বিয়ে প্রস্তুতি ও প্রথম দেখার অনুভূতি
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:১৩:১০ দুপুর
"বিয়ে নিয়ে অহেতুক ভাবনা আরনা, বাস্তব ভিত্তিক বিয়ে প্রস্তুতি জরুরী" - এই উপলব্ধিটা প্রথম হয় ২০১২ সালে বয়স যখন বত্রিশ। পরিবারের কর্তাদের পক্ষ থেকে যখন আমার বিয়ে নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে তেমন কোন পদক্ষেপ নাই অথচ প্রবাসের সমস্ত উপার্জন নিস্বার্থভাবে তাদের হাতেই তুলে দেই প্রতিমাসে। বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে আলাদা হই নিজেকে নিজে সহায়তা করার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ, নিজের উপার্জনের অর্থ নিজ দায়িত্বে নেবার পর মাত্র দুই বছরেই পিতামাতার জন্য বাড়ি, নিজের জন্য এটুকরো জমি অত:পর বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।
২০১৪ এর জুন মাসেই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলাম এই বছরের শেষ দিকে বিয়ে করবো।ঠিক সেই মতে আত্বীয়-বন্ধুমহলে কাঙ্খিত মেয়ে খোঁজে বের করার জন্য অনুরোধ করালাম। আমার কেমন মেয়ে পছন্দ তার এটা নমুনা দিলাম। আমার পছন্দের কথা শুনে প্রায় সব প্রিয়জনই হাতে তুড়ি মেরে বলে তোর জন্য মেয়ে খুঁজে বের করা ব্যাপারই না। ভাবছেন এমন কি পছন্দ আমার যে মেয়ে খুঁজে বের করা সহজ ব্যাপার। আসলে আমি যেরকম সাদামাটা টাইপরে সহজ-সরল টাইপের মানুষ। আমি আর জীবনসাথীকে এমনটাই প্রত্যাশা করেছি। পাত্রী কালো-সাদা,লম্বা-খাট,মোটা-চিকন,ধনী-গরীব আমার কোন সমস্যা নাই শুধু একজন ভাল মনের মানুষ জীবন সাথী হিসাবে চাই।
একদিন এক বন্ধুর কাছ থেকে মিসকল পেলাম। কলব্যাক করলাম। বন্ধু জানালো তার সাথেই স্কুলে শিক্ষকতা করে এমন একটা মেয়ে আছে যা আমার পছন্দের সাথে মিলে। মেয়ে অনার্স-মাস্টার্স করা উচ্চশিক্ষিত, শিক্ষকতা পেশায় আছে, অল্পভাষী নরম স্বভাবের, কম চাহিদা সম্পন্ন, মোটামুটি ধার্মিক। এককথায় সাদা-মাটা টাইপের সহজ-সরল টাইপের মেয়ে।
মেয়ে সম্পর্কে বর্ননা শুনে ভালোই লাগলো।বন্ধুটিকে মেয়ে পরিবারের সাথে মধ্যেস্ততা করতে অনুরোধ করলাম। মেয়ে পক্ষ আমার সম্পর্কে বনর্না শুনে প্রাথমিক ভাবে আমাকে পছন্দ করে। এবার ছবি বিনিময়ের পালা।অফিসের চেয়ারে বসেই মোবাইলে একটি ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলাম। তারা আমার ছবি দেখে প্রাথমিক পছন্দ করলো।
আমাকেও মেয়ের একটা ছবি পাঠালো। ছবি দেখেই পছন্দের তৃপ্ততায় আনন্দে দুচোখ চকচক করছিল।দুপাশে দুটি তরু ডাবগাছের মাঝে একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছের গুড়িতে দাঁড়িয়ে আছে। সাজসজ্জাহীন, ভাবলেশবিহীন, হাসি-ভয়হীন মুখোঅবয়ব সাথে অত্যন্ত আকর্ষিত অপলক চেয়ে থাকা কাজল মাখা মায়াবী দুচোখ।তাকে দেখেই কেমন যেন আপন আপন মনে হচ্ছিল।
এক দেখাতেই মনমুগ্ধকর পছন্দ হয়ে গেল। একই ছবি বাড়িতে পাঠালাম পরিবারের সদস্যদের পছন্দের মতামত জানতে। মেয়ের বর্ননার সাথে ছবি একসাথ করে বাবা-মা সহ পরিবারের প্রতিটি সদস্য তাকে অত্যন্ত পছন্দ করে। আমাদের প্রাথমিক পছন্দের কথা মধ্যস্ততা কারী বন্ধুটিকে জানালাম এবং পারিবারিকভাবে দেখা করার ব্যবস্থা করতে বললাম। দিনক্ষন ঠিক করে বাবা-মা, ছোট বোন, ফুপু মেয়ে দেখতে গেল। মেয়ে ও তার পরিবার দেখে কথা বলে তাকে চুড়ান্ত পছন্দ করলো এবং মেয়ে পরিবারকে আমাদের সম্পর্কে জেনে মতামত ব্যাক্ত করার আহবান জানালো।
আমার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে আমাদের এলাকায় তাদের প্রতিনিধি পাঠালো। কাকতাতালীয় ভাবে আমাদের এলাকায় মেয়ের দূরস্পর্কের ফুপু থাকে যাদের বাসায় একসময় আমরা ভাড়া ছিলাম। তো মেয়ে পক্ষ যখন ঐ ফুপুর কাছে আমার সম্পর্কে জানতে চাইলো তখন ফুপু বলে আপনারা এইখানে বসে আমি ঘর থেকে মাইক নিয়া আসি, খালি মুখে এই পোলার প্রশংসা করে মজা পাইতামনা, চোখ-কান-মুখ বন্ধ কইরা মাইয়া এই পোলার ঘরে দিয়া যান।
(লেখতে লেখতে হয়রান হইয়া গেলাম...সাথে অফিসের কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধি...বাকিঅংশ পরবর্তী পর্বে লিখবো)
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৭ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাহলে তো বিয়াটা মনে হয় হয়েই গেলো।
পড়ে যা ভাবলাম তাতে সবকিছু ওকে এখন আপনার আগমনের পালা।
দোয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
পড়ে যা ভাবলাম তাতে সবকিছু ওকে এখন আপনার আগমনের পালা।
বিয়ে করছেন কি প্রবাসী জীবনের অবসানের জন্য ? নাকি ভাবী সাহেবাকে নিয়ে যাচ্ছেন সাথে ? রেখে গেলে রিস্ক আছে ।
আপনার উপদেশমূলক মন্তব্য সবসময়ই উপভোগ করি। ধন্যবাদ তিক্ত সত্যউক্তির জন্য।
অবশ্য কি আর বলব!! আপনি তো ভাই টাইম মেশিনে চড়ে বিয়ে করেছেন।
আমি ঘর থেকে মাইক নিয়া আসি, খালি মুখে এই পোলার প্রশংসা করে মজা পাইতামনা, চোখ-কান-মুখ বন্ধ কইরা মাইয়া এই পোলার ঘরে দিয়া যান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন