আপনার মনে আপনি পুড়িব গন্ধ বিধূর ধূপ।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৩৭:২২ রাত
একটি অভিজ্ঞতার কথা একবার টেলিভিশনে বলেছিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানি ও শিক্ষাবিদ ডঃ এম শমশের আলি। তিনি তার এক ইতালিয় বিজ্ঞানি ও পর্বত আরোহি বন্ধুর অনুরোধে বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন হিসেবে জাতিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত একটি পংতি ইতালিয় ভাষায় অনুবাদ করে লিখে দেন। তার সেই বন্ধু পরবর্তিতে দির্ঘদিন অসুস্থ থেকে মারা যান। পরে তার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি তাকে বলেন যে মৃত্যুর সময়ে তার যখন কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তখন এই বিজ্ঞানি এই পংতিটি তার সামনে আনতে ইশারা করতেন আর এই লিখাটি পড়ে অবিরাম কাঁদতেন। ডঃ শমশের আলি যে কবিতার পংতিটি তার বন্ধুকে অনুবাদ করে লিখে দিয়েছিলেন। সেই পংতিটি হলো
তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিবনা।
কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙ্গিবনা
-নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকি গন্ধ বিধূর ধুপ।
প্রিয় ব্লগার চাটিঁগা থেকে বাহার ভাই এর একটি ফেসবুক পোষ্ট দেখে এই পোষ্টটি লিখলাম। বাহার ভাই জানতে চেয়েছিলেন জাতিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার বিখ্যাত কবিতা ”বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি” কোন খানে লিখেছিলেন। অনেকেই হয়তো জানেন এই কবিতাটি চট্টগ্রামে লিখা। কবির চক্রবাক কাব্য গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে এটি সহ চট্টগ্রামে বসে লিখা আরো কয়েকটি কবিতা। কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম বার চট্টগ্রামে এসেছিলেন ১৯২৮ সালে সেবার ছিলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ খান বাহাদুর আবদুল আজিজ বি,এ সাহেব এর তামাকুমন্ডির বাসায়। বর্তমানে সেখানে রেয়াজউদ্দিন বাজারের তামাকুমন্ডি লেন। ১৯২৯ সালের জানুয়ারি মাসে নজরুল দ্বিতিয়বার চট্টগ্রাম আসেন। এবার উঠেন চট্টগ্রামের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিবার ফতেয়াবাদের আলম পরিবারের বাড়িতে। এই পরিবারের কৃতি সন্তান সাহিত্যিক,সাংবাদিক "মোমেনের জবানবন্দি”,”মফিজন”,”পল্টন জীবনের স্মৃতি” এর লেখক মাহবুবুল আলম নিজে ও নজরুলের ন্যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সৈনিক রুপে। যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পরস্পর পরিচয় হয়নি। মাহবুবুল আলম এর বড়ভাই দিদারুল আলম এর সাথে কবির পরিচয় ছিল। তার দাওয়াতে তাদের বাড়িতে থাকেন কবি। মাহবুবুল আলম এসময় ছিলেন কবির নিত্য সঙ্গি। এই কবিতাটি লিখার ঘটনাটি মাহবুবুল আলম এর ভাষায় লিখছি।
"রাত্রে পাশাপাশি শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ গভির রাতে উঠে কবি বাতায়ন খুল্লেন। এমন রহস্য চোখে পড়ল কবি তন্ময় হয়ে গেলেন, মুখে রব আ-হা-হা কি দেখলাম! আ-হা-হা কি দেখলাম!
কবির মনে হলো আমার বাতায়ন পাশে এই তরুর সারি,এরা তো আমার নিশীথ জাগার সাথী। জোৎস্নাতো পান্ডুর হয়ে আসছে,এবার তো বিদায় নিতে হবে! এবার বিদায় নিতে হবে এই ঝিলিমিলিও বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের নিরালা আলাপও চলবেনা
"আ-হা-হা কি দেখলাম!আ-হা-হা কি দেখলাম!" মুখে নিয়ে সকাল থেকে নজরুল যেন দানোয় পাওয়া। কাগজ কলম তো সাথেই। নজরুল হিজিবিজি লিখে চলছেন। কিন্তু এ যেমন তেমন দানো নয়। এ দানোর নাম ”বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি”"। এর একটা রুপক কবিতায় বন্দী করেছেন তো মননে আরেকটা রুপ উদিত হয়ে জ্বলজ্বল করতে থাকে। তার কত রুপ কত ছটা!
নজরুল এই কবিতাটিতেই যেন দেখেন তার নিজের ভবিষ্যত। সেই অমর পংক্তি কটি। "তোমাদের পানে চাহিয়া.."
নজরুল ও তার জিবনের শেষ ৩০ বছর নির্বাক হয়ে ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক সুশিল জানা লিখেছেন নজরুল যখন নির্বাক এবং আড়ষ্ঠ তখন তিনি একদিন নজরুলের সামনে এই কবিতাটি আবৃতি করছিলেন। কবি হঠাৎ চিৎকার করে উঠেন”চট্টগ্রাম!চট্টগ্রাম!"”। হয়তোবা তখন তার মনে পড়ে গিয়েছিল তার নিশীথ জাগার সেই সাথিদের।
যে সুপারি বাগানটি দেখে কবি এই কবিতাটি লিখেছিলেন সেটি সম্ভবত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ এর পুর্ব পাশে কাজির দেউরি বাজার এর লাগোয়া বর্তমান ভিআইপি টাওয়ার এর জায়গায় ছিল। এই বাগানটি দির্ঘদিন ছিল। আমি নিজেও দেখেছি। ১৯৯১ সালের ঘুর্নিঝড়ে এই বাগানটির অনেকগুলি সুপারি গাছ পড়ে যায়। তখনই প্রথম দেখি এই বাগানের মধ্যে একটি বাংলো টাইপের বাড়ি আছে। যতটুক শুনেছি পাকিস্তান আমলের প্রথমদিকে এই বাড়িটির মালিক ছিলেন তৎকালিন পুর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও পরবর্তিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তানের গনতন্ত্র হত্যার প্রধান জল্লাদ মীর জাফরের সরাসরি বংশধর জেনারেল ইস্কান্দার মির্যা। পাকিস্তান আমলেই তিনি এই বাড়িটি একজন বিহারী ব্যবসায়ির কাছে বিক্রি করে দেন। সেই ব্যবসায়ি ১৯৭১ সালে দেশে ছেড়ে চলে যান। এরপর দির্ঘদিন প্রায় পরিতক্ত অবস্থায় ছিল বাগানটি। ১১৯২-৯৩ সালে বর্তমান মালিক জায়গাটি কিনে নেন। এখন সেখানে কম্যুনিটি সেন্টার,মার্কেট সহ ১৬ তলার এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। কারো কারো লিখায় অবশ্য জানা যায় নজরুল এই কবিতাটি মাহবুবুল আলমদের ফতেয়াবাদের বাড়িতে লিখেছিলেন। তবে কাজির দেউরির বাগানটির পাশেই তাদের শহরের বাসা ছিল এবং এখনও আছে।
বিষয়: সাহিত্য
১৮৬১ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো আপনাকে ধ
ন্যবাদ
: :
তবে হ্যা কিছু তথ্য দিয়েছি।
ধন্যবাদ।
আপনার কবিতাগুলি পোষ্ট করুন। জাতিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর "চক্রবাক" কাব্য গ্রন্থে তার শ্রেষ্ঠ কয়েকটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত।
ধন্যবাদ আপনাকে।
তামাকুমন্ডি লেন এর ঘিঞ্জি বাজারের ভিতর যে খান বাহাদুর আবদুল আজিজ বিএ সাহেবে বাসা ছিল যে বাসায় বড় হয়েছেন আমাদের রাজনিতি ও সাহিত্য জগতের দুই উজ্জল নক্ষত্র হাবিবুল্লাহ বাহার ও বেগম শামসুন্নাহার মাহমুদ এই কথাটা আমি প্রথম জানতে পারি নজরুল এর চট্টগ্রাম সম্পর্কে আবদুল হাই শিকদার এর লিখা থেকে। সেই স্মৃতি বিজরিত বাড়ি আর নাই। সেখানে এখন মার্কেট।
ধন্যবাদ পোষ্টটি পড়ার জন্য।
আসলে আমি মনে করিছিলাম সুপারিবাগানটি রাউজানের কোন এক গ্রামে । তাই আমি রাউজানের অনেককেই জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি । আমার মনে হয় নজরুল রিচার্স একাডেমিতে তথ্য ভিত্তিক প্রমান থাকবে।
যাই হোক আপনার আলোচনা সুন্দর হয়েছে ।
রাউজান কবি একাধিকবারই গিয়েছিলেন। তবে কবিতাটি রাউজানে নয়। চট্টগ্রাম শহরেই লিখা বলে বেশিরভাগের মত। আলম পরিবারের ফতেয়াবাদের বাড়ির আশে পাশে প্রচুর সুপারি গাছ থাকলেও একক সুপারি গাছের বাগান আমি দেখিনি।
তবে বেশি বাতাস দিয়েননা। উইরা যাবো।
ধন্যবাদ আপনাকে।
সত্যিই অসাধারণ একটি পোষ্ট।
আর আপনি খুউব চমৎকার লিখেন।
কিন্তু কিছুতো অনুবাদ করিনাই!!!
কবি কাজী নজরুল ইসলাম উর্দু ওহিন্দি ভাষায় কিছু গান লিখেছিলেন বটে কিন্তু তা অনুবাদ করার যোগ্যতা আমার নাই।
ধন্যবাদ তবুও।
আবদুল হাই শিকদারের লিখা বইটি অথেনটিক।
ধন্যবাদ আপনাকে।
চিন্তাচেতনার সাথে মিল থাকুক আর না থাকুক গবেষনামুলক বই পড়া দরকার।
মন্তব্য করতে লগইন করুন