স্কটসবরো বয়েজ,বেনজামিন মলয়সি এবং ন্যায়বিচার!!!

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:৩৩:৪০ সন্ধ্যা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ সাউথ তথা গভির দক্ষিন অঞ্চলের একটি অঙ্গরাজ্য আলবামা। ২৫ এ মার্চ তার পেইন্ট রক রেল ষ্টেশনে স্থানিয় শেরিফ এবং তার সাথে থাকা শ্বেতাঙ্গ জনতা একটি ট্রেন থামিয়ে মাল বাহি খোলা বগিতে থাকা নয়জন কৃষ্নাঙ্গ কিশোর কে গ্রেফতার করে। তাদের সকলের বয়স ই ১৮ বছরের নিচে। গ্রেফতারের সময়ই তাদের উপর আক্রমন করে হত্যার চেষ্টা করা হয়।শেষ পর্যন্ত তাদেরকে নিকটবর্তি স্কটসবরো শহরে বিচারের জন্য নেয়া হয়। সেইসময় এর বর্নবাদি আমেরিকার সবচেয়ে বর্নবাদি অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি রাজ্য ছিল আলবামা। এখনও সেখানে বর্নবাদিতা অনেক বেশি । এখানে কোন কৃষ্নাঙ্গ এর বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গের অভিযোগ ই ছিল শাস্তির জন্য যথেষ্ট। কোন প্রমানের প্রয়োজন পড়ত না। এই কিশোর দের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় রুবি বেটস এবং ভিক্টোরিয়া প্রাইস নামের দুই শ্বেতাঙ্গ তরুনি কে ধর্ষনের। তাদের বিচার শুরু হয় দ্রুতই। তাদের পক্ষে কোন আইনজিবি ছিলনা। একমাত্র ৬৯ বৎসর বয়স্ক এবং প্রায় অবসরগ্রহনকারি এটর্নি যিনি এর আগে প্রায় দশ বছর আদালতে দারাননি তিনি স্বেচ্ছায় তাদের পক্ষ সমর্থন করেন। আদালতে কোন কৃষ্নাঙ্গ দর্শক এর প্রবেশাধিকার ছিলনা। মাত্র তিনদিনের বিচার(!) শেষে তাদের সকলকে মৃত্যদন্ড দেওয়া হয়। এই বিচারের সময় আদালত কক্ষে এবং বাইরে বিশাল শ্বেতাঙ্গ জনতা সবসময় শ্লোগান দিত। তাদের দাবি ছিল এই অভিযুক্তদের অবশ্যই ফাঁসি দিতে হবে। এমনকি আদালতের ভিতরেও স্লোগান দেওয়া হতো। বিচারক ও জুরিরা তার কোন প্রতিবাদ করেননি।

তবে এই সময় বিষয়টি প্রচারিত হলে তারা ন্যায়বিচার পায়নি বলে মানুষের মধ্যে জনমত সৃষ্টি হয়। ইউএস কম্যুনিস্ট পার্টি পুর্নবিচার এর দাবিতে তাদের পরিবার কে সহায়তা করে। প্রথমে আলবামা সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যার্থ হলেও মার্কিন ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট পুর্নবিচার এর আবেদন গ্রহন করে। নিরাপত্তার জন্য আলবামার অন্য একটি শহর ডেকাটুর এ জাজ জেমস এডুইন হরটন এর আদালতে পুনরায় তাদের বিচার শুরু হয়। এই সময় তাদের পক্ষে বিখ্যাত আইনজিবি ও ডেমাক্রেট দলিয় রাজনিতিবিদ স্যামুয়েল লিবোভিটস আদালতে দাড়ান। যদিও এই আদালতে আগের মতই সকল জুরি ছিল শ্বেতাঙ্গ। লিভোভিটজ এই নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করলেও বিচারক তা গ্রহন করেননি। পুনর্বিচার এর সময় লিবোভিটস এর কেীশলি জেরায় এটি সুস্পষ্ট হয় যে দুই অভিযোগকারিনি মুলত পতিতা। এছাড়াও অন্যান্য সাক্ষিদের জেরায় এটিও সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে আসলে প্রকৃত ঘটনা ছিল সেই ট্রেনে এই কৃষ্নাঙ্গ কিশোর দের সাথে কয়েকজন শ্বেতাঙ্গ কিশোরের সংঘর্ষ। এটিকে কৃষ্নাঙ্গদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য অর্থের বিনিময়ে রুবি ও ভিক্টোরিয়াকে ধর্ষন এর অভিযোগ আনা হয়। বিচারের শেষ পর্যায়ে রুবি বেটস তার অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। রুবির এই কাজের পিছনে ছিলেন নিউইয়র্ক এর বিশপ রেভারেন্ড এমারসন ফসডিক। রুবি তার কাছে দিক্ষা নিতে গেলে তিনি তাকে আদালতে সত্য স্বিকার করার উপদেশ দেন। রুবি স্বিকার করে যে সে এবং ভিক্টোরিয়া পতিতাবৃত্তি করত এবং সেই ট্রেনে কৃষ্নাঙ্গ কিশোর দের সাথে তার কোন ঘটনাই ঘটেনি। রুবির এই সাক্ষ্যের পরেও সকল জুরি এবং বিচারক আসামিদের অপরাধি বলে রায় দেন এবং মৃত্যদন্ড দেন। এই রায় ও বিতর্কের সম্মুখিন হলে নতুন বিচারক কালাহান কে নিযুক্ত করা হয়। তিনিও অত্যন্ত অভদ্রভাবেই শ্বেতাঙ্গদের পক্ষ অবলম্বন করেন। তিনি ভিক্টোরিয়া প্রাইস কে জেরা করার সময় বিভিন্ন ভাবে বাধা দেন লিভোভিটজকে। লিভোভিটজ ছিলেন একজন ইহুদি। এই নিয়ে তার বিরুদ্ধেও শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থিরা প্রচার চালায় এমনকি তার উপর আক্রমন করে। পুরো বিচার চলাকালিন সময় স্থানিয় পত্রিকাগুরি লিবোভিটজ কে ব্যাঙ্গ করে অনেকগুলি কার্টুন ছাপায়। আগের মতই পুর্নবিচার চলাকালিন সময় উগ্র শ্বেতাঙ্গ জনতা আদালত ঘেরাও করে রাখত। পত্রিকাগুলিও জনদাবির প্রতি সন্মান জানাতে আদালতকে উপদেশ দিত। কালাহান ও শেষ পর্যন্ত তাদের অপরাধি বলেই রায় দেন তবে মৃত্যদন্ড এর পরিবর্তে সকলকে দির্ঘমেয়াদি কারাদন্ড দেওয়া হয়। এই অবিচারের শিকার রা ছিলেন। ওলেন মন্টোগোমারি(১৭),ক্ল্যারেন্স নরিস(১৮) হেউড প্যাটারসন(১৮),ওজি পাওয়েল(১৬) ,উইলি রবারসন(১৬),চার্লি উইম(১৬), ইউজেন উইলিয়াম(১৩), এন্ডি উইলিয়ামস(১৮) ও রয় রাইট (১২)। বন্ধনিতে ঘটনার সময় তাদের বয়স দেয়া হয়েছে। ওলেন মন্টোগোমারি, উইলি রবারসসন, ইউজেন উইলিয়াম ও রয় রাইট,কে ১৯৩৭ সালে মুক্তি দেয়া হয়। অন্যান্যরা দির্ঘমেয়াদে জেলেবন্দি থাকে। হেউড প্যাটারসন ১৯৪৮ সালে জেল থেকে পালান এবং ”স্কটসবরো বয়েজ” নামে একটি বই লিখেন। তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৫২ সালে ক্যান্সারে মৃত্যবরন করেন। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে মুক্তি পান তবে জেলে সাস্থ হারিয়ে কম বয়সেই মৃত্যুবরন করেন।

কিন্তু এই বিচারের অন্যায়টি মানুষের চোখের সামনে দিনে দিনে সুষ্পস্ট হতে থাক্। শুধুমাত্র বর্নবাদি হিংস্রতার বশবর্তি হয়ে সকল সাক্ষ্য প্রমান কে অগ্রাহ্য করে শাস্তি দেওয়া হয় কয়েকজন নিরপরাধ কে। ১৯৩৮ সালেই আলবামার তৎকালিন গভর্নর বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কথা দেন। তবে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে তা স্থগিত থাকে। অবশেষে প্রায় ৮০ বছর পর ২০১৩ সালে আলবামা রাজ্য স্কটসবরো বয়েজ দের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করে।

জনদাবির মুখে কয়েকজন নিরপরাধ কে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল সেদিন আলবামার আদালত। সত্য কে কোন বিবেচনাতেই সেখানে নেওয়া হয়নি। হ্যাঁ সেদিন আদালত বিশাল(!) ন্যায়বিচার করেছিল। কিন্তু সময় সেই ন্যায়বিচারকে(!) জঘন্যতম অন্যায় হিসেবে স্বিকৃতি দিয়েছে। সেইদিনের বিখ্যাত বিচারক হরটন এবং কালাহান এখন সরকারি খাতাতেই অন্যায় কারি। বিচারের নামে যে নাটক সেদিন হয়েছিল তার জবাব এখন অবশ্যই দিতে হয়েছে। সত্য অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিচারের নামে অবিচারকারিরা এখন খুনি হিসেবেই স্বিকৃত।

১৯৮৫ সালে এভাবেই আরেক বিচারের প্রহসন করে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় দক্ষিন আফ্রিকার কৃষ্নাঙ্গ কবি বেনজামিন মলয়সিকে। ১৯৮৫ সালের ১৮ ই অক্টোবর ফাঁসির মঞ্চে তিনি মৃত্যবরন এর আগে তার শেষ কবিতাটি লিখে যান।

আমি গর্বিত আমারই জন্য...

আমার রক্ত বৃষ্টিতে মুছে যাবে জুলুমের ঝড়

আমি গর্বিত আমার জিবন দানে

আমার একমাত্র জিবন .. ।

বিষয়: বিবিধ

২৪০১ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

280872
০৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০০
224617
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
280874
০৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৬
ফখরুল লিখেছেন : আল্লাহ সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর। সত্য সমাগত মিথ্যা অপসারিত।

অসাধারন সবুজ ভাই। ভালোবাসা রইলো। Rose Rose Rose Rose
০৪ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০১
224618
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
280878
০৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৮
নিরবে লিখেছেন : ভালো লাগলো
০৪ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০১
224619
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
280889
০৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৬
আফরা লিখেছেন : সত্যি অসাধারন আর সময়োপযোগী একটা লেখা অনেক অনেক ধন্যবাদ সবুজ ভাইয়া ।
০৪ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০১
224620
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ
280897
০৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫৯
তৃতীয় চোখ লিখেছেন : সত্য বিজয়ী হবেই
০৪ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০২
224621
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।
280954
০৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০১:০৪
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : বলতে হবে চমৎকার লেখা।আপনি আলাবামায় থাকেন নাকি। 16th Street Baptist Church এ সাদারা, বোমা Mae Collins, Cynthia Wesley, Carole Robertson and Denise McNair এই চার জনকে হত্যা করেছিল। এমন কি আফ্রিকান আমেরিকানরা বাসের সামনে বসতে পারত না। তারপরও সময় বসে থাকেনি। সাউতের মেজর সিটির মেয়রা আফ্রিকান আমেরিকান। এখন ওদের প্রতাপ যথেষ্ট। এখানের মোট জনসংখ্যার ১১% আফ্রিকান আমেরিকান।
০৪ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০৩
224622
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : না ভাই আমি কোনদিন ইন্ডিয়ার পরেও যাই নাই!
সমস্ত তথ্যই বিভিন্ন বই ও ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত।
281225
০৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৫১
আজব মানুষ লিখেছেন :
অভিযোগকারিনি মুলত পতিতা।


কষ্ট পেলুম Worried
০৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৪
224854
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ক্যান আপনার কষ্ট পাওয়ার কারন কি???
রুবি বেটস তো নিজেই স্বিকার করেছিলেন।
282876
১০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১০
আহমেদ ফয়সাল লিখেছেন : যদি টুডে ব্লগে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতো হতে কমেন্টে বিরক্ত করতাম না। সবুজ ভাইয়া, আপনার ফেসবুক আইডি লিংকটা দেয়া যাবে। অথবা আমাকে ফেসবুকে Message দিবেন?

Facebook (Ahmed)
১০ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪০
226298
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ঠিক আছে। ধন্যবাদ।
285939
১৯ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০০
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : ফিলিংস: শফিক রেহমানের টকশো লাল-গোলাপ দেখছিলাম এতক্ষণ। তবে আজকের বাংলাদেশে বিচারের নামে অবিচারকারিরা খুনি হিসেবেই স্বিকৃত পাওয়ার আগে যেসব নির্দোষ মানুষের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে, যেসব নির্দোষ মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর আগে রোদ্ররোষে অতৃপ্ত মুত্যুকে নিরুপায় বরণ করেছেন তাদের.............
১৯ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৬
229320
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই সময় লাল গোলাপ দেখায় কোন চ্যানেল!!!
মিথ্যা দিয়ে কারো সুনাম ক্ষুন্ন হয়না। আর যরা মৃত্যবরন করেছে তারাতো সেীভাগ্যবান! শহিদি মর্যাদায়।
১০
286026
২০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০১:০৩
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : আমি কি কইসনি এই সময় আর সেই সময় কোন সময়? আমিতো কইসি শুধু টকশো "লাল গোলাপের" কথা আপনি আছেন শুধু আমারে পছানোর ইলিমেন্ট খুছাইতে! এমন কেনরে ভাই?
২০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
229528
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এমনি এমনি!!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File