মসজিদে শিশুরা এবং আমাদের দেশ।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৫২:৫১ রাত
বুখারি শরিফ এর ৪৮৬ নং হাদিসে রয়েছে " আবু কাতাদাহ(রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ(সাঃ) তার কন্যা জয়নাব ও আবুল আস বিন রবীয়ার পুত্র উমামাকে কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়তেন। সিজদার সময় তাকে নামিয়ে রাখতেন,দাঁড়াবার কালে কাঁধে তুলে নিতেন"।
এই ধরনের আরেকটি হাদিস শুনেছিলাম রাসুল (সাঃ) এর পুত্র ইব্রাহিম কে কোলে নিয়ে নামাজ পড়ার কথা। এছাড়াও তার অন্য দুই নাতি হযরত হাসান(রাঃ) ও হযরত হুসাইন(রাঃ) তিনি নামাজ পড়ার সময় তার কাঁধে চেপে যেতেন বলে জানা যায়। রাসুল(সাঃ) তারা যতক্ষন উঠতনা ততক্ষন পর্যন্ত তাঁর সাজ'দা কে দির্ঘায়িত করতেন। এই দুটি ঘটনার পক্ষে সহিহ হাদিস আমার জানা নাই বলে তার রেফারেন্স দিতে পারছিনা তবে অনেক নির্ভরযোগ্য ব্যাক্তির লিখায় এর উল্লেখ দেখেছি। আরো অনেক সহিহ হাদিসে আছে রাসুল (সাঃ) বিভিন্ন কারনে নামাজের মাঝে কোন কাজ করেছেন এবং সেই নামাজেই আবার ফিরে এসেছেন। কোন শিশুর কাজ তাঁর নামাজ নষ্ট করেনি।
অথচ আমাদের দেশে মসজিদে প্রতি ওয়াক্তেই অনেক ইমাম সাহেবরা কাতার বন্দি হওয়ার আহ্বান এর সাথে ছোট ছেলেদের পিছনে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেন। অনেকই বলেন যে ছোট ছেলে কাতারের মধ্যে থাকলে নাকি নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এর পক্ষে কোন শরিয়তি দলিল কিন্তু তারা উপস্থাপন করতে পারেননা। এই নিয়ে প্রশ্ন তুললে যে জবাব পাওয়া যায় তা হলো মুরুব্বিরা এ কথা বলেছেন বা বলছেন। অনেক সময় প্রশ্নকারিকেই বেয়াদব বলে অভিহিত করেন। তারা শরিয়তের দলিল এর চেয়ে মুরুব্বিদের কথাকেই গুরুত্ব বেশি দেন। এই অভিজ্ঞতা আরো একবার হোল আজকে । সমুদ্রের কাছে এক মনোরম পরিবেশের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করছিলাম আজকে। খুতবা শেষ হওয়া মাত্র আমার পাশে দাড়ান এক বয়স্ক ব্যাক্তি সামনের কাতারে দাড়ান একবছর তিনেক বয়সি ছেলের হাত ধরে টান দিলেন এবং ছেলেটির পাশে দাড়ান অভিভাবক কে বললেন ছেলেটিকে পিছনে পাঠাতে। ছেলেটির অভিভাবক তাকে পিছনে পাঠিয়ে দিলেন। শেষ কাতারে আরো কয়েকটি ছেলের সাথে সে দাড়াল। ৫-৬ বছর বয়সি সেই ছেলেগুলি অভিভাবক দের হাত থেকে মুক্ত হয়ে নামাজে মনোযোগ না দিয়ে দুষ্টামিতে মত্ত হলো। নামাজ শেষে সেই বয়স্ক ব্যাক্তিই আবার দাবি করলেন যে এই শিশুগুলির জন্য তার নামাজ নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় সামনের কাতারে একজন একটি দৈনিক পত্রিকা বেশভালভাবেই ভাজ করে তার সামনে রেখেছিলন যাতে কোন ছবি দেখা না যায়। তাকেও সেই ব্যাক্তিটি খানিকটা হম্বিতম্বি করলেন যে তার জন্য নাকি সবার নামাজ নষ্ট হয়েছে। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেয় মুসুল্লিটিকে নামাজ এর সময় নির্দিষ্ট জায়গা বাদ দিয়ে পরের কাতারের সামনে তিনি কেন দৃষ্টিপাত করেছিলেন সেই প্রশ্ন করিনি। এভাবে শিশুদের পিছনে সরিয়ে দিয়ে এবং তারা যখন অভিভাবক দের থেকে নামাজ শিক্ষার সুযোগ এর বদলে সাথিদের কাছে পেয়ে বয়স এর ধর্ম অনুযায়ি দুষ্টামি বা খেলায় লিপ্ত হওয়ার সুযোগ দিয়ে অাবার পরে তাদেরকে নামাজ নষ্ট করার জন্য বকাবকি করে তাদেরকে মসজিদে আসতে অনুৎসাহিত করা হয়। এভাবে শিশুকাল থেকে মসজিদে যেতে উৎসাহিত করার বদলে আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করে কিভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করব?
এই ব্যাপারটি আমাদের মধ্যে এমনভাবে ঢুকে গেছে যে গত রমজানের ঈদে চট্টগ্রাম ষ্টেশন রোড জামে মসজিদের খতিব নামাজপুর্ব বয়ানে শিশুদের সাথে এই ধরনের আচরন না করার জন্য বারবার মুসুল্লিদের আহবান জানান সত্বেয় পরে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান। তিনি বলেন যে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর নামাজ যাতে নষ্ট হয়নি তাতে আমাদের নামাজ কেন নষ্ট হবে।
আজকের এই অভিজ্ঞতার পর ঘরে এসে ইন্টারনেট এ পড়লাম একটি ছোট্ট সংবাদ। পোপ ভ্যাটিকানে ধর্মিয় ভাষন প্রদানের সময় একটি ছোট্ট ছেলে মঞ্চে উঠে পড়ে এবং একপর্যায়ে পোপের নির্দৃষ্ট চেয়ার টিতে বসে এবং পোপ এর আলখাল্লা ধরে টান দেয়। পোপ এর রক্ষিরা চকলেটের লোভ দেখিয়েও বাচ্চাটিকে অনেক্ষন পর্যন্ত নামাতে পারেনি। কিন্তু পুরা ঘটনার সময় পোপ তার ভাষন বন্ধ করেননি এবং বাচ্চাটি যখন তার পোষাক ধরে তখন একহাত নামিয়ে তাকে আদর করছিলেন। এই ঘটনাটি পড়ে আমার মনে পড়ল আল্লামা ইকবালের "জওয়াব-ই শিকওয়ার" সেই অমর পংতি।
"সুবিচার সে যে প্রকৃতির রীতি,
প্রকৃতি খেলাপ করেনি তার।
কাফের লভিল হুর গেলমান,
মুসলিম নীতি করিয়া সার।"
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন