মিলাদুন্নবি এবং নারিদের নামাজ নিয়ে বিতর্ক। কিছু প্রশ্ন।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ১১:৫৩:৫৮ রাত
প্রতিবছর বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবি নামে রাসুল (সাঃ) এর জন্মদিন খুব ধুমধামের সাথে পালিত হয়। যদিও উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোন মুসলিম দেশে এইটা এভাবে পালিত হয় কিনা সেটা জানিনা। চট্টগ্রাম আবার এই ক্ষেত্রে সেরা! প্রতি বছর এই মাস ধরেই চলতে থাকে চট্টগ্রামের বিখ্যাত মেজবানি গোস্ত সহকারে খানা। কেউ কেউ গরুর বিরানি বা আগনি ও খাওয়ান। তাই এই সময়টা আমার ভালই কাটে!
এখন একটি সরল প্রশ্ন আমার মনে। শরিয়তি বিতর্কে না গিয়েও এই বিষয়ে একটি সরল প্রশ্ন করা যায় যেটা হলো রাসুল (সাঃ) এর জন্মের সময় তিনি ছিলেন ইয়াতিম এবং সেসময় মক্কায় যে গোত্র ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা ছিল তাতে কারো জন্মের সময় সেটা লিপিবদ্ধ অর্থাত রেজিষ্ট্রেশন করার ব্যবস্থা ছিলনা। যতটুক জানি খিলাফতে রাশিদার সময় এই রেকর্ড এর ব্যবস্থা করা হয় প্রধানত যুদ্ধের জন্য উপযোগি জনশক্তির হিসাব রাখার জন্য। আধুনিক অনেক সিরাত রচয়িতা এর মতে রাসুল(সাঃ) এর প্রকৃত জন্ম ৯ই রবিউল আউয়াল। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষনায় এটি নির্ধারন করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে এই মত নস্যাত করছেন। অন্যদিকে এটিও বিভিন্ন সিরাত রচয়িতাতের মধ্যে কমন যে রাসুল(সাঃ) এর ওফাত এর দিনও ১২ই রবিউল আউয়াল। এই নিয়ে ও অনেক আবার বলেন যে এই দিনটি ঠিক নয় তার ওফাত অন্যদিন। তাই ১২ই রবিউল আউয়াল তার জন্মদিন এর উৎসব করাতে বাধা নাই।
এখন অামর একটি প্রশ্ন জ্ঞানি ব্যাক্তিদের কাছে। সেটা হচ্ছে রাসুল (সাঃ) এর জন্মের সময় তিনি ছিলেন একজন ইয়াতিম এবং একটি সরকার হিন রাস্ট্রের বাসিন্দা অন্যদিকে তাঁর ওফাত এর সময় তিনি ছিলেন একটি রাষ্ট্রের প্রধান। তৎকালিন পরাশক্তি রোম ও ইরানের সাথে ৫-৬ বছর পূর্বেই তার পত্রালাপ হয়েছে। হাবশার বাদশাহ ইসলাম গ্রহন করেছেন মিসর এর শাসক ইসলাম গ্রহন না করলেও তাকে স্বিকৃতি দিয়েছেন শাসক হিসেবে। এখন কোন তারিখ টি সঠিক ভাবে সংরক্ষিত থাকা সম্ভব??
জ্ঞানিরা আসা করি জবাব দেবেন।
এই পোষ্টটির লিখার সময়ই চট্টগ্রামের সুন্নি সম্প্রদায় এর নেতা জনাব মাওলানা জালালুদ্দিন আল কাদেরি সাহেব এর একটি ওয়াজ শুনছি। এলাকাতেই এই ওয়াজ হচ্ছে এবং মাইকে শুনা যাচ্ছে সবখানে। তিনি নারিদের মসজিদে যাওয়া নিয়ে মন্তব্য করলেন যে এটি নাকি সাহাবিরা একমত হয়ে নিষিদ্ধ করেছেন। যদিও এর পক্ষে তিনি কোন দলিল এর কথা বলেননি। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবির আর কয়েকটি দেশের মসজিদে যাওয়ার ভাগ্য আমার হয়েছে এবং যদিও মধ্যপ্রাচ্য ও আরব ভুমিতে যাওয়ার সেীভাগ্য হয়নি তবে সেখানে প্রচুর আত্মিয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধব আছেন। ভারতের কয়েকটি সহ সিঙ্গাপুর এ আমি মসজিদে নারিদের জন্য নামাজ এর ব্যবস্থা দেখেছি। মধ্যপ্রাচ্যেও এই সুবিধা আছে বলে শুনেছি।
এখন আমার প্রশ্ন এরকম একটা নিষিদ্ধ বিষয় শুধু বাংলাদেশে বসে আমরা জানি অথচ অারবিভাষি মধ্যপ্রাচ্যের লোকজন জানেনা সেটা আমি কিভাবে বিশ্বাস করি???
কেউ কি জবাব দিবেন এই সহজ দুটি প্রশ্নের।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪১ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সমস্যা হচ্ছে এদের বক্তব্যের সপক্ষে প্রমান বা যুক্তি চাইলে এরা ওহাবি বলে গালাগাল দেয়াই যথেষ্ট মসে করেন।
প্রথম প্রশ্নটির সঠিক উত্তর পরিষ্কার নয় বিধায় জানার অপেক্ষায়।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে হাদীস ও বাস্তবতার আলোকে আমার বক্তব্য নিম্নরূপঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুমিন মেয়েরা নবী (সাঃ) সাথে ফজরের নামাযে শামিল হতো (বুখারী ও মুসলিম ৪৬)।
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “একদিন এশার নামায পড়তে নবী (সাঃ) এর অনেক বিলম্ব হলো এবং গভীর রাতের অন্ধকার ছেয়ে গেলো এমনকি উমর বলে উঠলেনঃ মেয়েরাতো ঘুমিয়ে পড়লো” (বুখারী ও মুসলিম ৪৮)।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ “নামাযের জামায়াতে পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হচ্ছে শেষের কাতার। আর মেয়েদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে সবশেষের কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হচ্ছে প্রথম কাতার (মুসলিম ৫০)।
এরূপ অনেক সহী হাদিস আছে, মন্তব্য দীর্ঘ হবে বিধায় উল্লেখ করা সম্ভব হলো না।
অধিকন্তু ইউ কে -এর মত অমুসলিম দেশে আমি নিজেই মহিলা হওয়া সত্ত্বেও মসজিদে দশ দিনের ইতেকাফে ছিলাম। পুরা রমযানে সারা রাত নারী পুরুষের উপস্থিতিতে মসজিদ ভরপুর থাকতো। সারা বিশ্বের নামী দামী ইসলামী স্কলারগণ সেখানে বক্তব্য রাখতেন। সুতরাং এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও চিন্তা শেয়ার করলাম। জাজাকাল্লাহু খাইর।
সচ চেয়ে গ্রহনীয় মত হলঃ ১২ই রবিউল আওয়াল রাসূলে কারীম সাঃ এর ওফাত দিবস!
শরীয়তে মিলাদুন্নবী সাঃ পালনের কোনই অবকাশ নেই!
স্হান-কাল-অবস্হা বিবেচনায় শরীয়তে 'হুকুম' ভিন্নতর হতেই পারে! মহিলাদের মসজিদে যাওয়া হারাম/নিষেধ নয়! কিন্তু বাংলাদেশের তথা বর্তমান অবস্হা বিবেচনায় মহিলাদের মসজিদে না যাওয়াই ত্বাকওয়ার দাবী!!
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য। সমস্যা হচ্ছে হাদিসের বিপরিতে কারো ব্যাক্তিগত মত কতটা গ্রহনযোগ্য হবে সেটা বুঝতে আমরা ভুল করি।
কাহাফ ভাই এখানে সরাসরি নিষেধ এর কথা বলা হয়েছে। পরিবেশ পরিস্থিতিতে না যাওয়া এবং হারাম/হালাল নির্ধারন ভিন্ন বিষয়।
নারীদের মসজিদে গিয়ে নামায পড়া সাহাবীদের আমলে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে! তবে নারীদের মসজিদে যেতে বাঁধা দেওয়া নিষেধ।
ধন্যবাদ ধন্যবাদ
মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে আমরা অহেতুক এক্সট্রিম পর্যায়ের বিতর্কে চলে যাই। এক পক্ষ বলে হারাম/নাজায়েয, অপর পক্ষ বলে জায়েয ও খুব ভাল। আসলে দুটি মতই ভুল। সহীহ হাদীসে রাসূল (সা) মহিলাদের মসজিদে যেতে অনুমতি চাইলে অনুমতি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আমিরুল মোমেনী হযরত ওমর ফারুক (রা) এর স্ত্রী হযরত আতিকা (রা)ও মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতেন তবে সেটি খলিফা পছন্দ করতেন না।
সহজ কথা হচ্ছে, মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে পারবেন মহিলারা। তবে উত্তম হচ্ছে ঘরে আদায় করা। যারা নাজায়েয/হারাম ফতোয়া দেন তারা বাড়াবাড়ি করেন। এছাড়া প্রয়োজনে মহিলাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। তখন নামাযের সময় তারা কি নামায না পড়ে থাকবেন? না, অবশ্যই মসজিদে গিয়ে আদাব ও পর্দা রক্ষা করে নামায আদায় করবেন।
সমস্যাটি আসলে সেখানেই। মেয়েরা বিভিন্ন কাজে বাইরে যেতে পারে। তখন তারা কোথায় নামাজ পড়বে। আর যতটুক জানি ঈদের নামাজ নারিদের উপর ও ওয়াজিব। মসজিদে পরবে কি পরবেনা সেটার সিদ্ধন্ত নেওয়ার অধিকার নারিদেরই রয়েছে। এই নিয়ে কারও ফতওয়া দেওয়ার প্রয়োজন নাই।
তাই খুবই স্বাভাবিক হিসেবে এটা বিদ'আত ।
মহিলাদের মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়াটা পুরুষদের মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার মত জোর করে বলা হয় না । কারণ হতে পারে , এমনিতেই পুরুষেরা মহিলাদের দিকে তাকায় । তার উপর যদি নামাজে তাকায় বা জানে যে তার ধারে কাছে মহিলা আছে তাহলে নামাজের মন সংযোগে ব্যাঘাত ঘটবে ।
মহিলা ও পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টি সংযত/অবনত এবং গোপনাঙ্গের হেফাজত করতে বলা হয়েছে । মেয়েদের ব্যাপারে কি ভাবে পোশাক পড়বে তা স্পেসিফিক ভাবে বলা হয়েছে ।
মহিলাদের জন্য মাসজিদের চেয়ে ঘরে নামাজ পড়াটাকে বেটার বলা আছে ।
তবে যেসব নামাজ ঘরে পড়া যায় না , যেমন জুম্মার নামাজ , ঈদের নামাজ - সেগুলোর জন্য আসার ব্যবস্থা থাকা উচিত।
এই বিষয়ে শরিয়তে কোন নির্দেশ না থাকলেও এই নিয়ে কিছু মানুষ উৎসব করা কে বাধ্যতামূলক বলেন এবং এই দাবি ও করেন যে সাহাবায়ে কেরাম নাকি এই দিন পালন করেছেন যদিও এর পক্ষে তারা কোন দলিল উত্থাপন করেন না।
নারিদের মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদের। কেউ এটিকে ফতওয়া দিয়ে নিষেধ করতে পারেননা।
কিন্তু অবিবাহিত মেয়েদের যে মসজিদে নিয়ে আসার তাগিদ দিতেন সেটা তো কেউ বলছেনা!! অথচ এটা তো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত! একদম মুত্তাফাকুন আলাইহি!
আমরা আসলে কম গুরুত্বপূর্ন কিছু বিষয় নিয়ে যত বাড়াবাড়ি করি জরুরি বিষয় নিয়ে ততই কম চিন্তা করি।
আমার মনে হয় রাসূল (সা)এর জন্মদিন পালন করার চেয়ে নিজের জীবনে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই আমরা প্রকৃতপক্ষে তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা তুলে ধরতে পারি। নইলে কয়েকদিন ধুমধাম করে খাওয়াদাওয়ার পর সারাবছর নিজের ইচ্ছামত চললে সেই ভালোবাসা ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কোন মূল্য রাখেনা।
নারীদের মসজিদে যাওয়া যদি সাহাবীরা নিষেধ করতেন তাহলে তাঁরা সাহাবী হতেন না। রাসূল (সা)কে অক্ষরে অক্ষরে অনুসরন করাই সাহাবী হবার ক্রাইটেরিয়া। তাঁরা নিজেদের জীবনের বিনিময়েও তাঁর একটি কথাও অমান্য করার কথা ভাবেননি, অথচ আমরা হরহামেশাই তাঁর অপমান করে চলেছি আমাদের কথাবার্তা, আচার আচরণ এমনকি ধর্মীয় চর্চাতেও।
মিলাদুন্নবির নামে আসলে গরুর মেজবানি খাওয়া ছাড়া আর কোন বিশেষ কাজ হয়না।এটা অবশ্য আমার জন্য ভালই গত তিনদিন সব বেলাই গরুর গোস্ত চলেছে! আত্মিয়তার সুত্রে অনেক জায়গা থেকেই আসে। গতমাসে চট্টগ্রামে প্রতিবছর এই উৎসব এবং জশনে জুলুস এর অন্যতম উদ্যোক্তার সন্তান এর বিয়ের দাওয়াতে যা অভিজ্ঞতা হলো সেটা হচ্ছে নুন্যতম পর্দার অনুসরন ও তার পরিবারে নাই।
মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়ার বিষয়ে এরা কেন এত বিরোধি তাতে আমার সন্দেহ হয় এরা আসলে নারিদের ইসলাম থেকে দুরে রেখে প্রকারান্তরে ভবিষ্যত প্রজন্মকে ইসলামের ছায়া থেকে দূরে রাখতে চান।
নারীদের মসজিদ থেকে দূরে রাখা শুরু হয়েছিল মূলত তাদের নিরাপত্তার ধুয়া তুলে। খেলাফত পরবর্তী ইসলামের নামধারী শাসকগোষ্ঠী পুরুষদের চোখের পর্দা উৎসাহিত করার পরিবর্তে নারীদের পর্দার অন্তরাল করে নিজেদের দায়দায়িত্ব সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছে। ফল হয়েছে উলটো, তুমি যেমন বললে অনেকটা তেমন। তারা নারীদের ইসলামের জ্ঞান অর্জন এবং চর্চা থেকে দূরে রাখতে পেরেছে, কিন্তু বাজার থেকে সিনেমাহল সর্বত্র তাদের স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছে।
তবে আমার নামাজ ঘরে পড়তেই ভাল লাগে তাই সাধারণত আমি যাই না ।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আ্ঁই চাটগাঁইয়া ফোয়া!!!
আপনার এই কথাটিই হল সারমর্ম।
রাসুলুল্লাহ(সা বলেছেন: তোমরা মহিলাদের মসজিদে যেতে বাধা দিও না, যদিও তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম। (সুনান আবু দাউদ, সহীহ আল-জামে নং-৭৪৫৮)
এই নিয়ে কোর বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নাই।
আপনার এই কথাটিই হল সারমর্ম।
রাসুলুল্লাহ( সা: ) বলেছেন: তোমরা মহিলাদের মসজিদে যেতে বাধা দিও না, যদিও তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম। (সুনান আবু দাউদ, সহীহ আল-জামে নং-৭৪৫৮)
মেজ্জান দিলে মনত হয় ভাল হইব!
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন