...একজন আদর্শ স্বামীর গুনাবলী...
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আশরাফ ৩০ জুন, ২০১৩, ০২:১৬:১৩ দুপুর
এর আগে আপন মননে যা আছে তাই দিয়ে একজন আদর্শ স্ত্রীর গুনাবলীবর্ননা করেছিলাম। আজ তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো একজন আদর্শ স্বামীর গুনাবলী। আশা করি আমার সাথে সকলেই একমত হবেন যে নবী করীম (সাঃ) ছিলেন পৃথিবীর সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বামী। তিনি তাঁর স্ত্রীদের সাথে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করতেন। এ সম্পর্কে হুযুর করীম (সাঃ) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার করে। আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের সাথে সবচেয়ে ভালো আচরণকারী।”
আসুন এবার আমার বচন ভঙিতে বলার চেষ্টা করি আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কেমন গুনাবলী সম্পন্ন স্বামী হওয়া উচিত -
যৌতুক না নেওয়া: একজন ভাল স্বামী বিয়ের সময় স্ত্রীর কাছ থেকে যৌতুক নেয় না বরং যৌতুক (মোহরানা) দেয়। বিয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ছেলেরা মেয়েদের হরেক রকম গুনের খোঁজ করে। ভাবে রুপে ক্লিওপেট্রা, গুনে লক্ষ্মী, বিদ্যার স্বরস্বতী- এমন কনে যদি পাই, তবেই বিয়ে করি। তাকি আর সম্ভব? আল্লাহর রাসূল সা: যে চারটি বিষয় (সম্পদ, বংশ মর্যাদা,রুপ-সৌন্দর্য,দ্বীনদারী) মেয়েদের দিক থেকে দেখতে বলেছেন তার মধ্যে দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবেন একজন ভাল স্বামী।
স্ত্রীর পূর্ন দায়িত্ব নেওয়া: একজন ভাল স্বামী ভাল করেই জানেন বিয়ের পর তার স্ত্রীর সকল দায়-দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হয়। স্ত্রীর ভরন-পোষন, ভাল-মন্দ দেখবাল, পারিবারিক-সামাজিক মর্যাদা, নিশ্চিত করবেন।
নববধূকে নতুন পরিবেশ মানিয়ে নিতে সাহায্য করা: একটি মেয়েটি তার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমস্ত পরিচিত জনদের ছেড়ে, সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে, নতুন মানুষদের মাঝে স্বামীর সংসার করতে আসে।এক্ষেত্রে স্বামীর উচিত হবে তার পরিবারের পরিবেশ মানিয়ে নিতে স্ত্রীকে সার্বক্ষনিক সাহয্য করা।
স্ত্রীকে ভালবাসে মন উজার করে: একজন আদর্শ স্বামী বিয়ের পূর্বে প্রেম করেনা বলেই বিয়ের পর মন উজার করে প্রেমিকা স্ত্রীকে ভালবাসেন। ভালবাসার জন্য স্ত্রীরা সাধারানত মুখে প্রকাশ করেননা। সেক্ষেত্রে একজন স্বামীকে দক্ষতার সাথে স্ত্রীকে আবিষ্কার করতে হবে। তার কথা বলার পেছনের ইচ্ছাটি বুঝতে হবে। ভালবাসার মাধ্যেমে স্ত্রীর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেন।
ছাড় দেওয়া: আমার দেখায় আমাদের সমাজে স্ত্রীরাই সবচেয়ে বেশি ছাড় দেয়। কিন্তু সুখী সংসারের জন্য উভকেই ছাড় দিতে হবে। পুরুষ হিসাবে একজন স্বামীই পারেন সবচেয়ে বেশি ছাড় দিতে। স্ত্রীর ইচ্ছে পুরনে প্রয়োজনে নিজের সখটি কোরবানী দিতে হবে। এতে বুদ্ধিমান স্ত্রী যখন বুঝতে পারবে যে তার ইচ্ছেটি পূরনে আপনি আপনার ইচ্ছেটি কোরবানী দিয়েছেন বিশ্বাস করুন ঐ স্ত্রী আপনাকে তার জীবনের চাইতেও বেশি ভালবাসবে, গ্যারান্টি।
রাগ নিয়ন্ত্রন করা: এই কথাটি পুরুষদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। আমাদের সমাজে স্ত্রীরাই স্বামীর রাগের আগুনে বেশি পুড়ে। স্বামীর রাগের নির্যাতনে শারীরিক ও মানষিক যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে অনেক স্ত্রী সেচ্ছায় ইহলোক থেকে বিদায় নেয়।হযরত আয়শা (রাঃ) বলেন,“প্রিয় নবী (সাঃ) সারা জীবনে কখনই কোন স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেননি। এবং যখনই তিনি ঘরে প্রবেশ করতেন, তাঁর মুখশ্রী থাকতো ইষৎ হাস্যভায় স্নিগ্ধময়।”সুতরাং একজন আদর্শ স্বামী অবশ্যই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করবেন। স্ত্রীকে কোন ভুল বা অন্যায় করলে তাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবেন তাকে তার ভুল সুধরে দেবেন।
স্ত্রীকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া: অনেক চাকরীজীবি-ব্যাবসায়ী স্বামীদের দেখা যায় তাকে ক্যারিয়ার-অর্থের পেছনে ছুটতে ছুটতে স্ত্রীকে সময়ই দেয়না। সেই ভোর সকালে বের হয় আর রাত গভীরে ঘরে ফেরে। একটুও চিন্তা করেনা তার স্ত্রী কিভাবে সরাটাদিন নিসঙ্গ-একাকী দিন পার করে। একজন আদর্শবান স্বামী এমনটা করেনা। তার দিনের একটা সময় তার স্ত্রীর জন্য বরাদ্দ রাখেন। সুযোগ পেলেই স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে আসেন।
স্ত্রীর খেদমত করা: আমাদের সমাজটা এমন যে স্বামী যদি তার স্ত্রীর কাপড়টা ধুয়ে দেয় তবেই সেরেছে ঐ স্বামীর মরদ নাই, স্ত্রীর আঁচল বাঁধা দাস ইত্যাদি কিন্ত একটা কথা কখনোই ভেবে দেখেনা যে ঐ মেয়েটিও একজন রক্তে-মাংসে মানুষ তারও ক্লান্তি বোধ আছে, কাজ করার সীমাবদ্ধতা আছে, তারও অসুখ হতে পারে। সুতরাং একজন আদর্শ স্বামী অবশ্যই তার স্ত্রীকে সাধ্যমত ঘরের কাজে সাহায্য করবেন, অসুস্থ্যতার সময় সেবা করবেন।
কাজ-ঘর একাকার না করা: অনেকে আছেন অফিসের কাজ ঘরে এসে করেন কিংবা কর্মক্ষেরে রাগ ঘরে এসে মেটান। এতে সারাদিন অপেক্ষরত স্ত্রী তার স্বামীকে পায়না। মাঝে-সাজেই ঝগড়া লেগে যায় স্বামী-স্ত্রী। তাই পারত পক্ষে কাজ-ঘরকে একাকার না করা একজন আদর্শ স্বামীর বৈশিষ্ট্য।
ইবাদত করা: একজন আদর্শ স্বামী অবশ্যই চাইবে নিজেও যেমন মহান রবের আদেশগুলো মেনে চলবে তেমনি তার স্ত্রীও মেনে চলবে। তাই সবর্দা নিজে আমল করা ও স্ত্রীকে আমল করতে উৎসাহিত করা একজন প্রকৃত দ্বীনদার স্বামীর দায়িত্ব।
বউয়ের প্রেমে পাগল হয়ে আরো যা যা করতে পারে -
=> অফিস/কাজ থেকে ফেরার পথে বউয়ের জন্য কিছু একটা কেনা। একগুচ্ছ ফুল হতে পারে, তার পছন্দের কোন খাবার হতে পারে।
=> প্রিয় বউটির কাজের প্রশংসা করা।
=> বিভিন্ন উপলক্ষে তার পছন্দের কিছু গিফট করা।
=> বউয়ের সাথে কিছু প্রেম প্রেম পাগলামি করা। যেমন বউয়ের চুল বেনী করে দেওয়া, বউয়ের আরো অনেক কিছু করা যা ব্লগে বলবোনা।
=> একই প্লেটে এক হাতে দুইজনে খাবার খাওয়া।
=> ছুটির আগের রাত এক সাথে জেগে থেকে গল্প করা যেতে পারে।
আপাতত আর কিছু মাথায় আসতাছেনা...আইলে যুক্ত করবো...
বিষয়: বিবিধ
৮০৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন