হিজল বনের কবি গোলাম মোহাম্মদ।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২১ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৩৪:৫০ রাত
"হিজল বনে পালিয়ে গেছে পাখি
যতই তারে করুন সুরে ডাকি
দেয়না সারা নিরব গহিন বন
বাতাসে তার ব্যাথার গুঞ্জরন"
স্কুলের কোন এক অনুষ্ঠানে বিনা মিউজিকে গানটি শুনে যাকে বলে স্টানড হয়ে গিয়েছিলাম। এত গভির হৃদয় এর গান অথচ সম্পুর্ন আধুনিক কিন্তু সাধারন অশ্লিলতা মুক্ত! পরে অনেক কষ্টে এক জায়গা থেকে টেপ রেকর্ডে রেকর্ড করে আনি গানটি শিল্পি সাইফুল্লাহ মনসুর এর কন্ঠে। তখন অতি কষ্টসাধ্য কাজ। মুখস্ত হয়েগিয়েছিল গানটি তখনই। আমি গায়ক নই কিন্তু গানটি শিখিয়ে বিএনসিসির এক অনুষ্ঠানে আরেকজন দিয়ে গাইয়েছিলাম। বেশ কয়েকবছর পর একদিন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম সেই গানটির গিতিকার কে। সেটাই তার সাথে একমাত্র দেখা। কিন্তু সল্পভাষি মানুষটি অল্পতেই ঘনিষ্ট হয়েছিলেন।
এই সুন্দর গানটির রচয়িতা ছিলেন কবি,গিতিকার এবং শিল্পি গোলাম মোহাম্মদ। মাগুরায় জন্ম নেওয়া কবি গোলাম মোহাম্মদ এর শৈশব কেটেছে মধুমতির পারে। গ্রামিন পরিবেশ তাকে দিয়েছে শিল্পির অন্তর। রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে চাকরি নিয়ে আসেন ঢাকা। হয়ে যান ঢাকাবাসি। প্রথমে শিক্ষকতার চাকরি করলেও পরে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেন ডিজাইন সেন্টার "শিল্পকোন"। কিন্তু কবি গোলাম মোহাম্মদ ব্যবাসায়ি হয়ে উঠতে পারেননি। তাই চিরজিবন ই তার কেটেছে অনটনে। কিন্তু তার মধ্যেও থেমে থাকেনি তার সৃষ্টি শিল্প। আশির দশকে বাংলাকবিতাকে নাস্তিক্যবাদের হাত থেকে উদ্ধার করে বিশ্বাস আর প্রকৃতির মাঝে যারা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তাদের এক অগ্রগামি কবি ছিলেন তিনি।
গোলাম মোহাম্মদ এর কবিতায় শব্দ ব্যবহার সম্পর্কে অধ্যাপক আবদুল মান্নান সৈয়দ এর মতে তিনি ছিলেন ঐতিহ্যবাদি। আমাদের ঐতিহ্য সংলগ্ন শব্দগুলিকে তিনি কবিতায় ব্যবহার করেছেন। সেই সঙ্গে দেশজ গ্রামিন শব্দগুলিও নিপুন প্রয়োগ করেছেন তিনি। আরেক সমালোচক এর মতে গোলাম মোহাম্মদ এর কবিতা ছিল "রোমান্টিক আবহে আধ্যাত্মিক জারক রসে সিঞ্চিত ভিন্ন স্বাদের অতি সুখ পাঠ্য"। "একজন সিরাজ যদি আঁধারে লুকায়" এর মত বিপ্লবি কিন্তু শ্লোগান বিহিন কবিতা লিখার মত কবি বাংলাভাষায় অনেক কম। তার প্রায় কবিতা ও গানে পাখি এসেছে। নিজেও তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন হিজল বনের পাখি বলে। তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাগুলির মধ্যে রয়েছে।
১. অদৃশ্যের চিল। (১৯৯৭)।
২. ফিরে চলা এক নদি। (১৯৯৮)।
৩. হিজল বনের পাখি। (১৯৯১)।
৪. ঘাষফুল বেদনা। (২০০০)।
৫. ছড়ায় ছড়ায় সুরের মিনার। (২০০১)।
৬. হে সূদুর হে নৈকট্য। (২০০২)।
৭. নানুর বাড়ি। (২০০২)।
এছাড়া অধ্যাপক আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত গোলাম মুহাম্মদ রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়েছে ২০০৫ সালে।
২০০২ সালের ২২ এ আগষ্ট ৪৩ বছর বয়সে এই পৃথিবি ছেড়ে চলে যান নিসর্গপ্রেমিক এই কবি। আজকে তার ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকি। সবাই আমরা তার রুহ এর মাগফিরাত এর জন্য দোওয়া করি।
বিষয়: বিবিধ
১৭২৪ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তার মতের ঘোর বিরোধিকেও দেখেছি হিজল বনের পাখি গুনগুন করতে।
আপনার অভিজ্ঞতার কথাও লিখুন। আমি কেবল একবার দেখেছি তাকে। কিন্তু তার সমসাময়িকদের কাছে তার সম্পর্কে এত শুনেছি যে খুবই পরিচিত মনে হয়েছে তাকে। তার লিখা সম্পাদনা করেছেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। কতটা উন্নত মানের লিখা তার বুঝার জন্য এই যথেষ্ট।
অনেকদিন পর দেখলাম আপনাকে।
নিচের লিখাটা একটু পড়ুন।
জাজাকাল্লাহ
http://www.alkawsar.com/article/197
পথহারা মানুষ কে বিশ্বাসের আবহে ভাসিতে নিতে যে কয়জন মহাপ্রাণের নিরলস প্রয়াস,কবি গোলাম মুহাম্মদ অন্যতম!
আল্লাহ তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকামে আসীন করুন,আমিন!!
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
মন্তব্য করতে লগইন করুন