“পর্চা”, “দাগ”, “খতিয়ান”, “মৌজা”, “জমা খারিজ”, “নামজারি”, “তফসিল” কাকে বলে??? এবং জেনে নিন ভূমি বিষয়ক জরুরী সব তথ্য..

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৪৪:৫২ সকাল



নামজারী” কাকে বলে?

ক্রয়সূত্রে/উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা যেকোন সূত্রে জমির নতুন মালিক হলে নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলা হয়।

জমা খারিজ”কাকে বলে?

যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে। অন্য কথায় মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমির অংশ নিয়ে নতুন জোত বা খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে।

খতিয়ান” কাকে বলে?

ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাকে “থতিয়ান” বলে। খতিয়ান প্রস্তত করা হয় মৌজা ভিত্তিক। আমাদের দেশে CS, RS, SA এবং সিটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এসব জরিপকালে ভূমি মালিকের তথ্য প্রস্তত করা হয়েছে তাকে “খতিয়ান” বলে। যেমন CS খতিয়ান, RS খতিয়ান…

পর্চা” কাকে বলে?

ভূমি জরিপকালে চূড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তত করার পূর্বে ভূমি মালিকদের নিকট খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি ভুমি মালিকদের প্রদান করা করা হ তাকে “মাঠ পর্চা” বলে। এই মাঠ পর্চা রেভিনিউ/রাজস্ব অফিসার কর্তৃক তসদিব বা সত্যায়ন হওয়ার পর যদি কারো কোন আপত্তি থাকে তাহলে তা শোনানির পর খতিয়ান চুড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়। আর চুড়ান্ত খতিয়ানের অনুলিপিকে“পর্চা” বলে।

মৌজা” কাকে বলে?

যখন CS জরিপ করা হয় তখন থানা ভিত্তিক এক বা একাধিক গ্রাম, ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লা অালাদা করে বিভিন্ন এককে ভাগ করে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে চিহ্তি করা হয়েছে। আর বিভক্তকৃত এই প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে।

তফসিল” কাকে বলে?

জমির পরিচয় বহন করে এমন বিস্তারিত বিবরণকে “তফসিল” বলে। তফসিলে, মৌজার নাম, নাম্বার, খতিয়ার নাম্বার, দাগ নাম্বার, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমাণ সহ ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ থাকে।

“দাগ” নাম্বার কাকে বলে?

যখন জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয় তখন মৌজা নক্সায় ভূমির সীমানা চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদা আলাদ নাম্বার দেয়া হয়। আর এই নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে। একেক দাগ নাম্বারে বিভিন্ন পরিমাণ ভূমি থাকতে পারে। মূলত, দাগ নাম্বার অনুসারে একটি মৌজার অধীনে ভূমি মালিকের সীমানা খূটিঁ বা আইল দিয়ে সরেজমিন প্রর্দশন করা হয়।

“ছুটা দাগ” কাকে বলে?

ভূমি জরিপকালে প্রাথমিক অবস্থায় নকশা প্রস্তুত অথবা সংশোধনের সময় নকশার প্রতিটি ভূমি এককে যে নাম্বার দেওয়া হয় সে সময় যদি কোন নাম্বার ভুলে বাদ পড়ে তাবে ছুটা দাগ বলে। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দুটি দাগ একত্রিত করে নকশা পুন: সংশোধন করা হয় তখন যে দাগ নাম্বার বাদ যায় তাকেও ছুটা দাগ বলে।

“খানাপুরি” কাকে বলে?

জরিপের সময় মৌজা নক্সা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি কলাম জরিপ কর্মচারী কর্তৃক পূরন করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে।

“আমিন” কাকে বলে?

ভূমি জরিপের মাধ্যমে নক্সা ও খতিয়ান প্রস্তত ও ভূমি জরিপ কাজে নিজুক্ত কর্মচারীকে আমিন বলে।

“কিস্তোয়ার” কাকে বলে?

ভূমি জরিপ কালে চতুর্ভুজ ও মোরব্বা প্রস্তত করার পর সিকমি লাইনে চেইন চালিয়ে সঠিকভাবে খন্ড খন্ড ভুমির বাস্তব ভৌগলিক চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে নকশা প্রস্তুতের পদ্ধতিকে কিস্তোয়ার বলে।

“খাজনা” ককে বলে?

সরকার বার্ষিক ভিত্তিতে যে প্রজার নিকট থেকে ভূমি ব্যবহারের জন্য যে কর আদায় করে তাকে খাজনা বলে।

“দাখিলা” কাকে বলে?

ভূমি কর/খাজনা আদায় করে যে নির্দিষ্ট ফর্মে ( ফর্ম নং১০৭৭) ভূমি কর/খাজনা আদায়ের প্রমান পত্র বা রশিদ দেওয়া হয় তাকে দাখিলা বলা হয়।

DCR কাকে বলে?

ভূমি কর ব্যতিত আন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফর্মে (ফর্ম নং ২২২) রশিদ দেওয়া হয় তাকে DCR বলে।

“কবুলিয়ত” কাকে বলে?

সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহণ করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।

“নাল জমি” কাকে বলে?

২/৩ ফসলি সমতল ভূমিকে নাল জমি বলা হয়।

“খাস জমি” কাকে বলে?

সরকারের ভূমি মন্ত্রনালয়ের আওতাধিন যে জমি সরকারের পক্ষে কালেক্টর বা ডিসি তত্ত্বাবধান করেন এমন জমিকে খাস জমি বলে।

“চান্দিনা ভিটি” কাকে বলে?

হাট বাজারের স্থায়ী বা অস্থায়ী অকৃষি জমির যে অংশ প্রজার প্রতি বরাদ্ধ দেওয়া হয় তাকে চান্দিনা ভিটি বলে।

“ওয়াকফ” কাকে বলে?

ইসলামি বিধান অনুযায়ী কোন ভূমি তার মালিক কর্তৃক ধর্মীয় ও সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় ভার বহন করার উদ্দেশ্যে কোন দান করাকে ওয়াকফ বলে

“মোতয়াল্লী” কাকে বলে?

যিনি ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান করেন তাকে মোতওয়াল্লী বলে। ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিত মোতওয়াল্লী ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে না।

“দেবোত্তর” সম্পত্তি কাকে বলে?

হিন্দুধর্ম মতে, ধর্মীয় কাজের জন্য উৎসর্গকৃত ভূমিকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলে।

“ফারায়েজ” কাকে বলে?

ইসলামি বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়াকে ফারায়েজ বলে।

“ওয়ারিশ” কাকে বলে?

ওয়ারিশ অর্থ উত্তরাধিকারী । ধর্মীয় বিধানের অনুয়ায়ী কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যু বরন করলেতার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে যারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে ওয়ারিশ বলে।

“সিকস্তি” কাকে বলে?

নদী ভাংঙ্গনের ফলে যে জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় তাকে সিকন্তি বলে। সিকন্তি জমি যদি ৩০ বছরের মধ্যে স্বস্থানে পয়ন্তি হয় তাহলে সিকন্তি হওয়ার প্রাক্কালে যিনি ভূমি মালিক ছিলেন তিনি বা তাহার উত্তরাধিকারগন উক্ত জমির মালিকানা শর্ত সাপেক্ষ্যে প্রাপ্য হবেন।

“পয়ন্তি” কাকে বলে?

নদী গর্ভ থেকে পলি মাটির চর পড়ে জমির সৃষ্টি হওয়াকে পয়ন্তি বলে।

“দলিল” কাকে বলে?

যে কোন লিখিত বিবরণ আইনগত সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য তাকে দলিল বলা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করেন সাধারন ভাবেতাকে দলিল বলে।

সংগ্রহ: need4engineer.com

বিষয়: বিবিধ

৪৫৪৬ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

292293
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫৫
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : চমৎকার পোষ্ট। স্টিকি করা হোক। এসব বিষয় জানার খুব আগ্রহ ছিলো। Rose Rose
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
235869
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : ধন্যাবাদ মন্তব্য করার জন্য।এই বিষয়গুলো সবারই জানা উচিত।
292300
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১০
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : খুবই গুরুত্বপূর্ন পোষ্ট, অনেক শিক্ষিত মানুষই এসব জানেনা অথচ জানাটা জরুরী। যারা ভাল মানুষ, সৎ ভাবে জীবন যাপন করতে চায়, তাদের পক্ষে জানা আরো বেশী জরুরী। কেননা সৎ মানুষের কাছে এসব জ্ঞান থাকলে অসহায় মানুষ কম ঠকে অন্তত প্রকৃত তথ্য পায়। পোষ্টিটি ষ্টিকি করা হউক। অনেক ধন্যবাদ
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৭
235872
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : ঠিকই বলছেন নজরুল ভাই। আমারও এই বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা ছিলনা। ছোট এক টুকরা জমি কেনার চিন্তার করছি। তাই বিস্তারিত জনার জন্য নেটে ঘাটাঘাটি করছিলাম বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার জন্য।পেয়েও গেলাম। নিজে উপকৃত হলাম তাই প্রিয় ব্লগে পোষ্ট করে দিলাম যাতে প্রিয়জনরাও উপকৃত হয়।
292301
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:২১
কাহাফ লিখেছেন :
একান্ত প্রয়োজনীয় একটা পোস্ট! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
ওয়ারিস ও মিরাস নিয়ে লেখার আবেদন রইল!!
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪
235880
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : কাহাফ ভাই, এইটা আমার লেখা না...আমি যাষ্ট শেয়ার করেছি। দেখি ওই বিষয়ে লেখা পেলে শেয়ার করবো।
292312
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৫১
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। কিছু শিখলাম, সবগুলো মনে থাকবে না। তাই প্রিয়তে রাখলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৪৬
235908
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : স্বার্থক হলো পোষ্টটি শেয়ার করে...এটাই চেয়েছিলাম যেন আমার সাথে সাথে সবাই উপকৃত হয় পোষ্টটি থেকে। ধন্যবাদ মতামত রেখে যাবার জন্য।
292342
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০৫
না বলা কথা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৬
235942
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ...না বলা কথা মন্তব্যর আকারে বলবার জন্য।
292369
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২১
ভিশু লিখেছেন : ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck ভীষণ দরকারী কথা। কিন্তু পড়তে/জানতে মজা লাগে না ১টুও। তাই অনেকে ভুগে থাকেন এবং আমার মতো সামনের দিকে ভুগতেও থাকবেন হয়তো। ধন্যবাদ আপনাকে।
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৬
235943
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : ডাক্তার ভাই, ঠিকই বলেছেন...কেমন যেন প্যাঁচ মারা সম্পর্ক প্রতি পদে...তবু জানতে হবে নিজের স্বার্থেই।
292453
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার ও দরকারি এই পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

এই সংক্রান্ত আইনগুলি কে আধুনিকায়ন জরুরি হলেও সংশ্লিষ্টদের ঘুষের স্বার্থে করা হচ্ছেনা।
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
236011
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : হুম...এই সংক্রান্ত অনেক কিছু অনলাইনে আনার চেষ্টা চলছে কিন্তু এর সাথে জড়িত স্বার্থান্বেষীদের কারনে হয়তো হতে পারছেনা।
292620
০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:১৫
আল সাঈদ লিখেছেন : উপকারী পোষ্ট। ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:০৭
236182
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : ধন্যবাদ সাঈদ ভাই
294399
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০১:০১
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : প্রিয়তে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File