ধূমকেতুতে অবতরন করল মানবনির্মিত যান
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:১৯:০৩ দুপুর
”ডিপ ইমপ্যাক্ট” মুভিটি অনেকেই হয়তো দেখেছেন। যেখানে দেখানে হয়েছে একটি ধুমকেতু পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে। যেই ধুমকেতুটিকে প্রতিরোধ করতে মার্কিন সরকার একটি স্পেস মিশন প্রেরন করে। কিন্তু সেই মিশনটি প্রথমে ব্যার্থ হয়। তারপর আন্তঃমহাদেশিয় ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে সেটা ধ্বংস করার চেষ্টা করা হলে সেটি দুই টুকরা হয় যায় অপেক্ষাকৃত ছোটটি পৃথিবিতে আঘাত হানে যার ফলে সুনামির সৃষ্টি হয়। অপর অংশটিকে স্পেস মিশন এর জিবিত কর্মিরা সুইসাইড এটাক এর মাধ্যমে মহাশুন্যে ধ্বংস করেন। এই মুভিটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শিক্ষনিয়।
কমেট বা ধুমকেতু কয়েক হাজার বছর ধরেই জেীতির্বিজ্ঞানিদের গবেষনা ও কেীতুহলের বিষয়। সাধারন মানুষদের মধ্যেও এটি বিশেষ কেীতুহলের বিষয় কারন মহাকাশের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যেই এই জিনিসটিই খালি চোখে দেখা যায়। বিখ্যাত হ্যালির ধুমকেতু যা প্রতি ৭৫-৭৬ বছর পর পৃথিবির কক্ষপথের নিকটবর্তি হয় সেটা খালি চোখেই একটি লেজ ওয়ালা তারার ন্যায় দৃশ্যমান হয়। এছাড়া আরো কয়েকটি ধুমকেতু বিভিন্ন সময় দেখা যায়। স্বাভাবিক ভাবেই ধুমকেতু নিয়ে মানুষ অন্যান্য মহাজাগতিয় বস্তু সম্পর্কে অনেক বেশি কেীতুহলি।
ধূকেতুর গঠন নিয়ে গবেষনাও চলছে তিন হাজার বছরের অধিক সময় ধরে! এরিষ্টটল ধুমকেতুকে একটি মহাজাগতিক বস্তু বলে প্রথম সনাক্ত করেন। সেই সময় ধুমকেতু কে দুঃসময় বা মহামারির পূর্বাভাস হিসেবে বিশ্বাস করা হতো। ফরাসিরা যেদিন বৃটিশ বন্দর হেষ্টিংস আক্রমন করেছিল সেইদিন হ্যালির ধুমকেতু উদয় হওয়ায় এই বিশ্বাস দির্ঘদিন ইউরোপে প্রচলিত হয়েছিল। ধূমকেতুর কোর বা মুল অংশ গঠিত হয় পাথর,বরফ এবং বরফায়িত গ্যাস দিয়ে। এর উজ্জল লেজটি তৈরি হয় এই গ্যাসিয় পদার্থগুলির দহনের ফলে সৃষ্ট অগ্নি দিয়ে। যার কারনে ধুমকেতু উজ্জল এবং আকর্ষনিয় দেখায়।
আধুনিক কৃত্রিম উপগ্রহ আবিস্কৃত হওয়ার পর ধূমকেতু নিয়ে নতুন গবেষনার পথ খুলে যায়। ২০০১ সালে প্রথম স্পেস ক্রাফট ডিপ স্পেস-১ ”বোরেলি” নামক ধুমকেতুটির হাই রেজুলেশন ছবি তুলতে সক্ষম হয়। এতে দেখা যায় ধুমকেতুটির কোর এর সারফেস উত্তপ্ত ও শুকনো এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন। বাইরের সারফেসে বরফ এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এরপর নাসার উদ্যোগে ডিপ ইমপ্যাক্ট-১ মিশন প্রেরন করা হয়। এই মিশনটির উদ্যেশ্য ছিল একটি ধুমকেতুর কোর বা মূল অংশে গর্ত তৈরি করে এর ভিতরের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। ২৯ শে জুন ২০০৫ সালে এর ইমপ্যাক্ট অংশটি ধুমকেতুটির সারফেসে আঘাত হানে। এর ফলে ধুমকেতু টির মধ্যে একটি বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। এর ফলে সৃষ্টি হয় গ্যাসিয় আবর্জনার যা থেকে ধুমকেতুটির কোর বা মূল উপাদান সম্পর্কে গবেষনা করা হয়। যদিও মিশনটি সম্পুর্ন সফল হয়নি তবুও এর থেকে অনেক মুল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। এর আগেই ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির উদ্যোগে ধুমকেতু গবেষনার উদ্দেশ্যে আরেকটি মিশন প্রেরন করা হয়। ”রসেটা” স্পেস ক্রাফট এর সাথে এই মিশনে যুক্ত করা হয় ”ফেলি” নামের একটি বিশেষ রিসার্চ ক্রাফট। ফেলি যানটির উদ্দেশ্য ধূমকেতুর কোর এর সারফেসে ল্যান্ড করবে এবং এর সম্পর্কে তথ্য প্রেরন করবে। গতকাল ১২ ই নভেম্বর ২০১৪ তে প্রায় দশ বছর মহাশুন্যে থাকার পর মিশন রসেটার এই যানটি ধূমকেতু "৬৭ পি/সুরিয়ামভ-জেরাসিমেন্কো" এর সারফেসে অবতরন করতে সক্ষম হয়েছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনাটির মাধ্যমে বিজ্ঞান এর একটি নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটল। এই মিশনটির উদ্দেশ্য ধুমকেতুটির গঠন এবং এর কম্পোজিশন সম্পর্কে প্রয়োজনিয় তথ্য সংগ্রহ। এটিতে বিভিন্ন ধরনের একাধিক সেন্সর আছে যা আইসোটপ ও মলিকুলার লেভেলে তথ্য সংগ্রহে সক্ষম। এটি ধূমকেতুটির খনিজ গঠন সম্পর্কেও গবেষনার তথ্য সংগ্রহ করবে। ফেলির সাফল্য যে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করল সেটি মানবজাতির উপকারে আসবে বলেই আমরা আশা করছি। ধূমকেতু থেকে প্রচুর খনিজ পদার্থ আহরন করার সম্ভাবনা আছে। এতদিন যেটা ছিল কল্প বিজ্ঞান এর কাহিনি। ফেলির মিশন সফল হলে সেই কল্পনা বাস্তবে পরিনতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মানব জাতির কল্যানে যেন এই সাফল্য ব্যবহৃত হয় সেই আশা করি।
প্রথম ছবিটি ফেলি থেকে তোলা ধুমকেতুটির যেখানে যানটি ল্যান্ড করেছে তার ছবি।
নিচের ছবিটি রসেটা মহাকাশ যান এর ছবি যা ফেলি কে বহন করেছে।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৫ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা এখনও আমাদের সেীরজগত এর সম্পর্কেও এক শতাংশ জ্ঞান অর্জন করিনাই। তারপরও কিছু লোক কিভাবে এটা দাবি করে যে বিজ্ঞান এখন ঈশ্বর হয়ে গিয়েছে বা বিজ্ঞান দিয়ে তারা আল্লাহর অস্তিত্ব নাই বলে প্রমান করে ফেলেছে সেটা বুঝতে পারিনা।
ভালো লাগল। আমি এধরণের লিখা পছন্দ করি। এই মহাবিশ্ব নিয়ে যে কোনো ধরণের লিখাই আমাকে আকৃষ্ট করে।
ভালো লাগা রেখে গেলাম।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মহাবিশ্বের অপার রহস্য সবসময়ই আকর্ষনিয়।
ধন্যবাদ মন্তব্যটিরজন্য।
অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞান অনুরাগী ভাই।
ভাল থাকুন এই কামনা।
এই মহাবিশ্বের বিভিন্ন বিষয় অনেক কিছু জানার আছে।
হ্যালির ধূমকেতু আমি দেখেছিলাম থুব কম বয়সে তাই মনে নাই। তবে স্পষ্ট দেখেছি হেলবপ ধূমকেতুটি।
এই বিশাল মহাকাশের সহস্র ভাগের এক অংশ এই সৈীরজগত সম্পর্কেও আমাদের জ্ঞান এখনও সিমাবদ্ধ। অথচ এই জ্ঞান নিয়েই অনেকে সব কিছু জয় করে ফেলার দাবি করে!
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7238
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
এই বিষয়ে বিশেষ ইন্টারেষ্ট থাকায় চেষ্টা করি খবর রাখতে।
মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন