহ। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের প্রধান বৈষম্যের শিকার মুসলমানরা। এখনো কোন কোনো বিদ্যালয়ের তাদের আলাদা ড্রেস পরিধান করতে হয়, চাকুরীর ইন্টারভিউতে মুসলীম প্রার্থী ার নাম দেখলে ইন্টারভিউ দেয়ার প্রয়োজন নেই বলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এখন বিদ্যালয়ে ইয়োগা চালু করা হচ্ছে এবং এর অংশ হিসাবে সূর্যকে প্রণাম করতে হবে সব বিদ্যার্থীকে।
ভারতের শিখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় সংখ্যালঘু হয়েও শিক্ষা-দীক্ষায়, চাকরী-বাকরীতে বেশ অগ্রসর। অথচ তারা সংখ্যায় মুসলমানের চাইতে অনেক অনেক কম। এখন কিভাবে বলবেন অবিভক্ত ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোন সম্ভাবনা ছিলনা কিংবা মুসলমানরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার কারণে উন্নতি করতে পারেনি!
ইতিহাস পড়তে ভালো লাগে,,,
অনেক কস্ট করে লেখার জন্য
শুভকামনা থাকলো।
আল্লাহর রহমতে ভালো আছি প্রচন্ডরকম অসুস্থ ছিলাম গতশনিবার থেকে।
আশা করি এখন ভাল হয়েছেন।
আবার আপনার পোষ্টে দেখলাম।
ভালো লাগলো মহান বুযুর্গকে নিয়ে লেখা পোষ্টটি!
৩০দিনে কুরআন মুখস্ত করা আবার এমন বয়সে!!! আমার কাছে বিষয়টা কারামত মনে হলো।
জাজাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন