এক অত্যাধুনিক কন্যার ডায়রি।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৬ মার্চ, ২০১৪, ১০:১৫:৪৪ রাত
১ লা জানুয়ারি ২০...
উফফ! যা কাটল না কালকের রাতটা। এমন পার্টি আর দেখিনি। মনি খালা সত্যিই বলেছিল চিটাগাং আর আগের মত নেই। এখন অনেক মডার্ন। প্রথমে একটু জড়সর হয়ে ছিলাম কিন্তু মনি খালা আম্মুকেও নাচতে নামিয়ে দিল। সারা রাত পার্টি শেষে ন ঘরে এসে ঘুম দিলাম। বিকালে উঠে বারান্দাতে দেখি আব্বু বসে আছেন। আমাকে দেখলেন কিন্তু একটি কথাও বলল না। মনের সব আনন্দ যেন এক মুহুর্তে শেষ হয়ে গেল।
১লা ফেব্রুয়ারি ২০..
আজকেও আম্মু আব্বুর মধ্যে এক দফা হয়ে গেল। আম্মু নতুন মোবাইল কিনেছে আব্বু এত দামি মোবাইল কিনার জন্য রাগ করেছে। আব্বুটা যে কি!! সবার সাথে মিলিয়ে না চললে ষ্ট্যাটাস ঠিক থাকে? আমার বান্ধবি শিলা নিজেই এর চেয়ে দামি মোবাইল ইউজ করে। আর পাশের ফ্লাটের লিনু আন্টি তো একেবারে এল ৭০। সামান্য দশ হাজার টাকার মোবাইল নিয়ে এত ঝগড়া!
২১ শে ফেব্রুয়ারি ২০...
মাঝ রাতে শহিদ মিনারে যেতে চেয়েছিলাম। আব্বু দেয়নি। সকাল বেলা ছয় তলার হামিদ আঙ্কেল এর আব্বা এসেছিলেন। আব্বু আমাকে ডেকে নিলেন। বললেন ইনাকে দেখ ইনি সত্যিই একুশে ফেব্রুয়ারির মিছিলে ছিলেন। লম্বা দাড়িওয়ালা মানুষ। খুব আদর করে কথা বললেন আমার সাথে। কিন্তু আম্মু হামিদ আঙ্কেল দের একদম পছন্দ করেননা। বলেন ওরা নাকি এই কমপ্লেক্সের কলংক।আম্মুর কাছে আরো শুনেছি ইনি নাকি ভিষন মেীলবাদি লোক।
৩০ শে মার্চ ২০..
আজকে কক্সবাজারে আসলাম। প্রথম বারের মত আম্মুআব্বুকে ছাড়া বেড়াতে এসেছি। শুধু বন্ধু বান্ধবি রা। আমি,শিলা,মুনিয়া,শাম্মা,রবিন,সানি, চার্লি সবাই। বাস থেকে নেমেই সবাই সৈকতে দোড়াদেীড়ি পানিতে নেমে পড়লাম। কিন্তু এক ভদ্রলোক এসে বাধা দিল। বলল এখন নাকি পানিতে নামা নিষেধ। রবিন, সানি ওর সাথে বেশ তর্ক করল। তবে ক্লান্ত ছিলাম তাই শেষ পর্যন্ত হোটেল এই ফিরে আসলাম। সন্ধার পর সাঁতার কাটলাম সুইমিং পুলে সবাই মিলে। শিলা মুনিয়া সানি কেই সাঁতার জানত না। আমি ছোট থাকতে গ্রামের বাড়ির পুকুরে আব্বু নিজেই সাঁতার শিখিয়েছিলেন। অনেক দিন প্র্যাকটিস না থাকলেও পারলাম। সুইমিং পুলের আশে পাশের সবাই কিন্তু আমার দিকেই বেশি তাকিয়ে ছিল। প্রথবারের মত মনি খালার সিঙ্গাপুর থেকে আনা সুইমস্যুট টা পড়েছিলাম।
১ লা জুন ২০...
আজকে ঢাকায় চলে এলাম। ভর্তি হয়েছি দেশের সেরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। আব্বুর ইচ্ছা ছিল আমি চিটাগাং এই পড়ি। কিন্তু আম্মু জোর করে ঢাকায় নিয়ে এল। ভাগ্য ভাল আব্বুর কেনা ছেট্ট ফ্লাট টা ছিল। আম্মুও এসেছে।
২ রা জুন ২০...
আব্বু ফোন করেছিল। কেন জানি আব্বুকে দেখতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে। আম্মু আর যাবেনা ঠিক করেছে। এখানে আম্মুর বান্ধবি কম নেই তাই কোন অসুবিধা হবেনা তার।
১লা জুলাই ২০...
রাত এগারটা বাজে। আম্মু গেছে ঢাকায় আব্বুর পার্টনার রাজিব আঙ্কেল এর সাথে। বলেছে ফিরতে রাত হবে। ঢাকায় আব্বুর ব্যবসাটা নিজের নামে ট্রান্সফার করে নিয়েছে আম্মু। গত একমাসে বোধহয় একবারের বেশি কথা বলেনি আব্বুর সাথে। আব্বুর জন্য কষ্ট লাগলেও ঢাকার সাথে বেশ মানিয়ে গেছি। সত্যিই চিটাগাং এ থাকলে এত মজা হতোনা। একমাসেই ৭-৮ টা পার্টি এটেন্ড করেছি। শুধু গত রাতে আমার বন্ধু রচির বার্থডে পার্টিতেও চিটাগাং এর অনেক বিয়ের থেকে বেশি টাকা খরচ হয়েছে। আম্মুাও গিয়েছিল। রচির বাবা শাহিন আঙ্কেল তো জিজ্ঞেস করলেন তোমার বড় বোন নাকি! আম্মু এখনও যা ইয়ং! তবে কালকের পার্টি আমার জন্য একটু খারাপ হয়েছে। রচি একটা ড্রিংকস দিল। খাওয়ার একটু পরেই যা বমি হলো ভাগ্য ভাল সময় থাকতে বাথরুমে যেতে পেরেছিলাম না হলে কেলেংকারি হয়ে যেত।
১ লা আগষ্ট ২০...
কালকের রাতটা কিভাবে চোখের পলকে চলে গেল। রচি আমি,সানি আর শাম্মা গিয়েছিলাম টাঙ্গাইল এর এক রিসোর্টে। সারাদিন ঘোরাঘুরি পার্টি তার পর রাতে.. নাহ লিখবনা লজ্জা করছে।
৬ ই আগষ্ট ২০...
আজ হঠাৎ আব্বু এসেছিল। আমাকে নিয়ে সারাদিন বেড়াল। পুরান ঢাকার এক রেস্টরেন্ট এ খাওয়াল । এত মজার খাবার আর খাইনি। আব্বু যাওয়ার আগে বায়তুল মোকাররম থেকে অনেকগুলি বই কিনে দিল। আমি বাংলা ভাল করে পড়তে পারিনা। কিন্তু আব্বুর দেয়া বই গুলি নেড়েচেড় দেখছি।
৩০ শে আগষ্ট২০...
সাতদিন পর লিখছি আজ। সাতদিন আগে ভার্সিটি থেকে এসেই যা শুনলাম! আব্বু হাসপাতালে মারা গেছেন। তারপর থেকে চট্টগ্রামে প্লেন থেকে নামা পর্যন্ত কিছু মনে নেই। শুধু একটা জিনিস খেয়াল আছে। মা প্লেন থেকে নেমেই টয়লেটে গেলেন। মুখের সব মেকআপ ধুয়ে এসেছিলেন।
৪ ঠা সেপ্টম্বর ২০...
আজকেই ঢাকায় ফিরে আসলাম। আব্বু আর নেই এখনও বিশ্বাস হচ্ছেনা।
৩০ শে অক্টোবর ২০...
আজকে আমাদের ফ্লাট এ পার্টি হলো। আম্মুর বার্থডে উপলক্ষে। আম্মু যা সেজেছিল!!! মনি খালা এখন আমাদের সাথে থাকছে। খালুর সাথে ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে। সে ই সব এরেঞ্জমেন্ট করেছে। আম্মু শাহিন আঙ্কেল, রাজিব আঙ্কেল দের সাথে তো বটেই আমার বন্ধুদের সাথেও নাচল! সবাই চলে যাওয়ার পর হঠাৎ আমার আব্বুর কথা মনে পড়ল।
৮ই নভেম্বর ২০...
অজকে আবারও বেড়াতে গেলাম শুধূ আমি আর রচি। গাজিপুরের এক রিসোর্টে। সারাদিন সারারাত কেটে গেল কিভাবে বলতে পারবনা।
৯ই নভেম্বর ২০...
রচি! তুমি শুধুই আমার।
১ লা জানুয়ারি ২০...
আজকের পার্টিটার তুলনায় গতবছরের টা তো কিছুই ছিলনা! মা এমনভাবে ড্রিংক করল যেন পানি খাচ্ছে। আমার অবশ্য পরের দিকে পার্টিটা ভাল লাগেনি। রচি হঠাত শাম্মার সাথে প্রাইভেট রুমে চলে গেল। রাগ করে আমিও রবিন কে নিয়ে আরেকটা রুমে গেলাম।
১১ ই জানুয়ারি ২০...
আমার মধ্যে যেন অন্য কিছুর অস্তিত্ব টের পাচ্ছি। বলব নাকি আম্মুকে।
১৮ই জানুয়ারি ২০...
সেমেস্টার শেষ। আজ হটাৎ আব্বুর দেয়া বইগুলি থেকে একটা নিয়ে পড়লাম। কেমন যেন করে উঠল মনটা। মানুষ হিসেবে আমাদের কাজ কি শুধুই জিবনকে ভোগ করা। বইটিতে সেটারই প্রতিবাদ করা হয়েছে। অথচ আম্মু বলে সময় থাকতে যদি উপভোগ করে না নিই জীবনকে তাহলে যেীবন কেন?
রচিকে আমার ভিতরের অস্তিত্বটির খবর দিয়েছি কিন্তু খবরটা শুনে ও কেমন যেন রেগে গেল।
২১ শে জানুয়ারি ২০...
আম্মুকে জানালাম আজকে। প্রচন্ড রেগে গিয়েছিল। বলল সাবধান থাকতে পারনি আর বলছ এতদিনে। কিন্তু আম্মুই তো আমাকে বলেছিল ওইসব সতিত্ব-টতিত্ব গত শতাব্দির ব্যাপার এখন নতুন শতাব্দি চলছে। রচি গত কয়েকদিন আমাকে এড়িয়ে চলছে।
২১এ ফেব্রুয়ারি ২০...
শাহিন আঙ্কেল কে টিভি তে একুশে নিয়ে কথা বলতে দেখে কেমন যেন লাগল। ওদের বাড়িতে কেউ বাংলায় কথা বলেনা। হামিদ আঙ্কেল এর আব্বা সেই দাদাটির কথা মনে পড়ল আজকে।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০...
নিরা জানাল রচি গতকাল আমেরিকাতে চলে গেছে। আমাকে জানায়নি পর্যন্ত!
২৮ এ ফেব্রুয়ারি...
আজকে রচির মায়ের সাথে কথা বললাম। কিছুতেই তার ছেলের দোষ দেখলেন না। বললেন নিউ ইয়ার এর পার্টিতে আমার সামনেই তুমি অন্য ছেলের সাথে মিশেছ।
১ লা মার্চ ২০...
আম্মু, মনি খালা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। এম.আর করাবেন। কিন্তু আমি রাজি নই। আমার ভিতরের এই অস্তিত্ব আমারই তো অংশ।
২ রা মার্চ ২০...
আম্মু আজকে আমার গায়ে হাত তুলল। আব্বু কোনদিন মারেনি আমাকে। খুব রাগ করলে শুধু কথা বন্ধ করে দিত। তাও একদিনের বেশি না।
৩ রা মার্চ ২০...
মনি খালাও আজকে বুঝালেন একে ত পিতার পরিচয় নিয়ে সমস্যা তার উপর আমার বয়স কম। এখন সন্তান নিলে ক্ষতি হবে আমার ক্যরিয়ার এর। ওরাই তো আমাকে বুঝিয়েছিল লাইফটা ফান। সময় থাকে আনন্দ করে নাও।
৫ ই মার্চ ২০...
হঠাৎ নিজেকে আবিস্কার করলাম হাসপাতালের বেডে। আমার নাকি একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল! তাই জিবন বাচাতে ডাক্তার ...। ও আম্মু ও মনি খালা তোমরা কি মানুষ! এভাবে আমার ভিতরের সেই অস্তিত্বটাকে শেষ করে দিলে। ওর কি অধিকার ছিলনা এই পৃথিবীর আলো দেখার। রাতের খাওয়ার সাথে ঘুমের টেবলেট মিশিয়ে দিয়েছিল।
৬ ই মার্চ ২০...
কাল আমাকে রিলিজ করবে। কিন্তু আমি আর ফিরে যাবনা আম্মুর বাসায়। আব্বুর কথা মনে পড়ছে শুধু। আব্বু তুমি কোথায় আব্বু আমি তোমাকে একটু স্পর্শ করতে চাই। তোমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমাতে চাই।
বিষয়: Contest_father
২১৬৭ বার পঠিত, ৪২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সময় থাকতেই সাবধান।
ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
এখানে কয়েকজন খারাপ চরিত্রের পুরুষ মানুষকেও তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং নারীবিদ্বেষ হিসেবে এ পোস্টকে ভাবার কোনো কারণ দেখিনা। আপনাকে আহত করে থাকলে দুঃখিত।
https://www.facebook.com/#!/sabuj.kabir.1/posts/10203377042524954?notif_t=like
@ লেখক - নারীদের ব্যাপারে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয়, সেটা তুমিও জানো, আমার বলার প্রয়োজন নেই।
অনেক ধন্যবাদ।
ঘটনাটি কিন্তু পুরাপুরি কাল্পনিক নয়। দেশের নৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশঃ খারাপ এর দিকেই যাচ্ছে।
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : এটাকেই বলে প্রগতির্ নামে দুর্গতি।
যেই প্রগতি পাশ্চ্যাত্য ফেলে দিতে চাছ্ছে সে প্রগতি আমরা তুলে নিছ্ছি।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
আধাঁরের আকর্ষনে আমরা আলোকে খুজে পাইনা। কয়েকটি লাইনেই পুরা গল্পের থিমটি উঠে এসেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন