আশ্চর্য প্রদিপ হাতে পাওয়া চাই।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০৩:১৯:০৯ দুপুর
একটি ভারতিয় বাংলা মুভি দেখলাম ।"আশ্চর্য প্রদিপ" পরিচালক অনিক দত্ত। এটি তার দ্বিতিয় মুভি। প্রথম মুভি "ভুতের ভবিষ্যত" টিও দেখেছিলাম এবং খুবই ভাল লেগেছিল। শির্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর একই নামের একটি গল্প থেকে নির্মিত হয়েছে মুভিটি। মুভির নায়ক একজন মধ্যবিত্ত কলকাতাবাসি। কাজ করেন একটি কনডম উৎপাদন কারি প্রতিস্ঠান এর সেলস ম্যানেজার পদে। তার উচ্চাভিলাসি স্ত্রী প্রতিদিন খোঁটা দেন বিভিন্ন বিষয়ে। স্ত্রী তাকে সবসময় তুলনা করেন তার বড় বোনের স্বামির সাথে। যিনি একজন ডাক্তার এবং বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে অর্থ আয় করেন। নায়ক জানেন তার স্ত্রী ষ্ট্যাটাস রক্ষা ও বড় বোনের সাথে প্রতিযোগিতার জন্য অতিরিক্ত আয় করার জন্য বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। এদিকে অফিসেও নায়ক অনিল এর মুখোমুখি হতে হয় বিভিন্ন রকমের কর্পোরেট কূটনিতির। আবার অনিল নিজেও সুযোগ বুঝে বস এর জন্য কাজ করতে গিয়ে কমিশন আদায় করে নেন। একদিন ঘরে ফিরার সময় পথে কুড়িয়ে পান একটি পুরান প্রদিপ। ঘরে নিয়ে আসেন তিনি সেটা। ঘরে আসার পর শান্তি পাননা। স্ত্রীর তার ছেলেকে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানর জন্য খিটমিট শুরু করেন। গাড়ি কিনার জন্যও দাবি করেন। রাত্রে চলে যান তার বোনের বাসায় সন্তান সহ । একাকি ঘরে মদ্যপান করে স্ত্রীর একটি প্রিয় জিনিস ভেঙ্গে ফেরেন অনিল। সকালে ঘুম ভাঙলে দেখেন ঘরে বসে আছে অদ্ভুত চেহারার এক লোক। সে তাকে পরিচয় দেয় সে হচ্ছে আলাদিন এর আশ্চর্য প্রদিপ এর দৈত্য। তার সমস্ত জাগতিক চাহিদা সে মিটিয়ে দিতে পারে। উত্তেজিত অনিল তার সপ্ন পুরন করতে বের হয়ে পরে দৈত্যের সাথে একটি বিশাল লিমোজিন গাড়িতে চড়ে। আধুনিক দৈত্য তাকে একটি উন্নত মোবাইল দেয় এবং বলে যে এখন প্রদিপ ঘষে নয় বরং মোবাইল টিপেই দৈত্যকে ডাকা যায়। প্রথমে নিজের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে অনিল। তারপর স্ত্রীর ইচ্ছাপুরুন করতে একটি বিশাল এপার্টমেন্ট কিনে। তারপর কিছু মজা করতে যায় হোটেলে। নিজের চেহেরাকেও মধ্যবিত্ত থেকে মেকওভার করে উচ্চবিত্ততে। রাত্রে অনিল চায় রাতের জন্য একজন সঙ্গিনি কারন তার স্ত্রীর তাকে সহয়োগিতা করেনা শয্যায়। দৈত্য তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় কলগার্ল এজেন্ট এর সাথে। উচ্চমানের হোটেল এর কক্ষে অপেক্ষা করে অনিল। এসময় তার স্ত্রী তাকে ফোন করে জানায় জরুরি কাজ থাকায় সে রাতে তার বোনের বাড়িতে থাকছে। কলিং বেল বেজে উঠে। অনিল দরজা খুলে। দরজার বাইরে দাড়িয়ে তারই স্ত্রী! অনিল দরজাটা বন্ধ করে দেয়। লিমজিন এ করে ফিরে যাওয়ার সময় দৈত্য বলে আমি সবসময় আমার প্রভুদের খুশি করতে চাই কিন্তু কেন যেন তারা সবসম সম্পুর্ন সন্তষ্ট হননা। সুর্যোদয়ের সময় অনিল মোবাইল ফোনটা ফেলে দেয় লেকের পানিতে। এই হলো মুভিটির গল্প।
মুভিটি বেশি লম্বা নয়। কিন্তু এতে যা দেখান হয়েছে তা শুধু ভারত নয় বাংলাদেশেও এখন বাস্তবতা। মানুষ প্রতিদিনই তথাকথিত ষ্ট্যাটাস আর বিলাসিতার প্রতিযোগিতায় হারিয়ে ফেলছে তার জীবনের সাধারন নৈতিকতা ও আনন্দকে। টাকাই হয়ে যাচ্ছে তার একমাত্র লক্ষ। যদিও সে টাকাই আবার উড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বিলাসিতার জন্য। আর অনেকে আমার সাথে দ্বিমত পোষন করতে পারেন কিন্তু এটাই সত্যি যে পুরুষদের চেয়ে নারীরা এজন্য বেশি দায়ি। মুভিটিতে নায়ক এর স্ত্রী এক পর্যায়ে ভাল হোটেলে খাওয়া ব্রান্ডেড পোষাক পড়া এবং সন্তান কে নামি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানকে জন্য অতি প্রয়োজন বলে দাবি করে। যেন মানুষের জীবনের সুখশান্তি আনার জন্য এগুলিই প্রধান প্রয়োজন। বিলাসিতা কেই জিবনের লক্ষ বলে অনেক নারিই মনে করছেন। সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যান এ দেখা গেছে ঢাকা শহরে অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রি অবৈধ পথে বাড়তি রোজগার করছেন। কিন্তু এই বাড়তি আয় এর পুরাটাই কিন্তু ব্যায় হচ্ছে দামি কসমেটিকস মোবাইল কিংবা জামা কাপড় এর পিছনে। অনেক পরিবারেই এখন এই বাড়তি ব্যায় এর জন্য দায়ি স্ত্রীরাই। মহিলারা বেশিরভাগ সময়ই নিজেকে তুলনা করতে চান অতিরিক্ত আয়ের কারও সাথে এবং স্বামিকে বাধ্য করতে চান তাদের মত করে চলার জন্য। আমি শুনেছি আগে এমন ও ঘটনা শোনা গেছে স্বামি ঘুষ খায় শুনে স্ত্রী তাকে ত্যাগ করেছে। এখন উল্টে গেছে ব্যাপারটা। বরং অনেক স্বামিই বাধ্য হচ্ছেন স্ত্রীর চাপে তথাকথিত ষ্ট্যাটাস রক্ষায় উল্টোপথে আয় করতে।
সুখের সন্ধানে আমাদের সমাজ বর্তমান এ যে পথে যাচ্ছে তাতে সুখের চেয়ে অসুখ এই বেশি আক্রান্ত হচ্ছি। আমরা। আমরা ভাবছিনা জিবনকে সুখি করে তুলার জন্য আশ্চর্য প্রদিপ আমাদের হাতেই আছে। একসময় মানুষের আদর্শ বলা হতো প্লেইন লিভিং। কিন্তু এখন যে যত বেশি ধনি তাকেই সুখি মনে করে অনেকে। যদিও প্রকৃতপক্ষে তারা সুখি নয় বলে বিভিন্ন জরিপে ও গবেষনায় প্রমানিত। আমরা এখন ভুলে গেছি সুখি হওয়ার জন্য আশ্চর্য প্রদিপ এর প্রয়োজন আমাদের নাই। জিবনে সুখি হওয়ার জন্য যে পরিপুর্ন বিধান দরকার তা আমাদের সামনে থাকা সত্বেয় আমরা ছুটে চলছি এক আশ্চর্য প্রদিপ এর সন্ধানে।
বিষয়: বিবিধ
১৮২৪ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমারা এখন ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে অসংযমি জিবন যাপন করাকেই মনে করছি আধুনিকতা। জিবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা পুরাপুরি উদাসিন।
খুব দামী কথা বলেছেন।
যে আশ্চর্য প্রদিপ আমাদের হাতের কাছেই আছে আমরা সেটা খুজতেও চেষ্টা করিনা।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই
সেই মানুষের ভিতর এখন সঠিক মূল্যবোধ নাই।
মুভি টা দেখেছি।
দুজন দুজনকে খুব ভালো ফাঁকি দিয়েছে।
অল্পতে যা তুষ্ট হয় না তার সুখ কখনও হয় না।
বর্তমানে আমরা সুখের জন্য শান্তি বিক্রি করি।
সুখ আর শান্তি দুটাই যে এক সাথে প্রয়োজন সত্যিই তা আমরা ভুলে গিয়েছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন