আম অাদমির বিপুল বিজয়
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৩:৪৫:৪১ দুপুর
আটমাস আগের "মোদি কারিশমা" কে হারিয়ে দিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল আবারও ভারতের রাজধানি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রি হচ্ছেন দ্বিতিয় বারের মত। দিল্লি বিধানসভার ৭০ টি আসনের মধ্যে প্রায় ৬৫টি আসন দখল করেছে তার আম আদমি পার্টি। প্রধান প্রতিদন্দি বিজেপি কয়েকটি আসনে এগিয়ে থাকলেও ভারতের প্রধান দল কংগ্রেস দিল্লি বিধান সভায় এবার একটি আসন ও পাচ্ছেনা বলে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল এ নিশ্চিত হয়ে গেছে। একবছর আগে "জন লোকপাল" বিল তথা দুর্নিতি বিরোধি সংস্খা গঠন এর বিল পাশ করাতে ব্যার্থ হয়ে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রির পদ থেকে ৪৯ দিন এর সরকার ভেঙ্গে দিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সল্প সময়ে তার কার্যক্রম এর প্রতি যে জনসমর্থন ছিল তারই প্রমান গত ৭ ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সেটা বুঝা গেল।
পৃথিবির অন্যতম প্রাচিন নগরি দিল্লি এবং এর আশেপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত দিল্লি পুর্ন রাজ্য নয়। এটি ভারতের সংবিধান অনুসারে "ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন" বলে পরিচিত। অন্যান্য রাজ্য সরকার এর তুলনায় এর বিধান সভা এবং সরকারের ক্ষমতা অনেক কম। আয়তন এও এই রাজ্য মাত্র ৫০০ বর্গমাইল এর মত। কিন্তু বিশাল ভারত এর রাজধানি হিসেবে এর গুরুত্ব অনেক।
প্রকৃতই সাধারন পরিবার থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল খরগপুর আইআইটি থেকে উত্তির্ন একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। যদিও কর্ম জিবনে তিনি ছিলেন ভারত এর কেন্দ্রিয় সিভিল সার্ভিস এর রাজস্ব বিভাগের একজন অফিসার। ২০০৬ সালে তিনি চাকরি ত্যাগ করে দূর্নিতি বিরোধি সামাজিক আন্দোলন এর সাথে যুক্ত হন। এই আন্দোলন তাকে পরিচিত করে তুলে এবং তিনি ম্যাগসাসাই পুরুস্কার লাভ করেন। ২০১০-১১ সালে তিনি আন্না হাজারের সহযোগি হিসেবে ভারতের দুর্নিতি বিরোধি আন্দোলন এর জন্য ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এই সময় কংগ্রেস সরকার এর ব্যাপক দুর্নিতির উদঘাটন করার কারনে ই কিন্তু ২০১৪ সালের ভারতিয় লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিশাল বিজয় লাভ করে। আন্না হাজারের সংগে কিছুটা মতবিরোধ করে কেজরিওয়াল মনে করেন শুধু সামাজিক আন্দোলন করেই দুর্নিতি রোধ করা সম্ভব নয়। এই কারনে ২০১২ সালে তিনি আমআদমি পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার অল্প সময় এর মধ্যেই ২০১৩ সালের দিল্লি বিধান সভা নির্বাচনে এই দল ২৮ টি আসন লাভ করে সরকার গঠন করে। কিন্তু নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় শেষ পর্যন্ত ৪৯ দিন পর অরবিন্দ কেজরিওয়াল পদত্যাগ করেন।
লোক সভা নির্বাচন এর কারনে কিছুদিন রাষ্ট্রপতির শাসনাধিন থাকার পর এই মাসেই আবার দিল্লি বিধান সভার নির্বাচন হয়। ইতমধ্যে সারা ভারতেই ঘটে যায় বড় পরিবর্তন। কংগ্রেস এর পরাজয় এবং বিজেপির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রিয় সরকার গঠনকরায় অনেকেই আমআদমি পার্টির আর সম্ভাবনা নিয়ে নিস্চিত ছিলেননা। কিন্তু এই ফলাফল অনেককেই অবাক করবে যদিও নির্বাচনের আগের জনমত জরিপ এ আমআদমি পার্টির বিজয় সম্পর্কে ইংগিত ছিল।
অনেকেই এই বিজয়ের কারন হিসেব গত সল্প সময় এর শাসন এর সময় আমআদমি পার্টির নেওয়া বেশ কিছু জনকল্যান মুলক পদক্ষেপ এর কথা বলছেন। এর মধ্যে ছিল বিদ্যুত, পানি সহ অত্যাবশ্যকিয় সেবা গুলির মুল্য হ্রাস এবং এই সব ক্ষেত্রে দুর্নিতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ এবং দিল্লির আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন। এছাড়া আরেকটি বিষয় ও এই বিজয়ের জন্য বিশেষ প্রভাব ফেলেছে সেটা হচ্ছে সল্পকালিন শাসন কালে পুলিশি অত্যাচার থেকে সাধারন মানুষদের রক্ষা করতে কেজরিওয়াল ও তার পার্টির নেওয়া পদক্ষেপ। লোকসভা নির্বাচনে যেখানে দিল্লির ৭ টি আসনের সবকয়টি বিজেপি লাভ করেছিল সেখানে কংগ্রেস,বিজেপি উভয় দলকে এভাবে পরাজিত করার চিন্তা অনকেই করতে পারেননি। বিজেপির পার্থি নির্বাচন কেও অনেকে ভুল মনে করেছেন। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রি প্রার্থি কিরন বেদি ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা আইপিএস পুলিশ অফিসার। দুর্নিতিবিরোধি আন্দোলন এ একসময় অরবিন্দ কেজরিওয়াল এর সহযোগি কিরন বেদি দির্ঘদিন দিল্লি পুলিশে ছিলেন। সেই সময় তার কাজ সাধারন দিল্লিবাসির পক্ষে ভাল না লাগাই স্বাভাবিক। কারন ভারতিয় পুলিশি আইনও বাংলাদেশেরই মত যেখানে পুলিশ সব সুবিধা নিয়ে জনগনের উপর অত্যাচার করতে পারে। একজন প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা জনপ্রিয় না হওয়াই স্বাভাবিক।
ভারতের রাজ্য গুলির মধ্যে দিল্লিতে শিক্ষার হার অনেক বেশি প্রায় ৯০ শতাংশ। আকারের দিক দিয়ে ছোট হলেও এই রাজ্য শিক্ষা এবং সামাজিক দিক দিয়ে যথেষ্ট এগিয়ে। যদিও নগরি হিসেবে দিল্লি মুম্বাই,চিন্নাই তো বটেই কলকাতা থেকেও আর্থিক দিক দিয়ে অনেক নিচে। কিন্তু রাজধানি হিসেবে এর মুখ্যমন্ত্রির গুরুত্ব অনেক বেশি। এই দায়িত্ব অরবিন্দ কেজরিওয়াল কে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বেশি পরিচিত হওয়ার সুযোগ দেবে। লোকসভা নির্বাচনে বিশাল বিজয় এর পর দিল্লি বিধান সভাই বিজেপির জন্য বিশাল একটা পরাজয় হয়ে দাড়াল।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তার আম আদমি পার্টি এই বিশাল বিজয় নিয়ে তাদের দুর্নিতি বিরোধি ও জনকল্যানমূলক কর্মসূচিগুলি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে আশাকরি। তবে ভারতের কায়েমি স্বার্থবাদি আমলাগোষ্ঠি এবং কেন্দ্রিয় সরকার এই জন্য বিশেষ সহযোগিতা করবে বলে মনে হয়না। এছাড়া এই বিপুল বিজয় এর কারনে অরবিন্দ কেজরিওয়াল কে আরেকটি প্রবাদ বাক্য সম্পর্কেও খেয়াল রাখতে হবে।
"অ্যাবসলিউট পাওয়ার করাপ্টস অ্যাবসলিউটলি"।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৭ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রথমে কেবল সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তারপর সরাসরি রাজতিনিতে যোগ দিলেন। সুশিল হয়ে কারো কাঁধে চড়ে কিছু করতে চাননি।
আশার কথা হচ্ছে!! দিল্লীর জনগণ বুঝতে পেরেছে, এবং তাঁর জবাব তারা দিয়ে যাচ্ছে তাদের রাজনৈতিক নেতাদের। প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকার জনগণ কবে বুঝবে??
ভেবেছিলাম এই বিষয়ে আমি একটা পোষ্ট লেখব ! কিন্তু তাঁর আগেই আমার অনেক প্রিয় ব্লগার রিদওয়ান কবির সবুজ ভাই এই বিষয়ে পোষ্ট দিয়ে আমারকে দায় মুক্ত করেছেন। আমার মনের কথা গুলো আপনার পোষ্টে উঠে এসেছে, সেই জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আমরা নিজেরা যদি নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন এর চেষ্টা না করি তা হলে আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবেনা।
কেজরিওয়াল শুধু বিবৃতি দিয়ে বসে থাকেননি। চেষ্টা করেছেন এবং এখন সুযোগ পেয়েছেন।
মানুষ যদি নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন এর চেষ্টা করে অবশ্যই ভাল কিছু হয়।
২০১৩ এর জুন-জুলাইয়ে বিএনপি সমর্থিতরা পর পর ৫ টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল । তাতে কি আওয়ামী লীগ সরকার থেকে নেমে গিয়েছিল ?
মোদি সরকারও কি কেজরিওয়ালের জয়লাভে ক্ষমতা থেকে নেমে যাবে ?
ওকে ট্রিক্স খাটায়ে সাইজ করবে যাতে আর কখনও নামার সাহস না করে ।
ডঃ ইউনূস যে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চেয়েছিলেন ২০০৭-০৮ এ মনে আছে ? মনে আছে কিভাবে তা অংকুরেই বিনাশ হয়েছিল ?
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত অবস্থা ?
এক কেজরিওয়াল কিছুই করতে পারবে না যেমনটা বুঝে নিয়েছিল ডঃইউনূস গোড়াতেই ।
আর বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের মানসিকতারও কোন পরিবর্তন হবে না তা যে দলই আসুক না কেন ।
ছাগলের ৩নং বাচ্চার মত লাফালাফি না করে নিজেদের চরকায় তেল দেওয়া উচিত।
ইতর মন্তব্য করার মাধ্যমে আপনি নিজের জ্ঞানের সিমাবদ্ধতা প্রদর্শন করছেন।
কি হয়েছে কনসিক্যুয়েন্স সেই আরব স্প্রিংয়ের যেটা মিশরে হয়েছিল ? আর গতবার কেজরিওয়াল জিতে কি দশা হয়েছিল?
এবার সংখ্যা গরিষ্টতা পেলেও তাতে বাংলাদেশের লোকদের লাফানির কারণ তো বুঝি না ? সে কি কাজ করতে পারবে যেখানে তার বিরোধীরা ক্ষমতায় ?
মমতা কি করেছিল বাংলাদেশের জন্য একজন বাঙ্গালি দিদি হয়েও ?
বাস্তবতা না বুঝে ছাগলের ৩ নং বাচ্চার মত লাফালে ভাড় হিসেবে সার্কাসে নিয়ে নেবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন