নিউটন
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৭ মার্চ, ২০১৪, ১০:২৬:১৬ রাত
স্যার আইজাক নিউটন। এই নামটি জানেননা এমন কোন শিক্ষিত ব্যাক্তি এই পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিজ্ঞানের প্রথম পাঠেই যে নামটি শিখান হয় সব দেশে সব ভাষায়। তার প্রথম পরিচয় দেয়া হয় মধ্যাকর্ষন শক্তি তত্বের আবিস্কারক রুপে। পৃথিবীর বুকে সকল বস্তুই মাটির দিকে কেন পরে সেই প্রশ্নটি অনেক শিশুর মনেই কোন না কোন সময় আসে। কিন্তু নিউটন সেই ব্যাক্তি যিনি তার শৈশবের সেই প্রশ্নে উত্তর খুঁজেছিলেন তার পরিনিত বয়সে। বিজ্ঞানের প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে নিউটনের তিনটি গতি সুত্র এবং মহাকর্ষ সুত্র। সাধারন পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এই সুত্রগুলির বাইরে কোন বস্ত বা শক্তি কাজ করেনা। যদিও কোয়ান্টাম বা ন্যানো লেভেলে এই সুত্রগুলি অনুযায়ি কাজ হয়না। নিউটন এর বিজ্ঞান এর জগতে অবদান এমনই যে তার বন্ধু কবি আলেকজান্ডার পোপ তার স্মৃতিতে লিখে ছিলেন দুটি পংতি।
রাতের আঁধারে লুকান প্রকৃতি,প্রকৃতির যত বিধি,
স্রষ্টা বললেন নিউটন হও! আর সব আলো হলো।
অনেক প্রতিভাবান এর মতই নিউটন এর বাল্যকাল ছিল কষ্টের।২৫ এ ডিসেম্বর ১৬৪২ সালে জন্ম। জন্মের আগেই পিতাকে হারান। মায়ের নতুন বিয়ে হওয়ায় বড় হন দাদির কাছে। স্কুলে সাধারন মানের ছাত্রই ছিলেন। কিন্তু তারুন্যের প্রথমভাগে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই একের পর এক তার প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে থাকে। দির্ঘ ত্রিশ বছর অধ্যাপনা ও গবেষনা করে কাটান তিনি। যদিও গানিতিক পদার্থবিদ্যাই ছিল তার প্রধান বিষয় তবে রসায়ন,জীববিজ্ঞান সহবিভিন্ন বিষয়ে তিনি উৎসাহি ছিলেন। রয়াল সোসাইটির প্রধান ও হয়েছিলেন তিনি। আবার ত্রিশ বছর গবেষনার পর হঠাত করেই বৈজ্ঞানিক গবেষনাতে বিরক্ত হয়ে উঠেন আর বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চাকরি নেন রয়্যাল মিন্ট বা রাজকিয় টাকশাল এর কর্মকর্তা হিসেবে। এর প্রধান হিসেবে ও দায়িত্বপালন করেন দির্ঘদিন। রাজনিতিতেও জড়িয়ে ছিলেন আমৃত্য।১৭২৭ সালের ২০ এ মার্চ তিনি মৃত্যবরন করেন। ওয়েষ্টমিনিষ্টার অ্যাবি যেখানে কেবল মাত্র রাজকিয় এবং বিশিষ্ট পরিবারের সদস্যরা সমাহিত হতেন সাধারন ঘরের হয়েও প্রথম বিজ্ঞানি হিসেবে সমাহিত হন সেখানে।
নিউটনকে অনেকেই বস্তবাদের জনকদের একজন হিসেবে বিবেচনা করেন। বিশেষ করে বস্তবাদি ও নাস্তিক গোষ্ঠি নিউটনের প্রাকৃতিক দর্শনকে সৃষ্টিকর্তার অনুপস্থিতির প্রমান হিসেবে প্রচার করেন। যদিও ব্যাক্তিগত ভাবে নিউটন ছিলেন একজন অতি ধার্মিক ব্যাক্তি। নিউটন নিজে তার তত্বকে মনে করতেন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে প্রয়োগ যোগ্য হিসেবে। মানবিক ও ধর্মিয় ক্ষেত্রে নয়। তথাপি জড়বাদি ব্যক্তিরা দির্ঘদিন তাকেই তাদের আদর্শ ব্যাক্তি হিসেবে মনে করতেন। কিন্তু চার্লস ডারউইন এর প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্বের পর তারা ডারউইন এর জৈব প্রাকৃতিক তত্বকেই বিজ্ঞানের শেষ কথা হিসেবে প্রচার করতে শুরু করেন। অন্যদিকে নিউটনের আবিষ্কারগুলির ব্যবহার সত্বেয় তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করতে শুরু করেন। যার মধ্যে ছিল অন্যের গবেষনাকে নিজের নামে চালানো এবং বিনা অনুমতিতে অন্য বিজ্ঞানিদের প্রস্ততকৃত সারনী ব্যবহার করা। রাজনিতিতে তার কার্যকলাপকে অন্যায় বলেও প্রচারনা চলে। সেই সঙ্গে তার ধর্মিয় পিউরিটানিজম এর সমর্থন কে ধর্মিয় মেীলবাদিতা আখ্যা দেয়া হয় এবং তাকে উগ্রবাদি হিসেবে প্রচার করা হয়। সবচেয়ে জঘন্য বিষয়টি হচ্ছে তার উপর সমকামিতার অপবাদ আরোপ। এর পক্ষে দাবি করা হয় যে তার কয়েকজন ঘনিষ্ট সহকারির সাথে তিনি রাত কাটাতেন। কিন্তু এই অপবাদ আরোপকারিরা একজন বিজ্ঞানির রাতদিন গবেষনা কে তাদের বদঅভ্যাসের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। অনেকে তার প্রতি আবার ছদ্ম খ্রিষ্টান হওয়া এবং আসলে প্রকৃতি পুজারি বা প্যাগান হওয়ার অভিযোগ ও আরোপ করেছেন। নিউটনকে জড়বাদের জনক হিসেবে উপস্থাপন করতে ব্যার্থ হয়েই তাদের এই প্রচেস্টা।
মধ্যাকর্ষন ও বলবিদ্যার তত্বগুলি ছাড়াও নিউটন কে বলা হয় ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস প্রতিষ্ঠাতা। এই বিষয় নিয়ে তার জিবন কালেই যথেষ্ঠ বিতর্ক হয়েছিল কারন নিউটন ছাড়াও প্রায় একই সময়ে জার্মান বিজ্ঞানি লিবনিজ ক্যালকুলাস আবিস্কার করেছিলেন বলে দাবি করেন। এখনও ক্যালকুলাসের মেীলিক সুত্রগুলির বেশিরভাগই মুলত লিবনিজ এর আবিস্কার। তবে এই বিষয়ে প্রকৃত সত্য এই যে ক্যালকুলাসের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল আরো প্রায় হাজার বছর আগে গ্রীক গনিতবিদদের দ্বারা এবং এর সুত্রগুলির প্রথম উপস্থাপিত হয়েছিল আল বাত্তানি ও আলবেরুনি কর্তৃক। নিউটনকে ত্রিকোনমিতির ইন্টারপোলেশন তত্বের উদ্ভাবনার কৃতিত্বও দেয়া হয় যা মূলত আলবেরুনির উদ্ভাবনা ছিল। দির্ঘদিন তাকে বাইনমিনাল থিওরেম বা দ্বিপদি উপপাদ্য এর উদ্ভাবনার কৃতিত্বও দেয়া হয়েছিল তবে বর্তমানে এর মুল উদ্ভাবক ওমর খৈয়াম ও আল-খারাজি কে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এগুলি সত্বেয় তার মৈীলিক উদ্ভাবনা ও তত্বের সংখ্যা ও গুরুত্ব কম নয়।
নিউটন কে বলা হয় আধুনিক বিজ্ঞানের জনক। তার মেীলিক গবেষনাগুলি তরান্বিত করেছে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন উদ্ভাবনাকে। আগামি ২০ মার্চ তার ২৮৭ তম মৃত্য দিবসে তাকে শ্রদ্ধার সাথে আমরা স্মরন করি।
পাদটিকা: এই লিখাটি লিখলাম ভারতিয় বিখ্যাত( বা কুখ্যাত!) দৈনিক ”আনন্দবাজার” এর একটি লিখার প্রতিক্রিয়াতে। সেই নিবন্ধে তার লিখক নিউটন কে সমকামী এবং অত্যন্ত ধুর্ত,নিষ্ঠুর এবং প্রতিক্রিয়াশিল (তথাকথিত প্রগতিশিলদেও ভাষায়) প্রমানের জন্য ইনিয়েবিনিয়ে চেষ্টা করেছেন। দাবি করেতে চেয়েছেন নিউটন আধুনিক বিজ্ঞানের স্থপতি নন বরং বিজ্ঞানের নামে ইউরোপে চলে আসা ভুল চিন্তাধারার শেষ প্রতিভা হিসেবে। কারন নিউটন তার জড়বাদি আবিস্কার সত্বেয় ছিলেন স্রস্টাতে বিশ্বাসি আস্তিক মানুষ। এই তথাকথিত প্রগতিশিলরা মুসলিম সভ্যতার বিশাল অবদানকে অস্বিকার করে। এখন তারা ইউরোপিয় সভ্যতার অবদানগুলিকেও অস্বিকার করার পর্যায়ে চলে এসেছে। কারন প্রকৃতপক্ষে নাস্তিকতাই একটি ভিত্তিহীন দর্শন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪০ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু আপনার ব্লগ একাউন্ট কিংবা কম্পিউটারে গ্যাঞ্জাম লেগে আছে মনে হয়।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া যদি পজিটিভ কিছু না হয় অবশ্যই নেগেটিভ কিছু হয়ে যাবে।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন