বাবার বিয়ে বানচালের চেষ্টা
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ২৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৫২:২৫ দুপুর
শীতের দিনের সকালের ঘুমটা খুবই মজার...তাইতো ফজরের নামাজ শেষে আবারো লেপের ভেতর নিজেকে লুকিয়ে রাখেন আসাদ সাহেব...ভাবটা এমন যেন শীত না আবার পাছে টের পেয়ে যায়...তবে একটা সমস্যা আছে তার নাক-মুখ লেপের ভেতর রাখতে পারেননা...কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসে তাই লেপের একাংশ অল্প একটু ফাঁক করে শীতের কাছে সপে দেন নাক-মুখ...তা যাই হোক লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকার আলসেমিটা চরম উপভোগ করেন আসাদ সাহেব...
কিন্তু আজ আর এই আরামটা উপভোগ করা সম্ভ্যব নয়...গতরাতে বড় মেয়ে লিজা ও তার এই বৃদ্ধ বয়সে খেলার সাথী নাতনী টুনটুনি এসেছে...এই মেয়েটার শাষন থেকে আর নিজেকে মুক্ত করতে পারলো না আসাদ সাহেব...সেই ছোট বেলা থেকেই বাবা ভক্ত মেয়েটি সবসময় বাবার এ টু জেট তদারকি করতো...ইচ্ছে করেও যে চশমা ফেলে অফিসে যাবে উপায় ছিলনা...রাতে অসুধ না খেয়ে ঘুমানো এই চিন্তাও মাথায় আনা হতো না...বাবার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে এমন একটা ভাব নিয়ে রিতিমতো বাকযু্দ্ধ করতো মায়ের সাথে...
আজ আর বাবার হয়ে ঝগড়া বাগড়নোর জন্য ওর মা ধরায় নেই...সেও থাকে স্বামীর ঘরে...বাবার স্বার্থ রক্ষায় মা-মেয়ের সেই যুদ্ধ আর দেখা হয়না...মেয়েটাও আর আগের মতো বাবাকে শাষন করতে পারেনা...স্বামী-সন্তান-শশুর-শাশুড়ীর দেখাশোনার পর প্রিয় বাবাকে আর আগের মতো কাছে পাওয়া হয়না...তাই বলে কি সুযোগ পেলেই শা শা করে বাতাসের গতিতে চলে আসে বাবাকে শাষাতে...বাবাকে বকবে আর বাবার সব ময়লা কাপড়-চোপড় ধুয়ে দিয়ে যাবে, ঘর গুছিয়ে দিয়ে যাবে, বাবার পছন্দের খাবার নিজে রান্না করে খাওয়াবে, কি লাগবে না লাগবে তার একটা লিষ্ট করে যতটা সম্ভ্যব নিজেই কিনে এনে দেবে...
মায়ের দেখাদেখি নাতনীটাও নানাকে শাষন করে পুরো অধিকার নিয়ে...হয়তো এখুনি এসে পরবে নানাকে লেপের ভেতর থেকে টেনে বের করতে...মুখের মধ্যে একটা রাগি রাগি ভাব নিয়ে কপালের ভ্রু কুচকে মধ্যেখানে জমাট করবে...ঝাঝালো গলায় বলবে,"নানু ভাই তুমি এখনো শুয়ে আছ...কয়টা বাজে খেয়াল আছে?...নাস্তা করতে হবে উঠো এখুনি"...আসাদ সাহেব ও কম যাননা...ইচ্ছে করে ঘাপটি মেরে চোখ দুটি বন্ধ করে খিচ মেরে শুয়ে থাকেন...টুনটুনিও ছাড়ার পাত্র নয়...নানার চোখের পাপড়ি টেনে উপরে তুলে বলে,"এইতো তুমি সজাগ নানু ভাই...উঠ তাড়াতাড়ি"
কি ব্যাপার আজ এখনো টুনটুনি আসছে না কেন?...লিজাই বা কি করছে...কোন চিতকার চেচামেচি নাই...এতো বেলা হলো তবু পুরো ঘর কেমন যেন চুপচাপ...থমথমে...বোধ হয় গতরাতের ঝগড়ার রেশ এখনো বিরাজ করছে...বাবাকে এখানে দেখাশোনার জন্য কেউ নেই...বাবার খেদমত ঠিকঠাক মতো হচ্ছে না এই অজুহাতে ছোট দুই ভাইয়ের বউদের ইচ্ছে মতো বকাবকি করেছে...জি আপা/জে আপা/ঠিক আছে আপা শব্দে কেঁপেছে ঘর...ছোট ভাই দুইটাও বিড়ালের মতো মেউ মেউ করেছে...গাধা দুইটাকে লিজা বকলে আসাদ সাহেবের ভালোই লাগে...বাবা হয়ে আসাদ সাহেব যেটা পারেনি...বড় বোন হয়ে গাধা দুইটাকে লিজা এইভাবে টাইট না দিলে হয়তো আর তাদের উচুপদে জব করা হতো না...স্কুল জীবনেই বকাটেপনা হয়ে যেতে পারতো...মেয়েটার মাথায় হঠাৎ ভূত চেপেছে...বাবাকে বিয়ে করাবে...
প্রস্তাব শুনে তো গাধা দুইটা চোখ চড়ক গাছে...মাথা যেন পুরো পৃথিবী একপাক ঘুরে এসেছে...এই প্রথম বাবার বিয়ের বিরোদ্ধে বড় বোনের মুখের উপরে তর্ক করেছে গাধা দুটো...ঠোঁট গলে ছোট গাধাটা বলে ফেলল, "আপুনি তুমার কি ধারনা আছে বাবার বয়স এখন কত?"
ভ্রু কুচকে ঝাঝালো গলায় জবাব দেয় লিজা,"কত আর হবে...ধর পঞ্চান্ন কি ছাপ্পান্ন বছর...তাতে কি হয়েছে...বাবার দৈনন্দিন কাজগুলো তো বাবা নিজে করতে পারেনা...তাছাড়া একা একা একটা লোক কতক্ষন থাকতে পারে?...তার একজন্য সঙ্গী প্রয়োজন...তাই বড় মেয়ে লিজার এক কথা বাবার বয়স হয়েছে...তাকে সার্বক্ষনিক দেখাশোনার একজন লাগবে...
বড় গাধাটা অবশ্য একটু সাহস করে লিজার মতের উপর দিয়ে বলেই ফেলল,"আপু দেখ বাবার এই বয়সে বিয়ের কি দরকার বল...এলাকার লোকজনই বা কি ভাববে?...সামাজিক একটা ব্যাপার আছেনা...তাছড়া ঘরে দুইটা ছেলের বউ আছে...সার্বক্ষনিক একটা কাজের মেয়ে আছে...বাবার যে কোন সমস্যায়/প্রয়োজনে আমরা সবাই আছি...তাই বলি কি বাবার বিয়ের চিন্তাটা তুমি এবারের মতো বাদ দাও...
কথা শেষ হতে না হতেই দাউ দাউ করে আগ্নেয়গিরির লাভায় পুড়ে ভস্ব হলো বড় গাধা...লিজার কথার চপেটাঘাতে ঘায়েল হতে দেখে বেশ মজাই পেল আসাদ সাহেব...আগুন ঝড়া ঝাঝালো গলায় লিজা শোধায় তাদের লক্ষি বউদের গুনকীর্তন...সারাদিন ভারতীয় বস্তাপঁচা মেগাসিরিয়াল দেখার পর বাবার খোঁজখবর নিবার সময় কোথায় ওদের...তাছাড়া কাজের মেয়ে থাকতে ঘরের কাজ তারা করবেন কেন এমন ভাব থাকলে তো আর বাবার খেদমত করা হবেনা, তাইনা?
বউ দুইটি ভয়ে কিছু না বললেও যে গাল ফুলিয়ে আছে তাকে কোন সন্দেহ নেই...গাধা দুইটি আছে বিরাট ঝামেলায়...আপাকে কিছু বলতেও পারেনা...সইতেও পারেনা...সেই ছোটবেলায় মা মারা যাবার পর এই আপাটাই তাদের কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছে...কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি...নিজ হাতে গোসল করিয়ে দিয়েছে...মাঝে-সাজে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে...স্কুলের জন্য তৈরি করে দিয়েছে...মা মরা ছেলেমেয়েদের বাবা ধমক তো দূরের কথা একটা ফুলের টোকাও দেন নাই...আদর-শাষন যা পাবার এই আপাটাই করেছে...কি না করেছে তাদের জন্য...জীবনে আপার অবদান মনে পড়লেই আর আপার বিরোদ্ধে যাওয়া হয়না তাদের...
মুখ বুজে সব সহ্য করা যায়...তাই বলে এতো বছর পরে...বৃদ্ধ বয়সে বাবাকে বিয়ে করাতে হবে...এটা কোনভাবেই মানা যায়না...আরে বাপু যখন লোকটা মধ্যেবয়সী ছিল...ছেলেমেয়েগুলোও ছোট ছোট ছিল...তখন করলে না হয় একটা কথা ছিল...এখন বৃদ্ধ বয়সে এক পা কবরে গিয়ে আছে...এখন কিনা বিয়ে করাতে হবে...ভাবতেই মাথার চুল ছিড়ে হাতে নিয়ে আসে গাধা দুটো...
গতরাতের লিজার অগ্নিমুর্তিতে পুরো বাড়ি নিরব দেশে পরিনত হয়েছে...এখন পর্যন্ত তাই বিরাজ করছে...নাহ! আর শুয়ে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছেনা...পেটের ভেতরটাও মোচড় দিয়েছে...প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়া প্রয়োজন...তার পরেও গড়িমসি করে উঠি উঠি করে উঠা হচ্ছেনা...যেই মাত্র উঠতে যাবে ওমনি সেন্ডেলে চটাস চটাস শব্দে বুজে ফেলে টুনটুনি আসছে...হ্যা তাই রাগি রাগি একটা ভাব নিয়ে এদিকেই আসছে...প্রাকৃতিক ডাকটাকে চেপে ধরে খিচ মেরে লেপটাকে ভালকরে মুড়ে মেরে ঘাপটি মেরে থাকে...
টুনটুনিও আসাদ সাহেবের কাছ থেকে চতুরতা কম যায় না...এক টানে লেপের উপরিভাগ তুলে...রাজ্যের ভাব নিয়ে ডাকছে...নানু ভাই তাড়াতাড়ি উঠ...করুন কন্ঠে অনুনয় করেন আসাদ সাহেব...আর একটু ঘুমাই ছোট গিন্নি...আবারো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে টুনটুনি,"নানু ভাই, তোমাকে না বলেছি আমাকে ছোট গিন্নি বলবা না...আমার নাম টুনটুনি...নাম ধরে ডাকবে...ঠিক আছে?"...ভয়ের ভান ধরে জ্বী হুজুরের মতো শোধায় ঠিক আছে আর বলবোনা ছোট গিন্নি..থুক্কু টুনটুনি...তাতিয়ে উঠে গর্জে শোধায়,"নানু ভাই তুমি এখন উঠবে নাকি আম্মুকে ডাক দিবো...আম্মু! আম্মু!!..."...ছলাত করে উঠে বসে মুখ চেপে ধরে টুনটুনির...এখানে আবার আম্মুকে ডাকাডাকির কি দরকার...এইতো আমি উঠে গেছি...নানু ভাইকে ঘায়েল করেতে পেরে বেশ মজাই পেল টুনটুনি...মুখ ছাড়তেই খলখল করে হেসে খুন...তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে আস...নাস্তা করার জন্য আম্মু ডাকছে...
প্রাকৃতিক কাজ শেষে হাতমুখ ধুয়ে খাবার টেবিলের দিকে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলেছেন...ছুটির দিন হওয়াতে গাধাগুলোও আছে খাবার টেবিলে...সবাই বাবার জন্য অপেক্ষা করছে...বুড়ো বয়সে বিয়ে ভাবতেই মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আসছে আসাদ সাহেবের...মেয়েটার পাগলামিতে কিছুটা বিব্রত বোধ করছেন...ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটার সিদ্ধান্তের বিরোদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে...কিন্তু পারেনা...কারন ইদানিং সে সত্যিই বড় বেশি একাকি অনুভব করছেন...চাকরি থেকে রিটায়ার্ড হয়েছেন তাও বছর খানেক হয়ে গেছে...আধুনিক ছেলেমেয়েগুলো কেমন যেন যন্ত্রেন মতো হয়ে গেছে...কেউ কারো দিকে খেয়াল নেই...যে যার মতো ছুটে চলছে...সকাল থেকে রাত অব্ধি সময় পার করা তার জন্য অসহ্য হয়ে গেছে...
কাছে আসতেই লিজা আগ বাড়িয়ে বলল বাবা তুমি আমার পাশের চেয়ারে এসে বস...তোমার বিয়ের কথাই হচ্ছিল...আজ সিদ্ধান্ত পাকাপাকি করা হবে...টুনটুনির আব্বাকেও খবর দিয়েছি...সে আসছে...সকলে বসে মতামতের ভিত্তিতে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে...এরই মধ্যে দুই ভাই ইশারায় কথা বলে ফেলল...বাবার বিয়ে যে করেই হোক বানচাল করতে হবে...
বড় আপার ফোন পাবার ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই দুলাভাইয়ের পদার্পন হয়েছে...দুইভাই প্রায়ই নিশ্চিত ভীতুর ডিম দুলাভাইকে দিয়ে এই ব্যাপারে কিচ্ছু হবেনা...আপা যা বলবে দুলা ভাই তাই অক্ষরে অক্ষরে জী হুজুরের মতো পালন করে যাবে...তবুও আপাকে থামানোর জন্য দুলাভাই ছাড়া যে কাউকে দেখছেনা...কি করা যায় ভেবে ভেবে অগত্য বাধ্য হয়েই দুলাভাইয়ের স্বরনাপন্ন হতে গিয়ে দেখে আসতে দেরি হবার অপরাধে আপার হাতে বদ হয়ে বাদরের মতো গোমড়া মুখে সোফার মধ্যে বসে বসে টিভি টক শো দেখছে...আজকাল টক শো গুলোতে যা হয় তা দেখে গোমড়া মুখী মেজাজ আরো চড়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই...অধিকাংশই রাজনৈতিক প্যাচাল...সরকারী ও বিরোধী দলে কুকীর্তির সমালোচনায় পঞ্চমুখ বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি টকশো আলোচকগন...
তা যাই হোক আপা টুনটুনিকে পড়াচ্ছে...বাবার বিয়ে কিভাবে বানচাল করা যায় তা নিয়ে দুলাভাইয়ের সাথে আলাপ করার এটাই সুযোগ...কিছু বলার আগে দুলাভাই বলছে, "তোমাদের আপার মাথায় এটা কি ভুত চাপল...আব্বাকে নাকি এই বয়সে বিয়ে করাবে...ব্যাপার কি?"...ওহ! তহালে ভালই হলো দুলাভাইও এই বিয়ের পক্ষে না...তিন মাথা মিলেই এই বিয়ের বিরোদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এই ব্যাপারে একমত হলো...কিন্তু আপাকে সামলাতে রাজি নয় দুলাভাই...তার অবস্থান ধরি মাছ না ছুঁই পানি...
রাতের খাবারের পর সবাইকে নিয়ে বড় আপা মিটিং ডেকেছে...এক এক করে সবাই উপস্থিত...আসাদ সাহেবও এসেছে টুনটুনিকে সাথে নিয়ে...বাবার বিয়ের যুক্তিকতা তুলে ধরে আপা কথা শুরু করল,"বাবা এখন বৃদ্ধ...তার নিয়মিত ওষুধ খাওয়া...ঘর গোছানো...কাপড় ধুয়া...খাবার দেওয়া...সবমিলিয়ে তাকে সার্বক্ষনিক দেখাশোনার জন্য তার পাশে একজন প্রয়োজন...আমি খেয়াল করেছি তোমরা সবাই যে যার কাজে ব্যস্থ থাক...বাবার দিকে মুখের বুলি আওড়ানো ছাড়া বলার মতো তেমন কোন দেখবাল নেই...তাই বাবাকে বিয়ে দিয়ে তার জন্য একজন সার্বক্ষনিক সঙ্গি আনতে আমি বদ্ধপরিকর...যদিও বাবা না চাইলে আমি আমার অবস্থান থেকে পিছু হঠবো...এবার তোমাদের কারো কিছু বলার থাকলে বলতে পারো..."
বড় আপা যেখানে তার সিদ্ধান্তে বদ্ধপরিকর সেখানে তার মুখের উপর দিয়ে কথা বলবে এমন সাহস কারো হলো না...সবাই বাবার মুখের দিকে চেয়ে আছে...তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সব...কেমন যেন চিন্তার অতলে তলিয়ে যাচ্ছেন আসাদ সাহেব...ছেলেমেয়েরা মিলে তার জন্য একজন সঙ্গী জোগাড় করতে চাচ্ছে...তাছাড়া ইদানিং সত্যিই তাকে একাকীত্বে চেপে ধরেছে...একজন সঙ্গী হলে মন্দ হবেনা...সবদিক বিবেচনা করে...আসাদ সাহেব হ্যা সম্মতি দিয়ে দিলেন...
বাবার জন্য বউ খুঁজতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে...সকাল থেকেই চারদিক থেকে ফোনের পর ফোন আসছে...হরেক রকেমরে প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে হাপিয়ে উঠছে বড় মেয়ে লিজা...এক অদ্ভূত রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছে...সৃষ্টিকর্তা যে কত রকমের আর কত রঙের মনের মানুষ সৃষ্টি করেছেন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন এ যাত্রায়...এইতো কিছুক্ষন আগে এক ২৫/২৬ বছর বয়সী তরুনী মেয়ে ফোন করে বলে...আমি এই বুড়ো মিয়াকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক...তবে একটা শর্ত আমার নামে তার সব সম্পত্তি লিখে দিতে হবে...ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে এক ধমক দিয়ে চুপসে দেন তাকে,"পত্রিকায় স্পষ্ট লেখা আছে ৪৫ উর্দ্ধো মহিলা দরকার...সেখানে আপনি কেন ফোন করলেন?"
এদিকে আলাল-দুলাল দুই ভাইয়ের মাথা নষ্ট...বাবার বিয়ে হলে সমাজে তাদের স্টেটাস বলতে কিছুই থাকবেনা...বুড়া বয়সে কেন যে বাবার ভীমরুতি হলো...আর বড় আপাটাই বা কি?...ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে...পারিবারিক বাকশাল কায়েম করে ফেলেছে...সে যা বলবে তাই চূড়ান্ত...ইতিমধ্যেই বিয়ে বানচালের জন্য বড় ভাই পত্রিকার বিজ্ঞাপনে ইচ্ছে করে ইমেইল এড্রেস স্পেলিং ভুল দিয়েছে যাতে করে পাত্রী পক্ষ তাদের বায়োডাটা পাঠাতে না পারে...পাঁচা দৈনিকে প্রকাশে বদলে তিনটাতে করেছে...ঐ যে ২৫/২৬ বছর তরুনী সে ছোট ভাইয়ের কলিগ...বিরক্ত করতে ফোন করেছে...
সকাল থেকে বিভিন্ন পাত্রী ও পাত্রী পক্ষের লোকদের সাথে কথা বলতে বলতে হাপিয়ে উঠেছিল...খাবার শেষে পরন্ত দুপুরে খানিকটা বিশ্রাম নিচ্ছিল লিজা...বিশ্রাম নিতে নিতে যাদের সাথে কথা বলেছিল সেখান থেকে ৬/৭ জন সম্ভ্যাব্য পাত্রীর বায়োডাটা আলাদা করতে লাগলো...রাতে সবাই বসে এই ৬/৭ জন থেকে সর্বোত্তম একজনকে বাছাই করা হবে...এমন সময় মোবাইলে রিং বেজে উঠে...ওপাশ থেকে নরম একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসে...পাত্রী নিজেই ফোন করেছেন...নাম সুবর্ণা...একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা...বয়স ৫২...স্বামী চার বছর আগে স্ট্রোক করে গত হয়েছেন...সেই থেকে বিধবা...উত্তরায় নিজ বাসায় থাকেন...দুই ছেলে এক মেয়ে...ছেলেদুইটি স্ত্রী সন্তান সহ অষ্ট্রেলিয়া এবং মেয়ে তার স্বামীর সাথে আমেরিকায় থাকেন...বৃদ্ধ বয়সে তিনিও একা হয়ে পড়েছেন...বাড়িতে একটা কাজের মেয়ে ছাড়া কেউ নাই...সময় কাটে সমাজকল্যানমূলক কিছু কাজ করে...
কথা বলেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে লিজা...এতো মায়া ভরা নরম কন্ঠ...এতো আবেগি কথার ধরন...প্রতিটা কথার বাক্যে যেন মধু মিশানো...ঠিক যেন তার মায়ের মতো...তার একাকিত্ব ও অসাহায়ত্বের কাথা শুনতে শুনতে নিজের অজান্তেই আবেগে চোখ ভিজে যাচ্ছে লিজার...প্রাথমিক পছন্দ হয়ে যায় লিজার তাই আরো কিছু জানতে প্রশ্ন করে, "আপনি এই বয়সে আবারো কেন বিয়ে করতে চাচ্ছেন?"...প্রশ্নটায় মনে হচ্ছে লজ্জা পেয়েছেন...শুকনো মৃদু আওয়াজে হাসির শব্দ শোনা গেল মোবাইলের ওপাশ থেকে...মাগো, বিয়ে করা মূল আকর্ষন নয়...সকালে পত্রিকা পড়তে গিয়ে তোমাদের দেওয়া বিজ্ঞাপনটা পড়লাম...তোমার আব্বুর অবস্থাটাও ঠিক আমার মতোই...চারদিকে সবাই আছে আবার কেউ নেই...কি করে যে এই বৃদ্ধদের সময় কাটে তা বৃদ্ধ হবার আগ পর্যন্ত কেউ এতটুকু বুঝতে পারেনা বা বুঝার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়না...বিজ্ঞাপনটা পড়ে সকাল থেকেই নিজের সাথে নিজে সিদ্ধান্তের যুদ্ধ করছি...অবশেষে তোমাকে ফোন দিয়েই ফেললাম...এখনো জানিনা ঠিক করছি কিনা...ভয়ে আছি আমার ছেলেমেয়েরাইবা কিভাবে নিবে ব্যাপারটা...বলতে বলতে কেমন যেন কথায় জড়িয়ে যাচ্ছেন উনি...তাকে আর কথার কষ্ট না দিয়ে লিজা ক্ষমা চেয়ে বললেন,"আন্টি বাবার সাথে আপনার বিয়ে হোক বা না হোক...আমি আপনার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাই...দেখা করতে চাই...আপনার ঠিকানা বলেন..."
রাতের খাবার শেষে বাবার রুমেই সবাই বসেছে পাত্রী নির্বাচনের জন্য...বড় আপার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক...পাত্রী তার পছন্দ হয়ে গেছে...গোমড়া মুখ নিয়ে খাটের কোনায় বসে আছে আলাল-দুলাল...তাদের পাশেই বসে আছে তাদের মর্ডান বউয়েরা...জি হুজুরের মতো উঁত পেতে বসে আছে দোলাভাই...নানুর কোলঘেষে বসে মায়ের কথা শুনছে টুনটুনি...আপা এক এক করে ভদ্র মহিলার সব বর্ননা দিতে থাকলেন...
১. মহিলার কন্ঠ ঠিক যেন আমাদের মায়ের মতো...
২. অতি ভদ্র/নম্র স্বভাবের মনে হলো...
৩. উচ্চ শিক্ষিতা...মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রাক্তন কর্মকর্তা...
৪. ছেলেমেয়েরা কেউ দেশে থাকেননা...সম্পূর্ন একাকিত্ব জীবন যাপন করছেন...
৫. একজন সমাজকর্মী...দরিদ্র মহিলাদের স্বনির্ভতার জন্য কাজ করেন...
৬. এই ভদ্র মহিলার সাথে কথা বলে আমাদের মায়ের সাথে অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি...
বলতে বলতে লিজা কেমন যেন আবেগ তাড়িত হয়ে যাচ্ছে...কথা বলার ফাঁকে বেশ কয়েকবার শাড়ির আঁচলে চোখ মুছেছেন...সবাই তন্বয় হয়ে তার কথা শুনছে...এই প্রথম বারের মতো ছোট ভাই দুলাল তার মত বদলে বড় আপার সাথে একমত হলো এই ভদ্রমহিলা মা হলে তার কোন আপত্তি নাই...সবাই চুপচাপ...লিজার আবেগ জড়ানো কথার পরে নিজস্ব মত দেবার মতো কোন কিছু কেউ খুঁজে পেল না...শুধু বড় ভাই আলাল তোমার যা ইচ্ছে কর বলে উঠে চলে গেল...পরিবেশ হালকা করতে বাবা গলা খাকানি দিয়ে বললো,"সবই তো বললি মা লিজা কিন্তু তোর হবু মায়ের নামটাতো বললি না"...বাবার এমন রসালো কথায় সবাই হেসে উঠলো...লিজাও হাসলো...পরিবেশটাও যেন হাসিতে হালকা হয়ে গেল...ভদ্র মহিলার নাম সুবর্না...
নাম শুনে থমকে গেলেন আসাদ সাহেব...নিশ্চিত হবার জন্য আবারো জিজ্ঞাস করলেন...কি নাম বললি মা?...লিজা হেসে আবারো বলে...ওনার নাম সুবর্না...নাম শুনেই বাবার মুখে কেমন যেন চিন্তার রেখা দুলে গেল...কেমন যেন চিন্তিত হয়ে পড়লেন...
সুবর্না বেগম সকাল থেকেই বিরাট টেনশনে আছে ছেলেমেয়েদের ব্যাপারটা কিভাবে জানাবে...এদিকে পাত্রপক্ষ আগামী শুক্রবার দেখা করার দিনক্ষনের প্রস্তাব দিয়েছে...আজ শনিবার হাতে বাকি মাত্র পাঁচদিন...এরই মধ্যে ছেলেমেয়েদের সাথে আলাপ করে তাদের সম্মতি নিতে হবে...কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন ঠিক বুঝতে পারছেননা...বড় ছেলেটা যেই রাগি স্বভাবের যদি সে ব্যাপারটা নেগেটিভ ভাবে দেখে তবে তো হিতে-বিপরীত অবস্থা হয়ে যাবে...তাকে দিয়ে বলা শুরু করা যাবেনা...মেয়েটাও একটু কনজারভেটিভ...স্বামী ছাড়া দিন-দুনিয়ার কিচ্ছু বুঝেনা...স্বামী সুখে কোরবান...চারপাশের লোক ঠনঠনাঠন...তাকে বলেও ফায়দা হবে বলে মনে হচ্ছে না...একমাত্র ভরসা ছোট ছেলে আরিফ...ওই একমাত্র মাকে তার সাথে অস্ট্রেলিয়াতে নেওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা-জোড়াজুড়ি করেছিল...একা মা কেমনে থাকবে বলে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছিল...হ্যা ছোট ছেলেটাকেই বলা যায়...ভাবতেই মুখে মুচকি হাসির ফুয়ারা...যেই ভাবনা সেইমতে কাজ...
ভয়ে ভয়ে ছোট ছেলেকে সব খুলে বলতেই ওপাশে খুশির বন্যা বয়ে গেল...ফোনেই মায়ের কপালে বার কয়েক অদৃশ্য চুমা খেল...খুশিতে টগবগ তবু গুংড়ে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে ফোনের ওপ্রান্তে,"আম্মু আই লাভ ইউ...আমি তোমাকে ছাড়া প্রবাসে থাকতে ইচ্ছুক নই কিন্তু আমার হাত-পা বাঁধা...তোমার বৌমাকে বহু বোঝাবার চেষ্টা করেছি একেবারে দেশে ফিরে আসতে...কিন্তু দেশের প্রতি ওর আস্থা নেই...বেঁচে নিরাপত্তা নেই...নিরাপদে ব্যাবসার গ্যারান্টি নেই...ইত্যাদি ইত্যাদি"...মা হিসাবে সব সন্তানকেই ভালবাসে কিন্তু সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে ছোট ছেলেটাকেই...একেবারেই মা ভক্ত...সুবর্না বেগম ওকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো,"বাবা আমি ভালো আছি, সুস্থ্য আছি...শুধু চারদিক কেমন যেন একাকী লাগে...মানসিক শান্তিতে নাই..এখন তোদের মত থাকলে..." কথা আর বাড়তে না দিয়ে ছোট ছেলে আশ্বাস দিয়ে বলল,"আম্মু তুমি একটুও চিন্তা করোনা...বড়ভাই আপাকে রাজি করানো দায়িত্ব আমার..." আমরা সবাই মিলে বুধবারের মধ্যে দেশে আসছি...আমাকে ওদের মোবাইল নাম্বার দাও আমি কথা বলবো...
আরিফ ইতিমধ্যেই বড় ভাই আপার সাথে কথা বলে বুধবার দেশে ফেরার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে...তাছাড়া পাত্রপক্ষের সবার সাথেই কথা বলেছে...কথাতেই ভালো লেগে গেছে ফ্যামিলিটিকে...সবাই খুব আনন্দিত এবার অন্ত্যত মা আর একা থাকবেননা...এই শুক্রবার দেখাশোনা এবং ফাইনালি পছন্দ হলে আগামী শুক্রবার বিয়ে...সবকিছুই যেন খুব তাড়াতাড়ি ও স্বপ্নীল গতিতে এগুচ্ছে...
আসাদ সাহেব সেই থেকেই খুব চিন্তিত...কে এই সুবর্না বেগম...এই নামটাই তাকে অনেক পুড়িয়েছে...জীবনের শেষ প্রান্তে এখনো এই নামটা শুনলে বুকের মধ্যে কেমন যেন ছলাৎ করে উঠে...কি যেন ভাবছে দেখে লিজা এগিয়ে আসে বাবার কাছে...সেই ছোট্ট মেয়ের মতো আদরী গলায় গদগদ হয়ে বাবার গা ঘেসে বসে,"বাবা কি হয়েছে মুখ ভাড় করে বসে আছ কেন?...বিয়েতে তোমার মত না থাকলে এখনো সময় আছে বল তাদের না বলে দেই..."...এক ফালি হাসি দিয়ে মেয়ের কপালে আদর দিয়ে বলে,"তোর মা মারা যাবার পর আসলে ভাবিনি কখনো আবার বিয়ে করবো...এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি...তোর যুক্তির কাছে হার মানেছি...সত্যিই আমি এককী ভালো নেই...হয়তো তোর কথাই ঠিক...একজন সঙী পেলে হয়তো ভালো লাগবে"...
আজ বৃহস্পতিবার আগামী কালই আসাদ সাহেব কন্যা দেখতে যাবেন...প্রস্তুতির সবকিছুই ঠিকঠাক...এই বয়সে বিয়ে এরকম ঘটা না করলেও হতো...কিন্তু মেয়েটি একেবারেই নাসর বান্দা...বাবার জন্য নতুন পাঞ্জাবি এনেছে...কন্যা দেখতে যাবে, খালি হাতে কি যাওয়া যায়...একটা স্বর্ণের রিং এনেছে...চারদিকে যেন আনন্দ আনন্দ পরিবেশ...বলতে গেলে ঘরের সবাই এখন এই বিয়ের পক্ষে...শুধুমাত্র আসাদ সাহেবের বড় ছেলে এখনো বেঁকে আছে...মনে মনে ফন্দি আটছে এখনো সময় আছে বিয়েটা বানচাল করার...তার আগে শুক্রবারে কন্যা দেখতে যাওয়া বন্ধ করতে হবে...তারপর ভেবেচিন্তে সব করা যাবে...
শুক্রবার সকালে চুপিসারে বাবার ঘরে গিয়ে তার পানির জগে জামাল গোটা গুড়ো করে মিশিয়ে দিয়েছে...যাতে বন্দি পেরেডের তালে কন্যা দেখার ব্যাপারটা পেছানো যায়...যথারিতি পানি পানের কিছুক্ষন পরেই শুরু হয়ে গেল আসাদ সাহেবের টয়লেটে আসা-যাওয়া...বেশ কয়েকবার টয়লেট করে অসুস্থ্য হযে পড়েছেন...সবাই হতচকিত হয়ে পড়েছেন...হঠাৎ বাবার এই অবস্থা দেথে লিজা অস্থির হয়ে পড়েছে...ওরস্যালাইন আনা হয়েছে...বিধি বাম ওরস্যালাইন ঐ জামাল গোটা মিশ্রিত জগের পানিতেই গোলা হয়েছে...বাবার অবস্থা দেথে বড় ছেলে নিজেকে কিছুটা অপরাধী মনে করছে...জগে গোলা স্যালাইন খেতে বাধা দিয়ে নিজেই বাবাকে হাসপাতাল নিয়ে গেছে...
এদিকে পাত্রীর বাসায় ফোন করে বিস্তারিত জানানো হয়েছে...হঠাৎ সকাল থেকে কি কারনে যেন দাস্ত হচ্ছে...অবস্থা খুব বেশি ভালো না...অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল নিয়ে আসা হয়েছে...আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা চেয়ে দেখার দিনক্ষন পরিবর্তনের অনুরোধ করা হয়েছে...এদিকে হবু স্বামীর অসুস্থতার কথা শুনে বিচলিত হয়ে পড়েছেন সুবর্না বেগম...কিছুবাদে যার সাথে তার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হবে সেই মানুষটি হাসপাতালে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তার...কথা না বাড়িয়ে শুধু জিজ্ঞাসা করলো, "ওনি এখন কোন হাসপাতালে আছেন?"...ছোট ছেলেকে সাথে নিয়ে ভোঁ দৌড় হাসপাতালে রোগী দেখতে...
ডাক্তারের তত্বাবধানে এখন কিছুটা সুস্থ্য অনুভব করছেন আসাদ সাহেব...ছেলেমেয়েরা তার চারপাশ ঘিরে বসে আছে...বড় ছেলে তার অপরাধ স্বীকার করে এখনো আসাদ সাহেবের পা ধরে বসে আছে...বাবা বারবার বোকা ছেলে বলে ক্ষমা করেছে তবু পা ছাড়ছেনা...পায়ের বৃদ্ধাঙুলে চুমু খেয়ে বাবাকে জানান দিচ্ছে তার ছোটবেলার কথা...কত আদর করতো তাকে বাবা...পুরো পরিবেশ আবেগের সমুদ্রে ভাসছে...
এমন সময় দরজার পর্দা সরিয়ে সুবর্না বেগম ঢুকতেই দরজায় থ দাড়িয়ে গেল...এ কোন আসাদ সাহেবকে দেখছেন...ওদিকে আসাদ সাহেবও সুবর্না বেগমকে দেখে বরফের মতো জমে গেছে...মুখে কোন শব্দ নেই শুধু একে অপরের দিকে অপলক চেয়ে আছে...সুবর্নার সাথে আসা ছোট ছেলে ও আসাদ সাহেবের ছেলেমেয়েরা অবাক হয়ে দেখছে তাদের কান্ড...তন্দ্রা ভাঙতে আসিফ সবাইকে সালাম ও পরিচয় দিয়ে মাকে আস্তে ধাক্কা দিল...সালামের উত্তর নিতে নিতে শোয়া উঠে বসে হা করে সুবর্নার দিকে তাকিয়ে আছে আসাদ সাহেব...গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে সুবর্নাও...লিজা কিছুই বুঝতে পারছেনা...কে এই সুবর্না বেগম যে নিজেই থ হয়ে দাড়িয়ে গেল আর বাবাই বা কেন সুবর্না বেগমকে এমন ভ্যাবা ক্যাবালার মতো ফ্রিজ হয়ে গেল...
আসাদ সাহেবের সামনে চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসে আছে সুবর্না...এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যা দেখছে...মনে হচ্ছে স্বপ্নের মধ্যে ভেসে আছে...আসাদও কিছু বাকরুদ্ধ হয়ে তাকে দেখছে...নিরবতা ভেঙে সুবর্নাই জিজ্ঞাস করলো কেমন আছো আসাদ?...এ যেন স্বর্গ থেকে কন্ঠস্বর ভেসে আসছে...শব্দের বিপরীতে আসাদ শুধু ঠোট নাড়িয়ে বলল,"ভালো আছি" আর কিছুই বলতে পারলো না...শুধু চোখ দিয়ে গড়গড় করে অশ্রু সিক্ত হচ্ছে...
সবাই অবাক ব্যাপার কি?...লিজা বাবার পাশে বসে বাবার মাথায় ইলিবিলি কেটে জিজ্ঞাসা করলো বাবার তুমি কি আগে থেকে ওনাকে চিনতে নাকি?...গাঢ় ঘুরিয়ে মেয়ের দিকে তাকালো কিছুই বলতে পারলোনা...এদিকে আসাদ সাহেবের এই নিরহ চেহারা দেখে ফিক করে হেসে ফেললো সুবর্না...লিজার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো, "হ্যা আমরা পূর্ব পরিচিত...কলেজ জীবনে তোমার আব্বু ছিল আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুদের একজন...তোমার আব্বু পড়াশোনায় আমাকে অনেক সহায়তা করতো...বন্ধুত্ব সম্পর্ক থেকেই ধীরে আমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে...আমাকে যখন তার মনের কথা বলে তখন আমি অনেক দূরে...ইতিমধ্যেই পারিবারিক ভাবে আমার বিয়ে ঠিকঠাক...আমি কিছুতেই পরিবারের অমতে যাবোনা বলে তাকে না বলতে বাধ্য হই...তবে তোমার আব্বুকে আমি বরাবরের মতো পছন্দ করতাম এখনো করি...একজন ভালো মানুষ হিসাবে...পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে বিয়ের পর আমি স্বামীর সাথে চট্রগ্রাম চলে যাই...তার পর থেকে তোমার আব্বুর সাথে আমার আর কোন যোগাযোগ হয়নি...ভাগ্যর কি রকম চক্রাকার আকারে ঘুরে...আজ এতো বছর পর তোমার আব্বুর সাথেই আমার বিয়ের কথা চলছে তোমাদের মাধ্যেমে..."
সবাই তন্বয় হয়ে সব শুনছে আর গলগল করে চোখের পানি পড়ছে...আসাদ সাহেব এখন হাওমাও করে কাঁদছে...লিজা চোখের পানি মুছে দিয়ে বলছে,"তুমি কখনোই আমাদের তোমার কষ্টের কথা বলোনি...মনের কষ্ট মনে চেপে সারাজীবন নিস্বার্থের মতো শুধু ভালবাসা বিলিয়ে গেছ...দেখ বাবা আজ আল্লাহ তোমার ভালবাসাকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দিয়েছে..."
কান্না থামিয়ে আসাদ সাহেব সুবর্নার হাত ধরে শুধু একটা কথাই বললেন,"সেই তুমি আমার হয়ে এলে জীবনের শেষ প্রান্তে"
(সোনারবাংলাদেশ ব্লগে পূর্বে প্রকাশিত)
বিষয়: বিবিধ
৩২৫৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিস্তারিত পড়ুন
Click this link
মন্তব্য করতে লগইন করুন