আবারাজ আল বাইত কমপ্লেক্স নিয়ে ভুল ও আবেগপ্রবনতা
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৬ জুলাই, ২০১৫, ১২:৫৭:২৯ রাত
"আবারাজ আল বাইত" কমপ্লেক্স যা মক্কা ক্লক টাওয়ার নামে পরিচিত সেটা নিয়ে অনেক এর মনেই কিছু সন্দেহ তৈরি হয়েছে এবং একদল ইসলাম বিরোধি শক্তি এই সন্দেহে ইন্ধন যোগাচ্ছেন। এই কমপ্লেক্স টি নির্মান শুরু হয় ২০০২ সালে। মূল কাজ সমাপ্ত হলেও এখনও কিছু নির্মান কাজ চলছে। এই কমপ্লেক্স এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একাধিক ভবন। যার মধ্যে সবচেয়ে উচ্চতম ভবনটি পরিচিত ক্লক টাওয়ার নামে। ৬০১ মিটার উচ্চতার ভবন টি বর্তমানে পৃথিবীর ৩য় উচ্চতম ভবন। এর চুড়ায় স্থাপিত হয়েছে একটি বিশাল ঘড়ি যা বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম ঘড়ি। ১২০ টি ফ্লোর বিশিষ্ট এই ভবনে আছে ৫তারা হোটেল এবং শপিং মল। এই কমপ্লেক্স অন্যান্য ভবন গুলিতে আছে এপার্টমেন্ট এবং বিভ্নি সরকারি অফিস। কমপ্লেক্সটির প্রধান ডিজাইনার একজন নওমুসলিম জার্মান আকিটেক্ট মাহমুদ রাসচ। ক্রমবর্ধমান হাজি এবং উমরাহকারিদের সুবিধার জন্যই এই টাওয়ার টি নির্মান করা হয়েছে। এই টাওয়ারে অবস্থান কারিগন সহজেই মসজিদুল হারাম এ প্রবেশ করতে পারবেন এমনকি হ্জ্জ এর সময় এখান থেকেই জামায়াত এ অংশ নিতে পারবেন।
এখন এই টাওয়ার টি নিয়ে অনেকের আপত্তি যে এটা নাকি পবিত্র কাবা শরিফ এর পবিত্রতা নষ্ট করেছে! এই অভিযোগটি সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভুল। কেউ যখন সত্যিই খালিস হৃদয়ে কাবা শরিফ এর উদ্দেশ্যে যাবে তখন যত উঁচু ও সুন্দর দালানই হোক তার দৃষ্টি থাকবে কাবার দিকেই নিবন্ধ। যার হৃদয় ও নিয়ত এর ঠিক নাই তার পক্ষেই কেবল বিভ্রান্ত হওয়া সম্ভব। আর এই কমপ্লেক্সটির অবস্থান মসজিদ এর সিমানার বাইরে তাই এটা কোন সমস্যার সৃষ্টি তাওয়াফ ও নামাজ আদায়কারিদের জন্য করছে না। বরং বিশাল ঘড়ি টি সময় দেখার জন্য অনেক সহায়তা করবে। ডায়াল ভিত্তিক ঘড়ি দেখে যে কোন দেশের যে কোন ভাষি মানুষই বুঝে নিতে পারবেন সময়।
এই কমপ্লেক্সটি নিয়ে আরেকটা অভিযোগ হচ্ছে এটি নাকি বিশিষ্ট সাহাবিদের ঘরবারির চিহ্ন নষ্ট করে করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে রাখতে হবে বিশিষ্ট সাহাবি এবং আওলাদে রাসুল(সাঃ) দের ঘরবাড়ির চিহ্ন ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখলেও ইসলামে এই স্থানগুলির কোন ইবাদত এর গুরুত্ব নাই। বরং কিছু ক্ষেত্রে এই গুলি শিরক এর সৃষ্টিই করে। প্রকৃতপক্ষে এই ঘরবাড়ির চিহ্নগুলি অনেক আগেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। ১৭৮০ সালে তৎকালিন উসমানি তুর্কি সরকার এই উঁচু পাহাড়টির উপর স্থাপন করে "আজায়াদ" নামের একটি দুর্গ। এই দুর্গটির উচ্চতাও অনেক ছিল এবং এটি হারাম শরিফ থেকে চোখে পড়ত। মুলত মক্কার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্থানিয় তুর্কি প্রশাসক ও সেনাবাহিনির জন্যই এই দুর্গটি নির্মান করা হয়েছিল। বর্তমান সময় এর প্রেক্ষিতে এই দুর্গের কোন গুরুত্ব ছিলনা এবং এর বিশেষ কোন ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও নাই। সুতারাং এই স্থাপনাটি তৈরিতে কোন ইসলামি বা ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও ধর্মিয় গুরুত্বপূর্ন কিছু নষ্ট হয়নি।
আরেকটি বিষয় এই ক্লক টাওয়ার টি স্থাপন এর সাথে জড়িত আছে। সেটা হলো এই টাওয়ার এবং এর উপর স্থাপিত ঘড়িটির সময় কে শুন্য ধরে মক্কা নগরিকে প্রাইম মেরিডিয়ান তথা ০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ ধরে ইসলামি বিশ্বের নিজস্ব সময় ও ম্যাপিং চালু করা। ২০০৮ সালে আল্লামা ইউসুফ কারদাবি এক সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রস্তাব রাখেন। যা অসম্ভব নয় এবং ইসলাম এর স্বর্নযুগে নেী চালনায় এই মেরিডিয়ান এর ব্যবহার ছিল বলে যথেষ্ট প্রমান পাওয়া গেছে। ১৮৮৫ সালে গ্রিনউইচ মেরিডিয়ান চালু হওয়ার আগে এর ব্যবহার ছিল।
সেীদি সরকার এর সমালোচনার অনেক বিষয় থাকতে পারে। কিন্তু ভুল তথ্য এবং শুধুমাত্র আবেগ এর বশবর্তি হয়ে এই ধরনের একটি স্থাপনার সমালোচনা করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৬ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই স্থাপনাটি মসজিদুল হারাম এর আকর্ষন কে কোনভাবেই বিন্ষ্ট করতে পারেনা। এর উপকার এর দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করায় অনেক ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ মাজারী ভন্ড, পীর ব্যবসায়ী, দরগাহ ব্যবসায়ী আছে তাদের কাছে সৌদি হইল জমের মত কারন তাদের ব্যবসাটা সেখানে চলেনা, তাই তারা সবর্দা ছুতানাথা ধইলা অলওয়েজ চিল্লাইতে থাকে। আমনে টাকা দেন অথবা গাঞ্জা দেন দেখিবেন মুখ বন্দ করিছে।
এই পোষ্ট শুধু পাগল এর চিল্রাচিল্লির জন্য দেওয়া হয় নাই। অনেকে সেীদি শাসকদের নিতির বিরোধিত করতে গিয়ে এই টাওয়ারটি সম্পর্কে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেন।সেই জন্যই এই পোষ্ট।
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই আবেগ এর বাড়াবাড়ি করে ফেলি।
প্রমান হিসেবে দেখুন তারা কবরে সিজদা করে
আল্লাহর অশেষ রহমতের বদৌলতে জীবনে প্রথমবারের এই রোজার মাসে আমি মক্কায় ওমরাহ করার সুযোগ পেয়েছিলাম আর মদীনা ভিজিট করতে পেরেছিলাম।
ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে - কাবা কে কেন্দ্র করে মসজিদুল হারাম ও এর চারপাশে স্থাপিত অধিকাংশ স্ট্রাকচারাল বিষয়াদিকে একজন ইসলাম প্রেমী ভাই যিনি ইসলামের উপর বেসিক নলেজ রাখেন, অনুসন্ধানী ও চিন্তাশীল মননের অধিকারী হন - তিনি অতি সহজেই আবিষ্কার করবেন যে - স্ট্রাকচারসমূহ ইসলামের শিক্ষা, রুচীবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ, স্প্রীচুয়ালিটি বিধ্বংশী সরবোপরী রাসলুল্লাহ সঃ এর শিক্ষা বিরোধী।
আপনার লিখা ও কমেন্টসমূহ পড়ে আমার মনে হয়েছে - এখন আপনি ফিজিক্যালী কাবা ও এর চারপাশ দেখলে দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন।
আপনার সাথে একমত হতে পারছিনা। সময় এর সাথে আধুনিকায়ন হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
যদি এই টাওয়ারের নুন্যতম কোন গুরুত্ব থাকে তাহলে এটা ।
মানুষ নামাজ পড়ে , তাওয়াফ করে আল্লাহর ঘর ক্বাবাকে টার্গেট/সার্কেল করেই ।
মক্কা টাওয়ার অন্যান্য স্থাপনার মতই । এমন বেশ কিছু স্থাপনাও আছে মক্কা টাওয়ারের পাশাপাশি যা উচ্চতায় ক্বাবা শরীফের চেয়ে বেশী , এমনকি হারেম শরীফের সাথে লাগোয়া যে সব মিনারগুলো আছে সেগুলোও ।
এতে কি ক্বাবা শরীফের মর্যাদা কমে যায় ?
ডিশ -এ মক্কার চ্যানেল টিউন করে দেখেন এই ঈদের দিনেও কত লোক তাওয়াফ করছে !
এটা চলতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন