চট্টগ্রামে জাতিয় কবি
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৭ আগস্ট, ২০১৫, ০৭:৪৭:৩৫ সন্ধ্যা
জাতিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৃটিশ ভারতের সর্বশেষ গুরুত্বপুর্ন শহর চট্টগ্রামে একাধিকবার আসেন। সমুদ্র,পাহাড়, অরন্য শোভিত চট্টগ্রাম কবিকে করেছিল উদ্বেলিত। চট্টগ্রামে বসে তিনি লিখেছেন তার বিখ্যাত "চক্রবাক" গ্রন্থের অধিকাংশ কবিতা। যার মধ্যে রয়েছে তার অমর পংতিগুলি
তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিবনা।
কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙ্গিবনা
-নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকি গন্ধ বিধূর ধুপ।
কবি প্রথম চট্টগ্রাম আসেন ১৯২৫ বা ২৬ সালে। অবস্থান করেন তৎকালিন জেলা বোর্ড এর ডাকবাংলো বর্তমান ডিসি হিল এ। দুর্ভাগ্য কবির স্মৃতি বিজরিত ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তার উপস্থিতি চট্টগ্রামের তরুন সমাজে সৃস্টি করে এক ঢেউ এর। কবিকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয় বিভিন্ন সংগঠন এর পক্ষ থেকে। যার মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজের এবং আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ চত্বরে দেওয়া অভ্যর্থনা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। শাহি জামে মসজিদ এর অভ্যর্থনায় তাকে "মালেকুশ শুয়ারা" উপাধি দেওয়া হয়।
এরপর ১৯২৯ সালে একবার এবং ১৯৩২ সালে আরো একবার কবি চট্টগ্রাম আসেন। ১৯২৯ সালে দির্ঘ প্রায় একমাস চট্টগ্রাম থাকেন এবং রাউজান সিতাকুন্ড সহ আশেপাশের এলাকায় ভ্রমন করেন। নজরুল সুহৃদ হাবিবুল্লাহ বাহার এবং সাহিত্যিক মাহবুবুল আলম ছিলেন চট্টগ্রামে নজরুল এর সাথি। মাহবুবুবল আলম ও বাঙ্গালি পল্টন এর হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিলেও কোন কারনে তাদের মধ্যে সামরিক জিবনে পরিচয় হয়নি। তবে মাহবুবুল অালম এর বড় ভাই দিদারুল আলম এর সাথে কবির পত্র যোগাযোগ ছিল।
১৯৩২ সালের চট্টগ্রাম সফরে কবি রাউজান এর একটি সম্মিলনি এবং মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
কবি সব মিলিয়ে ২-৩ মাস সময় চট্টগ্রামে থাকলেও এই সল্প সময় এই তার অনেকগুলি বিখ্যাত কবিতা গান রচিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সভায় তার প্রদত্ত বক্তৃতাও ছিল অত্যন্ত শিক্ষনিয়। তিনি এক বক্তৃতায় চট্টগ্রামের মানুষকে নতুন যুগের ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর আহব্বান জানান।
চট্টগ্রামে কবি রচনা করেন বিখ্যাত গান "আমার সাম্পান যাত্রি না লয়" এবং "আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই" এর মত গান। প্রথম গানটি নিয়ে মজার গল্প আছে। চট্টগ্রামে বন্ধু বান্ধব সহ নৌ ভ্রমনের জন্য সাম্পানে উঠলে বেশি লোক উঠায় সাম্পানটি ডুবু ডুবু হয়ে যায়। তারপর কিছু মানুষ নেমে গিয়ে কবি নৌবিহার করেন এবং তখনই গানটি রচনা করেন। "বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি" এবং "কর্নফুলি" ও রচিত হয় চট্টগ্রামে।
বিখ্যাত "কর্নফুলি" কবিতাটি কবি রচনা করেন কর্নফুলি নদির দক্ষিন তিরে ডাঙ্গার চর এলাকায় চট্টগ্রামের বিখ্যাত ব্যবসায়ি আবদুল হক দোভাষ এর খামারবাড়িতে বসে। আরো দুএকটি ও রচনাও সেখানে তিনি লিখেছিলেন বলে জানা যায়। আবদুল হক দোভাষির আপ্যয়ন এর প্রসংশাও কবি করেছেন। বিষয়টি আমার কাছে ব্যাক্তিগতভাবে বিশেষ গর্বের কারন আবদুল হক দোভাষ হচ্ছেন আমার আম্মার দাদা।
আজকে এই মহান সাহিত্যিক জাতিয় কবির ৩৯ তম মৃত্যুবার্ষিকিতে তার রুহ এর মাগফিরাত কামনা করছি।
সিতাকুন্ডু অথবা মিরশরাই এর পাহাড়ি ঝর্নার পাশে
বিষয়: বিবিধ
১৫০০ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমিন ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ
সম্ভবত আপনার নানাও কোন দোভাষ ছিলেন! চট্টগ্রামে বহু জায়গায় এই দোভাষ শব্দটির প্রচলন আছে। কোন গুনের কারনে তাঁদের নামের পিছনে দোভাষ তথা দোভাষী টাইটেল যোগ হয়ে যায়।
কবির চট্টগ্রামের কাহিনীটি আমার জন্য খুবই সুখপাঠ্য হয়েছে। সম্ভবত হাবিবুল্লাহ বাহারের আমন্ত্রনেই কবি চট্টগ্রামে এসে থাকবেন। আসলে কবির প্রতিটি কবিতা প্রতিটি গান আমাকে আলোড়িত করে। আমার ছেলেটি ইংরেজী মিডিয়ামে পড়লেও কবি নজরুলের কবিতার জন্য পাগল। আর আমাকে বিরক্ত করে ছাড়ে, কবির লিখিত শব্দের মানে খোঁজ করতে গিয়ে। অনেক ধন্যবাদ
জি আমার নানা হচ্ছেন মরহুম নবী দোভাষ। তিনিই আবদুল হক দোভাষ এর পর এই পরিবার এর প্রধান হন। তারপর আমার বড় মামা জানে আলম দোভাষ প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে নির্বাচিত এমপি ছিলেন ১৯৯০ সালে ইন্তেকাল করেন। চট্টগ্রামে মূলত তিনটি দোভাষ পরিবার আছে। দুটি ফিরিঙ্গিবাজার একটি গোসাইলডাঙ্গায়। তিনটিই অবশ্য আত্মিয়। এদের প্রথম পূর্বপুরুষ হায়দার আলি দোভাষ উত্তর ভারত থেকে ১৭৬১ সালের পর চট্টগ্রামে আগমন করেন। ইংরেজ কোম্পানির সাথে ষ্টিভেডর তথা বন্দরে মালামাল উঠানামার কাজ করতে করতে দোভাষ তথা দোভাষি উপাধি লাভ করেন।
আমার প্রিয় কবিকে নিয়ে সুন্দর পোস্টির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ।
তথ্যবহুল সুন্দর একটি পোষ্ট। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
"মালেকুশ শুয়ারা" শব্দের অর্থ বুঝতে পারিনি অনুগ্রহ করে শব্দের অর্থটি বুঝিয়ে বলবেন।
মালেকুশ শুয়ারা অর্থ কবিদের প্রধান বা সেরা কবি।
তবু আমারে দেব না ভুলিতে
অনেক ধন্যবাদ।
সবুজ ভাইকে শুকরিয়া অনেক অনেক।
সবুজ ভাইকে শুকরিয়া অনেক অনেক।
লেখক আহমেদ ছফাকে নিয়ে প্রচুর কৌতুহল বোধ করছি!
তাকে নিয়ে বিস্তারিত একটা পোষ্ট দেবেন প্লিজ ভাইয়া তার কি বই পড়লে ইমান আক্বীদার ক্ষতি হবেনা!?
আপনার ঈমান যদি ঠিক থাকে তবে পৃথিবির কোন বইই তা নষ্ট করতে পারবেনা!
সেটাই কাল হয়! তাই এখন ভেবে চিন্তে পড়ি!
মন্তব্য করতে লগইন করুন