"আর একবার সাধিলে খাইবো"
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৩৮:১২ দুপুর
"অভিমান" মানুষের স্পর্ষকাতর একটি মানষিক অনুভূতি।যাকে খুব বেশি ভালবাসে সেই প্রিয় মানুষটির সাথেই মূলত মনের এই অভিযোগ "অভিমান" করা হয়। প্রিয় মানুষটি একটু আদর করে ডাক দিলেই জমাট বাধা বরফ অভিমান গলে তরলে পরিনত হয়ে ভালবাসার উষ্ণ স্পর্শ ছুঁইয়ে দেয় প্রিয় মানুষটির হৃদয়ে।
ছোট বেলায় দাদীর কাছে একটি কুসংষ্কার শুনেছিলাম গামছা-গেণ্জি নাকি ফুটো হলে সেলাই করে পরা নিষেধ-এতে অমঙ্গল হয়। দাদীকে বলতাম, গামছার এই ছোট ফুেটো যদি এখনই সেলাই করে বন্ধ করা না হয় তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই এই বড় ফুটোয় পরিনত হবে এবং বড় ফুটো যদি সেলাই করার সম্ভ্যব না হয় তবে গামছাটা-ই ফেলে দিতে হবে।
"অভিমান" টা এমনই এটা ছোট ফুটো। যেই প্রিয় মানুষটির সাথে অভিমান করা হয়েছে সে যদি দ্রুত এই ফুটো বন্ধ না করে তবে এই ফুটো ধীরে ধীরে বড় ফুটোয় পরিনত হবে আর একবার বড় হয়ে গেলে তা সেলাই করা কষ্টকর। ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে প্রিয় সম্পর্কটাই গামছার মতো ফেলে দিতে হবে।
অভিমান নিয়ে কয়েকটি গল্প বলি -
১. ছেলে খুব দুষ্টমি করছে বলে মা বকা দিয়েছে। মা কেন বকা দিল এই রাগে সে ভাত খাবেনা। অভিমানে ফোটকা মাছের মতো দু-গাল ফুলিয়ে পড়ার ঘরে বসে আছে। সেই কখন থেকে মা ডাকছে আয় বাবা দুপুরের ভাত খেয়ে যায়। অভিমান তখনো ভাঙ্গে না কারন মা কেন আদর করে ডেকে নিয়ে ভাত দিচ্ছে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল খিদে পেট চৌ চৌ করছে কিন্তু মা তো এখন আর ডাকছে না। তাই একটা কাগজে লিখলো, "আর একবার সাধিলে খাইবো"। এই লেখা দেখেতো মা দ্রুত ভাত মেখে নিয়ে এসে সরি বাবা আর বকা দেবে না বলতে বলতে কপালে একটা চুুমু দিয়ে এক নলা ভাত মুখে দিল। মায়ের আদর পেয়ে অভিমান বাষ্প হয়ে উবে গেল।মায়ের হাতে থেকে গপাগপ ভাতে খেয়ে খেলার মাঠে ভূ-দৌড় দিল।
২. কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়া একিট ঘটনা। ছাত্রী হোস্টেলের কক্ষে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্বহত্যা করেছে এক ছাত্রী।প্রথমে সবাই ধরেই নিয়েছিল হয়তো প্রেমের কেইস। কিন্তু টেবিলে রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট বলে অন্য কথা। মৃত্যুর আগে সবকথাই লিখে গেছে মেয়েটি।অভিমান-ই তার মৃত্যুর একমাত্র কারন।
বাবার সাথে অভিমান করে মেয়েটি নিজের জীবন ত্যাগ করেছে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে খুবই অবাক হয়েছি। পৃথিবীতে প্রেমিক/প্রেমিকার ভালবাসার জন্য আত্বহত্যা প্রায় প্রতিদিনই হয় কিন্তু বাবার ভালবাসার জন্য আত্বহত্যা বিরল মনে হয়েছে।
কোন এক বিষয়ে বাবা-মেয়ে তর্ক করে একে অপরের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। কেউ কারও সাথে কথা বলে না। মেয়েটি ভেতরে ভেতরে প্রত্যাশা করছিল বাবা যদি একবার নাম ধরে ডাক দেয় তবে বাবার বুক ভাসিয়ে দিবে কান্নায়। কিন্তু বাবা মেয়ের অভিমান না ভাঙিয়ে নিজেও অভিমান নিয়ে বসে ছিল। মেয়ে একবার বাবা বলে ডাক দিলেই সব অভিমান ভেঙে মেয়েক বুকে টেনে নিতেন।
৩. আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রায় সব পরিবারেই এমন সদস্য আছে যারা একটু বেশিই অভিমান করে। এদের নিয়ে পরিবারের কম-বেশি সবাই পেরেশানিতে থাকে। এদের মান ভাঙানোর জন্য অনেক তৈল মর্দন করতে হয়। ধরুন, ছোট বোন কোন কারনে অভিমান করে বলল এই ঈদে নতুন জামা নিবো না। এখন তো কোন ভাবেই সে নতুন জামা নিচ্ছে না। বাবা-মা-বড় ভাই-আপা সবাই বুঝাচ্ছে কিন্তু না, কিছুতেই নিবে না। একটা সময় মন গললেও হ্যা বলতে পারছেনা কারন এখন নতুন জামা নিবো এই বললে কেমন দেখা যায়। সবাই নিশ্চই পঁচাবে। পাছে কেউ কিছু বলবো নিশ্চই। তাই, ইচ্ছে থাকা সত্যেও নতুন জামাটি আর পরা হয়না ঐ অভিমানের কারনেই।
পরিশেষে, অভিমান ভালবাসারই একটা অংশ। যে অভিমান করে আর যার উপর করে উভয়েরই এই সম্পর্কে জানতে হবে। ভালবাসার মানুষটির উপর যেমন অভিমান করবে ঠিক তেমননি প্রিয় মানুষটিও তার অভিমানের মূল্যায়ন করবে এবং অভিমানি মানুষটিও তার অভিমানকে ভালবাসায় বদলে দিবে - এমনটা প্রত্যাশা করি লেখাটি এখানেই শেষ করছি।
বিষয়: বিবিধ
১৯৯৬ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ লেখাটি আপনার দৃষ্টিগোচর হওয়ায়।
০ ব্রাজিল / আর্জেন্টিনা ৭/৪ গোল খেলে তাদের বাংলাদেশীয় সমর্থকেরা প্রাণ দিয়ে ফেলে । এটা কিভাবে তারা (ব্রাজিল/আর্জেন্টিনা)ম্যানেজ করতে পারে ?
অনেক কথাই লিখে পেললাম, ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার লিখাটি দারুন লেগেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন