গুন্টার গ্রাস। যা বলতেই হবে।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৮ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:৪০:৫৭ রাত

নোবেল বিজয়ি জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস গত ১৩ ই এপ্রিল,২০১৫ তারিখে মারা গিয়েছেন।

দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবির সাহিত্য অঙ্গনে মানবিক দলিল এর অপুর্ব এক রুপকার ছিলেন গুন্টার গ্রাস।তার উপন্যাস ও কবিতায় ফুটে উঠেছে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তি সময়ের পৃথিবির মানবিক আবেদন।

গুন্টার গ্রাস এর জন্ম ১৬ ই অক্টোবর,১৯২৭ সালে বর্তমান পোল্যান্ড এর গদানস্ক এ। গদানস্ক তখন ফ্রি সিটি অফ ডানযিগ নামে পরিচিত ছিল। দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ এর শুরু হয়েছিল এই শহরটি থেকে। জার্মান পিতা ও পোলিশ মায়ের সন্তান গ্রাস গদানস্ক এই তার শৈশব অতিবাহিত করেন। গদানস্ক এ কৈশোর এর প্রথম প্রান্তেই প্রত্যক্ষ করেন দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকর রুপ। কৈশোরের আবেগে গ্রাস জার্মান আদর্শকে গ্রহন করে যোগদেন হিটলার এর বিশেষ জার্মান বাহিনি ওয়াফেন এসএস এ। ১০ প্যানজার ডিভিশন এর অধিনে ট্যাংক গানার হিসেবে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। যুদ্ধ শেষে বিজয়ি মার্কিন বাহিনির হাতে বন্দি হন। বছর খানেক পর মুক্তি লাভ করে তিনি প্রথমে পাথরের খনিতে কাজ নেন এবং পাথর খোদাই করে ভাস্কর্য তৈরির কাজও শিখেন। ১৯৫৩ সালে বিভক্ত বার্লিন নগরির পশ্চিম অংশে বসবাস শুরু করেন গুন্টার গ্রাস। এই সময় তিনি ভর্তি হন বার্লিন ইউনিভারসিটি অফ আর্টস এ। বার্লিন এই তার সাহিত্য প্রতিভার উন্মেষ ও পূর্নতা পায়। ১৯৫৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস "দি টিন ড্রাম" প্রকাশিত হওয়ার পরপরই বিপুল আলোড়ন এর সৃষ্টি হয়।

গুন্টার গ্রাস এর সাহিত্যের প্রধান উপজিব্য দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ এবং জার্মান জনগনের জিবনে তার প্রভাব। দ্বিতিয় বিশ্ব যুদ্ধ এবং এর প্রেক্ষাপটে বিভক্ত জার্মানির সাধারন মানুষদের জিবনের কথা উঠে এসেছে তার লিখায়। যেগুলি মানুষের মানবিক সত্তার মুর্ত প্রতিক হয়ে উঠেছে।

গ্রাস তার স্পষ্ট এবং সাহসি কথার জন্য সবসময় বিতর্কিত হয়েছেন। বামপন্থি হিসেবে পরিচিত গ্রাস সোভিয়েট ইউনিয়ন এর বার্লিন প্রাচির নির্মান এর বিরুদ্ধে ছিলেন উচ্চ কন্ঠ। ২০০৬ সালের আগে কখনই তিনি বলেননি তার এসএস এর সদস্য থাকার কথা। এর পিছনে প্রধান কারন ছিল সেইক্ষেত্রে তাকে সহজেই এন্টি সেমেটিক বলে চিহ্নিত করে তার প্রতিভা কে আটকে দেওয়া হতো। ২০১২ সালে "যা বলতেই হবে" নামে একটি কবিতা লিখে তিনি ইসরা্ইল রাস্ট্রে অবান্ছিত ব্যাক্তি বলে ঘোষিত হন। জার্মানির ইসরাইল এর কাছে একটি সাবমেরিন বিক্রির প্রেক্ষাপটে লিখা এই কবিতায় তিনি ইসরাইল কে দায়ি করেন অমানবিক আচরন এর জন্য।

মানবতা বাদি এই কবি বাংলাদেশেও এসেছিলেন ১৯৮৬ সালে। দেখে ছিলেন এই দেশের গ্রামিন মানুষকে। ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরুস্কার এ ভূষিত হন এই সাহিত্যিক।

আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

বিষয়: বিবিধ

১২১২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

315555
১৮ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:৩১
আফরা লিখেছেন :


ধন্যবাদ ভাইয়া কিছু জানা কিছু অজানাকে জানলাম ।
১৮ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:০০
256609
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ ছবিটির জন্য।
ব্যান্ডউইথ সমস্যার জন্য আমি ছবি দিতে পারিনি। প্রয়োজন ছিল।
315581
১৮ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:১৯
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই। ভালো লাগলো। তবে দুঃখ হল এই মহান মানুষের গণ্প তার মৃত্যুর পর শুনতে হচ্ছে।
১৮ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:০২
256610
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : উনি একসময় বাংলাদেশে বামদের বেশ প্রিয় ছিলেন। যতটুক জানি দাউদ হায়দার কে জার্মানিতে আশ্রয় দেওয়ার পিছনে তার চেষ্টা ছিল। কিন্তু শেষ জিবনে ইহুদি এবং সোভিয়েট উভয় বিরোধিতার কারনে আমাদের মিডিয়ার কাছে উনি বেশ অপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। একজন নোবেল বিজয়ি হিসেবে তার মৃত্যু সংবাদ যতটুক কভারেজ পাওয়া উচিত ছিল পায়নি।
315931
২০ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৭:৫৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : এই রকম একজন ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। অনেক ভাল লেগেছে......
২০ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১১:২৬
256973
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ মন্তব্যটির জন্য্।
316537
২৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৪৭
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : অজানা বিষয় জানলাম।
আত্মজীবনী মূলক বই বা লিখা পড়তে প্রচন্ড ভালো লাগে আমার ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।
Good Luck বামদের মধ্যে একটা বিষয় আমার মনে হয় যে, ওরা প্রচন্ড দেশপ্রেমি হয়।
জাজাকাল্লাহ ভাইয়া।
২৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১১:৪১
257690
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।
শেষ কথাটি ঠিক নয়!!
গুন্টার গ্রাস কে তথাকথিত বামপন্থিদের কাতারে ফেলা যায়না।
319125
১০ মে ২০১৫ রাত ০২:৩৮
১০ মে ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
260310
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File