সুখের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ৩০ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:০২:২৩ দুপুর
এক বনে একটি কাক বাস করত এবং তার জীবন নিয়ে সে টামুটি সন্তুষ্ট ছিল ।কিন্তু এক দিন কাকটি উড়তে উড়তে একটি লেকের পারে যায় সেখানে সে একটি সাদা রাজ হাসের দেখা পায় । এতে সে মনে ভীষন কষ্ট পায় আমি কত কালো ! এতে সে নিজেকে অসুখী মনে করে । কাক রাজহাসকে বলে তুমি দেখতে কত সুন্দর তোমার গায়ের রং কত সাদা তুমি কি বিশ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি ? রাজ হাস চিন্তা করে দুঃখের সাথে উত্তর দেয়
না আমার তো মাত্র একটা রং ! আমার মনে হয় তোতাপাখি শ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি তার গায়ে দুইটা রং । লেকের ধারে পেই ছিল তোতাপাখির বাস কাক তাকে প্রশ্ন করল ? তোমার কত সুন্দর তোমার গায়ে দুই রংগের আলপনায় তোমাকে কত ভাল লাগছে নিশ্চয় তুমি বিশ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি ? তোতা পাখি হতাশ কন্ঠে বলে আমার তো শুধুমাত্র দুটি রং আছে, কিন্তু ময়ুরের একাধিক রং আছে. আমার মনে হয় সেই বিশ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি ? তারপর কাক চিড়িয়াখানা যান এবং খাচায়
বন্ধী একটি ময়ুর দেখতে পান এবং খাচার সামনে শত শত মানুষ ছিল যারা তাকে দেখতে ছিল ।এক সময় মানুষ গুলো চলে যায় তখন কাক ময়ুর কাছে যেয়ে প্রশ্ন করে "প্রিয় ময়ুর,"
তুমি এত সুন্দর !!, . প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তোমাকে দেখার জন্য এখানে আসে অথচ দেখুন মানুষ আমাকে দেখলেই,
তারা অবিলম্বে আমাকে দূরে তাড়ান। আমার মনে হয় তুমিই বিশ্বের সব চেয়ে সুখী পাখি ? ময়ুর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে আমি সবসময় বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং সুখী পাখি নিজেকে মনে করতাম ।কিন্তু আমার সৌন্দর্যের কারনেই আমি এই চিড়িয়াখানা মধ্যে বন্ধী আছি । আর খাঁচায় বন্ধী থাকা পাখি আর পাখি থাকে না এটা কি তুমি উপলব্ধি করতে পার !! কাক এবার মনের আনন্দে আকাশে উড়ে চলল আর মনে মনে চিন্তা করল হোক না আমি কাল তাতে কি আমি যে মনের আনন্দে নীল আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি এর চেয়ে বড় সুখ আর কি হতে পারে ।
******
এটা নিছক একটা গল্প। কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবনেও এমনটা ঘটে থাকে। ছেলে-মেয়ে সবার ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা পরিলক্ষিত হয়। নিজের চেহারার সৌন্দর্য্য, দৈহিক আকৃতি, চামড়ার সৌন্দর্য্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিষন্নতায় ভোগে অনেকেই। নিজেকে অযথাই অন্যদের সাথে তুলনা শুরু করে দেয়।টিভি সিরিয়ালে,নাটকে,মুভিতে নায়ক-নায়িকাদের সৌন্দর্য্যের মতোই নিজেকে কল্পনা করতে পছন্দ করে। কেউ নিজেকে ফর্সা বানাতে উঠে-পরে লাগে। বিভিন্ন নামি দামি কসমেটিক ব্যাবহার করে, ফলাফল অনেকের ত্বক পুড়ে যায় এমনকি স্কিন ক্যান্সারও হয় অনেকের।আবার কেউবা নিজের দৈহিক আকৃতি নায়ক-নায়িকাদের মতো করতে উঠে-পরে লাগে। এর জন্য অতিরিক্ত জিম,ক্ষুদার্থ থেকে অসুস্থ্য হয়ে পরে অনেকে।
এখন, একটাবার চিন্তা করে দেখুন তো আমাদের সবাই কে সৃষ্টি করেছে, কে আমাদের চেহারা অথবা দৈহিক আকৃতি দিয়েছে? উত্তর সহজ, মহান সৃষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।তো তিনিই তো অনেক ভালবেসে আমাদের আপন আপর রূপ দিয়েছেন। অযথা কেন আমরা নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করে মানসিক অতুষ্টিতে ভুগি-কষ্ট পাই-দু:খিত হই এবং নিজেদের অসুখী করি।
একবার কি ভেবে দেখেছেন একটা হাত, একটা পা, একটা চোখ মহান আল্লাহর কত বড় নেয়ামত? নিয়মিত নিরোগ-সুস্থ্য থাকা কত বড় নেয়ামত? বিশ্বাস করুন এমন অনেক হাত-পা-চোখ হারানো মানুষ আছে যারা আপনার-আমার চাইতে বেশি সন্তুষ্টি গুজার করে মহান রবের কাছে। এমন অনেক নিগ্রু কালো, এ্যাবরো থ্যাবড়ো চেহারার অধিকারী মানুষ আমার-আপনার চাইতেও বেশি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি থেকে ইবাদত করে। প্রফুল্লের হাসি দেয়।
আর আমরা ছুটছি ফেয়ার এন্ড লাভলি টাইপের কসমেটিকের পেছনে ঘষে মেজে আল্লাহর সৃষ্টিকে বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে তথাকথিত নায়ক-নায়িকাদের মতো হতে।
তাই আসুন -
=> এসব অসুস্থ্য আজেবাজে চিন্তা থেকে ফিরে আসি।
=> আল্লাহ আমাকে যেমন রং দিয়েছেন, যেমন আকৃতি দিয়েছেন তাতেই তুষ্ট থাকি।
=> অন্যর সাথে তুলনা করে নিজেকে ছোট না করি।
=> যা আছে তাই নিয়ে প্রফুল্ল চিত্তে এক গাল হাসি।
=> নিয়মিত আল্লাহ দেয়া নিয়ামতের শুকরিয়া গুজার করি।
শেষ বারের মতো আরো একবার বলি, "আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতেই তুষ্ট থাকুন দেখবেন কি প্রশান্তির পরশ ছুঁয়ে যায় হৃদয় মাঝে" যদি পারেন, আপনি হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ
৩০-১০-২০১৪
বিষয়: বিবিধ
২৬৮২ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসাধারণ শিক্ষনীয় একটা উপস্হাপনায় অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
মানুষ যদি স্বীয় 'চাওয়ার লাগামহীন ঘোড়া' নিজের আয়ত্বে আনতে পারে তাহলেই প্রকৃত সুখ-প্রশান্তি অর্জন করতে পারবে! অন্যথায় নয়!
চাওয়া-পাওয়ার সুনির্দিষ্টতা জীবন কে সুখী-আনন্দয় ময় করে!
আপনি কোথায় শ্রদ্ধেয় প্রবাসী আশরাফ ভাই?
ঐদিন 'হারা'য় গেলাম,আপনাকে পেলাম না। আপনি কি রিয়াদে নেই?*- *-
অনেক ভাল লেগেছে লেখাটি।
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস
ওপাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস
নদীর ওপাড় কহে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
যা কিছু সুখ সকলি ওপাড়ে।
আমরা এখন আল্লাহর শোকর না করে সব সময় ধনিদের দিকে চেয়ে থাকি সেটাই আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করছে হিনমন্যতার।
মন্তব্য করতে লগইন করুন