কলকাতা,লাহোর ও করাচি। তিনটি শাহদাত।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:৩৪:১৩ বিকাল
কলকাতার কলেজ ষ্ট্রিট বইপাড়ার বিখ্যাত আলবার্ট হল ও কফি হাউসের কাছেই ট্রাম লাইনের পাশে ১৯৩১ সালে ছিল একটি প্রকাশনি ও বই এর দোকান। নাম "সেন ব্রাদার্স"। তারা প্রধানত স্কুলপাঠ্য বই ছাপাতেন। ৭ই মে ১৯৩১ সালে সকাল এগারটায় সেই দোকানের সামনে আসলেন দুই যুবক। কর্মরত ভোলানাথ সেন কে দেখামাত্র ছুড়িকাঘাতে হত্যা করেন তারা। সাথে সাথে আশেপাশের মানুষজন দেীড়িয়ে আসে। যুবক দুজন পালাবার কোন চেষ্টাই না করে আত্মসমর্পন করেন। সেই দুই পাঠান যুবক এর নাম আবদুল্লাহ খান ও আমির আহমদ। তারা দুজন পুলিশের কাছে নির্ভয়ে স্বিকার করেন তারা রাসুল (সাঃ) কে অবমাননার উপযুক্ত বিচার না হওয়ায় ভোলানাথ সেন কে হত্যা করে তার প্রতিশোধ নিয়েছেন। আ্ইনত বিচার শুর হয় তাদের। এই ঘটনার মুলে রয়েছে ভোলানাথ সেন এর নামে লিখিত এবং সেন ব্রাদার্স প্রকাশিত একটি স্কুল পাঠ্য বই "প্রাচিন কাহিনি"। বইটি দ্রুতপঠন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই বইতে রাসুল (সাঃ) এর একটি কল্পিত ছবি প্রকাশিত হয় এবং তার জিবনিকেও বিকৃত করে লিখা হয়। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পরই মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচন্ড ন্ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঢাকার নবাব হাবিবুল্লাহ বাহাদুর বইটির বিরুদ্ধে ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য মামলা করেন। কিন্তু হাইকোর্ট তার দাবি গ্রহন করেননি। এই অবস্থায় মুসলিম নেতৃবৃন্দ এর বিরুদ্ধে ভারতব্যাপি কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলার চেস্টা করেন। এই সময় এই দুই পাঠান যুবক ঘটনাটি জানতে পারেন এবং উপযুক্ত বিচার না পাওয়ায় ভোলানাথ সেন কে হত্যা করে তারা প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা মত তারা ভোলানাথ সেন কে হত্যা করে। তারা মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু হুসাইন শহিদ সুহরাওয়ার্দি এই মামলায় বিনা ফিতে নিজেই তাদের পক্ষ সমর্থন করেন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও তাদের পক্ষে দাড়ান। আবদুল্লাহ খান ও আমির আহমদ তাদের হত্যার কথা স্বিকার করেন। সুহরাওয়ার্দি এই যুক্তিতে মামলা চালান যে রাসুল (সাঃ) এরপ্রতি ভালবাসা প্রতিটি মুসলিম এর মধ্যে অতি গভির। তার অবমাননা একজন মুসলিমকে দুঃখিত ও উত্তেজিত করবে। একজন মুসলিম এর জন্য এর চেয়ে বড় উস্কানি আর কিছু হতে পারেনা। তাই আইনত তারা উত্তেজিত অবস্থায় হত্যাকান্ডের অপরাধে অপরাধি। তাই কিছুতেই তাদের মৃত্যদন্ড হতে পারেনা। কিন্তু ইংরেজ আদালত তার যুক্তি গ্রহন করনি। তাদেরকে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকরের পর তাদেরকে কলকাতার মুসলিমরা পুর্ন মর্যাদায় কবর দেয়। তাদের কবর আজও শহিদের সন্মানে রক্ষিত। আর সেই ভোলানাথ সেন এর নামও আজ বিস্মৃত। সমসাময়িক এই প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের অন্যান্য প্রকাশনি যেমন ইউএন ধর,মিত্র ও ঘোষ,সেন রায়, প্রেসিডেন্সি লাইব্রেরি ইত্যাদি এখনও বর্তমান থাকলেও এই দোকানটি যেখানে ছিল সেখানে এখন ভিন্ন প্রকাশনির গোডাউন।
এই সময়ের কাছাকাছি একই রকমের আরো দুটি ঘটনা ঘটে লাহোর ও করাচিতে। লাহোরে রাজপাল নামে এক জন "রঙ্গিলা রসুল" (অনেকে এই বইটি সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস এর উৎস বলে মনে করেন) নামে একটি বিকৃত বই প্রকাশ করেন। এইর প্রতিবাদেও মুসলিম সম্প্রদায় আদালতে যায়। কিন্তু সেখানেও এই লোকের কোন শাস্তি হয়নি। গাজি ইলমুদ্দিন নামের এক সাহসি যুবক রাজপাল কে হত্যা করে এবং ফাঁসিতে শহিদ হয়। এর কিছুদিন পর করাচিতে নাথুরাম নামে আরেকজন "হিস্ট্রি অফ ইসলাম" নাম দিয়ে একটি বই প্রকাশ করে যেখানেও রাসুল (সাঃ) এর প্রতি অত্যন্ত জঘন্য অপবাদ আরোপ করা হয়। এখানেও একই ভাবে আদালতে ন্যায় বিচারে ব্যার্থ হয়ে গাজি আবদুল কাইয়ুম নামের এক যুবক নাথুরাম কে হত্যা করে। একই ভাবে তাকেও মৃত্যদন্ড দেওয়া হয়। এই দন্ড মওকুফের জন্য গভর্নর জেনারেল কে সুপারিশ করার জন্য করাচির মুসলিম নেতৃবৃন্দ লাহোরে আল্লামা ইকবাল এর কাছে জান। রাসুল প্রেমিক এই মহান কবি তাদের কাছে জানতে চান গাজি আবদুল কাইয়ুম মানসিক ভাবে কেমন আছেন। নেতৃবৃন্দ তাকে জানান সে সম্পুর্ন প্রফুল্ল এমনকি সে গভর্নর জেনারেল এর কাছে প্রান ভিক্ষার আবেদনে সাক্ষর ও করছে না। আল্লামা ইকবার জবাব দেন," নবি (সাঃ) এর এক আশিক যখন তার জিবন দিয়ে ইশক এর দাবি প্রমান করতে চায় আমাদের পক্ষে কি করে তার আকাঙ্ক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা উচিত?" এই কথার সাথে মহাকবির চোখ দিয়ে অশ্রুধারা নেমে আসে। গাজি আবদুল কাইয়ুম এর ফাঁসি হয়। আল্লামা ইকবাল তাদের স্মরনে তার বিখ্যাত কবিতা "লাহোর ও করাচি" রচনা করেন। যার কটি চরন।
আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মুসলিম দৃষ্টি সব সময় আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রাখে।
মৃত্যুর অর্থ কি? শুধুমাত্র এ স্থুল পৃথিবী থেকে অজানা এক জগতে যাত্রা!
এ শহিদদের জিবনের বিনিময় সেই গির্জা অনুসারিদের কাছে চেয়ো না,
যাদের রক্তের দাম কাবার চাইতেও বেশি।
হায় মুসলিম! তোমার কি স্মরন নেই আল্লাহর সেই বাণি যে,
আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ কে ডেকো না।
তথ্যসুত্র:-
ইসলাম ও সমকালিন বিস্ময়কর কয়েকটি ঘটনা- মাওলানা মুহিউদ্দিন খান।
আত্মকথা-আবুল মনসুর আহমদ।
কলেজ স্ট্রিটে সত্তর বছর- সবিতেন্দ্রনাথ রায়।
কলেজ স্ট্রিট- দেবব্রত মল্লিক।
দুটি বই,তিনটি খুনের বাহিনি- অরুপ বসু(শারদিয়া আজকাল,১৪০৫)
বিষয়: বিবিধ
১৮৬০ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বইটির নাম কি বলতে পারেন? পড়ার ইচ্ছা আছে।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
ভালো লাগলো লিখাটি। এবং লিখাটির অন্তর্নিহিত ভাবটুকুও বুঝে আসল।
শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সেই দিনের বৃটিশ শাসনেও এই সাহসি সৈনিকরা রাসুল (সাঃ) এর সন্মানে ও ভালবাসায় জিবন দিয়েছিল। ইনশাআল্লাহ এখনও তাদের উত্তরাধিকারিরা আছেন।
আপনার নাম আর প্রোপিক টাও একজন সৎ ও সাহসি মানুষের সাথে মিলে যায়।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
দোয়া করুন সেই অনুভুতি যেন দেশের সকলের মনে জাগ্রত হয়।
সুন্দর ঘটনা তুলে ধরার জন্য অনেক ধণ্যবাদ। এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি বিস্তারিত তুলে ধরে অনেক অজানা মানুষের জন্য জানার উৎস বানিয়ে দিলেল। আল্লাহ আপনার হায়াত বাড়িয়ে দিন। লিখনি শক্তিকে শানিত করুন। অনেক ধন্যবাদ
হুসাইন শহিদ সুহরাওয়ার্দি পাকিস্তানে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনিতির প্রবর্তক। নিজেও ধার্মিক ছিলেন না। কিন্তু রাসুল(সাঃ) এর অবমাননা তারও খারাপ লেগেছিল।
আমরা যেন আমাদের গেীরবময় অতিত থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
ঈদ মুবারক।
শুধু কথায় কাজ কি? তেল টা তেলেভাজার সাথে দেন!!!
বরং সত্য জানুন এবং অন্যদের জানান।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন