মুজাফফর শামস বলখির উপদেশ সুলতান গিয়াসউদ্দিন এর প্রতি
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১১ এপ্রিল, ২০১৫, ১১:৪৫:৪৮ রাত
১৩৯১ খ্রিষ্টাব্দে লাখনেীতি বা গেীরের সিংহাসনে আরোহন করেন বাংলার স্বাধিন সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ। উত্তর বিহার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত রাষ্ট্রের সুলতান ছিলেন তিনি। তার ন্যায়পরায়নতা এবং শিক্ষা ও শিল্পপ্রিতির কাহিনি এখনও মানুষের মুখে মুখে। বিদ্যোতসাহি এই সুলতান ছিলেন তার সময় এর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানি শায়খ নুর কুতুব উল আলম এর বন্ধু । তার আরেক প্রিয় ব্যাক্তি ছিলেন বিহারের সুফি মুজাফফর শামস বলখি। মুজাফফর শামস বলখি এবং শায়খ নূর কুতুব উল আলম উভয়ে সুলতান গিয়াসউদ্দিনকে বিভিন্ন পরামর্শ ও উপদেশ দিতেন। সুলতান তা গ্রহন এর চেষ্টাও করতেন। কিন্তু উদারনৈতিক মনোভাব এর এই সুলতান উদারতা প্রদর্শন হিসেবে তার দরবারে হিন্দু আমত্য দের অতি উচ্চ পদ দিয়েছিলেন। যার ফলে তারাই একসময় হয়ে পরে তার দরবারের প্রভাবশালি ও শক্তিশালি গোষ্ঠি।
মুজাফফর শামস বলখি ৮০০ হিজরির দিকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে হজ করতে চান। ৮০৩ হিজরিতে এডেনে তার ইন্তেকাল হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করার আগে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ এর কাছে শেষ চিঠিতে তিনি তাকে একটি জরুরি উপদেশ দেন। তিনি সুষ্পষ্ট ভাবে হিন্দু আমত্য দের উচ্চতর প্রশাসনিক পদ দেওয়ার প্রতিবাদ করেন। তার উপদেশ ছিল যে বিধর্মিরা যদি প্রধান তত্বাবধায়ক বা শাসনকর্তার পদ পায় তাহলে তারা মুসলিম দের উপর কর্তৃত্ব করা সুযোগ লাভ করবে এবং তাদের উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করবে। তাদেরকে কাজে নিযুক্ত অবশ্যই করা যাবে কিন্তু এমন অধিকার অবশ্যই দেয়া যাবেনা যেখানে তারা মুসলিম দের উপর নিজেদের প্রভাব খাটাতে পারে।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন ন্যায়পরায়ন ও ধার্মিক ব্যাক্তি হয়েও এই উপদেশ অনুসরন করতে ব্যার্থ হন। তার ফলাফল ও হাতে নাতেই হয়। ১৪১০ খ্রিষ্টাব্দে তার ইন্তেকালের মাত্র চার বছর এর মধ্যেই তারই প্রধান আমত্য রাজা গনেশ গেীরের সিংহাসন দখল করেন এবং মুসলিম জনসাধারন এর উপর অত্যাচার শুরু করেন। হত্যা করেন শায়খ বদরুল ইসলাম, শায়খ আনওয়ার ও শায়খ জাহিদ সহ অনেক মুসলিম আউলিয়া-কেরাম কে। মাত্র চার বছর ১৪১৪-১৪১৭ খ্রিষ্টাব্দের শাসনকালের মধ্যেই তিনি এই বিশাল হত্যাকান্ড চালিয়ে বাংলার মুসলিম সমাজের প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকে অনেক কমিয়ে দেন।
গনেশ এর মৃত্যুর প্রায় ৫০ বছর পর যখন ইলিয়াস শাহি বংশের নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ এবং রুকুনউদ্দিন বারবক শাহ আবারও সেই ভুলই করেন যে ভুল গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ করেছিলেন। রুকুনউদ্দিন বারবক শাহ এর মত জ্ঞানি ব্যাক্তিও কয়েকজন হিন্দু আমত্য এর কথায় শাহ ইসমাইল গাজি এর মত মুজাহিদ কে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন। তবে সেীভাগ্য তার উত্তরাধিকারি শামসুদ্দিন আহমদ শাহ এ বিষয়ে তুলনামুলক সচেতন হওয়ায় গনেশ এর মত কারো উদ্ভব ঘটেনি।
প্রায় দুইশত বর্ষ পরে আবারও একই ভুল করেন নবাব মুর্শিদকুলি খান। খাজনা আদায় বৃদ্ধির চিন্তায় তিনি বেশ কিছু মুসলিম জমিদারকে জমিদারিচুত্য করেন এবং জগত শেঠ এর মত কিছু ব্যবসায়ি কে বিশেষ ক্ষমতা দেন। এর পরিনিত হয় ভয়াবহ। শুধু বাংলা নয় বরং সমগ্র ভারতবর্ষের স্বাধিনতাই ধ্বংস হয়ে যায় তার ফলে।
সুফি মুজাফফর বলখি ছয় শত বছর আগে যে উপদেশ দিয়েছিলেন সেই উপদেশ না শুনে এখনও আমরা ভুক্তভোগি হয়ে চলছি। আমরা বিধর্মিদের এখন পরমবন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছি। তাদের কে এমনই ক্ষমতা ও মর্যাদার আসনে বসিয়েছি যে তারা মুসলিমদের হত্যা করে। সেই হত্যা কান্ডকে নিয়ে উল্লাস ও করে। এমনকি দেশের মিডিয়ায় তাদের সন্তষ্টি কেই ফলাও করা প্রচার করা হয়!
আমাদের নিজেদের কর্মের মধ্যেই আমাদের বর্তমান অবস্থার কারন নিহিত। আমাদেরকেই সমাপ্তি ঘটাতে হবে এই অবস্থার। আর তা করতে হবে একমাত্র কুরআন ও হাদিসের নির্দেশিত পথে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
“আমরা বিধর্মিদের এখন পরমবন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছি। তাদের কে এমনই ক্ষমতা ও মর্যাদার আসনে বসিয়েছি যে তারা মুসলিমদের হত্যা করে। সেই হত্যা কান্ডকে নিয়ে উল্লাস ও করে। এমনকি দেশের মিডিয়ায় তাদের সন্তষ্টি কেই ফলাও করা প্রচার করা হয়!
আমাদের নিজেদের কর্মের মধ্যেই আমাদের বর্তমান অবস্থার কারন নিহিত। আমাদেরকেই সমাপ্তি ঘটাতে হবে এই অবস্থার। আর তা করতে হবে একমাত্র কুরআন ও হাদিসের নির্দেশিত পথে”। যথার্থই বলেছেন।
সময়োপযোগী লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।
আমরা যদি নিজেদের সংশোধন না করি তবে অবস্থা ঠিক হওয়ার কোন সুযোগ নাই।
আমাদের নিজেদেরই পরিবর্তন করতে হবে এই অবস্থার।
ইতিহাসভিত্তিক শিক্ষনীয় পোস্টটির জন্য শুকরিয়া! আমাদের সমস্যা হলো আমরা অতীতের শিক্ষা থেকে শিক্ষা গ্রহন করি না! যার করুন পরিনতি আরো অনেক কাল ভোগ করতে হবে!
জাযাকাল্লাহু খাইর ভাইয়া!
ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহন না করাই আমাদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন