নেলসন ম্যান্ডেলা। লং ওয়াক এন্ডস।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:৫৯:৩৩ রাত

নেলসন ম্যানডেলা। বর্তমান বিশ্বে শিক্ষিত সচেতন মানুষ মাত্রই যে নামটির সাথে শুধু পরিচিতই নন বরং বিশ্বের কোটি কোটি নির্যাতিত মানুষের মনে এই নাম আশা আর সংগ্রামের সমার্থক। কালো আফ্রিকার এক কালো মানুষ যিনি তথাকথিত সভ্য পাশ্চাত্য বিশ্বকে দেখিয়েছেন মানুষের শক্তি আর মানবতা কাকে বলে। জীবনের সাতাশটি বছর যিনি কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার কক্ষে আর চুনাপাথরের খনিতে। যেখানে তার থেকে শিক্ষা ও আভিজাত্যে অতি নিচে থাকা পাহারাদাররা শুধূু তাদের সাদা চামড়ার জোড়ে তার উপর প্রভুত্ব করে ভুগেছে আত্মতৃপ্তিতে। কিন্তু মহান হৃদয় ম্যানডেলা দেখিয়েছেন প্রতিশোধ পরায়ন শ্বেতাঙ্গদের মত নন তিনি। ক্ষমা কে পুঁিজ করে অতিতকে ভুলে গিয়ে তিনি দেশকে দেখিয়েছেন এগিয়ে যাওয়ার পথ। বিচ্ছিন্নতা নয় একতাই তার উদ্দেশ্য। তথাকথিত সভ্য পশ্চিম ক্ষমা করেনি কখনই। দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ও টোকিও ট্রায়ালের মাধ্যমে যখন সভ্য এবং মানবাধিকারের রক্ষক! পশ্চিমা শক্তিগুলি তাদের শত্র“কে নিশ্চিন্হ করে ফেলেছে সেখানে উদারতা আর একতা দিয়ে নতুন প্রজন্মকে নতুন করে বাচার পথ দেখিয়েছেন নেলসন ম্যানডেলা।

আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিন অংশে বর্তমান দক্ষিন আফ্রিকা ছাড়াও রয়েছে লেসোথ,সোয়াজিল্যান্ড, মোজাম্বিক,জিম্বাবুয়ে,বতসোয়ানা ও নামিবিয়া। এই অংশে মানুষের বসবাস স্মরনাতিত কাল থেকে। পৃথিবীর অতি পুরাতন কিছূ মানব ফসিল পাওয়া গেছে এখানে। তাওরাত ও বাইবেলে বর্নিত কিছূ প্রাচিন শহর ও এই অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। যিম্বো শহর এÍ অন্যতম উদাহরন। এর হাজার বছরের ইতিহাস ছিল। কিন্তু ১৫০০ শতকের দিকে এই অঞ্চল এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় বিরোধ আর ভাতৃঘাতি সংঘর্ষে হয়ে পড়ে বহুধা বিভক্ত। উত্তর অংশে ম্যাটাবেল, ম্যশোনা সহ প্রধানত সিন্ডেবেল ভাষিরা আর দক্ষিন অংশে বান্টু ভাষি ঝোসা ও যুলুরা বসবাস করতে থাকে এই সময়। এই সময় এই জাতি গুলো ও বিভক্ত ছিল বহু গোত্রে। যা তাদের একক শক্তিকে হ্রাস করে। বিপুল সম্পদের অধিকারি এই অঞ্চলে তখন ছিলনা কোন সংহতি। দক্ষিন আফ্রিকার সাথে আরব এবং ভারতের বানিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। তথাপি এই দুই অঞ্চলের সভ্যতা এখানে তেমন প্রভাব বিস্তার করেনি। মুসলিম ব্যবসায়িরা ব্যবসার পাশাপাশি ধর্ম প্রচার ও করেন কিন্তু তাদের প্রভাব ও মোজাম্বিক সন্নিহিত অঞ্চলের বাইরে তেমন পড়েনি। বিপুল জনসংখ্যা হলেও গরু ও ছাগলের আধিক্য, বনজ সম্পদের প্রাচুর্য, আর উর্বর মাটি এই অঞ্চলের মানুষদের সুখিই রেখেছিল গোত্রগত বিরোধ সত্বেয়।

১৪৮৭ সালে পর্তুগিজ নাবিক বার্থলোমিয় দিয়াজ দক্ষিন আফ্রিকার দক্ষিন পশ্চিমের ওয়ালভিস বে উপসাগরের তিরে পেীছেন বা তথাকথিত উত্তমাশা অন্তরিপ আবিস্কার করেন। তার এই যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল তৎকালিন শক্তিশালি উসমানি মুসলিম সাম্রাজ্য এবং ভারতের মোগল সাম্রাজ্যকে পাশ কাটিয়ে চিনের সাথে পশ্চিম ইউরোপের সরাসরি নোী যোগাযোগের ব্যবস্থা তৈরি করা। ১৬৫২ সালে বর্তমান কেপটাউন নগরীর গোড়া পত্তন করেন জাঁ ভন রিবেক নামক এক ওলন্দাজ বা হল্যান্ড এর নাগরিক। গোত্রগত বিরোধে লিপ্ত আফ্রিকার অধিবাসিরা এর উদ্দেশ্য বুঝতে পারেনি বা উপমহাদেশের মত মনে করেছিল এটি একটি বানিজ্য কুঠি মাত্র।ওলন্দাজরা ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ক্রিতদাস নিয়ে এসে স্থাপন করে খামার। তথাকথিত সভ্য মানুষেরা কালো মানুষ দের ভুমি নিজেদেও মধ্যে বাটোয়ারা করে নেয় তাদের অনুমতি বা ক্রয় ছাড়াই। অন্যদিকে বাইবেল হাতে মিশনারিরা কালো দের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এই বানি নিয়ে যে কালোদের কর্তব্যই হচ্ছেন ঈশ্বর প্রেরিত এই সাদা মানুষদের আজ্ঞাবাহি হওয়া। শেষ পর্যন্ত ইউরোপিয়ানরা অনেকগুলি কলোনির পত্তন করতে সমর্থ হয় দক্ষিন আফ্রিকায়। এদের বেশিরভাগই ছিল ওলন্দাজ,ফ্লেমিশ,জার্মান ও ফরাশি বংশদ্ভুত। এদের কে মিলিত ভাবে বলা হতো বুয়র। দক্ষিন আফ্রিকায় হীরা ও সোনা সহ খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিলে ইংরেজরা এর প্রতি মনোযোগি হয়। ততদিনে ভারতে তাদের সাম্রাজ্য স্থাপনের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। ১৮০৬ সালে কেপটাউন এর নিয়ন্ত্রন নেয় বৃটিশরা এবং বুয়রদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরবর্তি পঞ্চাশ বছরের মধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রন দক্ষিন আফ্রিকার সবখানেই বি¯তৃত হয় এবং বুয়ররাও তাদের সাথে যোগ দেয়। তারা পরাজিত করে ঝোসা ও জুলু উভয় জাতিকে এবং সাম্রাজ্য বি¯তৃত করে জিম্বাবুয়ে এবং বতসোয়ানার দুর্গম কালাহারি মরুভুমি পর্যন্ত। ১৯১৩ সালে এক আইন! এর মাধ্যমে দক্ষিন আফ্রিকায় কয়েকটি নিদৃষ্ট এলাকা ছাড়া কালো মানুষদের জমির মালিক হওয়ার অযোগ্য ঘোষনা করা হয়। এই সময় দক্ষিন আফ্রিকায় অভিবাসি ভারতিয় বংশোদ্ভুতরাও কালোদের মতই অবিচারের শিকার ছিলেন। কিন্তু তারা মোহনদাস গান্ধি যিনি পরবর্তিতে মহাত্মা গান্ধিতে পরিনিত হন তার নেতৃত্বে অনেক অধিকার আদায় করে নেয়। অন্য দিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কালোদের মধ্যেও হয় শিক্ষা আর আত্মসম্ভ্রম এর উন্মেষ। ১৯৬১ সালে দক্ষিন আফ্রিকা তথাকথিত স্বাধিন হয়। কিন্তু দেশের প্রাচিন অধিবাসি কৃষ্নাঙ্গ রা রয়ে যায় অধিকার হীন এবং শাসিত।

যখন তথাকথিত সভ্য বৃটিশ সরকার দক্ষিন আফ্রিকার সম্পদ লুট করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা সামলাচ্ছে। সেই সময় ১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই ট্রান্সকেই জেলার প্রধান শহর উমতাতা এর কাছে এমবাশে নদিরওতিরের একটি ছোট্টগ্রাম এমভেজো তে জন্ম হয় এক শিশুর। যে একদিন এই পৃথিবীকে দেখিয়ে দেবে মানবতা ও ভালবাসা কি? শিশুর পিতা কি মনে করে যেন তার নবজাতক পুত্রের নাম রাখেন রোলিহলাহলা। তাদের ভাষায় যার অর্থ ঝামেলাবাজ বা যে ঝামেলা সৃষ্টি করে। শিশুর পিতা গাডলা এমফাকানিশওয়া ছিলেন ঝোসা গোষ্ঠি ভুক্ত থেম্বু জাতির একজন অভিজাত সদস্য। থেম্বু জাতি তখন বৃটিশদের অধিনে তাদের সামাজিক রিতিনিতি বজায় রেখেছিল এবং কিছু সায়ত্বশাসন ও । ম্যানডেলার পিতা থেম্বু রাজার একজন প্রধান ্উপদেষ্টা ও স্থানিয় প্রশাসক ছিলেন। তাদের গোত্রের প্রতিষ্ঠাতার নাম মাদিবা যে নামে নেলসন ম্যানডেলাকে এখনও সম্বোধন করা হয়। নেলসন নামটি তিনি পেয়েছিলেন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় । নেলসন ম্যানডেলার পিতাও ছিলেন একজন স্বাধিনচেতা ব্যাক্তি যা কারনে তিনি এক বৃটিশ ম্যাজিস্ট্রেট এর অন্যায় আদেশ মানতে অস্বিকার করেন। কিন্তু এ জন্য তাকে তার পদ হারাতে হয় এবং সম্পদ থেকেও বঞ্চিত করা হয়। এ অবস্থায় তার মা তাকে নিয়ে চলে যান এমভেজো গ্রামের উত্তওে কুনু হগ্রামে। সেখানেই বড় হতে থাকেন তিনি। এখানে তিনি আফ্রিকার অন্য ছেলেদের মত গরু-ছাগল পালন, লাঠিখেলা তির চালান, সাঁতার ইত্যাদি শিখেন। সেখানে তখনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কি সে ধারনা ছিলনা। ম্যানডেলার মা এই সময় খৃষ্ট ধর্মে দিক্ষিত হন। তার শুভাকাংখি কয়েকজন আফ্রিকান খৃষ্টান এর পরামর্শে ম্যানডেলার পিতা তাকে বৃটিশদের পরিচালিত স্কুলে পাঠান তার সাত বছর বয়সে। ম্যান্ডেলার পিতা প্রাচিন ধর্মে বিশ্বাসি হলেও একজন শিক্ষা অনুরাগি ছিলেন। স্কুলের প্রথম দিনই শিক্ষিকা তার নতুন ইংরেজি নাম দেন নেলসন। এই নামেই তিনি অবশিষ্ট জিবন পরিচিত হন। নয় বছর বয়সে তার পিতাকে হারান ম্যানডেলা। এর কয়েকদিনের মধ্যেই তৎকালিন থেমবু গোত্রের প্রধান চিফ জগিনথাবা ডালিনডিয়েলা তার তত্বাবধান করেন। তার বাড়িতে তার সন্তানদের সাথে বড় হতে থাকেন ম্যানডেলা। তিনি এমজেখওয়ানিতে বসবাস করতেন যা একটি মফসঃল শহর। চিফ এর পুত্র জাস্টিস ছিলেন তার সহপাঠি এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এমজেখওয়ানির দিনগুলিতে ম্যানডেলার প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। পালকপিতার কাছে তিনি রাজনিতি,প্রশাসন এবং আফ্রিকার গোত্রগুলির পদ্ধতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। তার পালক পিতার সাথ আলোচনা বা অন্য উদ্যেশ্যে বিভিন্ন গোত্রের বিশিষ্টজন রা আসতেন এবং তারা অনেক সময়ই কাজের পর নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে আলাপ করতেন। ম্যানডেলা ছিলেন তাদের অন্যতম শ্রোতা। তিনি সেখানেই প্রথম বিশাল দক্ষিন আফ্রিকার ইতিহাস জানতে পারেন। জানতে পারেন তাদের স্কুলে যে পড়ানো হতো ১৬৩২ সালের আগে আফ্রিকার কোন ইতিহাস নাই তা মিথ্যা। আফ্রিকা আরো অনেক প্রাচিন। ১৬ বছর বয়সে স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তের পর সেই সময়ের শিক্ষিত কৃষ্নাঙ্গদের মত জোহানেসবার্গ এর খনিতে কাজের সন্ধানে যেতে উৎসাহি হন ম্যানডেলা। কিন্তু তার পালক পিতা তাকে উচ্চ শিক্ষার জন্য উৎসাহ দেন। তাকে ইংগোবা জেলার ক্লার্কবারি স্কুল এ পাঠান হয়। ১৮২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লার্কবারি ছিল আফ্রিকার একটি ঐতিহ্যবাহি স্কুল যেখানে কৃষ্নাঙ্গরা শিক্ষা নিতে পারত। তার পালক পিতা তাকে স্থানিয় বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেন কারন তিনি চাইতেন ম্যানডেলা তার পিতার মত থেমবু রাজসভার সদস্য হবেন। ক্লার্কবারিতে ম্যানডেলা প্রথম ইউরোপিয় স্টাইলে বসবাসের সাথে পরিচিত হন এমনকি প্রথমবারের মত পায়ে বুট পড়েন! ক্লার্কবারিতে শিক্ষক হিসেব কৃষ্নাাঙ্গ শ্বেতাঙ্গ উভয় ই ছিলেন এবং তারা দক্ষ ও নিবেদিতপ্রান ছিলেন। ম্যানডেলা একজন ভাল ক্রিড়াবিদ ছিলেন এবং লেখাপড়ায় অমনোযেগি ছিলেননা। স্কুলের প্রধান রেভারেন্ড হ্যারিস ছিলেন একজন উদারমনা শ্বেতাঙ্গ। তার ও তার পরিবারের সাথে ম্যানডেলার সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়। ম্যানডেলা উনিশ বছর বয়সে ক্লাকবারি থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা কোর্স সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি ফোর্ট বিউফোর্টের ওয়েসলিয়ান কলেজ এ ভর্তি হন। ওয়েসলিয়ান কলেজ তার মধ্যে একই সঙ্গে তার মধ্যে আধুনিকতা এবং আফ্রিকান জাতিয়তাবাদ ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধার সৃস্টি করে। এই কলেজের প্রিন্সিপাল আর্থার ওয়েলিংটন । এখানে তিনি অন্যান্যজাতি ও গোত্রের মানুষের সাথে পরিচিত হন। এখানে কয়েকজন আফ্রিকান শিক্ষকের দেখা পান যারা তাদের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে কলেজের প্রধান আর্থার ওয়েলিংটন এর মত শ্বেতাঙ্গ এর থেকে শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছিল । এই কলেজে বিখ্যাত আফ্রিকান কবি ক্রুনি এমখাওয়ীর আগমন ম্যানডেলার মনে বিশেষ রেখাপাত করে। প্রথমবারের মত তিনি দেখেন দোর্দন্ড প্রতাপ প্রিন্সিপাল ওয়েরিংটন একজন চামড়ার পোষাক পড়া আফ্রিকানের পিছনে হাটছেন এবং তাকে সন্মান প্রদর্শন করে চলছেন। তাকে দেখে শ্বেতাঙ্গরা যে প্রভু ম্যানডেলার এই ধারনা পাল্টে যায়। কলেজ শেষ করে একুশ বছর বয়সে তৎকালীন দক্ষিন আফরিকায় কৃষ্নাঙ্গদের জন্য একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এ যোগ দেন। পুরো গোত্রে তিনিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানডেলাকে পৃথিবীর সাথে পরিচিত কওে তুলে। ফোর্ট হেয়ার থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর ম্যান্ডেলা ফিরে যান তার গ্রামে এবং পালক পিতার কাছে। এসময় তার পালক পিতা তার ও তার বন্ধূ জাস্টিস এর বিয়ে ঠিক করেন। ম্যানডেলা ও জাণ্টিস উভয়য়ে এই বিয়েতে অমত করেন এবং পালিয়ে জোহান্সবার্গ এর খনিতে কাজ নেন। এখানে ম্যানডেলা পরিচিত হন শেতাঙ্গ পুঁজিবাদি শাসন ব্যবস্থার সাথে আর তারা কিভাবে দক্ষিন আফ্রিকার খনিজ সম্পদ লুঠ করছে। জোহেন্সবার্গ খনির আফ্রিকান হেডম্যান ম্যানডেলাদের পরিচয় জানতে পেরে তাদের কে ফিরিয়ে দেন। ম্যানডেলা এই সময় শ্রমিকদের সংগঠনে জড়িয়ে পরেন এবং মামলার মুখোমখি হন। এরপর তিনি জোহান্সবার্গ এর শহরতলিতে তার এক আত্মিয়ের সাথে বসবাস শুরু করেন। এসময় তার পরিচয় হয় আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস নেতা ব্যবসায়ি ওয়াল্টার সিুসুলুর সাথে। সিসুলুর সহায়তায় তিনি একজন উদারপন্থি ইহুদির মালিকানাধিন ল’ফার্ম এ শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন এবং ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ আফ্রিকাতে রাতের শিফটে আইন পড়তে ভর্তি হন। এই প্রতিষ্ঠানটি উদার পন্থি হলেও এর শ্বেতাঙ্গ কর্মচারিরা ম্যান্ডেলা ও তার সহযোগি কৃষ্নাঙ্গদের সাথে এক কাপে চা খেতে আপত্তি দেখে ম্যান্ডেলা বুঝতে পারেন উচ্চ শিক্ষাও মানুষের মধ্যে সবসময় মানবতা বোধ জাগ্রত করতে পারেনা। এখানে কাজ করতে করতেই ম্যান্ডেলার মনে জাতিয়তা বোধের উন্মেষ ঘটে। তখন চলছিল দ্বিতিয় বিশ্ব যুদ্ধ । যদ্ধের চাপে বৃটিশ সরকার আফ্রিকানদের প্রতি কিছূ শিথিল মনোভাব পোষন করে। ম্যানেডলা এই সময় দক্ষিন আফ্রিকার কমুনিষ্ট পার্টির সাথে পরিচিত হন এবং তাদেও কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করেন। এএনসি বা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস ছাড়া একমাত্র কম্যুনিস্ট পার্টিই দক্ষিন আফ্রিকান রাজনৈতিক দল ছিল যেখানে শ্বেতাঙ্গ কৃষ্নাঙ্গ বিভেদ ছিলনা। ম্যানডেলা শ্রমিক সংগঠন সহ কম্যুনিস্ট পার্টিও কার্যক্রমে অংশ ও সহায়তা করলেও এই জন্য কম্যুনিষ্ট পার্টিতে যোগ দেননি যে তখন কম্যুনিস্ট পার্টিও সদস্যদেও অবশ্যই নাস্তিক হতে হতো। কিন্তু ম্যানডেলা ছিলেন বিশ্বাসি একজন মানুষ। ১৯৪৩ সালে ম্যানডেলা চার আইন ফার্মেও চাকরি ত্যাগ করেন। আইন পড়া শেষ করার জন্য তিনি উইটওয়াটার্সএন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখানে তিনি তার পরবর্তি জিবনের কৃষ্নাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ রাজনৈতিক সহযোগিদেও সাথে পরিচিত হন। যাদেও মধ্যে ছিলেন জো স্লোভো,রুথ ফার্ষ্ট সহ অনেকে। ম্যানডেলা এসময় এনএনসির যুব দল গঠন করেন তার ঘনিষ্ট বন্ধু ওলিভার টেম্বো ও ওয়াল্টার সিুসুলুকে নিয়ে। এই বছরই বিয়ে করেন তার প্রথম স্ত্রী ইভলিন কে। আইন পাশ করার পর তিনি স্বাধিন এটর্নি হিসেবে কর্মিিজবন শুরু করে॥ একজন উচ্চশিক্ষিত যোগ্য উকিল হলেও দক্ষিন আফ্রিকার সেই পরিবেশে তার আইনজিবি জিবনও হয়ে উঠে খুবই কষ্টের। অনেক সময় শ্বেতাঙ্গ সাক্ষি তার প্রশ্নের জবাব দিতেন না। অনেক ম্যাজিষ্ট্রেট ও তাকে অপমান করতেন বা তাকে উকিল হিসেবে মানতে চাইতেননা। ম্যানডেলা দেশের জন্য তার সংগ্রাম অব্যহত রাখেন। ১৯৫৬ সালে নেলসন ম্যানডেলা গ্রেফতার হন কৃষ্নাঙ্গদেও সমঅধিকার দেওয়ার দাবিতে কংগ্রেস অফদ্য পিপল এ যোগ দেয়ায়। যদিও চার বছর বিচার শেষে তারা খালাস পান। ১৯৫৭ সালে ইভলিনের সাতে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয় এবং পরের বছর উইনিকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৬০ সালে দক্ষিন আফ্রিকায় কৃষ্নাঙ্গ দেও অধিকার হর ন কওে আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে অনেক মানুষের মৃত্য ঘটে এবং এএনসিকে নিষিদ্ধ করা হয়। ম্যানডেলা এই সময় তরুন দেও নিয়ে এএনসির একটি সামরিক শাখা গঠন করেন। ১৯৬৪ সালে ম্যানডেলা পুলিশ এর হাতে ধরা পড়েন এবং বিচারের প্রহসন কওে তাকে রোবেন দিপে নির্বাসিত করা হয় যাবজ্জিবন কারাদন্ড দিয়ে। রোবেন দ্বিপে তিনি প্রথমে চুনা পাথরের খনিতে কঠোর পরিশ্রম করেন তার থেকে অনেক নিচের যোগ্যতার অধিকারি কারারক্ষি আর ওয়ার্ডেন দেও অধিনে। কিন্তু এর মধ্যে তার মুক্তিও দক্ষিন আফ্রিকায় কৃষনাঙ্গদেও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বিশ্বব্যাপি বিšতৃত হয়। দক্ষিন আফ্রিকাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৮২ সালে তাকে রোবেন দ্বিপের নির্বাসন ে কে কেপটাউনের পুলসমোর কারাগাওে পাঠানো হয়। পুলসমোর কারাগাওে ত কে কোন কাজ করতে হয়নি এবং পরিবাস রহ অন্যদেও সাথে দেখা করার সুযোগ পান তিনি। দক্ষিন আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সহ অনেক শ্বেতাঙ্গ নেতাই এ্ সময় তার সঙ্গে দেখা কওে সন্ধি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ম্যানডেলার একমাত্র দাবি ছিল সাদা কালো নির্বিশেষে সকল দক্ষিন আফ্রিকার অধিবাসিদেও ভোটাধকারের ভিত্তিতে নির্বাচন। পুলসমোর প্রিজনে তার সাথে কয়েকজন সাংবাদিকও দেখা করার সুযোগ পান। ১৯৮৯ সালে শ্বেতাঙ্গ বর্নবাদি প্রেসিডেন্ট পিটার বোথা পদত্যাগ করেন এবং এফডব্লিউ ক্লার্ক প্রেসিপেন্ট এর দায়িত্ব নেন। ক্লার্ক প্রেসিড্নেট হয়েই ম্যান্ডেলার সাথে সাক্ষাত কওে বিভিন্ন শর্তে তার মুক্তির অফার দেন। কিন্তু ম্যঅন্ডেলা তার দাবিতে অনর থাকেন। শেষ পযণ্ত এগারোই ফেব্র“য়ারি ১৯৯০ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা দির্ঘ সাতাশ বছর পর মুক্তিলাভ করেন। মুক্তি লাভের পরপরই তিনি কেপটাউনের শহরতলি সোয়েটোর স্টেডিয়ামে তারঐতিহাসিক ভাষনে শান্তি,সংহতি ও গনতন্ত্রেও পক্ষে সকলকে আহবান করেন। সাতাশ বছরের কারাজীবন তাকে দক্ষিন আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। মুক্ত পাওয়ার পওে নেলসন ম্যান্ডেলাকে শ্বেতঙ্গ বর্নবাদি ও কৃষ্নাঙ্গ চরমপন্থিদেও বিরোধিতার সম্মুখিন হতে হয়। তথাপি সকল বাধা পেরিয়ে ১৯৯৪ সালে ধর্ম,বর্ন নির্বিশেষে সকল দক্ষিন আফ্রিকানের ভোটে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বিজয় লাভ করে। নেলসন ম্যান্ডেলা প্রেসিড্নেট নির্বাচিত হন। তিনি এফ ডব্লিউ ক্লার্ককে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত কওে শ্বেতাঙ্গ কৃষনাঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সাথে মিলে দেশ গঠনের প্রতিশ্র“তি দেন। দির্ঘ দুইশত বছর ধওে চলতে থাকা শ্বেতাঙ্গদেও বিরুদ্দে প্রতিশোধ না নিয়ে তিনি আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুর নেতৃত্বে গঠন করেন ট্রুথ কমিশন। যার মাধ্যমে কোন শাস্তি ছাড়াই সকল শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্নাঙ্গ অপরাধিরা অপরাধ শিকার কওে ও ক্ষমা চায়।১৯৯৩ সালেই তিনি নোবেল শান্তি পুরুস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ স লে তিনি প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্ব ও সক্রিয় রাজনিতী থেকে সওে যান । তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি ২০০০ সালে বুরুন্ডিতে গৃহযুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থততাকারি হিসেবে কাজ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদি আচরনের অন্যতম প্রতিবাদকারি িিছলেন ম্যান্ডেলা ।

ম্যান্ডেলা তিন স্ত্রীর মধ্যে দুই স্ত্রীর গর্ভে মোট ছয়জন সন্তান এর পিতা।ইভলিনের গর্ভে দুই পুত্র মাদিবা ও মাকাগোথা ও দুই কন্যা মাকাজিউ যার একজন শৈশবে মৃত্যবরন করলে আরেক কন্য কে একই নাম দেন। মাদিবা ম্যান্ডেলা জেলে থাকার সময় মৃত্যবরন করেন। উইনির গর্ভে তার দুই কন্যা যেনানি ও জিনজির জন্ম হয়। জিনজির একবছর বয়সের মধ্যেই ম্যান্ডেলা জেলে যান। ষোল বছর পর তার কন্যার সাথে তার আবার দেখা হয়। ১৯৯৬ সালে উইনির সাথেও তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে আশি বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন তিপ্পান্ন বছর বয়সি গ্রাশা ম্যাচেল কে। আজকে ৬ ই ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ৯৫ বছর বয়সে তিনি এই পৃথিবি ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করছি।

* সময়ের অভাবে বানান এর প্রতিলক্ষ রাখা সম্ভব হয়নি। পাঠকগন ক্ষমা করবেন।

বিষয়: বিবিধ

২৬৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File