হাকলবেরি ফিন থেকে মাইকেল ব্রাউন। বর্নবাদি যুক্তরাষ্ট্র।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:২০:৫১ রাত
মাইকেল ব্রাউন।
১৮ বছর বয়সি এক মার্কিন কৃষ্নাঙ্গ কিশোর। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ড্যারেন উইলসন নামের এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। ঘটনাটি ঘটে এই বছর ৯ই আগষ্ট তারিখে। ঘটনাস্থল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসেীরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরে। ঘটনাটির পরেই সেখানে দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। যখন ব্রাউন এর প্রতিবেশি ও বন্ধুরা তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার যায়গাটিতে ফুল দিয়ে যায় সেইদিন। একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিস অফিসার তার কুকুরটিকে সেই ফুলগুলির উপর প্রাকৃতিক কর্ম সারতে দেন। তারপর ফুলগুলি মারিয়ে চলে যায় একটি পুলিশের গাড়ি। এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জায়গায় সৃষ্টি করে দাঙ্গার। ক্লু ক্ল্যাক্স ক্ল্যান এর মত সংগঠনগুলির উত্তরাধিকারিরা বের হয়ে আসে তাদের খোলস থেকে। অন্যদিকে ফার্গূুসন শহরে পুলিশ মার্কিন মানবাধিকার আর বাকস্বাধিনতার ফাঁকাবুলিকে মিথ্যা প্রমান করে কঠোর শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করে। সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা র চেষ্টায় দাঙ্গা প্রশমিত হয় এবং অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার কে বিচারের মুখমুখি করা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিতে গঠন করা হয় গ্র্যান্ড জুরি। ১২ সদস্য বিশিষ্ট এই গ্র্যান্ড জুড়ির ৯ জন শ্বেতাঙ্গ ও ৩ জন কৃষ্নাঙ্গ। জুড়ির সামনে প্রদত্ত বক্তব্যে ড্যারেন উইলসন দাবি করে ব্রাউন তার উপর আক্রমন করতে যাচ্ছিল। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শি সাক্ষিরা এটি মিথ্যা বলে দাবি করে। এটাও বলে যে উইলসন পিস্তল দেখালে ব্রাউন আত্মসমর্পন এর উদ্দেশ্যে হাত উপরে তুলেছিল। সেন্ট লুই কাউন্টির এটর্নি জেনারেল সাক্ষিদের বক্তব্য গ্রহনযোগ্য নয় বলে মত প্রকাশ করেন এবং কিছু ফরেনসিক সাক্ষ্য উপস্থাপন করে যে ব্রাউন উইলসন কে আক্রমন করেছিল।
গতকাল গ্র্যান্ড জুরি এই সিদ্ধান্ত দেয় যে ব্রাউন কে অভিযুক্ত করা হবেনা। যতটুক জানা গেছে ১২ জন এর মধ্যে ৯ জন এই রায় এর পক্ষে এবং ৩ জন বিপক্ষে ছিলেন। এই ঘোষনা আসার সাথে সাথেই ফার্গুসন সহ অনেক শহরে শুরু হয়েছে দাঙ্গা ও বিক্ষোভ। ব্রাউন এর পরিবার ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মানুষকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
গনতন্ত্র এবং মানবাধিকার এর দেশ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র এখনও যা থেকে মুক্ত হতে পারেনি তা হলো বর্ণবাদ। যদিও বর্তমান রাষ্ট্রপতি একজন কৃষ্নাঙ্গ। মিসেীরির মত দক্ষিনাঞ্চলিয় রাজ্যগুলিতে এখনও বর্নবাদ রয়ে গিয়েছে শিরা-উপশিরাতে।
যে মিসেীরি তে ঘটেছে এই ঘটনা সেই মিসেীরিতেই জন্ম নিয়েছিলেন মার্ক টোয়েন। যিনি তার হাকলবেরি ফিন ও টম স্যয়ার এর চরিত্রগুলির সাথে লিখেছিলেন আরেকটি চরিত্র নিগ্রো ক্রিতদাস জিম। যে জিম কে দাসত্ব এবং অপমান থেকে উদ্ধার করতে টম আর তার বন্ধু হাক সবসময় উদ্যোগি। কিন্তু সেখানেই এখনও রয়ে গেছে বর্নবাদের প্রচন্ড প্রভাব।
ফার্গুসন শহর এখনও জ্বলছে। ফেডারেল সরকার এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। দাঙ্গা প্রতিরোধে সেখানে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। এর সমাধান যেভাবেই হোক। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার আর সমানাধিকার এর ধ্বজ্জাধারি মার্কিন শ্বেতাঙ্গ দের প্রকৃত রুপ আবারও পৃথিবির মানুষের কাছে প্রমানিত হলো।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তারা সব কিছুতেই লিখে রেখেছে "ইন গড উই ট্রাষ্ট"।
কিন্তু তারা তাদের ধর্মকে বিতারিত রেখেছে প্রাত্যহিক জিবন থেকে। তাই তাদের মধ্যে প্রকৃত মানবতা বোধ জাগ্রত হয়নি। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
লাল গোলাপের বদলে সবুজ পাতা!
উভয়েই সমান। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া মেধার
মূল্যায়ন হয় না।
ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে দেখেছি আপনার কাছেও এসব সাহিত্যের যথেষ্ট কদর ছিল, সংগ্রহও ছিল।
যাক, আপনার পোষ্টটিতে আমেরিকার বাস্তব প্রতিচ্ছবি ফুটে এসেছে। মূলত পাশ্চাত্যের প্রতিটি দেশই বর্ণবাদী চিন্তায় আচ্ছন্ন। দেশগুলো নিজের যুদ্ধ-বিগ্রহ করে নিজেরা ছোট ও একই মানসিকাতার জনগোষ্ঠির মাঝে সীমাবদ্ধ হবার কারণে বর্ণবাদী মানসিকতটা লুকিয়ে থাকে।
যখন সমস্যা সৃষ্টি হয়, তখন তারা বর্ণবাদীদের পক্ষ নেয়। আমেরিকায় বহু মত, বুহ বর্ণ, বহু ধর্মের বাস বলে সেখানে সেটা প্রায়শই এটা দেখা যায়। নিজেদের চেহারা কচ্ছপের মত লুকিয়ে রাখতে পারে না। অনেক ধন্যবাদ
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
মাহমুদ সনে দাঁড়ায়েছে আসি সমপংতিতে আয়াজ যবে,
রহিল না কেহ বান্দা তখন,রহিল না কেহ মালিক তবে।
দাস রিলেটেড এডভ্যাঞ্চার এটা কি সেই হাকলবেরি ফিনের কথা বলছেন আপনি ভাইয়া।
হ্যাঁ ভাই সেই বইটির কথাই বলছি। কাহিনিটি যে যুকক্তরাষ্ট্রের যে রাজ্যে এই ঘটনা ঘটেছে সেই মিসেীরি নিয়েই লিখা। যেখানে এখনও বৃষ্নাঙ্গদের মানুষ মনে করতে চায়না শ্বেতাঙ্গ রা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন