একে-৪৭ এর জনক মিখাইল কালাসিনকভ এর মৃত্যু।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৪১:৫৩ রাত
একে-৪৭ এর নাম শুনেননি এমন মানুষ বর্তমান দুনিয়াতে পাওয়া কঠিন। যারা টেলিভিশন,রেডিও কিংবা পত্রিকা দেখেন শুনেন এবং পড়েন তারা তো বটেই এমনকি আফ্রিকার গহিন অরন্যের বাসিন্দা যারা বিদ্যুত শক্তির নামও শুনেননি তারাও একে-৪৭ চিনেন। কারন এই অস্ত্রটি বা এর উপর ভিত্তি করে তৈরি অস্ত্র পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের সামরিক বাহিনীর কোন না কোন ইউনিট কিংবা কোন বিদ্রোহি গ্রুপ ব্যবহার করে থাকে। বিশ্ববিখ্যাত এই অস্ত্রটির ডিজাইনার ছিলেন এক দরিদ্র সাইবেরিয়াতে নির্বাসিত ব্যাক্তির ১৮ সন্তানের একজন। তার নাম মিখাইল কালাসনিকভ। ১৯১৯ সালের ১০ ই নভেম্বর তার জন্ম রাশিয়ার কুরেই এলাকায়। কিন্তু তার পরিবারকে কিছুদিন পর সাইবেরিয়াতে নির্বাসিত করা হয়। সেখানে তারা কৃষি ও শিকার এর মাধ্যমে দিন যাপন করতেন। প্রায় সময় অসুস্থ থাকতেন তিনি। ৭ম গ্রেড পর্যন্ত পড়ার পর তার জন্ম স্থানে ফিরে যান এবং একটি কারখানায় কাজ নেন।ছোট বেলা থেকেই তিনি মেকানিকের কাজে আগ্রহি ছিলেন এবং সাইবেরিয়ার পরিবেশ এর কারনে শিকারেও দক্ষ ছিলেন তিনি। ১৯৩৮ সালে সোভিয়েট রেড আর্মিতে বাধ্যতামুলক সামরিক দায়িত্বের ডাক পান মিখাইল। খাটো হওয়া এবং মেশিনপত্রের ব্যাপারে আগ্রহি হওয়ায় তাকে ট্যাংক মেকানিক এর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে তিনি ট্যাংক বাহিনির নিয়মিত সদস্য হন এবং কয়েকটি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এই সময়ই তিনি তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে কয়েকটি আবিস্কার করেন যা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে। ১৯৪২ সালে তাকে অস্ত্র ডিজাইন এর কাজ দেয়া হয়। তিনি প্রথমে একটি সাবমেশিনগান এর ডিজাইন করেন। যা যুদ্ধে ভাল সাফল্য লাভ করে। এছাড়াও তিনি সেমি-অটোমেটিক এসকেএস রাইফেল এর ডিজাইন ও করেন। দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে তিনি একে-৪৭ এর বেসিক ডিজাইন করেন তবে পরিক্ষন স্তর পেরিয়ে এটি কার্যকর হতে ১৯৪৭ সাল হয়ে যায়। হালকা,সল্পমুল্য এবং নির্ভরযোগ্যতার কারনে এটি দ্রুত সোভিয়েট বাহিনিতে গৃহিত হয় এবং সোভিয়েট প্রভাবিত রাষ্ট্রগুলিও এই ডিজাইনে অস্ত্র তৈরি শুরু করে। তার নামেই এই এসল্ট রাইফেল এর ডাক নাম দেয়া হয় কালাসিনকভ। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় এই অস্ত্র তার প্রথম উল্লখযোগ্য সাফল্য দেখায়। সল্প প্রশিক্ষিত ভিয়েতকং যোদ্ধারা এই অস্ত্র ব্যবহার করে উন্নত এম-৩,এম-১৪/১৬ রাইফেল সজ্জিত মার্কিন বাহিনিকে পরাজিত করে। মিখাইল কালাসিনকভ কে "ডক্টর অভ টেকনিক্যাল সাইন্স" ডিগ্রি দেয়া হয়। তিনি এর পরেও সোভিয়েট ইউনিয়নের জন্য আরপিকে লাইট মেশিনগান সহ আরো কয়েকটি অস্ত্র ডিজাইন করেন।সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার আগেই তিনি অবসর গ্রহন করেন। তিনি সোভিয়েট আমলে "হিরো অফ দ্য সোভিয়েট ইউনিয়ন" পদক পান। একই পদক আবার রাশিয়ান ফেডারেশন এর আমলেও পান। গতকাল ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তে তিনি মৃত্যবরন করেন। সোভিয়েট আমলে করা ডিজাইন এর জন্য তিনি কোন পেটেন্ট নিতে পারেননি এবং এর থেকে তার কোন অর্থ আয়ও হয়নি। কিন্তু তিনি প্রচুর সন্মান পেয়েছেন তার দেশে। ২০০৮ সালে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন তার দুঃখ হয় যখন তিনি দেখেন অপরাধিরা তার তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করছে। কিন্তু তিনি অস্ত্র তৈরির জন্য কোন অপরাধ বোধ করতেন না কারন এটি ছিল দেশের প্রতি তার কর্তব্য। তিনি একপুত্র ও তিন কন্যার পিতা। তারপুত্র ভিক্টর কালাসিনকভ ও একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ। প্রথম তৈরি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দশ কোটিরও বেশি একে-৪৭ রাইফেল তৈরি হয়েছে। বর্তমানে চিন,পূর্ব ইউরোপ এবং আফ্রিকার অনেক দেশেই এই অস্ত্র বিভিন্ন ভার্সন ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীতে একে-৪৭ এর চাইনিজ কপি একে-৫৬ দির্ঘদিন স্ট্যান্ডার্ড ইস্যু অস্ত্র ছিল এবং এখনও এর ব্যবহার আছে। বর্তমানে এর উন্নত ভার্সন দেশে তৈরি বিডি-০৮ ও ব্যবহার হচ্ছে। পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী মিখাইল কালাসনিকভ এর উদ্ভাবিত অন্য অস্ত্র এসকেএস রাইফেল ব্যবহার করে।
ডিনাইমাইট এর আবিস্কারক আলফ্রেড নোবল এর মতই অনেকে মিখাইল কালাসনিকভকে মৃত্যর আবিস্কারক মনে করে তবে তিনি তার উদ্ভাবনগুলি থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পাননি। তিনি তার উদ্ভাবনগুলি দেশের কল্যান এর জন্য করেছেন বলেই মনে করতেন।
বিষয়: বিবিধ
২৯৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন