মির তকি মির। এক বিদ্ধস্ত নগরির কবি।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:০১:১৯ দুপুর
মির তকি মির।
এই নামটি প্রথম পড়ি খুশবন্ত সিং এর দিল্লি উপন্যাসে। উপন্যাসিক মির তকি মির কে কেন্দ্র করে উপস্থাপন করেছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব এর ইন্তেকালের পর ক্ষয়িষ্ঞু মোগল রাজধানি দিল্লির সামাজিক সাংস্কৃতিক অবস্থা কে। মোগল সাম্রাজ্য তখন তার গেীরবের সময় অতিক্রম করেছে। পশ্চিম থেকে আহমদ শাহ আবদালি এবং নাদির শাহ এর আক্রমন এবং পুর্ব দিকে বাংলা,বিহার,উড়িষ্যা তে ঘাটি গেড়ে বসেছে ইংরেজরা। এই সময় ও বাস্তবতার সাথে সম্পর্ক বিচ্যুত হয়ে দিল্লি-আগ্রা নিবাসি মুসলিম অভিজাত শ্রেনির জিবনের ভালবাসা ও যন্ত্রনাই হয়ে উঠেছে তার কবিতার উপজিব্য। উর্দু কাব্যের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ কবিদের তালিকায় মির এর অবস্থান উচ্চে। মিরের সময় ছিল যখন মোগল সাম্রাজ্য তার রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্ত ক্ষমতা ও ঐতিহ্য হারিয়ে একটি নিভুনিভু প্রদিপ। তাই তার কবিতায় বিরহের যন্ত্রনার উপস্থিতি বেশি। তার উত্তরসুরি মির্যা গালিব কিংবা দাগ দেহলভি সেই দিক থেকে ভিন্ন। উভয় ই ইংরেজদের পুর্ন সাংস্কৃতিক উত্থান দেখেছিলেন এবং নতুন যুগের সম্ভাবনার কথা ভেবেছিলেন।
মির তকি মির এর জন্ম ১৭২৩ সালে আগ্রায়। তার পিতা ছিলেন একজন সুফি সাধক। পিতা ও চাচার কাছেই তার কাব্য এবং শিক্ষার সুত্রপাত। কিন্তু কৈশোরেই পিতৃহারা হয়ে মির দিল্লিতে চলে যান। দিল্লিতে তার পিতার মুরিদদের সহায়তায় তিনি কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যাক্তির পৃষ্টপোষকতা লাভ করেন। তার কাব্য প্রতিভার উন্মেষ হয় তখনই। দিল্লিতে মুশায়রা বা কাব্য সভার মধ্যমনি হয়ে উঠেন তিনি। কিন্তু আহমদ শাহ আবদালি এবং নাদির শাহ এর আক্রমন এবং মারাঠাদের হাতে দিল্লি লুঠ হওয়ার সময় তার পৃষ্ঠপোষকদের অনেকেই মৃত্যুবরন করেন। এরপর ভগ্ন হৃদয় কবি দিল্লি ত্যাগ করে লাখনেীতে চলে যান। লাখনেী এর নবাব আসফউদ্দেীলা তাকে পছন্দ করলেও তার কবিতার প্রতি স্থানিয়রা পুরান ধরনের বলে মত প্রকাশ করে। অভিমানি কবি মনের দুঃখে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ত্যাগ করেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি একেএকে তার স্ত্রী,পুত্র,কন্যা সকলকে হারিয়ে একা হয়ে যান। ১৮১০ সালের ২১ এ সেপ্টম্বর কবি লাখনেীতে ইন্তেকাল করেন। তার কবরটি রেললাইন তৈরির সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
মির তকি মির গযল,মসনভি,রুবাই, কাসিদা সহ সবধরনের কাব্যই রচনা করেছিলেন। উর্দু ও ফারসি উভয় ভাষাতেই কাব্য রচনা করেছেন তিনি। "যিকরে মির" নামে নিজের আত্মজিবনি মুলক কাব্যও রচনা করেছেন তিনি। তার কবিতায় প্রধান নারি আর বিরহের গান। বিশেষ করে একটি উদ্ভ্রান্ত হৃদয় এর পরিচয় পাওয়া যায়। যে খুজে বেড়াচ্ছে তার প্রকৃত পথ।
নিজের হৃদয় যন্ত্রনা কে তিনি এভাবেই মুর্ত করে তুলেছেন।
আঁসু আঁখ মে কাব নেহি আতা
লহু আতা হ্যায় যাব নেহি আতা।
(আঁখিতে অশ্রু আসেনা কখন
আসেনা তখন রক্ত আসে যখন)
বাদ মরনে কি মেরে কবর পে আয়ি হে ও, মির
ইয়াদ আয়ে মেরি ঈসা কো দাওয়া মেরি বাদ।
(আমার মৃত্যুর পর কবরের পাশে এসেছিল সে,মির
যেন মৃত্যুর পর ঈসা নবি আমার জন্য এলেন।)
আজকে এই মহান কবির ২০৪ তম মৃত্যবার্ষিকিতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
তথ্যসুত্র ও কৃতজ্ঞতা
দিল্লি- খুশবন্ত সিং।(আনোয়ার হুসাইন মঞ্জু অনুদিত)।
দিওয়ান ই গালিব- মনিরুদ্দিন ইউসুফ অনুদিত।
কবি বুলবুল সরওয়ার।
উইকিপিডিয়া সহ অন্যান্য ওয়েব সাইট।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৬ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্বীয় প্রতিভা আর নান্দনিক সৃষ্টি কুশলতায় কবিরা স্হান-কাল-পাত্রের উর্ধ্বে উঠে আসেন।একজন মহান কবি কে পরিচয় করিয়ে দেয়ায় অনেক ধন্যবাদ আপনাকে.....।
মির তকি মির এর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
আমিন।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন