...দেশের চলমান সংকট ও তার সমাধানের উপায়...
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৩৭:২৬ সকাল
আমার দাদী ছিলেন বায়ফোর্স মুক্তিযোদ্ধা...বায়ফোর্স বললাম এই কারনে যে তিনি বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য খাবার রান্না করে দিয়েছেন...দাদীর মুখে শোনা মুক্তিযুদ্ধের গল্পেটিই আগেই বলি তারপর না হয় দেশের সংকট-সমাধা নিয়ে আলোচনা করা যাবে...যা বলছিলাম, বাধ্য হয়ে কাজ করতে গিয়ে গর্বিত মুক্তিনারী আমার দাদী...কুমিল্লা জেলার অজপড়াগাঁয়ের অশিক্ষিত দরিদ্র একজন নারী...মুক্তিযুদ্ধ কাকে বলে এটা বুঝা তার পক্ষে এমন বিজ্ঞানী আইনস্টানের মতো চিন্তা করতে গিয়ে ব্যার্থ হওয়া যেমন...রাজনীতির র ও তিনি বুঝতেন না...তার ভাষ্য মতে তখন ঢাকায় নাকি কি নিয়া গন্ডগোল হইছে...তাই নিয়া মিলিটারী হোমানে মানুষ মারতাছে...যে যেদিক পারে পলাইতাছে...তয় ঢাকার মানুষ বেশিরভাগ গ্রামের দিকেই ঢুকতাছে...দেখতে দেখতে পুরা দেশে গন্ডগোল লাইগ্গা গেছে...বিধবা দাদী তার ছোট ছোট পোলাপান নিয়া কোথায় যাবে তাই নিয়ে দিশেহারা...সে দিকবিধিন না ছুটে আল্লাহর নাম নিয়া নিজ ঘরেই অবস্থান করেছে...যা হবার হবে বাঁচলে একসাথে সবাই বাঁচুম মরলে সবাই একসাথে...চারদিকে গোলাগুলি...এদিক মানুষের লাশ/ওদিক মানুষের লাশ/চারদিক শুধু লাশ আর লাশ...ভয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই মুক্তিবাহিনী তার বাড়িতে আবদার নিয়ে এসেছে...তাদের ভাত রান্না করে দিতে হবে...তাদের হাতে অস্র দেখেই দাদী কলিজায় পানি নাই...দেশের পক্ষে না বিপক্ষে কাজ করছে সেটা চিন্তা করার সুযোগ বা চিন্তাশক্তি তার নাই...অনেকটা তাদের হুকুম তালিম করা ছিল তখনকার মুল কাজ...আলহামদুলিল্লাহ, আমি দেখেছি তার চোখে মুখে কি আনন্দ কাজ করতো যখন সে আবেগিত হয়ে বলতো "আমি মুক্তিগো ভাত রাইন্দা খাওয়াছি"...সে যতটুকু বুঝতো ততটুকুই আনন্দিত হতো।
আচ্ছা এই ঘটনার বিপরীত ও তো হতে পারতো, ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে একজন মধ্যেবয়সী নারী একা ঘরে থাকে...রাজাকার কোন কুলাঙ্গার জোর করে তার ইজ্জত হরন সাথে তার কিশোর ছেলেছে হত্যা...আমার দাদীর ক্ষেত্রে তা হয়নি...তবে দেশের হাজারো-লাখ দাদীর ভাগ্যে জুটেছে এই নির্মম অত্যাচার...আজ সকালে খাবার টেবিলে চিন্তা করছি আজ শাহবাগে ছেলেগুলো যে দাবিটা নিয়ে আন্দোলন করছে তা যৌক্তিক কিনা?...ভেতর থেকে কে যেন চিৎকার করে বলল, "শতভাগ যৌক্তিক"...আজ যদি তোর নিজের মা/দাদী ধর্ষিতা হতো...আজ যদি তোর বাবা/চাচাকে রায়ের বাজারে পাখির মতো গুলি করে মারতো তবে কি তুই তার বিচার চাইতি না?...দুই/চার/দশ/পঞ্চাশ/একশ বছর পরেও যদি সম্ভ্যব হয় বিচার চাইতি না?...চিন্তার গহর থেকে চিৎকার দিয়ে বলে অবশ্যই বিচার চাইতাম...
ধ্যাত কি লিখতে গিয়ে কি লিখা শুরু করলাম...লিখতে চাইলাম দেশের চলমান সংকট ও তার সমাধান আর লিখলাম নিজের কাহিনী...শাহবাগের আন্দোলনের প্রথম থেকেই পর্যবেক্ষন করছি...একজন ব্লগার হিসাবে গর্বিত অনুভব করছি যে এই যৌক্তিক আন্দোলনের সুত্রপাত ব্লগাররাই করেছে...এসবিতে এই ব্যাপারে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম যার মুল উপাত্ত বিষয় ছিল...নিজামী-সাকা-সাজেদা বুঝিনা মুক্তিযুদ্ধকালীন যারাই অপরাধ করেছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক...রাজনৈতিক স্বার্থ চারিতার্থে নিরপরাধ যেন শাস্তি না পায়..
দেশের চলমান সংকট:কেঁচু খুঁজতে সাপ বেড়িয়ে এসেছে...ব্লাগার রাজিবকে আমি আগে তেমন চিনতাম না...সে মারা যাবার পর একজন ব্লগার হিসাবে খুবই ব্যাথিত হয়েছিলাম...তার জন্য তাৎক্ষনিক দোয়া করেছিলাম...আগ্রহ ভরে তার ব্লগগুলো পড়া শুরু করলাম...যতই পড়েছি ততই ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে...তাৎক্ষনিক তার জন্য দোয়া ফিরিয়ে নিলাম...তার ব্লগ পড়ে মনে হলো ও আপাদমস্তক একজন ধর্মদ্রোহী...আল্লাহ তার রাসূল সা: সম্পর্কে অনেক আপত্তিকর লেখা ছিল তার ব্লগগুলোতে...তার পরে ইনকিলাব/আমারদেশ পত্রিকা গর্ত থেকে সাপ বেড় করে আনলেন...শাহবাগে আন্দোলনরত ব্লগারদের অনেকেই শুধু নাস্তিকই নয় বরং ধর্মদ্রোহী...সংগত কারনেই ঈমান আছে দাবী করে এমন সকল মুসলানের কলিজায় আঘাত করবে তাদের লেখনি পড়লে...সারা দেশ জুড়ে সাধারন মুসলমান ক্রোধে ফেটে পড়বে এটাই স্বাভাবিক...একজন মুসলমান হিসাবে দাবি, শাহবাগে কিসের আন্দোলন করছে সেটা পরে দেখবো আগে ধর্মদ্রোহীদের বিচারের আওতায় আনা হোক...
একদিকে মা/দাদী/বাবা/চাচাদের উপর অত্যাচারের যৌক্তিক বিচার দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন অন্যদিকে আল্লাহ ও রাসূল নিয়ে কটাক্ষ করেছে তার বিচার দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন...কঠিন একটি অবস্থা বিরাজ করছে...শাহবাগে প্রিয়জনদের অত্যাচারের বিচার চাইতে গেলে বলবে ও নাস্তিক আর আল্লাহ-রাসূলের পক্ষে বিচার চাইতে গেলে বলবে জামাতের দোসর জঙ্গি...কি যে একটা বিচ্ছিরি সাংঘর্ষিক অবস্থার মধ্যে আছে দেশের মানুষ এটা বোধ হয় লিখে বোঝানো মুশকিল
ইতিমধ্যেই জনতা-পুলিশ মুখোমুখি সংঘর্ষ চলছে...পাখির মতো মানুষ মারছে মানুষ সেবায় রত পুলিশ...গরম লাল রক্তে পিচঢালা কালপথ রঙিন হচ্ছে...কি করে যে তাদের বুঝাই এরা ভারত-পাকিস্তানের মানুষ না এরা বাংলাদেশের মানুষ...জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী স্বাধীন পতাকা বাহী কোন দেশে অন্য দেশ জোড় করে দখল করতে পারবেনা...তাই বাংলাদেশ কখনো কোনদিন আর ভারত/পাকিস্থান হওয়া সম্ভ্যব না...সুতরাং ওরা ভারতীয় দালাল ওরা পাকিস্থানের দোসর এই অজুহাতে এক অন্যকে পাখির মতো মেরে ফেলার কোন মানেই হয়না...মতের অমিল থাকতেই পারে তাই বলে ভাই-ভাই মুখোমুখি একে অপরকে মেরে ফেলবে এ কেমন কথা?
এখনই উপযুক্ত সময় সমাধান খুঁজা....আমার ক্ষুদ্র চিন্তাধারায় যেই সমাধানগুলো কাজ করছে তাই শেয়ার করছি -
=> সর্বোদলীয় একটি কমিটি গঠন করা চলমান সমস্যাগুলো আলোচনা করে তার একটি সুষ্ঠ-সহনশীল সমাধান বের করা।
=> দেশের বর্তমানে যে বুদ্ধিজীবিরা আছেন (ড. কামাল,ব্যারিষ্টার রফিকুল হক, মাহিবী চৌধুরী...এমন যারা আছেন) সবাই মিলে সরকার-বিরোধী দলকে সংকট মোকাবেলায় একসাথে বসার চাপ সৃষ্টি করা।
=> আদালত স্বপ্রনোদিত হয়ে সমস্যা সমাধানে সরকারকে অর্ডার করা...যেমন: ধর্মদ্রোহী-নাস্তিকদের গ্রেফতার করা হোক...মানবতা বিরোধী রায় স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা দিয়ে শাহবাগ আন্দোলন বন্ধ করা।
=> এই সমাধানটি অপ্রিয়...সেনাবাহিনী নিজ দায়িত্বে সকল অপশক্তি বিলিন করে একটি সুস্থ্য পরিবেশ উপহার দেওয়া।
পাঠক আরো কি কি পন্থায় এর সমাধান হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
বিষয়: বিবিধ
১৩০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন