প্রিয় খাবার। মেজবাইন্না গোস্ত!!!
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৮ মে, ২০১৫, ১২:৩৬:০২ রাত
প্রিয় বই, প্রিয় ব্যাক্তিত্ব, প্রিয় লেখক, প্রিয় খাবার, প্রিয় দেশ নিয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছেন অপ্রিয় প্রতিযোগিতার!
যে বিষয়গুলি দিয়েছেন সেগুলির সমস্যা আছে অনেক!!
প্রিয় বই একটা না অনেক। লেখক ও তাই। প্রিয় দেশ যে দেশের বাসিন্দা ও নাগরিক না লিখলে অপরাধ হতে পারে। অথচ সেই দেশ প্রিয় নাও হতে পারে। আর প্রিয় ব্যাক্তি নিয়ে লিখতে গেলে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স তথা ঘরের গন্ডোগল এর শিকার হতে হতে পারে। সমস্যা অনেক!
তাই এই প্রতিযোগিতার সব চেয়ে নিরাপদ বিষয়টা বেছে নিলাম! প্রিয় খাবার। আপরুচি খানা! সারা উপমহাদেশে প্রচলিত প্রবাদ। আমার প্রিয় খাবার নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। কেউ এর কারন নিয়ে কিছু বলতে পারবে না কেউ যুক্তিবাদি যুক্তি চাইবেনা। কারন খানার পিছনে রুচিই যুক্তি। দেরি কইরা লাভ নাই শুরু করি আমার প্রিয় খাবার এর গল্প।
আমার প্রিয় খাবার হল গরুর গোস্তের মেজবানি রান্না!
চট্টগ্রামে জন্ম এবং আশৈশব চট্টগ্রামের বাসিন্দা। সুতারাং এই রান্নার সাথে পরিচয় জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই। কিন্তু তথাপি কখনও রুচির অভাব হয়নি। আল্লাহর কাছে দুয়া করি তিনি যেন এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত না করেন কখনই। বেশ বড় পরিবার এবং বিশেষ করে নানা বাড়ির একটু বেশি মেজবান এর আয়োজন হওয়ায় শিতকালে এবং রবিউল আউয়াল মাসটা ভালই যায়। চট্টগ্রামে ধনি ব্যাক্তিরা অনেকেই বছরে একবার এই মেজবান বা যিয়াফত এর আয়োজন করেন। কেউ আত্মিয় স্বজন এর জন্য দুয়ার উদ্দেশ্যে কেউ বা একবেলা সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানর একটা সামাজিকতা হিসাবে। আর রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবির অনুষঙ্গ হিসেবে হয় মেজবানি। তবে চট্টগ্রামি মেজবানি অনুষ্ঠান এর একটি বড় সেীন্দর্য হচ্ছে আত্মিয়-স্বজন অথিতি ছাড়াও সমাজের দরিদ্র ও ইয়তিম দের জন্যও একই মেন্যুতে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়।
মেজবানের মেন্যু খুব সাধারন। মেজবানি রান্না গরুর গোস্ত, সাথে বুটের ডাল। কখনও ডালে আলু বা লাউ দেওয়া হয়। গরুর নলা তথা পায়ের হাড় দিয়ে ঝোল ও কখনও দেওয়া হয়। চট্টগ্রামে সাধারনত আতপ চাল বেশি খাওয়া হলেও মেজবান এর সিদ্ধ চাল ই দেওয়া হয়। এর অতিরিক্ত একটা মিস্টি কেউ কেউ করেন আর বোরহানি। আজকাল অবশ্য একটা গরু ভুনা ও কেউ কেউ দেন তবে এটা অতিরিক্ত!
মেজবানের প্রধান আকর্ষন মেজবানি গরুর গোস্ত। এই বিশেষ ভাবে রান্না করা গরুর গোস্তের স্বাদ অতুলনিয়। এই স্বাদ এর কারন ব্যবহৃত মশলা এবং তাজা গরুর গোস্ত। মেজবানি গোস্ত রান্নার জন্য এখ প্যাকেট মশলাও পাওয়া যায়। ঘরে অল্প রান্নার জন্য ভালই। তবে পূর্ন স্বাদ পেতে বাটা মশলা ব্যবহার করতে হবে। মেজবানি রান্না মজা হওয়ার আরেকটা কারন হচ্ছে এতে গরুর রান এর সলিড গোস্ত,নরম রসাল হাড় সহ গোস্ত, শক্ত বুকের হাড় সহ গোস্ত এর সাথে কলিজা,ফুসফুস ইত্যাদি ও দেওয়া হয়। এর সাথে বাটা মশলা এবং চর্বিদার গোস্ত মিলে সৃষ্টি হয় অপরুপ এক স্বাদ এর!
মেজবানি রান্নার রেসিপি দেওয়া কঠিন! তবে ঘরে মেজবানি রান্না করতে চাইলে কমপক্ষে তিন কেজি একসাথে রান্না করতে হবে। এর মধ্যে দেড়কেজি হাড় ছাড়া,এক কেজি হাড় সহ এবং বাকি আধা কেজি কলিজা ও অন্যান্য অংশ নিতে হবে। এভাবে মিশ্রিত গোস্ত না হলে মেজবানি রান্নার আসল স্বাদ পাওয়া যাবেনা। চর্বিছাড়া গোস্তেও মজা হবেনা। একেবারে তাজা গোস্ত হতে হবে। ফ্রিজের গোস্তেও মেজবানি মজা হবেনা। প্যাকেট মশলা দিয়ে রান্না করলে সাথে লাল মরিচ বাটা ব্যাবহার করার চেষ্টা করা দরকার। স্বাদ ভাল হবে। কিভাবে রান্না করতে হবে সেই নিয়ম প্যাকেট এ দেওয়া থাকে। সংক্ষেপে শুধু এটুক লিখছি প্রথমে পিয়াজ কুচি গরম তেলে দিয়ে তারপর মশলা দিতে হবে। একটু নেড়েচেরে তারপর গোস্ত দিয়ে ভাল করে কষাতে হবে। গোস্ত থেকে পানি বের হলে সিদ্ধ হওয়ার মত পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। মেজবানি গোস্তে চর্বি বেশি থাকে বলে তেল খুব কম দিতে হয়। তেল বেশি হলে এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। মেজবানি গোস্ত পরটা দিয়েও খাওয়া যায়। চর্বি বেশি থাকে বলে অনেক দিন সংরক্ষন ও করা যায় তবে তাতে স্বাদ এর পরিবর্তন ঘটে।
এত বছর ধরেও খেয়েও যে রা্ন্নার স্বাদ নেওয়ার সুযোগ কখনও ছাড়িনা বুঝতেই পারছেন সেটা কেমন রান্না! চট্টগ্রামের স্থানিয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মরুহুম জাতিয় অধ্যাপক সৈয়দ আলি আহসান চট্টগ্রামের এই রান্না খুব পছন্দ করতেন। আর স্থানিয় অধিবাসি ধনি দরিদ্র সবাই এর অন্ধ প্রেমিক বললে ভুল হবেনা। মেজবানি গোস্ত পছন্দ না করলে তার চট্টগ্রামের বাসিন্দা হওয়া নিয়েই সন্দেহ দেখা দেবে!!
মেজবানি খাওয়া নিয়ে বহু সুখ ও দুঃখের স্মৃতি আছে জিবনে। গ্রামের দিকে এক দাওয়াত খেতে গিয়েছি। এত বেশি মানুষ হয়েছিল গোস্ত শেষ। যদিও আমন্ত্রনকারিরা দ্রুত দেশি মুরগি রান্না করে দিয়েছিলেন কিন্তু গরুর স্বাদ কি আর মিটে মুরগিতে! আর একবার রমজান মাসে চট্টগ্রামের এক বড় হোটেলে দাওয়াত পেয়েছি বড় এক টেলিকম ইকুইপমেন্ট প্রোভাইডার এর। ইফতার এর প্রথম মেন্যু তে পেট একটুও ভরেনি। ওরা আশ্বস্ত করলেন মাগরিব এর নামাজ এর পর আরো আছে। নামাজ পরে টেবিলে ফিরে আসতেই দেখলাম পরটা আর মেজবানি গোস্ত! আমাদের কোম্পানিতে যারা খাদক বলে পরিচিত একটা আলাদা টেবিলে বসে পড়লাম। সেদিন আমরা সব পরটা শেষ করার পর হোটেল কর্তপক্ষ বাইরে থেকে নানরুটি এনে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন! অথচ খাওয়ার পর বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম এশা ও তারাবির আগে!! কি সুস্বাদু হয়েছিল!!!
মেজবানি গোস্ত আলাদা কোন ক্ষতি নাই। হার্ট রোগিদের জন্য সাধারন ক্ষতি ছাড়া। তাই নির্দ্বিধায় খাবেন। আল্লাহর এই অপূর্ব নিয়ামত গরুর মেজবানি গোস্ত।
বিষয়: Contest_priyo
২৪৮৯ বার পঠিত, ৫৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন এডিট করে দিয়েছি।
পোস্ট না মেজবানি গোস্ত কোনটা দারুন?
তবে মেজবাইন্না গোস্তের দাওয়াত থাকলে আরো দ্রুত আসব!
খাই ন গেলে শেষ!
সত্যি এর কোন তুলনা হয়না। কেউ যদি আমাকে বলে " ফাইভ স্টার হোটেলে খাওয়াবে অন্যজন যদি বলে মেজবানে নিয়েযাবে" আমি মেজবানেই যাব। এর মজা অন্য কোথায়ও পাওয়া যাবে না। চট্রগ্রাম এ থাকার সময় আমি বিয়ের দাওয়াতে যেতাম না কিন্তু মেজবানে যেতাম ।
এই জন্যই বোধহয় চট্টগ্রামের বড় রেস্টুরেন্টগুলি বুফে তে এখন মেজবানি গরুর গোস্তও রাখে।
হানি আইয়ুক জল আইয়ুক নিজে রান্ধি লন!
আমার কাছে চিটাগংএর কালো ভূনা খুব বেশি ভালো লাগে! চিটাগংএর মরিচগুলোর চেহারা ভয়াবহ লাল একটু খানি তরকারিতে দিলেই প্রচুর ঝাল হয়ে যায়! কিন্তু খেত এখুব মজা হয়!
মেজবানী গোশ্তের অনেক নাম শুনেছি, মনে পড়ছে না খেয়েছি কি না! এবার গেলে খাওয়া হবে ইনশা আল্লাহ!
একটা ছবি এড করে দেন আরো বেশি আকর্ষনীয় হবে পোস্টের মান!
শুকরিয়া আপনাকে চটজলদি প্রতোযোগিতায় অংশগ্রহন করে সবাইকে অনুপ্রানিত করার জন্য!
কিন্তু চট্টগ্রামে থেকে আপনি মেজবানি খাননাই বিস্বাশ হচ্চেনা!
একদম চট্টগ্রামে বসে একদম 'অর্গানিক' মেজবানি এবং কালাভুনা অবশ্য কখনো খাওয়া হয় নাই।
আজ অবশ্য ভাবী বললো এবার গেলে মেজবানি গোশতই খাওয়ানো হবে!
মেজবানি গোশত খাওয়ার সাথে কারো মৃত্যু বা বিশেষ কোন অকেশন জড়িত?
ভাবি বললেন, মেজবানি গোশত নাকি সরিষার তেল দিয়ে রান্না করা হয়?
আর মেজবান দাওয়াত ছাড়া খাইলে দোষ নাই!
ঘটনা কি হাচা নাকি?
তবে একটা কথা, এই সুযোগ আবার পেয়ে আমারকেও নিয়ে যায়েন
মেজবানী গোশতের একটি ছবি দিতেন! তবে আরো আকর্শনীয় হতো লেখাটি! ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
ছবি দিতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমার কাছে নিজেদের যে ছবিগুলি আছে সেগুলি ৫০০ কেবির বড় হয়ওয়ায় আপলোড হচ্চেনা। নেট থেকে নিয়ে দিতে চাইনি।
শেষে আবার উনারা বলেছেন "মোদ্দা কথা " আপনার প্রিয় " তে লিখতে পারেন যা কিছু আপনার প্রিয় তা নিয়ে । কাজেই ভাইয়া কোন সমস্যা নেই আপনি চাইলে আপনার প্রিয় বউ মানে আমার ভাবীকে নিয়ে লিখতে পারেন । আর লেখা তো যাবে ৫ টা প্রিয় বিষয় নিয়ে ।
এত মসল্লা যুক্ত খাবার আমি খেতে পারি না কিন্তু আপনার বর্ণনা শুনে আর টেষ্টের কথা শুনে একটু খেতে ইচ্ছা করছে ।
প্রতিযোগীতায় আপনার সাফল্য কামনা করছি ।
মেজবাইন্না গরু,কালো ভুনা গরু, শুটকির ভর্তা,শুটকি দিয়া বেগুন সব কিছু আপনার জন্য রেডি থাকেব ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় বউ মানে?????
বউ কি আমার একাধিক যে এর মধ্যে একটা প্রিয় বের করব। আপনার কমেন্ট এর কথা হুনলে আমার ব্লগ বন্ধ হইয়া যাইতে পারে!!!
মেজবানে খবর পেলে আসাই নিয়ম!
ফেইসবুকে নাছির ভাইও বলেছেন !!!
প্রতিযোগীতায় আপনার সাফল্য কামনা করছি ।
আমি অবশ্যই উপস্থিত থাকব!
রবিউল আউয়াল মাসে মেজবানি না হয়ে রোজা পালন করাই উপযোগী সময় মনে হয়। ধন্যবাদ।
মেজবাইন্না গোস্ত একটু ঝাল না হইলে মজা হয়না। বেশি ঝাল লাগলে পানি খাবেন খাওয়ার সময় আর খাওয়ার পর একটু মিস্টি না হয় কলা খাবেন।
আসরের নামায শেষ, এই তো একটু আগে, বাসায় এসে দেখি বিদ্যুৎ নেই। একটা বই হাতে নিয়ে সোফায় তাই গা এলিয়ে দিলাম। বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিলাম। বইটার নাম 'স্বপ্ন দিয়ে বোনা'। এখানে আমার আনাড়ি হাতের একটা লেখা ছাপা হয়েছিলো। পৃষ্ঠা নাম্বার ৩০০ থেকে। আমার লেখাটা শেষ হবার পরেই শুরু হয় আপনার লেখা, ৩০৪ নাম্বার পৃষ্ঠা হতে। এই হিসেবে আপনি তো প্রকৃতই আমার প্রতিবেশী, কি বলেন?
এই বইটা যারা প্রকাশ করেছেন, তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করি সবসময়। আল্লাহ তাদের কবুল করুন। আল্লাহ চাইলে কতো কতো ভবিষ্যত লেখক যে এই বই থেকে বের হবে কে জানে। আমি বইটা কিছুদিন হলো হাতে পেয়েছি। দেশে ছিলাম না অনেকদিন। ফেরার পর বাহার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে বই পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
মেজবানির দাওয়াত না দিয়ে শুধু গল্প শোনালেন, পেট ব্যাথা হলে কিন্তু আমাদের দোষ নেই।
আমি কিন্তু চাকরি উপলক্ষে সিলেটে প্রায় একবছর ছিলাম।
মেজবানের দাওয়াত উপরে দিয়ে দিয়েছি!!!
প্রতিযোগীতায় সাফল্য কামনা করছি।
আমি ভুনা টা ভাল করতে পারি। রেডিমেড মশলা দিয়া মেজবানি রাধতে পারি কিন্তু বেশি মজা হয়না।
দাওয়াত.... থাওয়াবেন আরকি!!!
আসার সময় চট্টগ্রাম ষ্টেশনে নেমে ৫ কেজি বর্ননামত মিশ্রিত গরুর গোস্ত নিয়ে আসবেন। বাকি ব্যাবস্থা আমিই করব!!!
হাড়িতে লাফ দিলে তো গোস্তটা নষ্ট হবে। আরামসে ধিরে সুস্থে বসে খান। আপনার মত এই গোস্ত ছাড়া আমারও জিবন বৃথা মনে হয়!
মন্তব্য করতে লগইন করুন