"ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে" চির নতুন এক গান।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৮ জুলাই, ২০১৪, ০৯:২২:০৮ রাত
"ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে" জাতিয় কবি কাজি নজরুল ইসলামের এই চিরনতুন গানটি ছাড়া আমাদের ঈদ যেন অকল্পনিয়! এই গানটির মত ঈদের আদর্শকে ধারন করে আর কোন গান বা কবিতা বাংলা ভাষায় আজো রচিত হয়নি। তাই প্রায় আশি বছর পরেও এখনও এই গানটিই রয়েগেছে ঈদের সকলের হৃদয়ে। গানটি প্রথম রেকর্ড করেছিলেন সুর সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদ। মুলত তারই অনুরোধে এই গানটি লিখেছিলেন নজরুল ইসলাম। আব্বাসউদ্দিন তার আত্মজিবনি "আমার শিল্পি জিবনের কথা" তে সেই ইতিহাস এর বিবরন দিয়েছেন।
তখনও বাংলাভাষায় ইসলামি গান এর প্রচলন হয়নি তবে উর্দু নাত ও কাওয়ালির বেশ প্রচলন ছিল। আব্বাসউদ্দিন আহমদ ও কিছু উর্দু কাওয়ালি গেয়ে রেকর্ড বের করেছিলেন। এই সময় তার চিন্তা আসে যে উর্দু কাওয়ালি প্রচুর বিক্রি হলে বাংলা ভাষায় ইসলামি গান রচিত হতে পারবেনা কেন। নজরুল তখন গ্রামোফোন কোম্পানির প্রধান গিতিকার এবং প্রশিক্ষক। তিনি একদিন নজরুল কে বললেন সে কথা। নজরুল ইসলাম এর মনে দোলা দেয় তার কথাটি। তিনি ইসলামি গানের রেকর্ড বের করার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করার জন্য আব্বাসউদ্দিন কে অনুরোধ করেন। আব্বাসউদ্দিন এর প্রথম অনুরোধ গ্রামোফোন কোম্পানি গ্রহন করেনি। বলেছিল এই গান চলবে না। ছয়মাস চেষ্টা চালিয়ে আব্বাস উদ্দিন কোম্পানিকে পরিক্ষামুলক একটি রেকর্ড বের করতে রাজি করাতে সক্ষম হন। সম্মতি পাওয়া মাত্র একই অফিসে উপস্থিত কবি কাজি নজরুল ইসলামের কাছে যান তিনি। নজরুল কোম্পানির সম্মতির কথা শুনেই এককাপ চা আর এক ঠোঙ্গা পান নিয়ে দরজা বন্ধ করেন। মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যেই লিখে শেষ করেন তার অবিষ্মরনিয় এই গানটি। পরের দিন লিখেন আরেকটি কালজয়ি গান "ইসলামের ওই সওদা লয়ে"। দেরি না করে মাত্র চার দিনের মাথায়ই সুর করে রেকর্ড করা হয় গান দুটি আব্বাস উদ্দিন আহমদ এর কন্ঠে। সে বছরই ঈদ-উল ফিতর এর সময় প্রকাশিত হয় রেকর্ড টি।
প্রকাশিত হওয়া মাত্রই বিপুল জনপ্রিয়তা পায় রেকর্ডটি। আব্বাসউদ্দিন আহমদ এর লিখায় কেবল একটি দোকানেই দুইহাজার কপি রেকর্ড বিক্রয় হয়! নজরুল আব্বাস উদ্দিন কে দেখেই তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
সেই থেকে এখনও এই গানটি ছাড়া যেন অসম্পুর্ন আমাদের ঈদ। নজরুল ইসলাম-আব্বাসউদ্দিন সেদিন অধঃপতিত মুসলিম সমাজ কে যে নব উন্মাদানায় জাগিয়ে তুলেছিলেন আফসোস আজকে আমরা তার উত্তরাধিকার বহন করতে ব্যার্থ হয়েছি।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।
যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী
সেই গরীব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
ঢাল হৃদয়ের তশতরীতে শিরনি তৌহিদের,
তোর দাওয়াত কবুল করবেন হজরত হয় মনে উম্মীদ।
তোরে মারল' ছুঁড়ে জীবন জুড়ে ইট পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তোলরে গড়ে প্রেমেরই মসজিদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৩ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ছোটবেলার অস্থির অবস্থার কথা মনে পড়লো ওদের বোমাবাজির আওয়াজে ...
ঈদ মুবারক
ছেলেবেলার কথা ঈদে বোধ হয় সবারই মনে হয়।
ধন্যবাদ।
EID MUBARAK
ঈদ-- মোবারক ভাইয়া ।
ও বিশ্বের সকল মুসলিমদের শান্তিও কল্যাণ কামনা করছি ।
ঈদ মুবারক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন