এক জিবন এক ইতিহাস। সিরাজুর রহমান
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০২ জুন, ২০১৫, ০১:৪৩:৩০ দুপুর
আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন বিবিসি খ্যাত বিখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান। নববই এর দশকে যখন এরশাদ বিরোধি আন্দোলন এ উত্তপ্ত বাংলাদেশ তখন প্রতি সন্ধায় তার কন্ঠে " সকলে প্রিতি ও শুভেচ্ছা নিন" শুনা ছিল অন্যতম প্রধান কাজ।বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তাকে বলা যায় অন্যতম অগ্রদূত।
১৯৩৪ সালে জন্ম সিরাজুর রহমান এর। পিতা ছিলেন কলকাতা আলিয়া মাদ্রসার অন্যতম শিক্ষক ও আলেম। দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পত্রিকা পড়া এবং দেশের বাড়িতে মানুষকে যু্দ্ধের সংবাদ জানানর মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতার শুরু বলা যায়। কলকাতা মিত্র ইন্সটিটিউশন এর ছাত্র অবস্থায় দৈনিক আযাদ এর মুকুলের মাহফিল এবং আনন্দবাজার এর আনন্দমেলা পাতায় লিখা দিয়ে তার লেখক এর জিবন শুরু। যুদ্ধ শেষ এ কলকাতার দাঙ্গায় দেখেন সাম্প্রদায়িকতার বিভৎস রুপ। সেই বছর তিনি ম্যাট্রিক পরিক্ষার্থি। মুকুলের মাহফিল এর এই কিশোর কোন উদ্দেশ্যে দৈনিক আযাদ অফিসে উপস্থিত হলেন কোন একদিন। আযাদ এর সাংবাদিকরা তাকে বসিয়ে দিলেন একটি চেয়ারে আর হাতে দিলেন নিউজ এজেন্সি থেকে পাঠান খবর অনুবাদ করতে। আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই তার শুরু সাংবাদিকতার। যতদিন সুস্থ ছিলেন কলাম লেখক হিসেবে আমৃত্য সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন তিনি।
১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে ঢাকায় আসেন সিরাজুর রহমান। ঢাকা কলেজে ভর্তির পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে প্রাপ্ত স্কলারশিপ এর টাকা দিয়ে প্রকাশ করেন "সংকেত" নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা। পাশাপাশি কাজ শুরু করেন মুহাম্মদ মোদাব্বের সম্পাদিত অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা "পাকিস্তান" । তারপর যোগদেন দৈনিক ইনসাফ এর বার্তা সম্পাদক রুপে। মাত্র ২০ বছর বয়সে এই গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পান তিনি।
কলকাতার ছাত্র জিবনেই তিনি রেডিওর সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। ঢাকায় ও তিনি রেডিওতে অনুষ্ঠান করতেন।১৯৫২ সালের ভাসা আন্দোলন এর সময় তিনি দৈনিক মিল্লাত এর বার্তা সম্পাদক। ভাষা আন্দোলন এর সমর্থন এর জন্য তিনি মিল্লাত ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর তিনি যোগ দেন বৃটিশ ইনফরমেশন সার্ভিস এ। পাশাপাশি দৈনিক ইত্তেফাক এর সহ সম্পাদক হিসেবেও পার্টটাইম কাজ করতেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি অতন্ত কৈীশল ও সাহসের সাথে তার প্রতিবাদ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি বিবিসি রেডিওর বাংলা সার্ভিসে প্রযোজক হিসেবে যোগ দিয়ে লন্ডন চলে যান।
১৯৬৫ সালে তিনি একটি বৃত্তির অধিনে গ্লাসগোর টমসন টেলিভিশন কলেজ থেকে টিভি সাংবাদিকতা বিষয়ে উচ্চ প্রশিক্ষন নিয়ে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। এই সময় পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ঢাকা কেন্দ্র থেকে টিভি সাংবাদিকতায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। যুদ্ধের পর তিনি পুনরায় বিবিসি তে ফিরে যান। সংবাদ পাঠক এবং প্রযোজক হিসেবে তার "প্রিতি নিন সকলে" হয়ে উঠে ট্রেড মার্ক।
১৯৭১ সালে বিবিসির সাংবাদিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত তৈরিতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। বাংলাদেশ স্বাধিন হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে বিবিসির মত একটি সংস্থা গঠন এর উদ্যোগ নিলেও স্বার্থান্বেষি ব্যাক্তিদের জন্য ব্যর্থ হন। আবার ফিরে যান এবং ১৯৯৪ সালে অবসর নিয়ে ইংল্যান্ড এ বসবাস করতে থাকেন।
অবসর নেওয়ার পরও প্রধানত কলামিস্ট হিসেবে বাংলা ও ইংরেজিতে তিনি অনেক লিখেছেন। ৯০ এর এরশাদ বিরোধি আন্দোলন এর রয়েছে তার অবদান। ২০০৭ সালে তথাকথিত মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন এর অবৈধ সরকার এর বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম আওয়াজ তুলেন। বর্তমান আওয়ামিলিগ সরকারের বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে বেশকিছু্ বই এর লেখক তিনি। তার আত্মজিবনিমূলক রচনা "এক জিবন এক ইতিহাস" এবং "প্রিতি নিন সকলে" বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের ইতিহাসের এক দলিল।
গতরাত তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। অাল্লাহতায়লা তাকে বেহেস্ত নসিব করুন।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৯ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ উনার গোনাহ মাফ করুন ,ভাল আমলগুলো কবুল করে উনার করব আজাব মাফ করন এবং শেষ বিচারের দিন জান্নাত দান করুন ।আমীন
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আল্লাহ ওনার জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে ওনাকে জান্নাত নসীব করুক, আমীন।
ধন্যবাদ মন্তব্যটির জন্য।
সেই জন্যই একাধিকবার দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েও তিনি দেশে আসেননি।
প্রথম দিকে শুধু তার কলামই মনের খোরাক দিত। এরপর মাহমুদুর রহমানের আগমন। আজ মাহমুদুর রহমান কারাগারে আর সিরাজুর রহমান পরলোকে।
আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।
নির্ভিক সাংবাদিক সত্য কথা বলেছেন সবসময়।
অনেক ধন্যবাদ্
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যটির জন্য। প্রথম আলো তার লিখা ছাপাতনা কারন নির্মম সত্য বলতে অভ্যস্ত ছিলেন।
অনেক ধন্যবাদ।
তার সমস্ত ভুলত্রুটি ক্ষমা করে আত্মাকে শান্তিতে রাখার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করছি।
অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন