২৩ জুন ১৭৫৭। পলাশির পুর্বাপর।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৩ জুন, ২০১৪, ০১:০৬:৫৯ দুপুর
২৩ শে জুন ১৭৫৭ সাল।
শুধু আমাদের ইতিহাসে নয় বরং পৃথিবীর ইতিহাসেই একটি গুরুত্বপুর্ন দিন। এই দিন এই ভারতিয় উপমহাদেশে নিশ্চিত হয় বৃটিশ দের ওপনিবেশিক শাসন। যদিও বাংলা দখল (তাও পুরোপুরি নয়) করার আগে কর্নাটকের এবং মাদ্রাজ এর নিয়ন্ত্রন নিয়েছিল বৃটিশ রা। কিন্তু সেখানের প্রশাসনিক বা ষ্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব বাংলার ন্যায় ছিলনা। তৎকালিন বাংলা ছিল উপমহাদেশের সম্বৃদ্ধতম প্রদেশ। আর এই প্রদেশের আয় দিয়েই বৃটিশরা বিস্তার করে তাদের সাম্রাজ্য। পলাশির যুদ্ধ দিয়ে শুরু হলেও এই অঞ্চলে বৃটিশ শাসন পুর্নতা লাভ করে উদয়নালা ও বক্সার এর যুদ্ধের মাধ্যমে। শায়েস্তা খানের সময়ই একবার ইংরেজরা বাংলা দখল এর উদ্যোগ নিয়েছিল।এই উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম দখল করার জন্য সরাসরি ইংল্যান্ড থেকে এডমিরাল নিকলসন এর নেতৃত্বে একটি নেীবহর প্রেরন করা হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম ও হুগলি উভয় জায়গাতেই পরাজিত হয় তারা।
২৩ শে জুন ১৭৫৭ সালে শাসন ক্ষমতা বৃটিশ এবং তাদের অনুগত হিন্দু জমিদার বর্গের হাতে চলে গেলেও এর প্রক্রিয়া কিন্তু শুরু হয়েছিল আরো আগে থেকে। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগির এর শেষ জিবনে বাংলা ও উড়িষ্যার নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলি খান। নবাব শায়েষ্তা খানের সুশাসনে তার পূর্বের বাংলা যে সম্বৃদ্ধ অবস্থায় উন্নিত হয়েছিল তার পরবর্তি আজিমুসশান এবং ইব্রাহিম খানের আমলে তার পতন হয়েছিল। মুর্শিদকুলি খান এই অবস্থা থেকে উত্তরনে যে ব্যবস্থা নেন তার মধ্যে ছিল পুরাতন জমিদারদের বদলে নতুন জমিদার নিয়োগ। তবে একটি কথা জানা থাকা দরকার মোগল জমিদাররা বৃটিশ আমলের জমিদার দের মত জমির মালিক ছিলেননা। তারা ছিলেন রাজস্ব আদায় এর ইজারাদার। মুর্শিদকুলি খানের এই নিতির কারনে সৃষ্টি হয় অনেক হিন্দু জমিদারের। প্রদেশের ব্যবসাবানিজ্য বৃদ্ধির জন্য তিনি ব্যংকিং ব্যবসার উন্নয়নের সুযোগদেন। এর ফলে মাহতাব চাঁদ এর নেতৃত্বে শেঠ উপাধিধারি মহাজনরা খুবই শক্তিশালি হয়ে উঠে। মাহতাব চাঁদের উপাধি হয় জগতশেঠ।
এই হিন্দু জমিদার মহাজন শ্রেনি হয়ে উঠে দেশের কিংমেকার চক্র। এই চক্রের ষড়যন্ত্রেই নবাব মুর্শিদকুলি খানের মৃত্যুর পর তার ইচ্ছা অনুযায়ি তার নাতি সরফরাজ খানের পরিবর্তে জামাতা সুজাউদ্দেীলা নবাব হন। সুজাউদ্দেীলার ইন্তেকালের পর সরফরাজ খান নবাব হলেও এই কিংমেকার শ্রেনি তার পরিবর্তে তার সেনাপতি এবং তৎকালিন বিহারের শাসক আলিবর্দি খান কে নবাব করার উদ্যোগ ন্যায়। তারা মিথ্যা সংবাদ দেয় যে আলিবর্দি খানের পরিবারকে মুর্শিদাবাদে বন্দি করা হয়েছে। উভয়ে ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন এবং সরফরাজ খান ইন্তেকাল করেন। আলিবর্দি খান ক্ষমতা হাতে নিয়েই বুঝতে পারেন তিনি জগতশেঠ দের ক্রিড়নক। তিনি তাদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেও পারেননি। অন্যদিকে স্থলপথে মারাঠা বর্গিদের আক্রমন তাকে আভ্যন্তরিন ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতকদের মুকাবিলা করার সময় দেয়নি। মৃত্যুর আগে তিনি তার নাতি নবাব সিরাজউদ্দেীলাকে ইংরেজদের সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে যান।
নবাব সিরাজউদ্দেীলা সিংহাসনে বসেই দেখতে পান তিনি ষড়যন্ত্রকারিদের দ্বারা বেষ্টিত। এর মধ্যেও তিনি অল্প সময় এর ভিতরে ইংরেজদের প্রধান ঘাঁটি কলকাতা আক্রমন করেন। ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে তিনি মানিক চাঁদকে প্রশাসক নিয়োগ করেন। এরপর রাজধানি মুর্শিদাবাদে ফিরে এসে বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করতে করতেই মানিকচাঁদ কলকাতা আবারও ইংরেজদের হাতে তুলে দেন্। বাধ্য হয়েই নবাব আভ্যন্তরিন সমস্যা বাদ দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারিদের হাতে পরাজিত হন ২৩ শে জুন ১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তরে।বাংলার স্বাধিনতা এমনকি পুরা ভারতবর্ষের স্বাধিনতা ইংরেজদের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়।
সিরাজের বিরোধি ঐতিহাসিকরাত বটেই অনেক মুসলিম ঐতিহাসিক ও সিরাজউদ্দেীলার সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা ও অযোগ্যতার অভিযোগ আনেন। কিন্তু মাত্র ২৩ বছর বয়সি নবাব অনভিজ্ঞ ছিলেন বটে কিন্তু অযোগ্য ছিলেন বলে মনে হয়না। অল্প সময় এর মধ্যে কলকাতায় অভিযান চালান তার যোগ্যতারই প্রমান। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারিদের জাল এতই বিস্তৃত ছিল যে তিনি তা নষ্ট করতে পারেননি। জগতশেঠ,রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ দের হিন্দু শাসন ফিরিয়ে আনার ইচ্ছা আর মিরজাফর দের ক্ষমতার লোভ উভয়ই ব্যর্থ হয়। আর সফল হয় ইংরেজরা। পরবর্তি ১৯০ বছর তারা শোষন করে এই ভারতবর্ষ কে। নেপোলিয়ন এর কাছে পরাজয় সহ ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধ,এবং দুটি মহাযুদ্ধের ধাক্কা সামলায় ইংল্যান্ড মুলত এই ভারতবর্ষের অর্থে। সব ধরনের দুর্নিতি ও অত্যাচারের আশ্রয় নিয়ে এই দেশের সম্পদ লুন্ঠন করে দাগাবাজ ইংরেজ শ্বেতাঙ্গরা যারা এখন আবার বিশ্বকে শান্তি আর মানবাধিকার এর সবক দেয়ার চেষ্টা করে। ইংরেজেদের চরিত্র বুঝান যায় সৈয়দ মুজতাবা আলির একটি গল্প দিয়ে।
দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ লাগার খবর শুনে এক বুড়ো শিখ মেজর জিজ্ঞেস করলেন,"কে কার বিরুদ্ধে লড়ছে?"
"ইংরেজ-ফরাসি জার্মানির বিরুদ্ধে।"
সর্দারজি আফসোস করে বললেন. "ফরাসি হারলে দুনিয়া থেকে সৈীন্দর্যের চর্চা উঠে যাবে আর জার্মানি হারলেও ক্ষতি, কারন জ্ঞানবিজ্ঞান কলা কেীশল মারা যাবে।" কিন্তু ইংরেজ হারা সম্বন্ধে সর্দারজি চুপ।
"আর যদি ইংরেজ হারে?"
সর্দারজি দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন," তবে দুনিয়া থেকে বেঈমানি লোপ পেয়ে যা্বে।"
বিষয়: বিবিধ
১৫৫০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একদিনের জন্যও যদি স্মরন করা যায় তাহলেও তার প্রভাব সারা বছর থাকার ব্যবস্থা করা যায়।
the problem is our rulars never takes lesson from hystory
মুজিব নগরের আমবাগানে বসে যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাকে শাসন করবে। তারাও বাংলা শাসনের সুযোগ পায়নি।
বর্তমান বাংলাকে শাসন তারাই করছে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের ব্যবসা করেছে কিন্তু শাসক পর্যায়ের কেউ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধে যার ন্যূনতম কোন অংশ গ্রহনই নেই তিনিই হয়েছেন জাতির প্রধান কর্ণধার!
ফলে মীরজাফরেরা কোনদিন নিঃশেষ হয়নি এবং মাতৃভূমি বিক্রি করে দেবার প্রবণতাও শেষ হয়নি। অনেক ধন্যবাদ
মিরজাফর বা তার পৃষ্টপোষক জমিদার মহাজন শ্রেনির উত্তরাধিকারিরাই এখনও এই দেশকে শোষন করছে। তাদেরকে চিনেও ঐক্যের অভাবে আমরা কিছু করতে পারছিনা।
সর্দারজি দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন," তবে দুনিয়া থেকে বেঈমানি লোপ পেয়ে যা্বে।"
সঠিক কথা বলেছেন। আধুনকি যুগে যত ধরনের মোনাফিকি, বেঈমানী, নাফরমানী, হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংশ লীলা, মানবতার বিপর্যয় ঘটেছে তার পেছনে বৃটিশ ইংরেজ এবং তার এক সময়ের প্রসবকৃত বর্তমানের একমাত্র পরাশক্তির দাবীদার আমেরিকা।
ধন্যবাদ।
মিডিয়াতে আজকে একটি দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকিকে যত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ততটা পলাশিকে দেওয়া হচ্ছেনা।
আমাদের অসচেতনতা আমাদের ক্ষতির কারন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন