উপমহাদেশের স্বাধিনতা ও বিভক্তি। প্রকৃত ইতিহাস জানা প্রয়োজন।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৯ আগস্ট, ২০১৫, ১১:৫৪:২২ সকাল
আমাদের দেশে ইতিহাস এর পাঠক কেন যেন খুবই কম। তার চেয়েও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত ইতিহাস জানার চেয়ে ঐতিহাসিক বা অনৈতিহাসিক উপন্যাস থেকে ইতিহাস জানার চেষ্টা করি। বাংলা সাহিত্যের শৈশব থেকেই ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখিত ও জনপ্রিয় হয়ে আসছে। স্বয়ং বন্কিম চন্দ্রই ঐতিহাসিব উপন্যাস এর পথিকৃত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ঐতিহাসিক উপন্যাস মানে যে ইতিহাস নয় সেই বোধ অনেক পাঠকেরই নাই। আর তাই আমাদের জানা ইতিহাস আর সত্য ইতিহাস এর মধ্যে পার্থক্য থেকে যাচ্ছে অনেক। বন্কিমচন্দ্রের "রাজসিংহ" উপন্যাসটির কথাই ধরা যাক। উপন্যাসটি সম্রাট আওরঙ্গজেব এর সময় রাজপুত দের বিরত্ব(!) বর্নিত হয়েছে। সেই সঙ্গে কলংক আরোপ করা হয়েছে সম্রাট কন্যা মহিয়সি জেবউন্নিসা এর চরিত্রে। এই উপন্যাসটি সম্পর্কে আওরঙ্গজেব বিশেষজ্ঞ ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকার সরাসরি মন্তব্য করেছিলেন এটি সুপাঠ্য উপন্যাস হলেও তথ্যাবলি সম্পুর্ন মিথ্যা। আধুনিক বিবেচনায় এটি ঐতিহাসিক উপন্যাস এর বদলে অলটারনেট হিস্টরি উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। "সিরাজউদ্দৌলা"গ্রন্থের লেখক অক্ষয় কুমার মৈত্র অতন্ত্য দুঃখের সাথে লিখেছিলেন যে কাল্পনিক ইতিহাস এর চাপে মানুষ প্রকৃত সত্য গ্রহন করতেই ভুলে গেছে সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে। এর ফলে এখনও আমরা প্রকৃত ইতিহাস জানতে ভুল করছি।
প্রকৃত ইতিহাস না জেনে উপন্যাস এর উপর নির্ভর করার কারনে আমাদের দেশে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়ে উঠেছে সেটা হলো ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের গঠন। ভারতিয় উপন্যাসিক দের বিভিন্ন উপন্যাস বিশেষ করে সুনিল গঙ্গোপাধ্যায় এর "পূর্ব-পশ্চিম" এবং প্রফুল্ল রায় এর "কেয়াপাতার নৌকৌ" বিশেষ জনপ্রিয় আমাদের দেশে। এছাড়া শির্ষেন্দু মুখার্জি,সমরেশ মজুমদার সহ অনেকেরই উপন্যাস আছে এই বিষয়ে। ভারতিয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা এই উপন্যাসগুলিতে প্রকৃত সত্যকে সবসময় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রায় উপন্যাসএই কুখ্যাত ১৬ আগষ্ট এর কলকাতার দাঙ্গা সম্পর্কে দায়ি করা হয়েছে তৎকালিন বাংলার প্রধানমন্ত্রি এবং মুসলিম লিগ নেতা হুসাইন শহিদ সুহরাওয়ার্দি কে। যদিও প্রকৃত ইতিহাস সেটা প্রমান করেনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের যে অনেকেই এই উপন্যাসগুলি পরে মিথ্যা ও বিকৃত ইতিহাস শিখছেন। আরো দুর্ভাগ্য যে এর বিপরিতে এই বিষয়ে কোন ভাল উপন্যাস রচনা আমাদের সাহিত্যিক রা করতে পারেন নাই। যার কারনে বিভ্রান্ত আমাদের তরুন সমাজের একটি বড় অংশ।
এটা ঠিক যে ইতিহাস গ্রন্থ ও আত্মজিবনিগুলিও রচিত হয় লেখক এর ব্যাক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। কিন্তু তথাপি এগুলিতে বেশিরভাগ সত্য ঘটনাই বলা হয়। ওপন্যাসিক এর কল্পনার আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ এই গ্রন্থগুলিতে নাই। প্রকৃত ইতিহাস জানতে হলে তাই এ্কাধিক বই পড়া প্রয়োজন সকল দৃষ্টিভঙ্গির লেখকদের। সে ক্ষেত্রে পাঠক নিজেই নির্ধারন করতে পারবেন প্রকৃত ইতিহাস এর গতি-প্রকৃতি। উপমহাদেশের স্বাধিনতার পূর্বক্ষন এর প্রকৃত অবস্থা এবং বিভক্তির কারন জানতে সহায়তা করবে এমন কিছু বই এর নাম দেওয়া হলো। পাঠকরা আসা করি এই বইগুলি পড়ে প্রকৃত ইতিহাস জানার চেষ্টা করবেন এবং ঐতিহাসিক উপন্যাস গুলির অনৈতিহাসিক মিথ্যা গুলি সম্পর্কে অবগত হবেন। এখানে প্রধানত বাংলায় সহজলভ্য বইগুলির নাম দেওয়া হয়েছে।
১. আযাদি আন্দোলন ১৮৫৭-মওলানা ফজলে হক খায়রাবাদি।মদিনা পাবলিকেশন্স।
২. হায়দারাবাদ ট্র্যাজেডি ও আজকের বাংলাদেশ-আরিফুল হক। কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি।
৩. চেপে রাখা ইতিহাস-গোলাম আহমদ মর্তুজা। বিশ্ববঙ্গিয় প্রকাশন।
৫. উপমহাদেশের আলিম সমাজের বিপ্লবি ঐতিহ্য-মাওলানা মুহাম্মদ মিয়া। ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
৬. ফ্রিডম এট মিডনাইট-ল্যারি কলিন্স,ডোমিনিক লাপিয়ের। এমসি সরকার এন্ড সন্স।
৭. এন্ড অফ ইন্ডিয়া-খুশবন্ত সিং। ঐতিহ্য।
৮. জিন্নাহ। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িকতা- শ্যামাপ্রসাদ বসু। দে'জ পাবলিশিং।
৯. জিন্নাহ,পাকিস্তান, নতুন ভাবনা-শৈলেশকুমার বন্দোপাধ্যায়। মিত্র ও ঘোষ।
১০. দা্ঙ্গার ইতিহাস-শৈলেশকুমার বন্দোপাধ্যায়। মিত্র ও ঘোষ।
১১. ধর্মের সহিংস ইতিহাস-গোলাম আহমদ মর্তুজা। বিশ্ববঙ্গিয় প্রকাশন।
১২. বাংলাদেশের কালচার-আবুল মনসুর আহমদ। আহমদ পাবলিশিং হাউস।
১৩. আত্মকথা-আবুল মনসুর আহমদ। আহমদ পাবলিশিং হাউস।
১৪. আমার দেখা রাজনিতির পঞ্চাশ বছর-আবুল মনসুর আহমদ। আহমদ পাবলিশিং হাউস।
১৫. আমার জিবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনিতি-আবুল হাশিম। কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি।
১৬. স্মৃতি সাগরের ঢেউ-আব্বাস আলি খান। বই-কিতাব প্রকাশনি।
১৭. জিবনে যা দেখলাম(১-৯)-গোলাম আযম। কামিয়াব প্রকাশনি।
১৮. জীবনের শিলান্যাস-সৈয়দ আলি আহসান। বাড পাবলিকেশন্স।
১৯. ট্রুথ লাভ এন্ড লিটল ম্যালিস-খুশবন্ত সিং।ঐতিহ্য।
২০. যখন কোলকাতায় ছিলাম-সৈয়দ আলি আহসান। আহমদ পাবলিশিং হাউস।
২১. প্রীতি নিন সকলে-সিরাজুর রহমান। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।
২২. অর্ধেক জিবন-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আনন্দ পাবলিশার্স।
২৩. গাফফার খানের আত্মজীবনি-সলিমুল্লাহ অনূদিত। মুক্তধারা।
২৪. ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনায়-জসিমুদ্দিন। পলাশ প্রকাশনি।
২৫. এ প্রিন্সেস রিমেমবারস-গায়ত্রি দেবি। ঐতিহ্য।
২৬. বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়-মফিজ চেীধুরি। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।
২৭. বাঙ্গালনামা-তপন রায় চেীধুরি। আনন্দ পাবলিশার্স।
২৮. যত দূর মনে পড়ে-জ্যোতি বসু। এন,বি,এ ভারত।
২৯. আত্মজীবনি-দেওয়ার মুহাম্মদ আজরফ। উৎস প্রকাশন।
৩০. মাওলানা আকরাম খান- আবু জাফর সম্পাদিত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
৩১. অটোবায়োগ্রাফি অফ মহাত্মা গান্ধি- মহাত্মা গান্ধি। নালন্দা।
৩২. আমার জীবন ও ভারতের কম্যুনিষ্ট পার্টি-মুজাফফর আহমদ। এন,বি,এ ভারত।
৩৩. এক জীবন এক ইতিহাস-সিরাজুর রহমান। ঐতিহ্য।
৩৪. জীবন-যেীবন- অন্নদাশংকর রায়। আনন্দ পাবলিশার্স।
৩৫. ভারত স্বাধিন হলো- আবুল কালাম আযাদ। ওরিয়েন্ট লংম্যান।
৩৬. আমার কালের কথা-আবদুল গফুর। কো অপারেটিভ বুক সোসাইটি।
৩৭. রোমন্থন-তপন রায় চেীধুরি। আনন্দ পাবলিশার্স।
৩৮. জীবনের ইন্দ্রধনু-ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চেীধুরি। আনন্দ পাবলিশার্স।
৩৯. সমাজ ও জিবন-ডঃ আবদুল করিম। জাতিয় সাহিত্য প্রকাশ।
৪০. যখন সময় এলো- সৈয়দ আলি আহসান। নওরোজ কিতাবিস্তান।
৪১. জালালাবাদের কথা-দেওয়ান নুরুল আনোয়ার। বাংলা একাডেমি।
৪২. অাহাদিসুল খাওয়ানিন- হামিদুল্লাহ খান। অনুপম প্রকাশনি।
৪৩. চট্টগ্রামের একশ মুসলিম মনিষা (১-৪)- রায়হান আযাদ। সিআরপিএস।
৪৪. অটোবায়োগ্রাফি অফ এ আননোন ইন্ডিয়ান-নিরদচন্দ্র চেীধুরি। মিত্র ও ঘোষ।
৪৫. ভারত,অন্দরের অবরোধ-এম,জে আকবর। আনন্দ পাবলিশার্স।
৪৬. আত্মঘাতি বাঙ্গালি-নিরদচন্দ্র চেীধুরি। মিত্র ও ঘোষ।
৪৭. আমার দেখা বৃটিশ ভারত,পাকিস্তান ও বাংলাদেশ- মেজর(অবঃ) আফসারউদ্দিন। শিল্পতরু।
৪৮. বাংলাদেশের সংস্কৃতি- সৈয়দ আলি আহসান। ঐতিহ্য।
৪৯. ভারত কি করে ভাগ হলো-বিমলানন্দ শাসমল।
৫০. আত্মজীবনি-জওহর লাল নেহেরু।
বিষয়: বিবিধ
২৩৯৭ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইতিহাসের উপর আরো কয়টি চমৎকার বইঃ
বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস-আব্বাস আলী খান; বাঙ্গালার মোসলমান-মাওলানা আকরাম খাঁ; নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে-আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী।
প্রবলেমটা হলো উপন্যাসে সত্য আর মিথ্যা হোক ইতিহাসের সাথে পাতিহাস মানে পুতুপুতু প্রেম কাহিনী মিক্সড করে দেয়! যেটা বেসম্ভব খারাপ লাগে ইতিহাস হবে ইতিহাসের মত। তাই হেজাজী/আলতামাশ পড়া বাদ দিয়েছি তবে কিছু দিন আগে মাযা খাসিরার আলামু- মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কি ক্ষতি হলো?
আপনি পড়েছেন শতভাগ সিওর আমি।
এ বইটা আমার প্রচন্ডরকম ভালোলেগেছে।
ইতিহাস ইতিহাসের নামে পড়তেই ভালো লাগে।
উপন্যাস ও পড়তে হবে। কারন ইতিহাস এর নৈবর্তিক বিশ্লেষন এর মুখে মানুষের মানবিক অনূভুতি হারিয়ে যেতে পারে। বইটা পড়েছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন