সূর্যগ্রহন নিয়ে কুসংস্কার
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ২২ মার্চ, ২০১৫, ০১:৩৯:৪৪ দুপুর
সেই ছোট বেলা থেকেই মুরব্বীদের কাছ থেকে শুনে আসছি সূর্যগ্রহন সম্পর্কে নানাবিধ সুসংস্কার। যাচাই-বাছাই করার কোন সুযোগ না থাকায় প্রায় সবাই কুসংস্কারগুলো বিশ্বাস করতো এবং মেনে চলতো।
সূর্যগ্রহন সম্পর্কে অন্যতম কুসংস্কার:
বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা সবচেয়ে বেশি মেনে চলে সূর্যগ্রহন/চন্দ্রগ্রহন বিষয়ক কুসংস্কারগুলো।তারা বিশ্বাস করেন যে সূর্যগ্রহনের সময় কিছু খেলে পেটের সন্তান পেটুক হয়, এ সময় কিছু কাটলে বিশেষ করে মাছ কাটলে পেটের সন্তানের ঠোঁট, কান,নাক কাটা হয়, কোন গাছের ডাল মটকালে বা ভাঙলে পেটের সন্তানের হাত-পা বাঁকানে হয় (পোলিও), ইত্যাদি।
সূর্য্যগ্রহন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা:
আসলে সূর্যগ্রহন কেন হয় এই কারনটা না জানার কারনে হাজার হাজার বছর ধরে এই সম্পর্কে বহুবিধ কুসংস্কার বিদ্যমান।সূর্যগ্রহনের কুসংস্কারপূর্ন বিশ্বাসময় কারনগুলো মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাহু বা ড্রাগন সূর্যকে গিলে ফেলে।
আর একটি কারন শুনেছিলাম দাদীর কাছে যা পরিষ্কার ভাবে মনে পড়ছে না। সূর্য্য নাকি কার কাছে ঋন করেছে এবং ঋন পরিশোধ করতে না পারায় প্রতিবছর একদিন এর শাস্তি হিসাবে সূর্যকে গিলে খায় অত:পর উগলে দেয়।
ইতিহাসের পাতায় সূর্যগ্রহন:
খ্রিষ্টপূর্ব ৭৬৩ এর ১৫ জুনে একটি সূর্য গ্রহনের কথা উল্লেখিত হয়েছিল একটি অ্যাসেরিয়ান লিপিতে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ আদিম প্রাচ্যের কালপঞ্জির জন্য। সেখানে পূর্বের আরো অন্যান্য সূর্য গ্রহনের তারিখও দাবী করা হয়। ৪০০০ বছর আগে সম্রাট জং কং দু’জন জ্যের্তিবিদকে শিরোচ্ছেদ করেছিলেন, তারা হলেন হিসি এবং হো- যারা একটি সূর্য গ্রহনের ভবিষ্যৎদ্বানী করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে ধরে নেয়া হয়।
সূর্য্যকে নিয়ে গভেষনার ইতিহাস:
জ্যোতির্বিদ্যার আদি ইতিহাস থেকে জানা যায়, অ্যারিস্টার্কাস খ্রিস্টপূর্ব ৩১০-৩২০ অব্দে সূর্যকে কেন্দ্রে স্থাপন করে পৃথিবীকে সূর্যের চারিদিকে পরিভ্রমণরত কল্পনা করেন এবং অন্যান্য গ্রহদের বৃত্তাকাল গতিও সূর্যকেন্দ্রিক বলে ধারণা করেন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্লেটো, অ্যারিস্টটল-এর অধ্যাত্মবাদী দর্শন এবং চার্চ-এর আধিপত্যের কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। মানুষ দীর্ঘদিন জেনে এসেছিল, তাদের প্রিয় আবাস পৃথিবী সৌরজগতের কেন্দ্রস্থলে।
এই চিন্তাধারায় আঘাত করে নিকোলাস কোপার্নিকাস সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বের মডেল বা প্রকল্প হাজির করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি মহাজাগতিক বিভিন্ন ঘটনা, গ্রহের গতি, ক্রান্তিবিন্দুর অয়ন-চলন, ঋতু পরিবর্তনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেন।
পরবর্তী সময়ে টাইকো ব্রাহে, জোহান কেপলার, জিওর্দানো ব্র"নো, গ্যালিলিওসহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের নানা আবিষ্কার এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্ব বা সৌরজগতের ধারণা।
সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের তত্ত্ব সমর্থন ও প্রচার করার জন্য জিওর্দানো ব্র"নো (১৫৪৮-১৬০০)-কে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, গ্যালিলও গ্যালিলি (১৫৬৪-১৬৪২)-কে নিক্ষেপ করা হয় অন্ধকার কারাগারে।
আর এখন আধূনিক বিজ্ঞানের যুগে আমরা জানি কেন সূর্য্যগ্রহন হয়।সৌরজাগতিক গ্রহগুলির ঘূনিয়নের চক্রে সূর্য্য আর পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ এসে যাওয়ার কারণে চাঁদের ছায়া সূর্য্যের উপর পরে যাকে আদিকাল থেকে আমরা সূর্য্যগ্রহন নামে চিনি। আর চিকিৎসা বিজ্ঞান দৃঢ়ভাবে প্রত্যাক্ষান করেছেন ভ্রান্ত কুসংস্কারগুলোকে। সূর্য্যগ্রহন কালীন গর্ভবতী মায়ের ও সন্তানের কোন প্রকার ক্ষতিই হয়না।
আসুন, কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে যে যার অবস্থান থেকে সত্যকে সামনে তুলে ধরি।
বিষয়: বিবিধ
৩৭৫৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
** উপরে বর্ণিত কাজগুলোতে স্বাস্থ্যগত সতর্কতা ও কুসংস্কার মিশে একাকার হয়ে গেছে!
আমার জানা মতে-
সূর্য/চন্দ্রগ্রহনের সময়কালে অতিবেগুনী ও অন্যান্য উচ্চক্ষমতার রশ্মিগুলো গর্ভস্থ সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার সমূহ আশংকা থাকায় ঐ সময়ে গর্ভবতীর ঘরের বাইরে না আসার পরামর্শ দেয়া হয়!
সমাজে প্রচলিত সকল "কুসংস্কার" ভিত্তিহীন নয়- এটাও আমাদের খেয়াল রাখা দরকার!
কোন কোনটির যুক্তি ও তথ্যগত মজবুত ভিত্তি রয়েছে, কিন্তু অজ্ঞদের হাতে পড়ে সেগুলো বিকৃত হয়ে অনেক মন্দের সংমিশ্রণ ঘটে গেছে!
আমরা অনুসন্ধিতসু মন নিয়ে সেগুলো বিশ্লেষণ করে সংস্কার করতে পারি, সেটাই করা উচিত! ঢালাওভাবে "কুসংস্কার" বলে ওগুলো দূর করা দুঃসাধ্য!
এ বিষয়ে তথ্যসূত্র পেলে উপকৃত হতাম!
মজা পেলাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন