ভাষা আন্দোলনের স্থপতি। অধ্যক্ষ আবুল কাসেম।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১০ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৪০:৩২ রাত
প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম। যাকে একবাক্যে আমাদের ভাষা আন্দোলনের স্থপতি বলা যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় পরবর্তি প্রজন্মগুলির কাছে তার নামটি প্রায় অজ্ঞাত রয়েছে বা রাখা হয়েছে। যেখানে ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতাকারী অনেকে এখন ভাষা আন্দোলনের কৃতিত্ব দাবি করছেন। কিন্তু ভাষা প্রশ্নে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল তারই প্রতিষ্ঠিত তমুদ্দন মজলিশ পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে। ১৯৪৮ সালে তিনিই তৎকালিন পুর্বপাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি খাজা নাজিমউদ্দিন এর সাথে ঐতিহাসিক ভাষা চুক্তিতে সাক্ষর করেন রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ এর পক্ষে।
এই কৃতি মানুষটির জন্ম ১৯২০ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ছেবন্দি গ্রামে। তার পিতা মতিউর রহমান এবং মা সালেহা খাতুন। ১৯৩৯ সালে চট্টগ্রামের বড়মা হাইস্কুল থেকে বৃত্তি সহ মেট্রিক ও ১৯৪১ সালে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে আই,এসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এমএসসি পরিক্ষায় উত্তির্ন হয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দেন। এই সময়ই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলা ভাষা এবং ইসলামি সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তমুদ্দন মজলিস। এর সাথে আরো জড়িত ছিলেন সাংবাদিক ও অধ্যাপক আবদুল গফুর, অধ্যাপক নুরুল হক ভুইয়া, অধ্যক্ষ দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ,সাংবাদিক সানাউল্লাহ নুরি সহ অনেকে। এর প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন জ্ঞান তাপস ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তারই চেষ্টায় তিনি,অধ্যাপক কাজী মোতাহার হুসাইন এবং সাংবাদিক,রাজনিতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ এর তিনটি প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত হয় একটি পুস্তিকা ”পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু"”। এই পুস্তিকাটিই নিঃসন্দেহে ভিত্তি স্থাপন করেছিল ভাষা আন্দোলনের। এই সময় কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ এর রমনা মাঠে ”উর্দু অনলি” ঘোষনাটির প্রতিবাদে তার নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এর আন্দোলন শুরু হয়। মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজমিউদ্দিনের কাছে ১৯৪৭ সালের ১৭ই নভেম্বর বাংলা ভাষার দাবীতে প্রথম স্মারকলিপি প্রদানে তার ভূমিকা চিল মুখ্য। ১৯৪৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর তারই সভাপতিত্বে প্রথম বাংলা ভাষার দাবীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে ছাত্র সভা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠীত হয় এবং পরবর্তিতে ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ হরতাল পালিত হয়। এমতাবস্থায় ১৯৪৮ সালের ১৫ই মার্চ তদানীন্তন নাজিমুদ্দিন সরকার বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সব দাবী মেনে নিয়ে ৮ দফা চুক্তি সাক্ষর করনে। অধ্যাপক আবুল কাসেম পরিচালিত ভাষা আন্দোলনের এটিই প্রথম বিজয়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এই চুক্তির খেলাপ করে যার ফলে সংগঠিত হয় ২১ এ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনা। ১৯৪৮ সালে তিনি ভাষা আন্দোলনের অঘোষিত মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক প্রকাশ করনে। অধ্যাপক আবুল কাসেম ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৪ সালের ঐতিহাসিক পুর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক গনপরিষদ এর নির্বাচনে তিনি খেলাফতে রব্বানি পার্টির প্রার্থি হিসেবে প্রতিদন্বিতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্তাফা দেন এবং নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে র্পুব বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হবার পর ১৯৫৬ সালে তিনি বাংলাকে সরকারী অফিস এর ভাষা ও শিক্ষার বাহন করার প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা র্সবসম্মতক্রিমে গৃহীত হয় এবং পরে যা পাকিস্তানের ১৯৫৬ সনের প্রথম শাসনতন্ত্রে অন্তরভুক্ত হয়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারির পর তিনি রাজনিতি থেকে অবসর নেন। ১৯৬২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলা কলেজ যেখানে তিনি সকল বিষয় কে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার উদ্যোগ নিয়ে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি এর অধ্যক্ষ পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাংলাভাষায় অনেকগুলি বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠ্য বই রচনা করেন যা সেসময় অসম্ভব বলেই অনেকে দাবি করত। রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার সাংবিধানিক স্বীকৃতিররি পরও বাংলাকে উচ্চ শিক্ষার বাহন করার প্রশ্নে সরকারসহ বিভিন্ন মহলে টালবাহানা শুরু হয় উচ্চ স্তরের জন্য বাংলায় পাঠ্যপুস্তক ও পরিভাষা না থাকার অজুহাতে। প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের প্রকাশিত বই এর সংখ্যা একশত এর বেশি।
ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস রচনার জন্যও তিনি নিজ ব্যায়ে উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং নিজের আত্মজীবনি রচনা ও শুরু করেছিলেন যদিও অসুস্থতার কারনে তা শেষ করতে পারেননি।
তিনি ১৯৯১ সালের ১১ মার্চ ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধিনতা দিবস পুরুস্কার ও ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরুস্কার লাভ করেন। আজকে তার ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকি তে আমরা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করছি।
তথ্যসুত্র ও কৃতজ্ঞতা।
# প্রেক্ষন
ভাষাদিবস স্মরন সংখ্যা
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬.
# ব্লগার আকিফ এর পোষ্ট সামহ্য়্যার ইন ব্লগ.
বিষয়: বিবিধ
১৮৯৬ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
একজন সচেতন তরুন লেখক ভাই জানালেন প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাশেম নাম এই প্রথম শুনলেন ।
ইতিহাসের গতিধারা মূল শ্রোত থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ।
যথা সময়ে উপযুক্ত একটি বিষয়ের উপর লিখেছেন বলে আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।
পোষ্টটি ষ্টিকি করা হোক
পোষ্টটি ষ্টিকি করা হোক
পোষ্টটি ষ্টিকি করা হোক
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
যে ভাষার জন্য এত আযোজন, সে ভাষার বিজয় মিছিল আয়োজকদের সন্তানেরা এটি জানেনা।
ধন্যবাদ।
সেই জন্যই আমাদের উচিত এই গুনি ব্যাক্তিদের আরো বেশি করে সকলের সামনে তুলে ধরা।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আমি আমাদের সকলের পক্ষ থেকে আপনাকে সাধুবাদ জানাই। যা আমরা করি না। যা আমাদের অভ্যাসে নেই। যা আমাদের সাংস্কৃতিতে নাই।
সেরকম একটি বিষয় আপনি তুলে ধরেছেন।
বামরা নিজেদের পীঠ চুলকাবার জন্য লোক নিয়োগ করে। আর জাতীয়তাবাদিরা নিজেদের মেধাকে হত্যা করে।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
একদিনেই সকল পোষ্টে মন্তব্য করে ফেললেন!!!
কারো লিখা পড়ে ভালো না লাগলে, কমেন্ট করার মত সময় খুব কম। আর কোন, বল্গারের লিখা ভালো লাগলে,
তার বাকি লিখা গুলোতে উকি মারি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন