ইউকে এর নির্বাচন। সাম্রাজ্যবাদ এর সম্ভাব্য পুনউত্থান।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১০ মে, ২০১৫, ০৯:১৯:০২ রাত
গত ৭ই মে যুক্তরাজ্য তথা ইউনাইটেড কিংডম এর পার্লামেন্টারি নির্বাচন হয়ে গেল। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতাসিন কনজারভেটিভ বা রক্ষনশিল দল পুনরায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠন করতে সমর্থ হয়েছে। সংসদিয় গনতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত গ্রেট বৃটেন এর এই নির্বাচন শিক্ষনিয় ও গুরুত্বপুর্ন কয়েকটি কারনে। বৃটেন এবং সারা বিশ্বের উপরই এই নির্বাচনের ফলে নতুন কিছু ঘটতে পারে।
ইউকে পার্লামেন্ট গঠিত হয় গ্রেট বৃটেন দ্বিপ এর অন্তর্ভুক্ত ইংল্যান্ড,স্কটল্যান্ড,ওয়েলস এবং ভেীগলিক ভাবে বৃটিশ দ্বিপপুঞ্জ বিচ্ছিন্ন উত্তর আয়ারল্যান্ড জুরে। একটি বিষয় বিশেষ ভাবে লক্ষনিয় যে বৃটেন এর যখন বিশ্বব্যাপি বিশাল সাম্রাজ্য ছিল তখনও বৃটিশ পার্লামেন্ট গঠিত হত শুধু এই এলাকাগুলির প্রতিনিধিত্ব নিয়েই। বিশ্বব্যাপি উপনিবেশগুলির কোন প্রতিনিধিত্বই সেই পার্লামেন্ট এ থাকত না। শুধু বর্তমান স্বাধিন আয়ারল্যান্ড এর প্রতিনিধিত্ব ছিল ১৯১৯ সাল পর্যন্ত।
বিভ্ন্নি সময়ে বিভিন্ন সমস্যার মুকাবিলা করেও ইউকে পার্লামেন্ট তার সন্মান ও মর্যাদা রক্ষা করে চলছে এখনও পর্যন্ত।
কিন্তু সর্বশেষ নির্বাচনি ফলাফল একসময় বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারি এবং বর্তমানে তার প্রাক্তন কলোনিগুলির অধিবাসিদের অবদানে সম্বৃদ্ধ বৃটেন এ নতুন কোন সংঘাতের সৃস্টি করার সম্ভাবনা দেখছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কনজারভেটিভ দল সবসময়ই বৃটেন এ অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রন এর পক্ষপাতি থাকলেও এই বিষয়ে বর্তমান নির্বাচনি ইস্তাহার এর মত কঠোর মনোভাব কখনই প্রদর্শন করেনি। অন্যদিকে যে লেবার পার্টিকে বলা হয় অভিবাসন সমর্থক তারাও বিভিন্নভাবে গর্ডন ব্রাউন ও টনি ব্লেয়ার এর সরকার এর সময় অভিবাসন বিরোধি বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে।
এই অভিভাসন বিরোধি মনোভাব থেকে যে বিষয়টি বিশ্ব রাজনিতিতে বেশি প্রভাব ফেলবে মনে হচ্ছে চরম ডানপন্থি বৃটিশ জাতিয়তাবাদি শক্তির উত্থান। একই সঙ্গে স্কটিশ জাতিয়তাবাদ এর জয়। মাস ছয়েক আগে গনভোটে স্বাধিনতার বিপক্ষে ভোট দিলেও এই নির্বাচনে স্কটিশ জাতিয়তাবাদি দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি স্কটল্যান্ড এলাকায় ৫৮ টি আসন এর মধ্যে ৫৬ টিতে বিজয়ি হয়েছে। একই ভাবে আয়ারল্যান্ড এ ও আইরিশ জাতিয়তাবাদি সিনফেন চারটি আসন সহ প্রচুর ভোট পেয়েছে। আইরিশ প্রোটেস্টান্ট অধ্যুষিত অঞ্চল আলস্টার এও স্থানিয় আলস্টার ন্যাশনাল পার্টি এবং সল্প পরিচিত ওয়েলশ এর স্থানিয় দল প্লাইড কামরু ও আসন লাভ করেছে। অভিবাসি ও বিদেশ নিতি প্রশ্নে নরম রেসপেক্ট পার্টি বা গ্রিন পার্টির মত দলগুলি উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভে ব্যার্থ হয়েছে। প্রদেশ ও অঞ্চল ভেদে ভোটের এই পার্থক্য ইউনাইটেড কিংডম এর একতা কে বৃদ্ধি করবে না তাকে কমিয়ে দেবে সেটা এখন সময়ই বলে দেবে। কিন্তু স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির এই বিজয় তাদের স্বাধিন স্কটল্যান্ড এর দাবিকে আরো জোড়াল করবে বলেই মনে হয়। ইউকে পার্লামেন্ট এ আসন এর তৃতিয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভুত হওয়া এই দল স্কটল্যান্ড এর স্বাধিনতা প্রশ্নে পুনরায় গনভোট এর আহব্বান করতে পারে। সেই সময় যদি বর্তমান জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে পারে স্কটল্যান্ড ইউকে থেকে বের হয়ে যাওয়া নিশ্চিত।
এই নির্বাচনের সবচেয়ে লক্ষনিয় বিষয় টি হচ্ছে ডানপন্থি এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও শ্বেতাঙ্গ প্রাধান্যের সমর্থক ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির সর্বোমোট ভোট এর প্রায় ১২% লাভ করে ভোটের দিক দিয়ে তৃত্বিয় অবস্থানে থাকা। যদিও নির্বাচনি নিয়ম এর ফাঁকে পার্লামেন্ট এ তাদের আসন মাত্র একটি। এই কারনে ভোটের দিক দিয়ে তৃতিয় স্থানে থাকলেও পার্লামেন্ট এ তারা সোস্যাল ডেমক্রেট (৩ আসন) বা ইউনিয়নিস্ট (৮ আসন) থেকে পিছিয়ে। যদিও সর্বোমোট প্রাপ্ত ভোট এর দিক দিয়ে এই দলগুলি এক শতাংশেরও কম ভোট লাভ করেছে। গত সরকারের অংশিদার এবং পার্লামেন্ট এ তৃত্বিয় স্থান লাভকারি নরমপন্থি লিবারেল দল এর আসন ৫০ টি থেকে নেমে এসেছে ৮ টিতে যদিও প্রাপ্ত ভোট এর দিক দিয়ে তারা চতুর্থ স্থানে আছে। চারবছর আগে গনভোটে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করে নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে পার্লামেন্ট এ আসন বন্টন করার পদ্ধতি নাকচ হয়ে গেলেও ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির এই ফলাফল বিষয় টাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। ইউকে তে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতি আসলেই প্রকৃত জনমত এর প্রতিনিধিত্ব করে কিনা আবারও উঠেছে সেই প্রশ্ন।
ধর্ম এবং জাতিগত ভিন্ন গোষ্ঠিগুলি থেকে বর্তমান নির্বাচনে পার্লামেন্ট এ প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি পেলেও বর্তমান নির্বাচনি ফলাফল বৃটেনে আল্ট্রা ন্যাশনালিজম বা চরম জাতিয়তাবাদ এর উত্থান এর সম্ভাবনাকে অনেক বেশি সম্ভাব্য করে তুলেছে। আবার অন্যদিকে গ্রেট বৃটেন ও ইউকের মধ্যে আঞ্চলিকতার প্রাধান্য সৃষ্টির বিষয়টাও সামনে এসেছে। ইউকে তে যদি কোন বর্ণবাদি সমর্থক সরকার ক্ষমতায় আসে তবে নাৎসি জার্মানির পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা কে উড়িয়ে দেওয়া যায়না। স্থানিয় দলগুলির সাফল্য এবং শ্বেতাঙ্গ জাতিয়তাবাদিদের উত্থান সেই আশংকার সৃস্টি করেছে। এছাড়া প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিরও অভিবাসন বিরোধি এবং জাতিয়তাবাদি নিতিগ্রহন ও সাধারন মানুষের মধ্যে এই উগ্র জাতিয়তাবাদ এর প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষন।
ইউকে তে যদি কোন উগ্র জাতিয়তাবাদি দল ক্ষমতায় আরোহন অন্ততপক্ষে অংশিদার হওয়ার সুযোগ পায় সেক্ষেত্রে বিশ্বের জন্য তা বিশেষ প্রভাব ফেলবে। বর্তমান পার্লামেন্ট ও ইউকে তে অনিশ্চিত ভবিষ্যত কে নির্দেশ করছে। ৩৩১ আসন নিয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও কনজারভেটিভ দল এর জন্য ভবিষ্যত সহজ হবেনা।
বিষয়: বিবিধ
১৪০০ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিয়মিত পত্রিকা ও আন্তর্জাতিক নিউজ ওয়েবসাইট পড়লে কঠিন কিছু নয়।
সব পার্টিই কিন্তু এইবার অভিবাসন বিরোধি স্ট্যান্ড নিয়েছে মিডিয়াগুলির অপপ্রচার এই জন্য অনেকাংশেই দায়ি।
শুনছি ইমিগ্রেশন জটিলতা বাড়বে! দেখা যাক কি হয়!
তথ্যসমৃদ্ধ সাম্প্রতিক পোস্টের জন্য শুকরিয়া!
ইমিগ্রেশন অনেক কঠিন করা হবে বলেই নির্বাচনি ইস্তাহার ছিল কনজারভেটিভ দের।
যাহোক, পৃথিবীর চাকা ঘুরতে থাকবেই, উত্থান ও পতনের মধ্য দিয়েই আমাদের জীবন যাবে। মাঝখানে আমাদের আমল গুলো কি এমন উন্নত হবে, যা আল্লাহ, ও তাঁর রাসূল (স) এবং মুমিনরা দেখতে পাবে? আমি ভাবছি তাই নিয়ে।
সেদিন রাত গভীরে চোখ মেলে দিগন্তে দেখলাম আমার আমল গুলো এখনো মাটি সমান, উপরে উঠা তো দূরে থাক, আমারি চোখে পড়ছে কই?
পৃথিবির এই টার্নিং পয়েন্ট এ আমরা এখনও বিতর্কে লিপ্ত ছোট ছোট বিষয় নিয়ে। আমল এর থেকে অন্যের দোষ খুজে বের করতে বেশি ব্যাস্ত!!
এক্সট্রিম ন্যাশনালিজমের উত্থানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইউকিপ, লিবডেম সহ সমমনাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি এটাই ইঙ্গিত করে। তবে সবশেষে এটাই প্রতীয়মান হয়, বৃটেনে বেশ একটা পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনটা অভিবাসীবান্ধব না হবার সম্ভাবনাটাই বেশী।
আপনার অনুসন্ধানী লেখার জন্যে ধন্যবাদ। অনুমতি থাকলে ফেইসবুকে শেয়ার করার ইচ্ছে থাকলো।
লেবার রাও অভিবাসি বিষয়ে এখন অনেক কঠোর। কিন্তু ইউকে এর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে একেবারে অভিবাসি মুক্ত হতেও পারবে বলে মনে হয়না। তবে উগ্র জাতিয়তাবাদের বিকাশ টাই বিশ্বের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর হতে পারে।
যে কোনখানে শেয়ার করতে পারেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন