নষ্ট এক সমাজের প্রতিক ইন্দ্রানি মুখোপাধ্যায়

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৫২:৫৯ রাত

গত কয়েকদিন ভারতিয় গনমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নামটি হলো ইন্দ্রানি মুখোপাধ্যায়। খুববেশি পরিচিত নাম ছিলনা এটি দিন দশেক আগেও। যতটুক পরিচয় ছিল সেটা ছিল তার স্বামি পিটার মুখোপাধ্যায় জিনি একসময় স্টার ইন্ডিয়া তথা স্টারটিভি গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ছিলেন তার স্ত্রী এবং আইএনএক্স মিডিয়া নামের মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এর চেয়ারম্যান হিসেবে। মিডিয়া ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকার সুত্রেই তার পরিচিতি ছিল। আর কোন বিশেষ যোগ্যতাও তার ছিলনা। কিন্তু এই মুহুর্তে তিনি ভারতিয় মিডিয়ায় সবচেয়ে উচ্চারিত নাম। কারন!!! তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারই গর্ভজাত সন্তান শিনা বরা কে হত্যার।

আসামের করিমগঞ্জের এক মধ্যবিত্ত বাঙ্গালি পরিবার এ ১৯৭২ সালে জন্মনেন ইন্দ্রানি ওরফে পরি। বাবা উপেন্দ্র ও মা দুর্গা রানি বরার সন্তান পরি ছিলেন মোটামুটি মেধাবি। কিন্তু কোন কারনে প্রচন্ড উচ্চাভিলাসি এই মহিলা মাত্র ১৬ বছর বয়সে পালিয়ে যায় আরেক অসম নিবাসি বাঙ্গালি ছেলের সাথে। সিদ্ধার্থ দাশ নামের সেই স্বামি (শেষ পাওয়া তথ্য মতে তাদের বিয়ে হয়নি তারা লিভ টুগেদার করতেন) তাকে দুই সন্তান দেয়। শিনা ও মিখাইল। কিন্তু অতি উচ্চাভিলাষি ইন্দ্রানি মাত্র বছরতিনেক এর মধ্যে ত্যাগ করেন সিদ্ধার্থকে। সঞ্জিব খান্না নামের একজন এর সাথে কলকাতা চলে যান তিনি। সেখানে মিডিয়া আর কর্পোরেট জগতে হয়ে উঠেন বিশেষ খ্যাত। দুই সন্তান কে দিয়ে আসেন মা-বাবার কাছে। আইএনএক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন স্বামির সাথে। কাজের সুত্রে পরিচয় হয় তৎকালিন স্টার ইন্ডিয়ার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার পিটার মুখোপাধ্যায় এর সাথে। উচ্চাভিলাসি ইন্দ্রানি পিটারকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন নতুন টিভি চ্যানেল নিউজএক্স। স্বামি সঞ্জিব খান্নাকে ত্যাগ করতেও সময় নেননি। প্রথম থেকেই শেয়ারহোল্ডার আর চ্যানেল এর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে বিভিন্ন সমস্যায় আর ঝগড়ায় জড়িয়ে শেষে ২০০৯ সালে চ্যানেলটি বিক্রি করে দেন তারা। অন্য ব্যবসা নিয়েই থাকেন মুমবাইতে।

মাত্র দুই-তিন সপ্তাহ আগে তার প্রাক্তন গাড়ি চালক অন্য এক মামলায় গ্রেফতার হন মুম্বাই পুলিশ এর কাছে। জেরার মুখে তিনি প্রকাশ করেন বর্তমান অপরাধের সাথে জড়িত না থাকলেও তিন বছর আগের এক অপরাধ এর সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। সেই অপরাধ টি ছিল তার প্রাক্তন বস ইন্দ্রানি মুখোপাধ্যায় এবং তার প্রাক্তন স্বামি সঞ্জিব খান্নার সাথে ইন্দ্রানিরই কন্যা শিনা বরা এর লাশ মুম্বাই থেকে প্রায় একশ কিলোমিটার দুরে এক জঙ্গলে পুঁতে ফেলার সাথে। প্রথমে গুরুত্ব না দিলে ও পরে পুলিশের খেয়াল হয় যে বেশ কিছুদিন আগে উল্লেখিত জায়গা থেকে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছিল। পুনরায় তদন্ত শুরু হয় এবং মুম্বাই পুলিশ একপর্যায়ে গ্রেফতার করে ইন্দ্রানি মুখোপাধ্যায় কে। তারপরই প্রকাশিত হয় এই উচ্চাভিলাসি মহিলার জিবন কথা।

ইন্দ্রানি তার ক্যারিয়ার এর জন্য এতই ব্যাস্ত ছিলেন যে তার প্রথম দুই সন্তান শিনা ও মিখাইল কে তার বর্তমান স্বামি পিটার এর কাছে পরিচয় দিয়েছিলেন তার ছোট ভাইবোন বলে! এই পরিচয়েই তারা মুম্বাইতে পিটারের বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন। কিন্তু শিনা ও মিখাইল একসময় পিটার এবং তার আগের পক্ষের সন্তান রাহুল এর কাছে তাদের পরিচয় বলে দেয়। পিটার বিশ্বাস না করলেও রাহুল বিশ্বাস করেন। তার সাথে শিনার সম্পর্ক ও তৈরি হয়। কিন্তু সম্পর্কে মাসি হয় এই অভিযোগ তুলে ইন্দ্রানি তাদের কে বাধা দেন। একপর্যায়ে ইন্দ্রানি রাহুল ও পিটারকে জানান যে শিনা আমেরিকায় চলে গেছে। এতদিন পর শিনার মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। ইন্দ্রানি এখনও শিনা আমেরিকায় আছেন এই দাবি করলেও এখনও শিনার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন প্রমান না থাকায় তাকে মৃত বলেই ধরে নিচ্ছে মুম্বাই পুলিশ।

শুধু নিজের সন্তানদের ভাই-বোন বলে পরিচয় দেওয়া নয়। এই ঘটনার পর প্রকাশিত হচ্ছে এক মহা ক্যারিয়ারিষ্ট নারির বিভিন্ন ঘটনা। নিউজএক্স চ্যানেল এর প্রাক্তন বার্তা সম্পাদক এক লিখায় লিখেছেন এই মহিলা ছিলেন প্রচন্ড দাম্ভিক। সবসময় সবাইকে বুঝোতে চাইতেন তিনি অতি বড়লোক বাকি সবাই ফকির বা তার দয়ার মুখাপেক্ষি। একটা ঘটনা তিনি লিখেছেন যে একবার হঠাৎ করে দেখলাম ইন্দ্রাণী এক নিউজ অ্যাঙ্করকে বললেন, ‘‘বাহ, তোমার জুতোটা তো দারুণ। কিন্তু খুব সস্তা, তাই না?’’ সে দিন থেকে আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় কী অসম্ভব ‘ওয়ানাবি’, নিম্নমানের একজন মহিলা। যাঁর জীবনের ফিলোজফিটাই হল, আমি কতটা বড় আর তুমি কত ছোট সেটা বলে মানুষকে অপমান করা। এই ছিল এই মহিলার মানসিকতা।

ইন্দ্রানি মুখোপাধ্যায় তার সন্তান শিনা কে হত্যা করেছেন কিনা সেটা এখনও প্রমানিত না হলেও তার অন্যান্য আচরন তথা নিজের গর্ভজাত সন্তানদের ভাইবোন বলে পরিচয় দেওয়া এবং প্রয়োজনে স্বামি বা বন্ধুকে ছুড়ে ফেলে উন্নতির সুযোগ গ্রহন করা কিন্তু প্রমানিত। এই সমাজে এই ধরনের মানুষ কিন্তু বেড়েই চলছে। বিশেষ করে নারিদের মধ্যে এই ধরনের মানসিকতা এখন খুবই বেশি।

মানুষের মধ্য থেকে মানবিকতা চলে গিয়ে যখন তথাকথিত আমিত্ব বড় হয়ে উঠে। তখন মায়ের হাত ও সন্তান কে হত্যা করতে পারে। যেখানে মায়ের স্নেহ নাই। আছে শুধু অর্থ,ক্ষমতা ক্যারিয়ার। এই বহমান সমাজে আমরাও হারিয়ে ফেলছি মানবতা। শুধু অর্থের পরিমানে হিসাব করছি সব। উচ্চাভিলাষ সন্তানকে ভাইবোন বলে পরিচয় দিতেও বাধা দিচ্ছেনা। মা-বাবা কে অস্বিকার করতেও নয়। এই সমাজ এর হাত থেকে কিভাবে বাঁচব আমরা???

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৭ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

339101
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:০৬
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। এই রকম হাজার ইন্দ্রানী আমাদের বর্তমান সমাজে বিচরন করছে, যারা অহংকারের দম্ভে সবাইকে হেয় মনে করে । এর একমাত্র কারন পুজিবাদি সমাজ ব্যাবস্থা ।
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৭
280472
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ওয়ালাইকুমআসসালাম।
সত্যিই এই পুঁজিবাদি সমাজব্যবস্থা মানুষকে বানিয়ে ফেলেছে মানবতাহীন। আমাদের দেশেও এমন ইন্দ্রানি অনেক দেখেছি।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।
339102
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:১১
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : আজ কয়েকদিন ধরেই এই খবরটা দেখে আসছি...। মানুষের মাঝ থেকে মানবতা শব্দটা মনে হয় দিন দিন উঠে যাচ্ছে। কোন মা তার ক্যারিয়ারের জন্য, উচ্চাভিলাষি জীবন যাপনের জন্য কি নিজ সন্তানকে ভাইবোন হিসেবে পরিচয় দিতে পারে?
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৮
280474
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।
অবিশ্যাস্য হলেও ঘটনাটি সত্য। এখন এভাবেই আমরা মানবতা থেকে সরে গিয়ে শুধু দুনিয়াকে উপভোগ করতে চাচ্ছি।
339104
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৪
হতভাগা লিখেছেন :
বিশেষ করে নারিদের মধ্যে এই ধরনের মানসিকতা এখন খুবই বেশি।


নারীর ছলনা ভয়ংকর - সূরা ইউসূফ

কমবেশী সব মিডিয়ার সাথে সম্পর্কিত সকল নারীরা এরকমই
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২১
280550
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
339107
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৯
নাবিক লিখেছেন : পিশাচিনী
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২১
280551
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দেখতে কিন্তু মানুষই!
339111
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৪২
আবু জান্নাত লিখেছেন : মানুষের মধ্য থেকে মানবিকতা চলে গিয়ে যখন তথাকথিত আমিত্ব বড় হয়ে উঠে। তখন মায়ের হাত ও সন্তান কে হত্যা করতে পারে। যেখানে মায়ের স্নেহ নাই। আছে শুধু অর্থ,ক্ষমতা ক্যারিয়ার। এই বহমান সমাজে আমরাও হারিয়ে ফেলছি মানবতা। শুধু অর্থের পরিমানে হিসাব করছি সব। উচ্চাভিলাষ সন্তানকে ভাইবোন বলে পরিচয় দিতেও বাধা দিচ্ছেনা। মা-বাবা কে অস্বিকার করতেও নয়। এই সমাজ এর হাত থেকে কিভাবে বাঁচব আমরা???

একবারে সত্যি কথা বলেছেন, মানবতা হারিয়ে গেলে এমনই হয়। বর্তমান যুগে স্বামীর অবাধ্য হওয়া ও একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্কই একজন মমতাময়ী মাকে জানোয়ারে পরিণত করে।
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২৩
280552
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অতিরিক্ত সম্পদ আর খ্যাতির লোভ মানুষকে মানুষের পর্যায়ে রাখেনা। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
339145
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:১৫
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এসব মানুষ উদ্ভট, উৎকট যৌন সূরসুরি মার্কা নাটক ছবি বানিয়ে জগতের মানুষের সন্তানদের বিপথে নিয়ে পথভ্রষ্ট করেছে। নিজেরা পাপ পঙ্কিলতার মাঝে ঢুবে থাকে, অন্যকেও সেখানে আহবান করে। পাপ নাকি বাপকেও ছাড়েনা। যে কদর্য পাপ লুকিয়ে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছে, সেই কদর্য পাপে এবার নিজেই মাখামাখি হয়েছে।

বাংলাদের মিডিয়া ও চিত্রজগতেও এই ধরনের কান্ড খারখানায় ভরপুর। নায়ক-নায়িকা, পরিচালক-প্রযোজকদের কদাকার কাহিনী শুনলে শয়তান পর্যন্ত এগুলোকে ওস্তাদ মেনে চলবে। ইন্দ্রানীর সেই মিডিয়া জগতের প্রায় শতভাগ মানুষই নোংরা চরিত্রের অধিকারী। অনেক ধন্যবাদ
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২৪
280553
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
নিজেকে যে কদর্যস্তরে নামায় তাই তারা সবাইকে আকর্ষিত করতে চায়।
339149
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৪২
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : এমন ইন্দ্রানিদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অর্থ ও খ্যাতির মোহ এদের সকল মানবীয় গুণাবলী নষ্ট করে দেয়। এই অতি উচ্চবিলাসী সাইকোগুলি তখন সর্বদা অপরের মাথায় লবন রেখে বরই খাওয়ার ধান্ধায় থাকে।
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৬
280610
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : লোভ তাদের মধ্যে থেকে মানবতাকে সম্পুর্ন ধ্বংস করে দেয়।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
339247
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০০
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : বাংলাদেশের বলদ নাস্তিকগুলো ক্যারিয়ারের জন্য যে অসৎপন্থা অবলম্বন করে! তা এই মহিলার অপরাধের থেকে অনেক বেশি ভয়ংকর!
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১২:২১
280642
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন। আসলে ক্যারিয়ারিষ্ট সবাই ই এরকম মানবতাবোধহীন।
অনেক ধন্যবাদ।
339248
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০২
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : এগুলো সনাতনী কারবার..!
অনেক ধন্যবাদ..
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১২:২৩
280643
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সনাতন তবে্ আধুনিক রুপে!!
আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File