যুলু রাজ শাকার দুঃখ!

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৫ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৪৬:১৮ সকাল

যুলু জাতির বসবাস বর্তমান দক্ষিন আফ্রিকার পূর্ব উপকুল জুড়ে। এই অঞ্চলটির নাম কোয়াটজুলু-নাটাল। উপনিবেশিক আমলে এই প্রদেশ এর নাম ছিল যুলুল্যান্ড। দক্ষিন আফ্রিকার অন্যান্য কৃষ্নাঙ্গ গোষ্ঠির ন্যায় যুলুরাও ছিল কৃষক ও পশুপালক অর্ধ যাযাবর গোষ্ঠি। ১৭০০ সালের দিকে এই গোষ্ঠি গঠিত হলেও ১৮০০ সালের পরে অর্থাত আফ্রিকায় যখন ইউরোপিয় উপনিবেশ স্থাপন শুরু হয়েছে তখনই এই গোষ্ঠি ক্ষমতাশালি হয়ে উঠে এবং আফ্রিকার পূর্বউপকুলে প্রভাব বিস্তার করে। এলাকার অন্যান্য গোষ্ঠিগুলি যুলু রাজার অধিনস্ত গোষ্ঠিতে পরিনত হয়। যুলু রাজা শাকা কাসেনজাংখোনার নেতৃত্বে যুলুরা একটি বীর জাতি হিসেবে স্বিকৃত হয়।

শাকা ছিলেন যুলুদের প্রধান সেনজাংখোনার উপপত্নি ন্যান্ডির একমাত্র পুত্র। যেীবনে তিনি বীর যোদ্ধা হিসেবে অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে উঠেন। সেনজাংখোনার মৃত্যুর পর তার প্রধান রানির পুত্র সিগুজানা যুলু দের প্রধান হন। কিন্তু অযোগ্য সিগুজানা কে হঠিয়ে শাকা সেনাবাহিনি এবং অন্যান্য প্রধান সর্দারদের সহায়তায় যুলু জাতির প্রধান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। শ্রিঘ্রই তিনি যুলু সেনবাহিনিকে অত্যন্ত দক্ষ করে তুলেন এবং যুলু জাতিকে একটি সম্পুর্ন স্বাধিন জাতি হিসেবে গড়ে তুলেন। শাকা অন্যান্য গোষ্ঠিকেও যুলুদের অধিন করে ফেলেন এবং যুলু জাতির রাজা হিসেবে স্বিকৃতি পান। বর্তমান দক্ষিন আফ্রিকার পুর্ব উপকূল সহ মোজাম্বিক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার রাজ্য।

ঐতিহাসিকদের মতে শাকার চরিত্রে একই সাথে বিভিন্ন বৈপরিত্যের সমন্বয় ছিল। একদিকে তিনি ছিলেন বীরযোদ্ধা,ন্যায়বিচারক এবং কিছু ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রজাবৎসল এবং মহত হৃদয় এর অধিকারি একজন শাসক। অন্যদিকে ছিলেন সন্দেহ ও বিদ্বেষ পরায়ন, নিষ্ঠুর এবং অত্যাচারি। তিনি যুলুদের মধ্যে নতুন ধরনের ফসল ফলান ও চাষাবাদ এর উন্নতি ঘটান। কার্যকরি ও দক্ষ সামরিক বাহিনি গঠন করেন এবং নতুন যুদ্ধের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। বানিজ্য বিস্তৃত করার অনুমতি দেন। উপনিবেশিক শ্বেতাঙ্গদের সাথেও সম্পর্ক গড়ে তুলেন। কিন্তু এতই সন্দেহ প্রবন ছিলেন যে তার অনেক পুত্র সন্তানকে হত্যা করেন ক্ষমতার জন্য তার প্রতিদন্দি হয়ে উঠার আশংকায়। নিজের নিকট পারিষদদেরও তিনি অত্যন্ত সন্দেহের চোখে দেখতেন এবং প্রায়ই ডাইনি বা যাদুকর অপবাদ দিয়ে তাদের নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়ে হত্যা করাতেন। তার সৎভাইদের ও তিনি খুবই অবিশ্বাস করতেন। তবে এত সাবধানতার পরেও তিনি শেষ পর্যন্ত ১৮২৮ সালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে তার দুই সৎ ভাই ডিনগান ও উমহ্লাগনার হাতে নিহত হন।

শাকা একজন দক্ষ ও সৎ রাজা হিসেবে মোটামুটি জনপ্রিয় হলেও তার মৃত্যুকে সবাই গ্রহন করেছিল। এর অন্যতম একটি কারন ছিল একবছর আগে তার মা ন্যান্ডির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শোক পালন। ইউরোপিয় কিছু ঐতিহাসিক এবং সেসময় এর কিছু পরে নাটাল এ কাজ করা ইংরেজ উপন্যাসিক হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বিবরন অনুসারে শাকা নিজেই সন্দেহের বশবর্তি হয়ে তার মাকে হত্যা করান। কিন্তু এই কাজে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে যান এবং সারা যুলু জাতিকে তার মায়ের জন্য শোক করার নির্দেশ দেন। এই শোক এর অংশ হিসেবে সকল গ্রামের অধিবাসিদের শাকার রাজধানিতে উপস্থিত হয়ে কাঁদার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। আরও নির্দেশ দেওয়া হয় যে যতদিন শাকা শোক পালন করবেন ততদিন কোন শস্য রোপন করা যাবেনা। দুধ ছিল সেসময় যুলুদের প্রধান খাদ্য। শাকা শোক পালন এর সময় কেউ গরুর দুধ দোয়াতে পারবেনা বলে নির্দেশ জারি করেন। তিনি আরো নির্দেশ দেন যে এই সময় কোন নারি গর্ভধারন করতে পারবেনা। এই নির্দেশ পালনে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করা হয়। শাকা নিজে পর্যব্ক্ষেন করতেন যে তার সামনে উপস্থিত মানুষ গুলি সত্যিই কাঁদছে কিনা। তার মনে কোন সন্দেহ হলেই তিনি তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে দিচ্ছিলেন। শাকা এমনকি দুগ্ধবতি গাভিগুলিও হত্যার নির্দেশ দেন যাতে করে নাকি বাছুরগুলি বুঝতে পারে মা হারানোর দুঃখ! ২-৩ মাস ধরে চলা এই শোক(!) অনুষ্ঠানে শাকার মৃত্যুদন্ড এবং অন্যান্য কারনে প্রায় ৭০০০ মানুষ মারা যায়। এরমধ্যে শাকা কেবল সন্দেহের বশবর্তি হয়ে মৃত্যুদন্ড দেন অনেক দক্ষ সৈনিক ও সর্দার কে। সময়মত ফসল রোপন না করায় এবং গর্ভধারনক্ষম গাভি হত্যা করায় এরপর থেকে যুলুদের খাদ্য সমস্যায় থাকতে হয় অনেক বছর। দক্ষ সৈনিকদের হারিয়ে যুলু সেনাবাহিনি হয়ে যায় ধ্বংস।

শাকার এই বিপুল শোক এর ফলে যুলুজাতি বীর ও ধনি অবস্থা থেকে পরিনত হয় অভাবগ্রস্ত জাতিতে। যার চুড়ান্ত পরিনতিতে ১৮৬৯ সালে শাকার ভ্রাতুস্পুত্র সেটিসেওয়াও মপান্ডে ইংরেজ দের সাথে তার রাজধানি উলুন্ডিতে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হন। স্বাধিন যুলু রাজ্য উপনিবেশিক বর্ণবাদি দক্ষিন আফ্রিকার অংশ হয়ে যায়।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

335917
১৫ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১১:১০
আফরা লিখেছেন : আজকে তো ১৫ই আগষ্ট তাই ভাইয়া -----যুলু ইতিহাস ভাল লেগেছে শিক্ষা নেওয়ার অনেক আছে কিন্তু নিব না ।

ধন্যবাদ ভাইয়া ।
১৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:০৫
277858
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হ্যাঁ আজকে ১৫ ই আগষ্ট!!!
আমরা সেই শিক্ষা নিচ্ছিনা বলেই সমস্যা। অনেক ধন্যবাদ।
335933
১৫ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
নাবিক লিখেছেন : দারুণ পোস্ট। অনেক ভালো লাগলো।
১৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:০৫
277859
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।
335938
১৫ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০১:১৭
নারী লিখেছেন : ভালো ইতিহাস জানলাম।ধন্যবাদ
১৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:০৬
277861
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
335956
১৫ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় ও ভয় হচ্ছে, কখন যে ভারতের অংশ হয়ে যায়।
১৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:০৬
277862
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এখন সাংস্কৃতিক ভাবে অংশ হয়েও গেছে মনে হয়।
ধন্যবাদ।
336050
১৬ আগস্ট ২০১৫ রাত ০২:৪২
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম!

কঠিন শিক্ষা লুকায়িত আছে ঘটনাটিতে! শেয়ার করার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!

জাযাকাল্লাহু খাইর!
১৬ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৪০
277990
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অয়ালাইকুমআসসালাম।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
336101
১৬ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : কাঁদো বাঙ্গালী , কাঁদো । কাঁদো জুলু বাসী , কাঁদো।
১৬ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০১:০৩
278040
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : Crying Crying
336437
১৭ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:২৭
১৭ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
278316
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Liar Liar
337715
২৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৮:৫৭
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : টুডে ব্লগের ইমন জুবায়ের হচ্ছেন আমাদের সবুজ ভাই।
২৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:২৮
279359
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : না ভাই আমার একটাই নাম!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File