একলা থাকার বেলা
লিখেছেন লিখেছেন ছিঁচকে চোর ০৮ জুন, ২০১৪, ১১:৪৩:৪৭ সকাল
একটা আপুর বিয়েতে গেলাম। বউয়ের সাজে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো আপুকে। এরকম বউয়ের সাজে কাউকে দেখলে বুকের ভেতরটা ক্যামন যেন করে ওঠে। আমার আপুদের কথা খুব মনে পড়ে। আমার তিনটা আপুই এরকম করে বউ সেজেছিলো। তারপর সেই যে শ্বশুর বাড়িতে গেলো সাথে করে বাসার সবার হাসিটাও নিয়ে গেলো
আমার স্কুল যাওয়া, পড়া শোনা, খেলাধুলা, আদর-শাসন, তারপর কলেজ জীবনটার অলিগলি, ইউনি’র ক্যাম্পাসে পা রাখা, শপিং, ঘুরাঘুরি, গল্প করে রাত পার করে দেয়া সঅঅঅঅব কাজে সব কিছুতে কোনো না কোনো আপু বা আপুদের তিনজনেরই ছাপ রেখে যাওয়ার গল্প জড়িয়ে। পেছনে ফেলে আসলেও যেই গানের জগতটা আজও পাগলের মত ভালোবাসি সেই জগতে পা রাখা এবং অনেকটা পথ চলা আপুদের হাত ধরেই। গল্পের বই পেলে ‘আমি’ মেয়েটার হুশ না থাকার পেছনের অবদানটাও আপুদের।
বড়াপ্পি, মেঝাপ্পি, ছোটাপ্পি আর আমি। আব্বুম্মু বলেন চারটা জান্নাত। আমরা চারটা বোন সাথে কত্ত কত্ত গল্প। কিছু ফেলে এসেছি, কিছু চলছে, কিছু থাকবে সামনে।
চার জন মিলে এক বিছানায় ঘুমাতাম। আপুদের মুখে গল্প না শুনলে ঘুমই আসতোনা। বড়াপ্পির যখন বিয়ে ঠিক হলো তখন আমি খুব ছোট এবং ওটাই আমার প্রথম দেখা বিয়ে। আপুর বিয়ের কথা শুনে খুশিতে দাঁত বেরিয়ে গিয়েছিলো আমার। বিয়েতে নাকি সবাই কত রকম মজা করে! এইবার আমিও মজা করবো। সেই মজা আর হলোনা। বড় আপুকে নিয়ে গেলো শ্বশুর বাড়ি। এই কারনে দুলাভাইর সাথে আমার মারাত্মক ঝগড়া ছিলো। আপু চলে যাওয়াতে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিলাম কারন আমার ধারনাতেই ছিলোনা যে বিয়ে হলে চলে যেতে হয়। অনে….কটা সময় লেগেছিলো আমার স্বাভাবিক হতে।
বড়াপ্পি চলে যাওয়ার পর তিন বোন হলাম বাসার বাসিন্দা, তখনও ছোটাপ্পি হোস্টেলে থাকতো। বেশির ভাগ সময়ই আমি আর মেঝাপ্পি থাকতাম বাসায়। ছোটাপ্পি এলে তো আরো মজা। সারা দিনের ব্যস্ততা দৌড় ঝাপ শেষে সন্ধ্যায় তিন বোনের ঝাপি খুলে বসা। কখোনো কখোনো বড়াপ্পিও যোগ দিত ফোনে। ফোন কাড়াকাড়ি করে যে যার যার গল্প শেয়ার করতাম। বড়াপ্পি বাসায় থাকলে তো কথাই নেই। রাতে আমাকে মাঝে রেখে দুই বোন দুই পাশে শুতো। আমার ছিলো ভারি মজা। যেদিকে ফিরেই ঘুমাই কোল বালিশ রেডি। আপুদেরকে কোল বালিশ বানিয়ে আরামসে ঘুমাতাম। ছোটাপ্পি থাকলে মেঝাপ্পির একটু খানি আরাম হতো। কন্টিনিউয়াস কোল বালিশ হতে হতোনা ওকে। ক্লাস এইটে যখন পড়ি তখন মেঝাপ্পিও একদিন চলে গেলো তার শ্বশুর বাড়ি। ততদিনে ছোটাপ্পি হোস্টেল ছেড়ে বাসায় থিতু হয়েছে। গল্প বলাটা ছোটাপ্পিই চালিয়ে যেতো। ফোন কাড়াকাড়ি হতো দুজনের মধ্যে। কিন্তু রাতে ঘুমের ঘোরে অভ্যাস মতো আপুর গলা জড়িয়ে শুতে গিয়ে দেখতাম মেঝাপ্পির জায়গাটা খালি। ঘুম আর হতোনা। জানালার পাশে বসে কাঁদতাম ইচ্ছামত। প্রায় সময়ই ছোটাপ্পিও হতো আমার কান্নার সঙ্গি। দুই বোন মিলে কখোনো চুপচাপ কাঁদতাম কখোনো ফেলে আসা দিনগুলোর গল্প বলে বলে কাঁদতাম।
ইউনিতে ভর্তি হওয়ার আগ মুহূর্তে ছোটাপ্পির বিয়ে হয়ে গেলো। এখন আমাদের চার বোনের কিং সাইজের বিছানাটাতে আমি একাই থাকি, আপুদের কথা মনে পড়লে একাই কাঁদি। সঙ্গি হয়না কেউ। তিন বোনের সাথে আমি একাই কথা বলি, কাড়াকাড়ি হয়না এখন আর। আর খুব মিস করি গল্প শোনার রাত গুলো।
পিচ্চি ভাগনে রাইদ একদিন বলছিলো ছোট খালামনির বিয়ে হয়ে গেলে নানু বাসায় আর কেউ থাকবেনা। ওর কথাটা শুনে আম্মুকে ধরে খুব কেঁদেছিলাম। আম্মু প্রথমে এটাকে আমার আর দশটা পাগলামীর মত পাগলামী ভেবে বিরক্ত হলেও পরে আমাকে লুকিয়ে আম্মুও কেঁদেছে সমানে।
আপুদের বিয়ে দেখার পর এখন আমার কাছে বিয়ে মানেই চলে যাওয়া। তাই বিয়ে টিয়ে ভাল্লাগেনা খুব একটা। কোনো বিয়েতে যেতেও ভাল্লাগেনা। আর গেলেও তাড়াতাড়ি চলে আসি যেনো কান্নাটা দেখতে না হয়। ভাইয়ার বিয়েতে ভাবির আর তার ভাই বোনদের কান্না দেখে আমিও কেদে ফেলেছিলাম। কান্নাকাটিতে ব্যস্ত থাকায় কেউ সেটা খেয়াল করেনাই তাই রক্ষা।
যেই আপুটার বিয়েতে গেলাম তার ছোট ভাই বোন গুলোকে দেখে কষ্টটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ওরাও এখন থেকে একা হয়ে যাবে আমার মতো।
মন খারাপ হলে চট করে চলে যাই বড়াপ্পি মেঝাপ্পি বা ছোটাপ্পির বাসায়, যদি সুযোগ থাকে। যখন তখন ফোনে বা স্কাইপে কথা হয়, চ্যাট হয়। সব আপুরা একসাথে বাসায় আসলে মনে হয় আমার চেয়ে সুখি আর কেউ নাই। কিন্তু যত যাই হোক পেছনে রেখে আসা গল্প শুনার চ্যাপ্টাররা তো আর ফিরে না। খুব জালাতন করে সেই দিনগুলো, চোখটা শুধু শুধুই ঝাপসা করে দেয়। বার বার চশমা খুলে চোখ মুছি আবার ঝাপসা হয়ে যায়।
মনে হলেই যখন চট করে আপুদের বাসায় চলে যাওয়াটা সম্ভব হয়না, যখন তখন ফোনে কথা বা চ্যাট করা সম্ভব হয়না তখন পথিকৃৎ এর সিডিটা ছেড়ে জুম্মি আপুর ‘কাঁচের চুড়ি’ শুনি আর আমাদের রৌদ্র ঝরা বেলাটা খুব মিস করি খুব!!!
আর কতবার বলবো যে লেখাটা আমার নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ আপনার জন্য ভাল একটা ঘর জামাই দেখতে বলেন আপনার আব্বু আম্মু ও আপুদের । বাড়ির ছোট মেয়ে বলে কথা ! পাত্র পক্ষকেও সেভাবে আগে ভাগে জানিয়ে রাখবেন ।তাহলে সমস্যা হবার কথা না ।
''আর কতবার বলবো যে লেখাটা আমার নয়।''
০ জ্বি , লেখাটা যে আপনার না অন্য কারও এটা আপনার বারংবার বলা থেকেই বুঝেছি ।
( পুরাই '' ঠাকুর ঘরে কে রে ? আমি কলা খাই না '' স্টাইল )
মন্তব্য করতে লগইন করুন