"পরিবর্তনটা হোক ইতবাচক"

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৫৭:৩৯ দুপুর

প্রানীজগতের মধ্যে যে কয়েকটি প্রানী সামাজিক-পরিবারিক মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাদের মধ্যে মানুষ তার অন্যতম। মাতৃগর্ভে থাকা থেকেই শুরু হয়ে যায় পারিবারিক ভালবাসা পাওয়া। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকেই জীবন ঘনিষ্ট বিষয়গুলো শিখতে থাকে নিজ পরিবার-সমাজ থেকে। বংসাক্রমিক জিনগত তারতম্য এবং পরিবার/সমাজ পরিস্থিতির উপর অনেকটাই নির্ভর করে কেমন ধরনের স্বভাব গড়ে উঠবে। ছোট বেলা থেকে শুরু করে মানুষের স্বভাব/অভ্যাস ধাপে ধাপে তৈরি হতে থাকে। অনেকটা কাঁদা মাটি দিয়ে সৃষ্টিশীল কিছু তৈরি করার মতো। মাটি নরম থাকতে থাকতে এর পরিবর্তন-পরিবর্ধন সহজতর কিন্তু মাটি যতই শক্ত হতে থাকবে পরিবর্তনটাও ততই কষ্টস্বাধ্য হবে। ঠিক তেমনি একবার স্বাভাব/অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে তার বদলনো খুব সহজ হয় না।

আজ ফেইজবুকে এক বন্ধু একটি বানীর ব্যনার পোষ্ট করেছে তাতে লেখা আছে - "মানুষ কখনো ইচ্ছে করে বদলায় না, কিছু মানুষের অবহেলা কিছু স্মৃতি এবং কিছু অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মানুষকে বদলে যেতে বাধ্য করে"



ব্যনারে বর্ণিত বানীটাকে নিয়ে থিতু হয়ে কিছুক্ষন ভাবলাম। সত্যিই কি মানুষ নিজেকে বলদে ফেলতে পারে? আর বদলানোর প্রক্রিয়াটা কি এতোই সহজ হয়? কাঁদা মাটি একবার শক্ত হলে তা বদলাতে গেলে তো ভেঙ্গে যায়, আগের মতো থাকেনা। তবে কি মানুষও এই বলদে যেতে গিয়ে ভেঙে যাওয়ার সম্ভ্যাবনা থাকে?

১. বেশকিছুদিন আগে পত্রিকার পাতায় একটা মন খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো সংবাদ পড়েছিলাম। বদলে যেতে গিয়ে ভেঙ্গে যাবার গল্প। লেখনীর সার্থে সংক্ষেপে বলছি। যে মেয়েটি বদলাতে গিয়ে ভেঙে গিয়েছিল তার গল্প। ছোট বেলা থেকেই খুব হাসি-খুশি-মিশুক স্বভাবের মেয়ে ছিল। অল্পতেই সবার মন জয় করার জাদুকরী ক্ষমতা ছিল তার স্বভাবে। চারপাশের সবাই শ্রেণীমতো তাকে খুব পছন্দ করে। আবীর ছেলেটিও তাকে খুব পছন্দ করে, অন্য সবার চেয়ে একটু বেশি। ঘরের গৃহিনী হবার স্বপ্ন দেখায় মেয়েটিকে। স্বপ্নে বিভোড় মেয়েটির দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে এক প্রকার জোড় করেই শারীরিক স্বাদ নিয়ে নেয় ছেলেটি। স্বপ্ন ভেঙে যায় কাঁচের গ্লাস ভাঙার মতো। নিজের ইচ্ছের বিরেদ্ধে ধর্ষিত হয়ে চুপসে যায় মেয়েটি। আবীরের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় কিন্তু আবীর এতো সহজে ওকে ছাড়েনি। ঐ দিনের অত্যাচারের ভিডিও করে রেখেছিল। তা দিয়েই দিনের পর দিন ব্লাকমেইল করে শুকুনের মতো ঢুকরে ছিন্নভিন্ন করতে থাকে মেয়েটিকে। মেয়েটি নিজেকে বদলাতে থাকে। প্রথম প্রথম ইউনিভারসিটি যাওয়া বন্ধ করে, ঘরকোণে হতে থাকে, সবার সাথে মেশা বন্ধ করে, ঘটে যাওয়া ঘটনা কাওকে বলতেও পারে না সহ্যও করতে পারে না। বদলাতে বদলাতে একনি মনাসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরে। - এখানে মেয়েটি ইচ্ছে করে বদলায়নি, একজন অমানুষের অত্যাচার কিছু সহ্যহীন স্মৃতি এবং কিছু অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তাকে বলদে যেতে বাধ্য করেছে।

২. আমাদের পাশের এলাকার একটি ছেলের বদলে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ছে। ছেলেটি কোন একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল। দলের হয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় সরব থাকতো। একবার কোন এক ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার জন্য খুঁজছিল। গা ঢাকা দেবার জন্য তাবলিগ জামাতে যোগ গিয়ে ৩ মাসের জন্য উধাও। তাবলীগ জামায়াতে সময় দিয়ে যখন এলাকায় ফিরে আসলো তখন সবাই দেখলো বলদে যাওয়া কাউকে। সুন্নাতি দাড়ি, পাঞ্জাবী, মাথায় টুপি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, আগের মতো কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার তো দূরের কথা রাগ করেই কথা বলে না। বরং খুব মিনতি করে অন্যজনকে বুঝায় ইহকালের করনীয় কি, পরকালের পরিস্থিতি কি হবে এই কথা।

৩. এক লোক একটা সময় অনেক গরিব ছিল। সারাদিন যা উপার্জন করতো তাই দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই সুখী ছিল। সকালে স্ত্রী-সন্তানকে আদর করে কাজে বের হতো দিন শেষে ঘরে এসে সন্তানকে নিয়ে খেলতো, স্ত্রীকে তার কাজে টুকটাক সহায়তা করতো। আস্তে আস্তে কাজের চাপ বাড়ছে, ব্যস্থতা বাড়ছে, অর্থনৈতিক পরিবর্তন হচ্ছে। এখন আর আগের মতো স্ত্রী-সন্তানকে সময় দিতে পারেনা। এখন তার পকেট ভর্তি টাকা থাকে, চালচলন স্বভাবেও এসেছে দারুন পরিবর্তন। এই পরিবর্তনগুলোতেও তার স্ত্রীর কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু হঠাৎ একদিন স্ত্রী টের পায় নতুন পরিবর্তনের তার স্বামী আজ মদ খেয়ে ঘরে এসেছে। এই নিয়ে শুরু হয় পারিবারিক কলহ। স্ত্রীর অভিযোগ তার স্বামী অনেক বদলে গেছে। আগের মতো তাকে আর ভালোবাসে না।

হুম, পরিবেশ-পরিস্থিতির কারনে মানুষ বদলাবেই। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। কিন্তু এই বদলানোটা নেতিবাচক না হয়ে ইতিবাচক হওয়া কাম্য। পরিবর্তনটা হোক নিজের কল্যানে, প্রিয় মানুষটির কল্যানে, পরিবার-সমাজের কল্যানে।

বিষয়: বিবিধ

৩৩৯১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366634
২১ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০১:৩৭
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে অকারনে বদলায়, সকাল বিকাল বদলায়।
বদলাতে গিয়ে যখন কারোও জীবনটাই শেষ হয়ে যায় তখন তাকে আর বদলানোর সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। ধন্যবাদ আপনাকে
366639
২১ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০২:২৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : অনেক কিছুই মানুষকে বদলায়। তবে সবচেয়ে দ্রুত যে জিনিষটি মানুষকে বদলায় তা হল সঙ্গ দোষ। সৎ সঙ্গে সর্গবাস, অসৎ সঙ্গ সর্বনাশ।

হাদিসে এসেছে: একাকী বসে থাকা ভালো খারাপ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার চেয়ে, এবং ভালো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া ভালো একাকী বসে থাকার চেয়ে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারেঃ আতর বিক্রেতার সাথে মিশলে অন্তত ঘ্রাণ পাওয়া যায়, আর কামারের সাথে মিশলে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়।
ধন্যবাদ

366642
২১ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০২:৪৫
হতভাগা লিখেছেন : আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য ততক্ষন পরিবর্তন করেন না যতক্ষন না তারা নিজেরা নিজেদের জন্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হয় ।
366659
২১ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৫:৫২
শাহাদাত হুসাইন নবীনগর লিখেছেন : বদলে যাওয়া হোক দুনিয়াও আখিরাতে কল্যাণময় জীবন যাপনের জন্য।
366714
২২ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০২:৩৬
আফরা লিখেছেন : পরিবর্তিত হতে পারা সুস্থ্য মানুষের চরিত্রের একটি অনন্য বৈশিষ্ঠ। এই জগতে অন্য কোনো প্রাণী নিজের আচার-আচরন-প্রকাশভঙ্গিকে এতভাবে পরিবর্তিত রূপে প্রকাশ করতে পারে না। তবে কে, কিভাবে, কোন পরিস্থিততে, কি উদ্দেশ্যে, কোন প্রক্রিয়ায় নিজের পরিবর্তনের চেষ্টা চালাবে আর এর ফলে সে নতুন কি অবস্থায় পড়বে তা প্রায় সব ক্ষেত্রেই অনিশ্চিত - কারন কাজ করে মানুষ, কিন্তু কাজের ফলাফল নির্ধারন করেন মহান আল্লাহ। ধর্মীয় শিক্ষায় ধর্মীয় যুক্তিতে, কর্মক্ষেত্রে ব্যাবসার যুক্তিতে, এরূপ বিভিন্নভাবে মানুষকে পরিবর্তনের আহবান জানানো হয় বিভিন্ন ইতিবাচক/নেতিবাচক উদ্দেশ্যে। মানুষ চাইলেই নিজের ভিতরে-বাহিরে নানারকম পরিবর্তন আনতে পারে তার নিজের শিক্ষা-বিশ্বাস-চেতনা ও পারিপার্শিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে। মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসাই স্বাভাবিক,
384832
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০৩:৩০
আবু জারীর লিখেছেন : একটা ছেলে ভালোই ছিল, মা-বাবা ভাই-বোনের জন্য সে জীবন দিতেও প্রস্তু ছিল। এক পর্যায়ে সে বদলে গিয়ে সাধারণ ধর্মীক জীবন থেকে অতি ধার্মীক হয়ে গলে। আর বিপত্তিটার শুরু সেখান থেকেই...। পজেটিভ পরিবর্তন ভালো নেগেটিভ পরিবর্তন আর অতি পজেটিভ পরিবর্তন সাধারণত হীতে বিপরীত হয়। সুন্দর লিখেছেন দাদা। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File