পশুবলি ও কুরবানি নিষিদ্ধ হলো ভারতের হিমাচল প্রদেশে।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:৩৭:০৩ সন্ধ্যা
এই বিষয়টি নিয়ে লিখার চিন্তা করেছিলাম আগেই। আজকে একটি খবর পড়েই লিখাটা জরুরি মনে হলো। খবরটি হলো ভারতের হিমাচল প্রদেশের হাইকোর্ট সেই রাজ্যে সকল ধরনের পশুবলি নিষিদ্ধ করেছে। সকল ধর্ম ও সম্প্রদায় ই এর আওতায় আসবে। অর্থাত মুসলিম দের জন্য ও কুরবানি দেওয়া নিষিদ্ধ। কয়েকজন ব্যাক্তির জনস্বার্থে(!) করা এই মামলায় হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্ট এর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনও কোন রাজনৈতিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হিমালয় পর্বতমালার কোলে অবস্থিত হিমাচল প্রদেশ এর বেশিরভাগ অধিবাসিই বিভিন্ন উপজাতিয় গোত্রভুক্ত। যাদের ধর্মাচরন এর অন্যতম অনুষঙ্গ পশুবলি। এই রাজ্যে মুসলিম অধিবাসির সংখ্যা ১.৫ শতাংশের মত যারা মুলত কাশ্মির সিমান্তে বসবাস করে। এই মামলা যারা করেছেন তাদের প্রধান যুক্তি ছিল পশুবলির বিভৎসতা এবং পরিবেশ নষ্ট করা। তারা এই সংক্রান্ত কিছু ছবি আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন এবং রায়ে বিচারপতিরা এই কথা স্বিকার করেছেন যে এই ছবিগুলি তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আবেগতাড়িত করেছে। এই সিদ্ধান্ত ভারতিয় সুপ্রিম কোর্টে টিকবে কিনা সেটা সন্দেহজনক । তবুও এই রায় এক যুগান্তকারি বলে পশুবলি বা কুরবানি কে বর্বর প্রথা বলে দাবি করার লোকের অভাব নাই।
ভারতে পশু অধিকার নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন হচ্ছে। একাধিকবার ভারতিয় আদালতে এই সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। তবে কোন ধর্মিয় সম্প্রদায় নয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সব মামলা থেকে রক্ষার জন্য টাকা ঢেলেছে ভারতের চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলি। চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। পশু বলি বা কুরবানি বন্ধ করলে এই শিল্পের কাঁচামাল যোগান বন্ধ হয়ে যাবে সেই সত্য ভারত সরকার ভালই বুঝে। তবুও ধর্মেও নামে পশু হত্যার বিরোধিতাও ভারতে যথেষ্ট শক্তিশালি। প্রধানত জৈন সম্প্রদায় যারা বেশ ধনি তারা সবধরনের পশু হত্যার বিরোধি। বৈীদ্ধরা রক্তপাত এর বিরোধি হলেও মাংস খেতে তাদের আপত্তি নাই। এমনকি ভিক্ষুরাও কোন গৃহে আমন্ত্রিত হলে মাংস গ্রহন করতে পারেন। এছাড়া বৈষ্ঞব রাও নিরামিশাষি হন। ভারতে পশু হত্যা বিরোধি বা পশু অধিকার আন্দোলন ও অনেক পুরান। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আছেন সঞ্জয় গান্ধির বিধবা স্ত্রি মেনকা গান্ধি। মেনকা গান্ধির উদ্যোগে একটি মামলা হয় যা ফলশ্রুতিতে ভারতিয় সুপ্রিম কোর্ট সার্কাসে পশুর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। এছাড়া কোন মিডিয়াতে শিকার বা চিড়িয়াখানা দেখান যাবেনা জাতিয় একটি নির্দেশ ও জারি করেন। ছায়াছবি বা টিভিতেও কোন পশুকে ব্যবহার না করার নির্দেশও দেন। এই নির্দেশ এর ফলে সত্যজিত রায় এর ফেলুদা সিরিজ এর ”রয়েল বেঙ্গল রহস্য” এর ক্লাইমেক্স এর দৃশ্যটি বদলে দিতে হয়েছে ছবি এবং কমিকস এ!! এছাড়া বর্তমানে নির্মানাধিন ”বাদশাহি আংটি” মুভিটিতেও উপন্যাস এর চিড়িয়াখানা টি থাকছেনা।
ভারতে এই আইন তৈরি বা বর্তমান পশু বলি বন্ধের পিছনে একটি বিশ্বব্যাপি সংস্থা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। সংস্থা টির নাম Peoples for ethical treatment of animals বা PETA। পেটা প্রতিষ্ঠা করেন ইনগ্রিড নিউকার্ক নামের এক মহিলা ১৯৮০ সালে। এই সংস্থার উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপি পশুদের প্রতি কঠোর আচরন রোধ করা এবং খাদ্য হিসেবে মাংস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। এই সংস্থাটি পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি পোষাক এর বিরুদ্ধেও কাজ করে। এই সংস্থাটির সাথে বেশ কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রি সহ তারকা জড়িত। পেটা তাদের কার্যক্রম এর জন্য অত্যন্ত বিতর্কিত একটি সংস্থা। চামড়া জাতিয় পোষাক এর বিরোধিতার নামে তারা সম্পুর্ন নগ্ন মডেল ব্যবহার করে প্রচারনা চালায়। তাদের একটি স্লোগান ই হচ্ছে ”র্যাদার গো নেকেড টু ওয়্যার ফার”। এই ভাবে তারা নগ্নতাকে প্রমোট করে যাচ্ছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক গবেষনা কাজে বাধা দেওয়া এমনকি সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরির জন্য ঘোড়া ব্যবহার কিংবা পশু থেকে ডায়াবেটিস রোগির প্রয়োজনিয় ইনসুলিন সংগ্রহে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আছে। পেটা প্রায়ই শিশুদের উদ্দেশ্য করে নগ্ন এবং কঠোর স্লোগান যুক্ত পোষ্টার তৈরি করে এবং প্রচারনা চালায়। পশুর দুধ ব্যবহার এর বিরুদ্ধেও এই প্রচারনা চালান হয়। পেটা স্টিভ আরউইন এর মত পরিবেশ সংরক্ষন বিদদেরও বিরোধি কারন তারা প্রয়োজনে শিকার এবং চিড়িয়াখানা কে সমর্থন করেন। ভারতে প্রায় বছর দশেক আগে থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ইতমধ্যে ভারতের বেশ কয়েকজন চিত্রাভিনেত্রি ও খেলোয়াড় এই সংস্থার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছে। যার মধ্যে প্রায় নগ্ন বিজ্ঞাপন ও রয়েছে। তাদের কার্যক্রম এখন ভারতে বেশ গতি পেয়েছে। অনেকেই অহিংসা বা এই ধরনের ভারতিয় আদর্শের কথা বলে তাদের সমর্থন করছেন। তবে প্রধানত ভারতিয় চামড়া শিল্পের জন্য তারা এখনও খুব বেশি সাফল্য লাভ করতে পারছেননা।
ভারতে জিম করবেট বা কেনেথ এন্ডারসন এর মত শিকারিরা ছিলেন। পরবর্তি যুগে ধৃতিকান্ত লাহিড়ি চেীধুরি(তিনি বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার অধিবাসি) এর মত হাতি শিকারি ও পশু সংরক্ষনবিদ ও আছেন। এরা পশু শিকার যেমন করেছেন তেমনই এর সংরক্ষনেও সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশেও এখন কিছু পশু প্রেমির উদ্ধব হয়েছে যারা যারা প্রতিবছর শিতের আগমনের সাথে সাথে অথিতি পাখি অথিতি পাখি বলে ধুয়া তুলেন। এই কেতাবি পরিবেশবিদ বা প্রানিপ্রেমি রা জানেন না এই পাখিগুলি এই সময় এই দেশে না আসলে বাঁচবে না আর এটি আমাদের দেশের পরিবেশ এর একটি অংশ। ভারতেও এখন এই ধরনের তথাকথিত পশুপ্রেমিরা তাদের শক্তি বৃদ্ধি করছে। এরা দরিদ্র জনগনের সস্তায় প্রোটিন এর কথা ভাবেননা। এই আন্দোলনে লিপ্ত সকলেই উচ্চ বা মধ্যবিত্ত শ্রেনির।
হিমাচল প্রদেশের হাইকোর্ট এর এই রায় কতদিন বজায় থাকে সেটা দেখার বিষয়। কিন্তু যে ধর্মই হোক আইন করে ধর্মাচরন কে নিয়ন্ত্রন এর চেষ্টা করা ভুল। যদি পরিবেশ ই চিন্তার কারন হতো তাহলে প্রয়োজনিয় কসাইখানা তৈরির আদেশ দেয়া যেত কিংবা কসাইখানা ছাড়া জবাই করা যাবেনা এই নির্দেশ ও দেয়া যেত। স্রেফ আবেগআক্রান্ত হয়ে বিচারকরা যে রায় দিলেন মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং জিবন যাপনের সাথে তা কি আদেী সংগতিপুর্ন????
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৬ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Thank you for the comment.
ওই রাজ্যের সব মানুষ তো দায়ি নয়।
কেবল তো শুরু, সামনে অনেক বাকি
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আপনার পোষ্ট থেকে অনেক কিছু জানলাম। চমৎকার লিখেছেন। ধর্মকে জগতের আইনে বাঁধা যাবে না। কোন কালেই যায়নি।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
তারা কুরবানি বন্ধ করলেও বাংলাদেশে ঠিকই গরু চালান দিচ্ছে! তবে পাকিস্তানে তারা গরু রপ্তানি করেনা কারন পাকিস্তানি গরু অারো ভাল জাতের! এই রায়ের পিছনে আসলে কিছু মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের চিন্তাধারা অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চায়।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যটির জন্য।
কিন্তু এই পোষ্টটি নিয়া কোন মন্তব্য তো করলেন না!!!
তবে মানুষ মারা বৈধ!!!!
লেখা থেকে অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
তবে পেটা জাতিয় সংস্থাগুলি পশু অধিকার এর নামে মানুষ এর স্বাভাবিক খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন করতে চাচ্ছে।
কিছু মানুষের ভুল সিদ্ধান্ত সবার উপর চাপান হচ্ছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন