আইজউদ্দিনের মে দিবস
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ০১ মে, ২০১৪, ১০:৫৭:৪৭ সকাল
প্রচন্ড রোদ্রের তাপদাহে,কনকনে শীত,কিংবা অবিরাম বর্ষার দিন
অক্লান্ত পরিশ্রম বস করে বিরামহীন কাজ করে চলেছে আইজউদ্দিন
যার ঘামের প্রতি কণায় ক্রমবর্ধমান উন্নত এ ভূবন
তারই অবদানের পৃষ্ঠে দাড়িয়ে হৃষ্টপুষ্ট তোমাদের ধন।
.
ব্রিটেন সংবিধানবদ্ধ ক্রিতদাস নিগ্রু আইজউদ্দিন
উৎসর্গ করেছিল জীবনের সব সুখ তোমাদের তরে
তাদের টগবগে রক্ত শুষে নিয়েছ তোমরা
চাবুকের চকাশ চকাশ শব্দে ঝড় তোলেছ, গড়েছ আধুনিক সভ্যতা।
.
অত্যাচারের যাতাঁকলে পিষ্ঠ আইজউদ্দিন ধীরে ধীরে ক্ষীপ্র
অধীকার আদায়ের বদ্ধপরিকর,ক্ষোভের ক্ষত হল তীব্র
প্রতিবাদের প্রবাদে রক্ত ঝড়েছে,জীবন দিয়েছে কত নেতা
প্রতিবাদের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাঁই হয়েছে প্রাক্তন দাসপ্রথা।
.
দাসপ্রথা প্রস্থাান প্রাক্কালে প্রস্তুত পরিপক্ক হয়েছে শ্রমপ্রথা
নবায়ন করা হয়েছে অত্যাচারের মোড়ক,শুরূ হয়েছে নিষ্ঠুরতা
মৃত্যু ঝুঁকিপুর্ন কাজে নিয়জিত শিশু শ্রমিক আর অবহেলিত নারী
অনির্দিষ্ট শ্রমঘন্টার সাথে যুক্ত করেছে অন্যয্য মজুরি।
.
আটারশ ছিয়াশি,পহেলা মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর,
হে মার্কেটের নির্যাতিত শ্রমিকেরা রাজপথে দাবী আদায়ের বহর
ন্যয্য মজুরি,শ্রমঘন্টা,শ্রমের যথার্থ মূল্যায়ন এই ছিল মূল স্লোগান
ঘৃণিত পুলিশি হামলায় পিচঢালা কাল পথ রক্তে রঞ্জিত আন্দোলন হল ম্লান।
.
মুক্তি পাগল দামাল আইজউদ্দিন থামেনি সেদিন,বেঁধেছে বিশ্বশ্রমিক জোট
অত্যাচারের দাবানল নিভিয়ে জ্বালিয়েছে শিখা “অধিকার আন্দোলন”
ফ্রান্সের প্যারিসে সেদিন(১৮৮৯,১মে)হয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলন
ঘোষিত হয়েছে শ্রমিক দিবস,অধিকার আদায়ে বজ্রকন্ঠের বিশাল মিলন।
.
এরপর থেকে প্রতিবছর মে দিবস পালিত হচ্ছে,ভবিষ্যতেও হবে
কিন্তু আইউদ্দিনের মৌলিক অধিকার কি আদায় হয়েছে কখনো,হবে কখোনো?
আজও দেখি আইজউদ্দিনের ঘামে ভেজা শরীর,চোখে নোনা জল
উপুস থাকা সন্তানের আকাশ কাপানো কান্না চোখ দুটি ছলছল
.
হায়!এ কেমন মে দিবস পালন কর তোমরা?
সভা সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তোমাদের কর্মসূচী?
আর কত কাল অধিকার বঞ্চিত থাকবে সে,কত কাল, কত দিন?
নাকি এভাবেই চক্রাকারে আবর্তিত হবে আইজউদ্দিন?
.
এখানে আইজউদ্দিন নামটি শ্রমিকের রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একবার নীলক্ষেত পুরাতন বইয়ের বাজার থেকে অনেক পুরাতন একটা বই পেয়েছিলাম যেখানে নিগ্রুদের দাসপ্রথার উপর লেখা অনেক কষ্ট পৃষ্ঠার পরতে পরতে লিপিবদ্ধ ছিল। একসময় ব্রিটিশ সংবিধানে ছিল নিগ্রুরা পৃথিবীতে এসেছে শুধু দাস হবার জন্যই। শ্রমের সঠিক মজুরী তো দূরের কথা তাদের মানুষ নয় শ্রমের যন্ত্র মনে করা হতো। তাদের বাজারে বিক্রি করা হতো পন্যর মতই। নিগ্রু নারীদের ব্যবহার করা হতো জন্মের যন্ত্র হিসাবে...যত প্রডাকশন তত নতুন দাস শ্রমিক তত উপার্জন।
কালের পরিক্রমায় এমন বর্বরতা থেকে একসময় শ্রমিকরা পরিত্রান পায় বটে কিন্তু অত্যাচারের নতুন পন্হা সৃষ্টি করে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ, অসম পারিশ্রমিক, জোড় করে কাজ আদায়, কাজ করতে অস্বীকৃতি জানলে চাবুকের চকাশ চকাশ শব্দ তুলত পিঠে...এহেন বহু অত্যাচারের কড়াল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে বছরের পর বছর অনেক আন্দোলন হয়েছে...যারাই আন্দোলন করেছে তারাই নির্যাতিত হয়েছে।
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর হে মার্কেটের নির্যাতিত শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামে...পুলিশের গুলিতে ঢলে পরে কতক তাজা প্রান...রক্তে লাল হয়ে যায় পিচঢালা কাল পথ। আন্দোলনের তুঙ্গে বাধ্য হয় শ্রমিকদের দাবি মানতে।
কিন্তু শাসক শ্রেনীর চতুরতায় আজও মুক্তি পায়নি আইজউদ্দিনেরা। অতপর কৌশলে শুরু হয় নতুন মোড়কে শ্রমিকদের রক্ত শোষন। অন্যয্য মজুরী, শিশু শ্রম, পুরুষ-নারী শ্রমিকের বৈষম্যতা, ঝুঁকিপূর্ন কাজ, অসাস্থকর কাজ সহ হাজারো পন্থায় চলছে আইজউদ্দিনদের উপর আধুনিক কায়দায় অত্যাচার।
এ যেন প্রাগ যুগ থেকে এই আধুনিক সভ্যতার যুগেও আইজউদ্দিনদের দেখামেলে চক্রাকারে। এই চক্রাকারে আবর্তিত আইজউদ্দিনদের নিয়েই আজকে আমার কবিতা...
বিষয়: বিবিধ
১৩২১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ সুন্দর গঠনমূলক চমৎকার মন্তব্যটির জন্য।
আজকে যে পশ্চিমারা আমাদের মানবাধিকার এর সবক দেয় তাদের ইতিহাস কতটা অত্যাচারির তা আমরা জানিনা। বাংলাদেশে অনেক বইতে দেখেছি যে দাস ব্যবসায়ির আগে প্রায় সময় আরব শব্দটা ব্যবহৃত হয়। যেন আরবরাই আফ্রিকা থেকে মানুষদের জোড় করে ক্রিতদাস বানাত। কিন্তু আলেক্স হেইলির "রুটস" এবং নেলসন ম্যান্ডেলার "লং ওয়াক টু ফ্রিডম"আসলে কারা দাস ব্যবসায়ি তা বুঝা যায়।
সভ্যতার আরালে আধুনিক কায়দায় অত্যাচারীত হচ্ছে। দিন আসে দিন চলে যায় আইজউদ্দিনদের ভাগ্য বদলায় না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন