হুদায়বিয়ার সন্ধি। আল্লাহতায়লার দেয়া সুস্পষ্ট বিজয় পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:০৭:৩৪ দুপুর
প্রিয় ব্লগার ভিশু ভাই এর পরিকল্পনা অনুযায়ি রবিউল আউয়াল মাসে সিরাত আলোচনায় অংশ নেওয়ার চেষ্টায় আমার এই লিখাটি। ইসলামের ইতিহাসে যে কয়েকটি টার্নিং পয়েন্ট আছে হুদায়বিয়ার সন্ধি তার মধ্যে অন্যতম। এতে শিক্ষনিয় রয়েছে অনেক কিছুই। এই বিষয়টি আলোচনা তাই একাধিক পর্বে করার চেষ্টা করছি। আজকে প্রথম পর্বে শুধু এই চুক্তির ঘটনাবলির বিবরন দেওয়া হলো।
হিজরি ষষ্ঠ সালের ১লা জিলকদ রাসুল (সাঃ) চোদ্দ থেকে পনেরশত সাথি সহ হজ্জ বা উমরা এর উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে মক্কার দিকে রওয়ানা দেন। এর আগে রাসুল (সাঃ) এই সপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি মক্কার কাবা শরিফ এর মধ্যে প্রবেশ করছেন এবং তার সাথিদের নিয়ে তাওয়াফ করছেন। সাহাবিদের এই সপ্নের কথা জানালে তারাও উৎসাহিত হয় এবং রাসুল (সাঃ) এর সাথি হতে আগ্রহি হয়। রাসুল (সাঃ) উমরাহ পালন এর সিদ্ধান্ত নেন এবং সফর শুরু করেন। রাসুল(সাঃ) এবং তার সাথিদের কোন রণপ্রস্ততি ছিলনা এবং কেবল নিরাপত্তার জন্য জরুরি অস্ত্র নিয়েই তারা এই যাত্রা করেছিলেন তিনি যেহেতু তাদের উদ্দেশ্য ছিল কেবল উমরাহ পালন করা। যুল হোলায়ফা নামক স্থানে রাসুল (সাঃ) তার সহযাত্রিদের নিয়ে ইহরাম বাধেন এবং কুরবানির জন্য কিছু পশুকে নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করেন। এর মাধ্যমে তাদের সফর এর উদ্দেশ্য যে কেবল ধর্মিয় তা প্রদর্শন করেন।
রাসুল (সাঃ) মক্কার কাফির দের মনোভাব জানার জন্য একজন গুপ্তচর প্রেরন করেন। আসফান নামক জায়গায় গুপ্তচর থেকে সংবাদ পাওয়া যায় যে মক্কার কাফির রা এই সফর কে বাধা দেওয়ার জন্য প্রস্তত হয়েছে। রাসুল (সাঃ) যাত্রা বিরতি করেন এবং বিশিষ্ট সাহহাবিদের মতামত চান। হযরত আবু বকর সিদ্দিকি(রাঃ) মতামত দেন যে আমরা লড়াই এর উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি কিন্তু বায়তুল্লাহ জিয়ারতে কেউ বাধা দিলে তার সাথে যুদ্ধের জন্য আমরা প্রস্তত। কি করতে হবে সেটা আল্লাহ আর তার রাসুল ই ভাল জানেন। এরপর রাসুল (সাঃ) তার যাত্রা অব্যহত রাখেন।
এদিতে কাফির রা এই খবর পেয়ে তাকে বাধা দেওয়ার সর্বাত্বক চেষ্টা শুরু করে। খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) তখনও ইসলাম গ্রহন করেননি। তার নেতৃত্বে দুইশ সওয়ার যাত্রাপথের কুরাউল গামিম নামক স্থানে অবস্থান নেয়। মুসলিমরা তাদের দৃষ্টি সিমার মধ্যে ছিল। রাসুল (সাঃ) সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য মুল পথ এড়িয়ে সানিয়াতুল মারার নামক স্থান হয়ে হুদায়বিয়াতে উপস্থিত হন। এখানে যাত্রাবিরতি করার সময় খুযায়া গোত্রের বুদাইল বিন ওয়ারাকা রাসুল (সাঃ) নিকট আসেন এবং মক্কার কাফিরদের তাকে বাধা দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানান। রাসুল (সাঃ) তাকে বলেন যে লড়াই এর ইচ্ছা তার নেই। তিনি বায়তুল্লাহ জিয়ারতের জন্য এসেছেন। বুদায়েল বিন ওয়ারাক তার কথা কুরাইশ নেতাদের জানিয়ে দেন। এই অবস্থায় কুরাইশরা পরপর কয়েকজন দূত প্রেরন করে। ইতঃমধ্যে কিছু উগ্র মস্তিস্ক যুবক যখন দেখে যে নেতৃবর্গ আলোচনায় লিপ্ত তখন তারা মুসলিম দের উপর রাত্রিকালিন হামলা চালানর চেষ্টা করে। কিন্তু মুসলিম দের হাতে গ্রেফতার হয়। রাসুল (সাঃ) তাদের সবাইকে ক্ষমা করে মুক্তি দিয়ে দেন।
এবার রাসুহুল্লাহ(সাঃ) মক্কায় একজন দূত পাঠিয়ে তার আগমন এর উদ্দেশ্য পরিস্কার করার জন্য হযরত উসমান (রাঃ) কে মক্কায় প্রেরন করেন। উসমান (রাঃ) মক্কা উপস্থিত হন এবং কাফির নেতাদের নিকট রাসুল (সাঃ) এর বক্তব্য পেশ করেন। তারা হযরত উসমান (রাঃ) কে বায়তুল্লাহ তওয়াফ এর সুযোগ দিলেও তিনি রাসুল(সাঃ) কে ছাড়া এই সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। অধিকতর আলোচনার জন্য কুরাইশ নেতৃবৃন্দ হযরত উসমান (রাঃ) রেখে দেয়। কিন্তু হযরত উসমান (রাঃ) এই দেরির জন্য গুজব ছড়িয়ে পরে যে কুরাইশরা তাকে হত্যা করেছে। রাসুল (সাঃ) এই সংবাদ পেয়ে ঘোষনা করেন যে তাদের সাথে যুদ্ধ না করে এই স্থান ত্যাগ করবেন না। তিনি এই সময় তার সাথে উপস্থিত সকল কে তার হাতে বাইয়াত তথা শপথ নেওয়ার আহবান জানান। সকলে এই মর্মে শপথ নেন যে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে কেউ পলায়ন করবেনা। এই শপথ কে বাইয়াতে রিজোয়ান বলে অভিহিত করা হয়। বাইয়াত গ্রহন করা শেষ হলে হযরত উসমান (রাঃ) উপস্থিত হন এবং তিনিও শপথ নেন।
কুরাইশ রা এবার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে সুহায়ল ইবনে আমর কে প্রেরন করে। আলাপ আলোচনা শেষে নিন্মের শর্তাবলিতে সন্ধিচুক্তি হয়।
১) রাসুল (সাঃ) এবং তার সাথিরা এ বছর মক্কায় প্রবেশ না করেই ফিরে যাবে। আগামি বছর মুসলিমরা মক্কায় আসবেন এবং তিনদিন অবস্থান করবেন। তাদের সঙ্গে কেবল আত্মরক্ষামুলক অস্ত্র থাকবে এবং তরবারি কোষবদ্ধ থাকবে। কেউ তাদের উত্যক্ত করবে না।
২) উভয় পক্ষ দশ বছর যুদ্ধ বন্ধ রাখবে।
৩) যারা ইচ্ছা আল্লাহর রাসুল(সাঃ) এর অনুসরন করতে পারবে এবং যারা ইচ্ছা তারা পুর্ব ধর্মে থাকতে পারবে।
৪) কুরাইশ দের কোন লোক তাদের নেতাদের অনুমতি ছাড়া যদি মদিনায় রাসুল(সাঃ) এর কাছে আশ্রয় গ্রহন করে তবে তিনি তাকে ফিরিয়ে দেবেন কিন্তু তার সঙ্গিদেও কেউ যদি কুরাইশদের কাছে আশ্রয় গ্রহন করে তবে তারা তাকে ফিরিয়ে দেবে না।
এই শর্তে উভয়পক্ষ রাজি হলে আল্লাহর রাসুল(সাঃ) হযরত আলি(রাঃ)কে এই চুক্তিপত্র লিখতে নির্দেশ দেন। হযরত আলি বিসমিল্লাহহির রহমানির রাহিম লিখে চুক্তিপত্র শুরু করতে চাইলে সুহাইল আপত্তি করেন। শেষ পর্যন্ত শধুই আল্লাহর নামে দিয়ে শুরু করতে রাজি হন। হযরত আলি (রাঃ) লিখেন যে আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ(সাঃ) এর সাথে কুরাইশ দের চুক্তি। সুহাইল বিন আমর এতেও আপত্তি করেন এবং বলেন যে যদি আপনাকে আল্লাহর রাসুল বলেই মেনে নিতাম তাহলে আপনাকে বাধাও দিতামনা যুদ্ধ ও করতাম না। রাসুল(সাঃ) জবাব দেন যে তোমরা না মানলেও আমি আল্লাহর রাসুল। এরপর তিনি হযরত আলি (রাঃ) কে আল্লাহর রাসুল শব্দটি কেটে মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ লিখতে বলেন। হযরত আলি (রাঃ) নিজ হাতে সেটা করতে রাজি না হলে রাসুল(সাঃ) নিজেই তা মুছে দেন। এভাবে হুদায়বিয়ার সন্ধি সাক্ষরিত হয়।
হুদায়বিয়ার সন্ধি সাক্ষরিত হওয়ার সময়ই সুহাইল বিন আমর এর পুত্র আবুজান্দাল যিনি মুসলিম হয়েছিলেন মক্কায় আটক অবস্থা থেকে পালিয়ে রাসুল(সাঃ) এর কাছে উপস্থিত হন। সুহাইল চুক্তির দোহাই দিয়ে তাকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে রাসুল(সাঃ) আবু জান্দাল কে ধৈর্য ধরার উপদেশ দিয়ে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু কয়েকজন মহিলাকে কুরাইশ রা ফিরিয়ে নিতে চাইলে রাসুল(সাঃ) চুক্তির এই শর্তটি কেবল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য জানিয়ে তা করতে অস্বিকার করেন।
চুক্তির মধ্যে প্রথম দৃষ্টিতে মুসলিমদের জন্য পরাজয় ই মনে হচ্ছিল তাই সকলে মন খারাপ করে ছিল। রাসুল (সাঃ) চুক্তি শেষে সকল মুসলিমদের নিজ নিজ পশু কুরবানি করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা এতই দুঃখিত ছিল যে এই জন্য বসা থেকে উঠেননি। রাসুল(সাঃ) তিনবার এই নির্দেশ দিয়ে তার তাবুতে ফিরে যান। নবি(সাঃ) উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা(রাঃ) এর কাছে পরিস্থিতি ব্যাক্ত করলে তিনি পরামর্শ দেন যে যদি রাসুল (সাঃ)যদি মনে করেন কুরবানির জন্য নির্ধারিত পশুগুলি জবাই এবং চুল কামান প্রয়োজন তাহলে তিনি নিজের পশুটি নিজের হাতে আগে জবাই করুন এবং মাথা কামিয়ে নিন। রাসুল (সাঃ) এই পরামর্শ অনুযায়ি নিজের কুরবানির পশুটি জবাই করেন এবং মাথার চুল কামিয়ে নিলেন। এর পর সকল সাহাবিই নিজ নিজ পশু জবাই করেন এবং চুল কামান কিংবা খাটো করেন।
এরপর সবাই মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। সন্ধির শর্তাবলি এবং বায়তুল্লাহ জিয়ারত এর উদ্দেশ্য পুর্ন না হওয়ায় সকল মুসলিম এর মন খারাপ ছিল। কিন্তু এই সময় সূরা ফতেহ এর কয়েকটি আয়াত নাজিল হয় যেই আয়াতগুলিতে আল্লাহতায়লা এই সন্ধিকে সুস্পষ্ট বিজয় বলে ঘোষনা করেন। সেই সাথে বাইয়াতে রিজোয়ান এ অংশগ্রহনকারিদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির কথাও উল্লেখ করে আয়াত নাজিল হয়। মুসলিমরা বুঝতে পারেন এবং তাদের হৃদয় থেকে হতাশা চলে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৮৩৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু আমি শুনেছি কাফিরা হযরত উসমান (রাঃ)বন্ধি করে রেখেছিল। কিন্তু মুসলিম বাহিনী এটার প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য বাইয়াতের খবর শুনে কাফিরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সন্দির প্রস্তাব দিয়েছিল।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
সুন্দর এই উৎসাহি মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
তবুও ধন্যবাদ। পরবর্তি পর্ব পড়ার আমন্তন্র।
পরবর্তি পর্ব পড়ার আমন্তন্র।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
এই ঘটনা পুরাপুরি ঐতিহাসিক।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : যে চুক্তি এক বছর না যেতে মোহাম্মদ নিজেই ভংগ করেন তা নিয়ে এত আহমরি/ঢাক/ঢোল আরব্য রজনীর স্বপ্ন না তো কি?সূরা ৯ঃ১- সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।
সূরা ৯ঃ২৯- তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : চুক্তি কে ভংগ করেছে তা তো কোরাণের সুবোধ আয়াত থেকেই বুঝা যায়। নাকি?A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : মোহাম্মদ রচিত কোরাণের আয়াতগুলোও মিথ্যা??আপনি আমার চেয়ে অনেক অনেক ভালো বুঝেন কিন্তু আমার এমনটা মনে হয়েছে বলেই বললাম। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। দ্বিতীয় পর্বে গেলাম....
ধন্যবাদ মন্তব্যটির জন্য।
তবে আমার চেয়ে এই ধন্যবাদ এর বেশি দাবিদার ভিশু ভাই কারন উদ্যোগটি তারই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন