প্রবাসিদের শ্রম আর ভালবাসার কতটুক মুল্য আমরা দিই?
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৮:৫৪:৫৩ রাত
সিটিজি৪বিডি,সাহিন ভাই মেরাজ ভাই সহ সকল প্রবাসি ব্লগার দের লিখায় তাদের পরিবারের জন্য যে আকুতি ফুটে উঠে সেই আবেগ এর কতটুক মুল্য তাদের এই দেশে থাকা পরিবার দেয়? ২০০৫ সালে সিঙ্গাপুর সফরের একটি অভিজ্ঞতার কথা লিখলাম। এই ত্যাগি মানুষগুলির শ্রমের কতটুক মুল্য আমরা দিচ্ছি।
মুস্তফা সেন্টারের দক্ষিনের মিনিমার্ট এর চত্তরে আসলাম। এই অংশটি হচ্ছে সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ টাউন বা মিনি বাংলাদেশ। প্রায় শখানেক বাংলাদেশি পন্যের দোকান এবং রেস্টুরেন্ট। সপ্তাহান্তে রবিবার পরিবার ছাড়া থাকা বাংলাদেশি প্রবাসি ভাইদের মিলনমেলাও বটে। এখানে অনেকের সাথে কথা হলো। এই প্রবাসি ভাইরা যে কত কষ্ট করে দিনরাত পরিশ্রম করে টাকা আয় করেন সেটা যদি তাদের পরিবার এবং দেশের সরকার জানত ও বুঝত! এক ভাই এর সাথে পরিচয় হলো। চট্টগ্রামের ছেলে। কথা বলতে গিয়ে বের হলো আমার এক বন্ধু তার প্রতিবেশি। ভাইটি জানালেন একটি প্রজেক্টে মেটাল ওয়েল্ডার হিসেবে ছয়মাসের জন্য এসেছিলেন প্রায় চার বছর আগে। তারপর ফেরত না গিয়ে প্রায় আরো বছরখানেক থেকে যান। সেই সময় কত কষ্ট করে থেকেছেন তা অবর্ননিয়। সিঙ্গাপুর পুলিশ এইসব ক্ষেত্রে খুবই কঠোর এবং সিঙ্গাপুরের জেল ও অনেক খারাপ জায়গা। অনেক কষ্টে আরেকটি নিয়মিত কাজ যোগাড়ের পর মালয়শিয়া গিয়ে আবার মাস খানিক পর ভিসা নিয়ে সিঙ্গাপুরে এসেছেন দুই বছর এর মত। এখন শিপইয়ার্ড এ ওয়েল্ডার এর চাকরি করেন। এমনিতে ডিউটি আট ঘন্টা ও সপ্তাহে দুইদিন ছুটি হলেও তিনি বেশি রোজগারের জন্য ১২-১৬ ঘন্টা ডিউটি করেন কখনও কখনও সপ্তাহে সাতদিনও কাজ করেন। একনাগাড়ে তিনদিন ১৬ ঘন্টা ডিউটি করার পর আজকের দিনটা অফ নিয়েছেন। ঘুমিয়ে সন্ধার পর এখানে এসেছেন একটু দেশি ভাষায় কথা বলতে আর দেশি খাবার খেতে। ফ্রেস লেমন জুস খাওয়ালেন। অনেক অনুরোধেও টাকা দিতে দিলেননা আমাদের। বিশেষ করে আমি তার ছোটভাই এর মত দাবিতে। তার সপ্নগুলির কথা ও বলেছিলেন। তার দুই বোনের বিয়ে হয়েছে তার পাঠান টাকায় আরো বছর দুয়েক থেকে দেশে ফেরত যাবেন বলেছিলেন। আমাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন দেশে মোবাইল সেট ও সিম এর ব্যবসা কেমন হবে তা। আমরা তাকে সহযোগিতার কথা দিই। দেশে আসার পর আমার বন্ধুটির কাছে তার সম্পর্কে জানতে চাই। সে জানায় তার পাঠান টাকা সম্পুর্ন নষ্ট করা হয়েছে দুই বোনের বিয়েতে। বিশাল জাঁকজমক এবং বোন জামাইদের দামি মোটর সাইকেল দিয়ে! বিশাল বিল্ডিং ও করা হয়েছে। তার বড়,ছোট দুইভাই এবং বাবা-মা এখন চলেন খুবই বিলাসিতার মধ্যে। প্রতিবেশিদের সাথে সম্পর্ক রাখেননা। এই ভাই এর খবর আর নিতে যাওয়ার সাহস আমার হয়নি।
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৩ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
some people think that in foreign countries no body needs to work!
কষ্ট না করে টাকা আয় করা যায়না। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ মনে করে বিদেশে কষ্ট না করেই মানুষ উপার্জন করে।
তাইলে সকল এর আসল রুপ প্রকাশ পাবে।
বিদেশ তো চোখের আড়াল থেকে পয়সাটা আসে পরিবারের লোকজন বুঝতে পারে না কষ্ট টা ।
এই জন্য প্রবাসিরাও কিছুটা দায়ি। তারা যেনেও অতরিক্ত টাকা পাঠায় এই নিয়ে কিছু বললে বলে যে বাবা-মা কিংবা পরিবারের আরাম এর জন্য পাঠাই। কিন্তু আরাম আর বিলাসিতা যে এক নয় বুঝতে চায়না্
ছয় বছর হয় প্রবাসে পড়ে আছি!
আসার পর থেকে দেশে যাওয়া ছাড়া কোন দিনই ছুটির মুখ দেখিনি একদিনের জন্যও! বছরে৩৬৫ দিনই ডিউটি করতে হয় আমাদের,তাও দৈনিক ১২ ঘন্টা করে! বেতনও খুবই অল্প! তবুও দেশের কথা চিন্তা করে পড়ে আছি এখানে!
সৌদিতে কফিল ভিসায় শ্রম আইন কখনই মানা হয় না!
'ভাল রেখ হে আল্লাহ আপনজনদের'!!!
আমাদের দেশের উদ্বট কূটনিতি আর লোভি রাজনিতিবিদ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ব্রাম্মন্যবাদ মানুষের উপর এমন অত্যাচার এর সুযোগ দিচ্ছে।
আসলেই ইসলািমি জিবনবোধের অভা্বই আমাদের এই সমস্যার বড় কারন।
অপনাকে ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন