সত্যজিৎ রায়।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০২ মে, ২০১৫, ১০:৫৯:৩৬ রাত
"পথের পাাঁচালি" উপন্যাস হিসেবে অনেকের কাছেই খুব বেশি প্রিয় হয়নি। বিভুতিভুষন এর আরন্যক বা ইছামতির তুলনায় একে নিন্মমানের সাহিত্য বলেও অনেকে মনে করেন। কিন্তু এই উপন্যাসকে যখন সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্রায়িত করেন তখন সেই চলচ্চিত্র হয়ে উঠে এক কালজয়ি সৃষ্টি। আমি নিজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি অনেক কম বয়সে যখন বিটিভি থেকে প্রচারিত সেই ছবি দেখছিলাম অনেক কিছু না বুঝলেও তন্ময় হয়ে গিয়েছিলাম শিশু অপুর সাথে।
উপন্দ্রেকিশোর রায় এর পেীত্র ও কবি সুকুমার রায় এর পুত্র সত্যজিৎ রায়। ১৯২১ সালে জন্ম ও বেড়ে উঠা প্রধানত কলকাতা শহরে। পারিবারিক আদি নিবাস কিশোরগঞ্জে। সত্যজিৎ রায় কলকাতার বিখ্যাত বালিগঞ্জ হাই স্কুল এর ছাত্র ছিলেন। পরবর্তিতে বিএ পাস করেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। এরপর শান্তিনিকেতন থেকে ছবি আঁকায় প্রশিক্ষন গ্রহন করে কর্ম জিবন শুরু করেন সেসময় এর বিখ্যাত বিজ্ঞাপনি সংস্থা ডিজে কিমার এ। ছাত্রজিবন থেকেই ভাল ছায়াছবির ভক্ত ছিলেন সত্যজিৎ রায়। ডিজে কিমার এর অন্যতম কর্মকর্তা ছিলেন তার এক আত্মিয় দিলিপকুমার গুপ্ত। তার মালিকানায় ছিল বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা সিগনেট প্রেস। এই সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত বিভুতি ভুষন এর "পথের পাঁচালি" এর কিশোর সংস্করন "আম-আটির ভেঁপু" এর জন্য ছবি আঁকতে গিয়ে এই উপন্যাস টিকে চলচ্চিত্রায়িত করার ইচ্ছা জাগে তার। এই সময় তিনি তার কর্মস্থল থেকে ইংল্যান্ড এ যাওয়ার এবং সেখানে প্রশিক্ষন শেষে চাকরির সুযোগ পেলেও সৃষ্টির অদম্য বাসনায় ফিরে আসেন। নিজের সঞ্চয়, স্ত্রির গয়না বন্ধক রেখে এবং বন্ধু বান্ধব থেকে টাকা নিয়ে ছবিটির কাজ শুরু করেন সত্যজিৎ রায়। এক পর্যায়ে টাকার অভাবে ছবিটির কাজ বন্ধ হয়ে গেলে এক আত্মিয়র সহায়তায় আমলাদের তিব্র বিরোধিতা সত্বেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুদানে ছবিটির কাজ শেষ করতে সক্ষম হন তিনি। ১৯৫৫ সালে ছবিটি মুক্তি পেলে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয় এবং প্রশংসা অর্জন করে। এটি বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরুস্কার লাভ করে। সত্যজিৎ রায় হয়ে উঠেন বিশ্ববিখ্যাত। ১৯৫৫ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত ২৮ টি ছায়ছবি এবং কয়েকটি সল্প দৈর্ঘ চলচ্চিত্র। প্রথম থেকে শেষ প্রত্যেকটি ছায়াছবিই অনেক প্রশংসা ও পুরুস্কার অর্জন করে। চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও ক্যামেরা ও সঙ্গিত পরিচালক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।
ছবি পরিচালনার পাশাপাশি ১৯৬০ সালে তার পিতামহ উপন্দ্রে কিশোর রায় এবং পিতা সুকুমার রায় এর প্রতিষ্ঠিত শিশুকিশোর পত্রিকা "সন্দেশ" কে পুনঃপ্রকাশ করতে গিয়ে চল্লিশউর্দ্ধো বয়সে লেখক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। সৃষ্টি করেন বাংলা সাহিত্যের অমর কিছু চরিত্র ফেলুদা,জটায়ু প্রফেসর শন্কু। বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্য এবং কল্পবিজ্ঞান এর ক্ষেত্রে নতুন যুগের ভিত্তি স্থাপন করেন তিনি।
সত্যজিৎ রায় বিভিন্ন দেশে সম্মাননার পাশাপশি অর্জন করেন ভারতের সর্বোচ্চ সন্মান "ভারত রত্ন" এবং সন্মানসুচক "অস্কার" যা চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্মান বলে গন্য।
১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল তিনি কলকাতায় মৃত্যবরন করেন।
আজকে ২রা মে ২০১৫ তার ৯৪ তম জন্ম বার্ষিকি।
সত্যজিত রায় পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছায়ছবি গুলি।
পথের পাঁচালি-১৯৫৫
অপরাজিত-১৯৫৬
পরশপাথর-১৯৫৭
জলসাঘর-১৯৫৮
অপুর সংসার-১৯৫৯
দেবি-১৯৬০
তিনকন্যা-১৯৬১
কাঞ্চনজঙ্ঘা-১৯৬২(সত্যজিৎ রায় এর প্রথম রঙ্গিন ছবি)
অভিযান-১৯৬২
মহানগর-১৯৬৩
চারুলতা-১৯৬৪
কাপুরুষ ও মহাপুরুষ-১৯৬৫
নায়ক-১৯৬৬
চিড়িয়াখানা-১৯৬৭
গুপি গাইন বাঘা বাইন-১৯৬৯
অরন্যের দিনরাত্রি-১৯৭০
প্রতিদন্দি-১৯৭০
সিমাবদ্ধ-১৯৭১
অশনি সংকেত-১৯৭৩( এই ছবিতে অভিনয় করে বাংলাদেশের নায়িকা ববিতা আন্তর্জাতিক সন্মান অর্জন করেন)
সোনার কিল্লা-১৯৭৫(তার অমর সৃষ্টি ফেলুদা কে নিয়ে প্রথম ছবি)
জন অরন্য-১৯৭৫
শতরঞ্জ কি খিলারি-্১৯৭৭ (একমাত্র হিন্দি ছবি)
হিরক রাজার দেশে-১৯৮০
ঘরে বাইরে-১৯৮৪
গনশত্রু-১৯৮৯
শাখাপ্রশাখা-১৯৯০
আগন্তক-১৯৯১(শেষ ছবি)
এছাড়াও রবিন্দ্রনাথ,সুকুমার রায়,বালা, ইনার আই, সদগতি,সিকিম,পিকু নামে কয়েকটি সল্পদৈর্ঘ ছবিও তিনি পরিচালনা করেছেন। তার "সিকিম" ছবিটি সিকিম গ্রাস করার সময় ভারত সরকার আটক করে। মার্চেন্ট আইভরি প্রোডাকশন এর ইংরেজি ছবি "সেক্সপিয়ারওয়ালাহ" তে সঙ্গিত পরিচালক এর কাজও করেন তিনি।
বিষয়: বিবিধ
১৯২৫ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আবার অপুর সংসার মুভিটির কিছু কিছু শব্দ কানে লেগে আছে যেমন" জানিস আজ "ক" মাস পর পেট পুরে খেলাম থ্যাংকস টু ইউ" "আড়ি আড়ি আড়ি" প্রতিটা শব্দই হৃদয়ে গেঁথে নেয়ার মত।
ফেলুদা কিন্তু আমার প্রিয় চরিত্র। ফেলুদার পোকা ছিলাম আমি। অনেক না জানা তথ্য জানানোর জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ফেলুদা আমারও প্রিয় চরিত্র।
@আওন মিয়া
জাজাকাল্লাহ ভাইয়া সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
অনেক ধন্যবাদ। এখন মনে হয় ঠিক হয়েছে।
পথের পাঁচালি অনেকদিন আগের পড়া বই তবে পড়ে বেশ ভালোলেগেছিলো এটা এখনো মনে আছে! বারবার পড়ার মতো বই!
শুকরিয়া চমৎকার রিভিউ এর জন্য! ভাইয়া আপনার পড়া এবং পছন্দের বই নিয়ে একটি পোস্ট দিন!
শুকরিয়া!
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ। বিভুতিভুষন এর আরন্যক ও দেবযান আমার বেশি ভাল লাগে।
আগন্তক সত্যজিৎ রায় এর শেষ ছবি। অত্যন্ত শিক্ষনিয়। এই ছবিতে উৎপল দত্তের অভিনয় ও খুব আকর্ষনিয়।
সত্যজিৎ রায় এর সৃষ্টি থেকে আমাদের জন্য শিক্ষনিয় অনেক কিছু আছে। "হিরক রাজার দেশে" এখন আমাদের দেশের অবস্থার সাথে তুলনিয়। সত্যজিৎ রায় এই ছবি কিন্তু ভারতে ইন্দিরা গান্ধির জরুরি অবস্থার সময়কাল কে ব্যাঙ্গ করে লিখেছিলেন।
মানুষ। একটু খাইতে পছন্দ করি। আর একটু বই পড়তে!!
দেব যখন এক হয়ে যাবার কথা বলে তখন তার পিন্ডি চাপকাতে কেউ বাদ থাকে না , কিন্তু দেবদেরই কারিগরদের আবার নমঃ নমঃ করি ।
এখানে আওয়ামী পন্থী বা শিবিরিয়ান কোন ফ্যাক্টর না , গোলামীর বীজ যার ভেতরে গ্রোথিত অনুকূল পরিবেশে তা বের হয়ে আসে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন