ডেড সি এবং কওমে লুত এর পরিনিতি
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৩৫:১৯ রাত
একটি কেীতুক শুনেছিলাম অনেক ছোট বেলায়।
এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সাথে চাপাবাজি করছে যে তুমি কি সুয়েজ খালের কথা শুনেছ আমার বাবা সেটি খনন করেছেন। দ্বিতিয় বন্ধু আরেক কাঠি উপরে। জবাব দিল তুমি কি মৃত সাগরের নাম শুনেছ আমার বাবা সেটি খুন করেছেন।
মৃত সাগর বা "ডেডসি" এর কথা প্রথম সেই কৈীতুক এ শুনি। এর পর হযরত লুত(আঃ) এর জীবনিতে পড়ি এই এলাকার কথা যে এলাকাকে আল্লাহতায়লার হুকুম অমান্য করায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। ছোটদের জন্য সেই বইয়ে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। আরো অনেক পরে জানতে পারি লুত(আঃ) এর কওম কি সিমালংঘন করেছিল।
ডেড সি বা মৃত সাগরের অবস্থান জর্দান ও ফিলিস্তিন এর মাঝে ৩১ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ্ এবং ৩৫ ডিগ্রি পুর্ব দ্রাঘিমাংশকে কেন্দ্র করে। এটি পৃথিবীর নিচুতম এলাকা যা সি-লেভেল থেকে প্রায় ৪০০ মিটারের ও বেশি নিচে। সর্বোচ্চ প্রায় ৩০৬ মিটার গভির এই লেক এর আয়তন প্রায় ১৬০০০ বর্গ মাইল। এর পানিতে লবনাক্ততার পরিমান প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ। এই কারনে এই পানিতে কোন উদ্ভিদ বা প্রানি জীবন ধারন করতে পারেনা। স্বাভাবিক ভাবেই এর আশেপাশেও কোন বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে উঠতে পারেনি। যে কারনে এই এলাকাটি হয়ে উঠে একটি মৃত এলাকা। যার থেকে দেয়া হয় এর উপযুক্ত নাম "ডেড সি" বা "মৃত সাগর"। এখনও কিছু লবন এর কারখানা ও পর্যটক দের জন্য রিসোর্ট ব্যাতিত কোন বসতি এই এলাকাতে নাই। অত্যধিক লবনযুক্ত এই সাগরের পানি বাত সহ কয়েকটি রোগের জন্য ভাল বলে বিবেচিত হয়। এই পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারনে সহযে কোন কিছু এর মধ্যে ডুবে যায়না্।
কুরআন শরিফে এই এলাকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। হযরত লুত(আঃ) এই এলাকার জন্য নবি হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন।
সুরা আশ-শুয়ারা,সুরা আনকাবুত ও সুরা আরাফ সহ কয়েকটি সুরাতে এই কাহিনি বর্নিত হয়েছে। এই এলাকার বসবাসকারিরা এমন সব পাপকর্মে লিপ্ত হয়েছিল যা আর কোন জাতির মধ্যে এর আগে দেখা যায়নি। এর মধ্যে ছিল সমকামিতা,রাহজানি এবং প্রকাশ্য মজলিশে অশালিনতা।
হযরত লুত (আঃ) তাদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করলেও তারা তা মানেনি উল্টা হযরত লুত(আঃ) কে হুমকি দেয় যে তিনি নবি হলে যেন গজব এনে দেখান। শেষ পর্যন্ত তারা এই কাজে লিপ্ত থাকলে আল্লাহতায়লা লুত(আঃ) কে তার অনুসারিদের সহ এই এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেন এবং ফেরেশতারা এই এলাকার ভুমিকে উঠিয়ে উপুর করে ফেলে এবং এর উপর প্রস্তর বর্ষন এর মাধ্যমে সম্পুর্ন ধ্বংস করা হয়। এরপর সেখানে সৃস্টি হয় এই সাগরের যা মানুষের জন্য নির্দশন হিসেবে আল্লাহতায়লা রেখেছেন।
কিন্তু মানুষের দুর্ভাগ্য আমরা কখনই আল্লাহতায়লার এই সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহন করছিনা
আত্মপরিচয়ে বা আত্মপ্রকাশে গোলমাল, বিচ্ছিন্নতা-একাকীত্ব, ব্যক্তিত্বের গোলমাল, আচরণগত সমস্যা, অসহ্য মানসিক চাপ, মনের স্বাভাবিক অবৃদ্ধি, ভীতি, আবেগে গোলমাল, অবদমিত কাম ইত্যাদি বিভিন্ন রকম মানসিক অসুস্থতা বা মস্তিষ্ক কোষের গঠনগত, হরমোনগত ত্রুটি বা বৈচিত্র, হাইপথ্যালামাস ও কিছু মস্তিষ্ক কোষের ক্রিয়াকর্মের ধরণবৈচিত্র অথবা রোগে ভুগে উক্ত শারীরিক-মানসিক অবস্থা ইত্যাদি থেকে সমকামি চিন্তা হতে পারে।
এরসঙ্গে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের পারিবারিক, শিক্ষালয়, কর্মস্থল, প্রতিবেশের আবহ, বইপত্র, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন, টিভি, পর্ণোচিত্র, বিকৃত যৌন চিন্তা চর্চা ও প্রচার, ভোগবাদের হাতছানি, ভাববাদের পাগলামী, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের চিন্তাজঞ্জাল, বিভিন্ন “অধিকার বোধ” নিয়ে বিকৃত চিন্তা ইত্যাদি অপসংস্কৃতির লাগাতার প্রচার-অপপ্রচার ব্যক্তিমনে প্রভাব ফেলছে। তৈরি হচ্ছে সমকামি চিন্তা ও অজাচার। প্রকৃতপক্ষে এই প্রচারনার পিছনে রয়েছে পুজিবাদি বাজারি মানসিকতা। যেখানে মানুষের জিবনটিও পন্য্।
বাংলাদেশে নাকি প্রথমবারের মত ১লা বৈশাখ সমকামিদের প্রকাশ্য একটি র্যালি হয়েছে। আমরা অনেক আগেই লুত এর কওম এর দুটি অপরাধ রাহজানি এবং প্রকাশ্য অশ্লিলতাকে দেখেছি। এখন বোধহয় এর মাধ্যমে আমরা সেই কওম এর সর্বোচ্চ অপরাধটিকেও বৈধতা দিতে যাচ্ছি। এটা ঠিক যে আমাদের দেশেও সমকামিতার অস্তিত্ব আছে। কিন্তু তা আইন বা সমাজ কোনভাবেই স্বিকৃত নয়।
মৃত সাগরের বিশাল উদাহরন থাকা সত্বেয় এই দেশে কিভাবে এই ধরনের কান্ড হতে পারে তা আমার চিন্তা্য় আসছেনা। এদেরকে শক্ত ভাবে এখনই প্রতিরোধ করতে হবে। নাহলে আমাদের পরিনিতিও কওমে লুত এর চেয়ে ভাল কিছু হবেনা।
প্রথম ছবিটি মৃত সাগরের জর্দানি অংশের একটি ছবি।
স্যাটেলাইট থেকে তুলা ডেড সি অঞ্চল।
বিষয়: বিবিধ
২৭৩৩ বার পঠিত, ৬০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রেড সি'র কাছা কাছি বসে ডেড সি'র কাহিনি পড়ে অনেক জানতে পারলাম । আন্তরিক ধন্যবাদ রিদওয়ান কবির সবুজকে, এই অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা মুলক পোস্টের জন্য
আওয়ামী সরকার এর সেনিটি কি উগান্ডা সরকারের উপরে আছে যে - একটা স্ট্যান্ড নেবে - যেখানে আমরা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ট্যান্ড জানি।
আমরা নামমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত বলেই মনে হচ্ছে। না হলে এইরকম মিছিল এই দেশের মাটিতে হয় কি করে?
আপনার কলমকে আর ও শানিত করুন
আমিন।
কিন্তু এই সাগরই যে সেই এলাকা, সেটা কি কোরআনে আছে?
এটা অনেক ঐতিহাসিক এর ধারনা, যার কোন অকাট্য প্রমান নেই।
আমাদের অবশ্যই এদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন,
এই অপকর্ম রুখার শক্তি দান করুন।
ধন্যবাদ, সময়োপযোগী লেখা ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
একটা সময় হয়তো আইন করে তাদের সার্বজনীন বৈধতা ও দেয়া।
আজ যারা বিপক্ষে অবস্থান নেবে তারা হবে সেকেল মানসিকতার আর শুয়োরগুলি হবে প্রগতির বাহক।এভাবে এগিয়ে যাবে প্রিয় স্বদেশ .
কারো চোখে উন্নতি কারো চোখে ধ্বংসের দিকে...........
ভয়ংকর!!!প্রয়োজন সচেতনতা,কাউন্সেলিং ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি!!
আমাদের সচেতন হতে এবং সচেতন করতে হবে।
সব ধরণের পাপাচারের মাধ্যমে আমরাই সমাজটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন।
আমিন।
এদেরকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।
আমরা এখুনি সচেতন না হলে আমাদের পরিনিতি ও তাদের মতই হবে।
‘ফী আদনাল আরদ’ বলে আল্লাহতা‘আলা গোটা ভূ-মন্ডলের যে স্থানটিকে সর্বনিম্ন অঞ্চল বলেছেন তা ছিলো সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জর্ডানের পতিত ‘ডেড সী’ এলাকা। এ ভূখন্ডেই ৬২৭ খ্রীস্টাব্দে রোমানরা ইরানীদের পরাজিত করে। মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কৃত ভূ-জরিপ অনুযায়ী এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই এলাকাটা সারা দুনিয়ার মধ্যে আসলেই নিম্নতম ভূমি। ‘সী লেবেল’ থেকে ৩৯৫ মিটার নীচে। এ জায়গাটা যে গোটা ভূ-খন্ডের সবচেয়ে নীচু জায়গা এটা ১৪ শ বছর আগের মানুষ কি করে জানবে? বিশেষ করে এমন একজন মানুষ যিনি ভূ-তত্ত্ব, প্রাণী-তত্ত্ব ইত্যাদি কোনো তত্ত্বেরই ছাত্র ছিলেননা।
ডেড সি অঞ্চল আল্লাহতায়লা সমগ্র মানবজাতির শিক্ষার জন্য নিদর্শন হিেসবে রেখেছেন। দুর্ভাগ্য আমরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহন করছিনা।
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
আপনি, খুব স্বল্প পরিসরে ভালো একটি মেসেজ দিয়েছেন। এখানে, অতীত এবং বর্তমানের মানবিক বিপর্যয়ের রুপ টাকে একটি রেখা টেনে দিয়েছেন।
তার সাথে তুলে আনেছেন, কুরানের দিকনির্দেশনা কে। ধন্যবাদ আপনাকে।
গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন