মিথ্যা মিশ্রিত বিশ্রী বিজ্ঞাপন
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ২৪ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৫:৫০ দুপুর
বিজ্ঞাপন হলো চিহ্নিত উদ্যোক্তা কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে, ধারণা, পণ্য ও সেবার নৈর্ব্যক্তিক উপস্থাপনা ও প্রসার। সাধারণত পণ্য ও সেবার প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়।- সুত্র:উইকিপিডিয়া।
সোজাসাপটা বলতে গেলে বিক্রেতা তার পন্যের গুনাগুন,বৈশিষ্ট্য বর্ননা করে ক্রেতাকে তা কিনতে আগ্রহী করাই হলো বিজ্ঞাপন। এখানে বিজ্ঞাপনে পন্যের গুনাগুন-বৈশিষ্ট্য বর্ননায় মিথ্যাচার করা হলে তা হবে ক্রেতার সাথে সরাসরি প্রতারনা।
যোগাযোগের আধুনিতার উৎকর্ষতার হাত ধরে বিজ্ঞাপনের একটি বড় মাধ্যমে হচ্ছে টেলিভিশন মিডিয়া।আর পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই বড় মাধ্যমটিকে ঘিরেই চলছে মিথ্যা মিশ্রিত বিশ্রী বিজ্ঞাপনের মহড়া। ক্রেতাও কোন প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাদের বিজ্ঞপনে আকৃষ্ট হয়ে তাদের পন্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
আসুন এবার জেনে নেই কিছু মিথ্যা মিশ্রিত বিশ্রী বিজ্ঞাপনের হালচাল:
১. আচ্ছা বলুন তো এখন পর্যন্ত কেউ দুই মিনিটে Maggi Noodles রান্না করতে পেরেছেন? আরে ভাই পানি গরম করতেই তো চার-পাঁচ মিনিট লেগে যায়। তারপর নোডলস সিদ্ধ করা ও মসলা মাখানো সাথে যদি সবজি/মাংস কিছু মেশাতে চান তাহলে আরো কমপক্ষে দশ মিনিট প্রয়োজন। তাহলে এই মিথ্যাচারের মানে কি? কাজে ব্যাস্ত ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা?
২.আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকে না ক্রিকেট খেলার সাথে শেভিং ব্লেডের সম্পর্ক কি। বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় ভালো শেভিং করার ফলে ভালো ক্রিকেট খেলছে। আরে আফ্রিদি,গেইল রে তো দেখি সবসময় মুখে খোঁচা দাড়ি নিয়েই মাঠ কাঁপাচ্ছেন।
৩. Fair & Lovely সহ অনেকগুলো কসমেটিক ক্রিম কোম্পানিগুলো তো মিথ্যাচারের উপর ভর করেই রমরমা ব্যাবসা করে যাচ্ছে। তাদের বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় তাদের ক্রিম দিয়ে ৭ দিনের মধ্যে গায়ের রং ফর্সা করা হয়। এটা একটা চরম-গরম বিশ্রি মিথ্যাচার। কারন, চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমান করেছে গায়ের রং কালো-ফর্সা হবার মূল কারন ত্বকের প্রথম স্তারের নীচের ম্যালানিন হরমোন। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে এমন কোন কিছু আবিষ্কার হয়নি যা দিয়ে কালোকে ফর্সা আর ফর্সাকে কালো করা যায়।
৪.Horlicks এর একটা বিজ্ঞাপনে দেখলাম এক ছাত্র ডাক্তারের কাছে গিয়ে আবদার করে তাকে যেন তার বন্ধুর চাইতে লম্বা করে দেন। ডাক্তার তাকে Horlicks খাবার পরামর্শ দেন এবং বর্ননা করেন, "Horlicks বাচ্চাদের Taller, Sharper, Stronger করে" আরে বাহ! কি চমৎকার মিথ্যাচার চিন্তা করলেই রাগে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। তাদের মিথ্যাচারে আকৃষ্ট হয়ে বাবা-মায়েরা নিজে না খেয়ে হলেও বাচ্চাদের Horlicks খাওয়াতে উঠে পরে লেগে যায়। ইস! তাদের যদি এতটুকু বোঝানো হতো যে আপনার বাচ্চাদের দৈনিক আপনার চারপাশে থাকা তাজা শবজি/ফলমূল সহ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান তাহলেই হবে ঐ চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হবার কোন দরকার নাই।
৫. Wheel/Rin সহ কিছু ডিটার্জেন্ট পাউডারের মিথ্যাচার দেখেতো রিতিমতো অবাক। আরে বাপু সাদাকে আবার সাদার চাইতেও সাদা করে কেমন করে।কাপড় সাদা কিংবা রঙিন আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কাপড়কে ময়লামুক্ত করে পরিষ্কার করা। এখানে সাদা কাপড় ময়লামুক্ত পরিষ্কার হয়ে যেমন ছিল তেমন থাকলেই তো হলো নাকি? অহেতুক মিথ্যাচারের আবার কি দরকার?
৬. Sunsilk/Dove Hair fall solution নামে যেই স্যাম্পুর বিজ্ঞাপন আমাদের গিলাচ্ছে তা একটু ভেবে দেখুন তো, এই স্যাম্পুগুলি কি আপনার চুল পরা কখনো রোধ করতে পেরেছে? আসলে চুল পড়ার অন্যতম মূল কারনগুলোর মধ্যে হচ্ছে মাথায় ময়লা জমা,মাথার ত্বক পরিবর্তন,হাইপার টেনশন,গরম পানিতে গোসল সর্বোপরি টেষ্টোটেরন হরমোন কমে যাওয়া।তাছড়া সাভাবিক চুল পরার ব্যাপার তো আছেই। কিন্তু এই সমস্যাকে পুঁজি করে স্যাম্পু কোম্পানিগুলো রিতিমত মিথ্যাচারের গোডাউন খুলে দিয়েছে।
৭. আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন Harpik কখনোই আপনার টয়লেটকে ৯৯.৯৯% জীবানু মুক্ত করতে পারেনা। হুম যে কোন টয়লেট ক্লিনার দিয়ে আপনার টয়লেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে আপনি অনেকটাই জীবনুমুক্ত থাকবেন এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু ৯৯.৯৯% এর গ্যারান্টি কি করে দেওয়া যায় বুঝে আসে না।
৮. আমের জুস বলে কিছু প্রতিষ্ঠান আমাদের মিষ্টি কুমড়ার জুস গিলাচ্ছেন। কৃত্রিম মিষ্টি সেগারেন যা স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর তা জুসের সাথে মেশাচ্ছেন। অথচ চটকদার বিজ্ঞাপনে তাদের জুসকে খাঁটি ও প্রাকৃতিক দাবি করছেন। কেউ কেউ তো আবার কিভাবে নিজস্ব আম বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে জুস বানান তার পুরো প্রকিয়া ভোক্তাকে গিলাচ্ছেন যাতে মিষ্টি কুমড়ার জুস আমের জুস বলে গলধগরন করানো যায়। হায়রে মিথ্যাচার!
৯. একটা ডিওডোরেন্ট বিজ্ঞাপনে দেখনো হয় যে ডিওডরেন্টের কয়েকটি স্প্রেতে ছেলেরা ঐ মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসছে আবার অনুরোপ আর একটিতে মেয়েরা এক ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসছে। আসলেই কি তাই? বাস্তবে যারা ডিওডোরেন্ট ব্যাবহার করেন কখনো কি এমনটা হয়েছে? তাহলে কেন এই মিথ্যাচার?
১০.মডেল মিথ্যাচার। ভাবছেন মডেল আবার মিথ্যাচার হয় কি করে? আচ্ছা ভালো করে ভেবে দেখুন তো একজন মডেল বিজ্ঞাপনে বলছে সে অমুক সাবান ব্যাবহার করে সুন্দরী হয়েছেন,সেলিব্রেটি হয়েছেন তার এই দাবী কি সত্য? আরে সেতো প্রতিষ্ঠিত মডেল হবার পর তাকে দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানো হলো তাহলে এই মিথ্যাচারের মানে কি?
মাত্র দশটা মিথ্যা মিশ্রিত বিশ্রী বিজ্ঞাপনের প্রতি আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম। আসলে পন্যার উৎপাদক প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞাপনের মাধ্যম মিডিয়া, বিজ্ঞাপনে অভিনয় করা মডেল প্রত্যেকেই এই মিথ্যাচারের সাথে সরাসরি জড়িত।
২৪.১১.২০১৪
বিষয়: বিবিধ
১৫০০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই হরলিক্স এর বিজ্ঞাপনটিতে এখন উপরচে ছোট অক্ষরে দেখান হয় এই ধরনের কোন টেস্ট হয়নি ভারতিয় চ্যানেলে। এই কিম্ভুত! বিজ্ঞাপনে কিন্তু অনেক মহিলাই বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট। আর ফেয়ার এন্ড আগলির বিজ্ঞাপনগুলি তো নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। এগুলি রেশিয়াল বা বর্নবাদিতাপুর্ন।
বিজ্ঞাপন মানেই এ্খন মিথ্যা এই শিক্ষাই দেওয়া হচ্ছে বিখ্যাত ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা্লয়গুলিতে।
ঘিলুহীন বাংগালীর মাথায় এমন সাবলীল সুন্দর উপস্হাপনাও ঢুকবে না! অনুভূতিকে একটুও নাড়া দিবে না!
মিথ্যা প্রপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে এ সবের পিছনেই দৌড়াবে!
বিজ্ঞাপনের নামে সবাই মিথ্যাচার করছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন