সূরা আল-মূমিনুন এর প্রথম এগারটি আয়াতের আলোকে মুমিনের গুনাবলি।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০২ জুলাই, ২০১৪, ০৩:৪৪:১৮ দুপুর
আমি যদিও এর যোগ্য নই তবু এই আলোচনাটি লিখলাম। আল্লাহতায়লা কুরআন শরিফ এ এটা বলেছেন তিনি তা সকলের জন্যই সহজ করেছেন। আমি আমার জ্ঞানে যতটুক বুজেছি তাই লিখলাম। আলোচ্য আয়াতগুলির তর্জমা গুলি হাফিজ মুনিরুদ্দিন আহমদ এর ”কুরআন শরিফের সরল বাংলা অনুবাদ” অনুসারে লিখা। ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আলোচনাটুকু মুফতি মুহাম্মদ শফির ”তাফসিরে মায়ারেফুল কুরআন” আল্লামা ইউসুফ আলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং সাইয়েদ কুতুব শহিদ এর ”তাফসির ফি জিলালিল কুরআন” এর অবলম্বনে লিখা।
সূরা আল মুমিনুন কুরআন শরিফের ২৩ তম সূরা। এটি মক্কায় অবতির্ন। সম্ভবত রাসুল সাঃ এর মক্কি জিবনের মধ্যম সময়ে এই সূরার আয়াতগুলি নাজিল হয়েছে। যে সময় মক্কার মুসলিম রা কাফির দের বিরোধিতার প্রচন্ডভাবে সম্মুখিন। মুসনাদে আহমদ এর এক রেওয়ায়েত অনুযায়ি হযরত উমর ফারুক (রাঃ) এর থেকে বর্নিত আলোচ্য আয়াতগুলি নাজিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন যে কেউ যদি এই দশটি আয়াত পুরাপুরি অনুসরন করে তবে সে জান্নাতে যাবে। সুনানে নাসায়ি তে একটি সুত্রে বর্নিত হয়েছে যে উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়শা (রাঃ) কে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্র সম্পর্কে । তিনি উত্তর দেন তার চরিত্র বা স্বভাবগত অভ্যাস কুরআনে বর্নিত আছে। এরপর তিনি এই দশটি আয়াত তিলওয়াত করে বললেন যে এগুলিই ছিল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্র ও অভ্যাস।
সুরা আল-মুমিনুন এর ১-১১ তম আয়াত গুলির বাংলা তরজমা।
{১} নিঃসন্দেহে( সে সব) ঈমানদার মানুষেরা মুক্তি পেয়ে গেছে।
{২} যারা নিজেদের নামাজে একান্ত বিনয়ানত (থাকে)।
{৩} যারা অর্থহিন( বিষয় )থেকে বিমুখ থাকে।
{৪} যারা (রিতিমত) যাকাত প্রদান করে।
{৫} যারা তাদের যেীন অঙ্গ সমুহের (যথাযথ) হেফজত করে।
{৬} তবে নিজেদের স্ত্রী এবং নিজেদের অধিকারভুক্ত(দাসি) দের উপর(এটা প্রযোজ্য) নয়,(এখানে হেফাজত না করা হলে এ জন্য) তারা কখনও নিন্দনিয় হবেনা।
{৭} অতঃপর এই (বিধিবদ্ধ উপায়) ছাড়া কেউ অন্য কোন (পন্থা দ্বারা যেীন কামনা চরিতার্থ করতে) চায়, তাহলে তারা সীমালংঘনকারি (বলে বিবেচিত) হবে।
{৮}যারা তাদের (কাছে রক্ষিত) আমানত ও(অন্যদের দেয়া) প্রতিশ্রুতি সমুহের হিফাজত করে।
{৯} যারা নিজেদের নামাজ সমূহের ব্যাপারে(সমধিক) যত্নবান হয়।
{১০} এই লোকগুলিই হচ্ছে (যমিনে আমার যথার্থ) উত্তরাধিকারি।
{১১} জান্নাতুল ফিরদাউস এর উত্তরাধিকারও এরা পাবে , তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।
সূরা আল মুমিনুন এর নামের মধ্যেই এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। এই সূরার বিষয়বস্তু শুরু হয়েছে মুমিনদের গুনাবলি কি হওয়া উচিত তার বিবরন দিয়ে। এরপর প্রকৃতির মধ্যে ছড়িয়ে থাকা উদাহরন এবং পুরান কালের মানুষদের সম্পর্কে আলোচনা করে ঈমানের ব্যখা ও প্রমান উত্থাপন করা হয়েছে এবং সন্দেহ ও সংশয় নিরসন করার জন্য প্রশ্নাবলির জবাব দেয়া হয়েছে।
এই সূরার প্রথম এগারটি আয়াতে যে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে তা হচ্ছে একজন মুমিনের মধ্যে যে সকল গুনাবলি থাকা আবশ্যক। সংক্ষেপে এই গুনাবলি গুলি হলো।
একজন মুমিন নামাজে মনযোগি হবেন এবং একান্ত বিনয় এবং মনোযোগের সাথে নামাজ আদায় করবেন। তিনি অপ্রয়োজনিয় কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবেন। যাকাত আদায় করবেন। যেীনকামনার ক্ষেত্রে কোনভাবেই সীমালংঘন করবেননা। কেবল মাত্র বৈধ স্ত্রীই এর জন্য একমাত্র উপযুক্ত। প্রতিশ্রুতি ও আমানত রক্ষা করবেন। এবং শুধু নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেই নয় ওয়াক্ত অনুযায়ি প্রত্যেক নামাজ সময়মত আদায় করবেন।
প্রথম আয়াতেই আল্লাহতায়লা এই গুনাবলির অধিকারিদের মুক্তি প্রাপ্ত অর্থাত জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বলে ঘোষনা দিয়েছেন। আর শেষ দুই আয়াতে মহান আল্লাহতায়লা এই গুনাবলির আধিকারিদের পৃথিবী ও জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারি বলে ঘোষনা দিচ্ছেন। এই উভয় ঘোষনাই আল্লাহতায়লার পক্ষ থেকে ওয়াদা। যা অবশ্যই সত্য। মুমিনদের আল্লহতায়লা যমিনে তাদেরকে যথার্থ উত্তরাধিকারি এবং আখিরাতে জান্নাতুল ফিরদাউস এর চির কালিন বাসিন্দা হিসেবে রাখার ওয়াদা করছেন।
এই গুনাবলিসমুহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সময় সাপেক্ষ। আমরা সংক্ষেপে এটুকু বলতে পারি আল্লাহতায়লার ওয়াদা মত জান্নাতুল ফিরদাউস এর উত্তরাধিকারি হওয়ার জন্য আমাদের মনযোগি হতে হবে সময়মত নামাজ আদায় এর প্রতি এবং এই নামাজ হতে হবে বিনয় ও নম্রতা সহকারে এবং পরিপুর্ন খুফু সহকারে। যাকাত এর ক্ষেত্রে সাহেবে মাল অর্থাত যাকাত প্রযোজ্য হওয়ার মত সম্পদ এর মালিক হলে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে একজন মুমিন অবশ্যই এই বিষয়ে সাবধান থাকবেন। মুমিনের অন্যতম গুনাবলি হবে অপ্রয়োজনিয় কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। কারন এই অপ্রয়োজনিয় কথা ও কাজ মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং ভুল চিন্তার দিকে নিয়ে যায়। আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার ক্ষেত্রেও পরিপুর্ন যত্নবান হওয়া একজন মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। এই আমানত এর অর্থ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও বটে। মুমিনের জন্য অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে যেীন কামনা পুরনের জন্য সে কোনভাবেই সীমা লংঘন করবেনা। কেবল মাত্র বৈধ স্ত্রীর(বা স্বামির) সাথেই সে তার কামনা পুরন করবে। ইসলাম যেহেতু একটি পরিপুর্ন জিবন বিধান এটি মানুষের স্বাভাবিক কামনা কে অস্বিকার করেনা বা মানুষকে তার ঈমানের প্রমানের জন্য সন্যাসি এবং দুনিয়ার প্রতি উদাসিন হয়ে যেতে বলেনা। বরং তার নির্দৃষ্ট সীমার মধ্যেই তার জন্য প্রয়োজন পূরন এর ব্যবস্থা রাখে।
এই আয়াতগুলির থেকে যে শিক্ষা আমরা পাই তা হচ্ছে এই আয়াতে উল্লেখিত গুনাবলি অর্জন করার চেষ্টা করা সকল মুসলিম এর জন্য কর্তব্য। আসুন আমরা এই পবিত্র রমজান মাসে একজন মুমিনের গুনাবলি অর্জনে সচেষ্ট হই।
বিষয়: বিবিধ
৬৪৭০ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
জলদি পাঠিয়ে দেন ভাই। গত দুইদিন বেশ অসুস্থ ছিলাম। আল্লাহর রহমতে এখন সুস্থ।
ধন্যবাদ মন্তব্যকরার জন্য।
ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
দাসীদের সাথে বিয়ে বহিঃভুত যৌনতার বিধান বাংলাদেশে চালু করা যাবে কি?
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন